somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা মধ্যরাতের গল্প (৩)

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব
Click This Link

দ্বিতীয় পর্ব
Click This Link

মধ্যরাত ভয়ঙ্কর

রাস্তাটা খুব এবড়ো-থেবড়ো।উঁচু-নিচু।কোথাও সমতল।কোথাও গর্ত।
বাঁশঝাড়ের পরিধিটা ছোট্ট।ওটি পেরিয়ে তমাল ও আরিফ দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে গেল।

ওদের পিছনে ভয়ার্ত অনি ছোটছোট পায়ে এগিয়ে চলছে।

এখন আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।রোড লাইটের আলো এতদূর আসে না। ভরসা একটাই। মোবাইলের আলো।

খুব চিকন স্বরে একঝাঁক বুনো পোকা রহস্যময় শব্দ তৈরী করছে।ওরা পরিবেশটাকে আরও নির্জন ও ভয়ানক করে তুলেছে।

বেশ কিছুদূর যাবার পর সবাই থেমে গেল।মোবাইলের দূর্বল আলোকে থামিয়ে দিয়েছে সাদা কুয়াশার ভরাট স্তর।তারই ওপাশ থেকে একটি ছোট্ট বাচ্চার মত কেউ যেন বসে আছে।খুব চিকন একটি স্বরে কাঁদছে।

শীতে আর ভয়ে জমে গ্যাছে অনির পা জোড়া। তারপরও ও এগুলো।দু’পা এগিয়েই ধাক্কা খেল আরিফ-তমালের সাথে।বীরপুরুষ তমাল-আরিফ ও ভয়ে চুপসে উঠেছে।রোবটের মত দাঁড়িয়ে আছে তিনজন।

তিনজন একসাথে এগুলে নাকি ফলাফল অশুভ হয়।কিন্তু এখন আর কিছুই করার নেই।একা সামনে যাবার বা একা একটু পেছনে থাকবার মত একজন আর এখানে নেই।

ওরা তিনজন একসাথে এগুলো।

আর একটু সামনে গিয়ে ওরা ক্রন্দনরত বাচ্চাটাকে আবিষ্কার করল।ছোট্ট একটি বাচ্চা মেয়ে।পরীর মত দেখতে। হয়ত পরীই। কে জানে।

বাচ্চাটিকে কারা যেন নির্দয়ের মত মেরেছে।ওর ঠোঁটের কোন দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরছে।অনির হঠাৎ কেন যেন মনে হল, এ রক্তচোষা পিষাচ। বাচ্চার বেশ ধরে আছে। এই মাত্র কিছু একটার রক্ত চুষেছে।ঠোঁটে লেগে আছে তাজা রক্ত।মনে মনে দৌড়ে পালানোর চিন্তা করতে লাগল।কিন্তু দৌড়ানোর জন্য যে শক্তি দরকার, ওর এই মুহূর্তে তা নেই।

তমাল বাচ্চাটির সাথে প্রথম কথা বলার সাহস দেখাল।বলল, তুমি কে বাবু? এইখানে এতরাতে বসে বসে কাঁদছ কেন?

বাচ্চাটি কিছুক্ষণ চুপ থাকল, এরপর কিছুটা কাঁদতে কাঁদতে অস্বাভাবিক ভরাট কন্ঠে বলল, ওরা আমাকে ধরে নিয়ে এসেছে।আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে।ওরা আমাকে বিক্রি করে দেবে বলেছে। আমি খেতে চাইলে ওরা আমাকে মেরেছে।ওরা খুব খারাপ। তোমরা এখান থেকে পালাও। নইলে ওরা তোমাদেরকেও বিক্রি করে দেবে।

আরিফ বলল, কারা তোমাকে এখানে ধরে এনেছে? ওরা কোথায়?
বাচ্চাটি বলল, ওরা আশেপাশেই আছে।ওরা দানবের মত।ওরা ডাকাত।ওদের অনেক শক্তি।ওদের কাছে অস্ত্র আছে। তোমরা পালাও।



হঠাৎ গোটা পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে এল অনির।মাথায় প্রচন্ড একটা আঘাত এল।মাটিতে লুটিয়ে পড়ল ও। কিন্তু ওর জ্ঞান ছিল।আবছা আলোয় দেখল, পাঁচ-ছ’জনের একটি দল হাতে লাঠি-সোটা নিয়ে আক্রমন করেছে ওদের উপর।

তমাল এবং আরিফ ততক্ষণে শুয়ে পড়েছে অনির পাশে।একটা উষ্ঞ রক্তের ধারা চলে এল অনির নাক বরাবর। আরিফের মাথার পেছন থেকে রক্ত ঝড়ছে।টপ টপ করে।

হোমড়া-চোমড়া জাতের তিনজন লোক ওদের তিনজনকে টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আরিফের বোধহয় আর জ্ঞান নেই।তমালও সাড়া-শব্দ করছে না।

ওদেরকে সারি করে তিনটা গাছের সাথে বাঁধা হল শক্ত দড়ি দিয়ে।

এই প্রথমবার ডাকাত দলের একজন ভরাট গলায় হুঙ্কার দিয়ে উঠল।বলল, তোরা কে? এখানে এসেছিস কেন?

সবাই চুপ হয়ে থাকল। কেউ কোন কথা বলল না।

ডাকাতটি আবার হুঙ্কার দিল, কথা বলছিস্ না কেন? আমি জানি, তোরা কেউই অজ্ঞান নয়।তোদের এমনভাবে মারা হয়নি যে জ্ঞান হারিয়ে যাবে।আমাদের সব মারেরই মাপ আছে।

যে ডাকাতটি কথা বলছিল, ওর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল আরও তিনজন।এতক্ষণ ওদের দেখা যায় নি। ওরা প্রত্যেকে কালো পোষাকধারী।কালো কাপড়ে নাক পর্যন্ত ঢাকা।অনি ও তমালের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে আরও দু’জন ডাকাত।ওদের বেশভূষাও একই রকমের।তবে ওদের হাতে আছে দু’টি লম্বা লম্বা বন্দুক।

‘যাক্। এবার কাজের কথায় আসি।’ বলতে লাগল ডাকাতটি, ‘আমরা ডাকাত।আমি এদের সর্দার।শিবরাম ডাকু।এরা (বাকি ডাকাতদের দেখিয়ে)আমার সহকর্মী।আমরা এই এলাকার ত্রাস।পুলিস আমাদের কিছুই করতে পারেনা।আমরা মানুষ ধরে আনি।মানুষের কিডনী বিক্রি করি।এছাড়াও আরও অনেক কিছুই বিক্রি করা হয়।ওসব আমাদের ডাক্তাররা বলতে পারবে।তাছাড়াও আন্তর্জাতিক অর্ডার এলে মাঝে মধ্যে দু’একটাকে মেরে রাস্তায় ফেলে রেখে দেই।ভদ্রলোকেরা এটাকে গুপ্তহত্যা বলে। চোরাচালানি-মাদকপাচার,এসব ছ্যাচড়ামো কাজ আমরা করি না।’ একটু থেমে ও আবার শুরু করল,‘আমাদের কথা তো সবই বললাম।এবার তোদের কথা বল। তোরা কে?এতরাতে কেন মরতে এসেছিস এখানে?ভালই করেছিস।বেশ কয়েকদিন বাজারটা ভাল যাচ্ছিল না।’

হঠাৎ থেমে গ্যালো ও।

আবার চেচিয়ে উঠল,‘কালাচাঁদ।ব্যাপার-স্যাপার সুবিধার ঠেকছে না। এই শালারা মুখ খুলছে না।তার ব্যবস্থা আমি করছি।তুই রাস্তায় গিয়ে দেখে আয়।আমার মনে হয় এদের আরও লোকজন আছে।শালারা বোধহয় জঙ্গলে নেশা করতে এসেছে।’অনির দিকে এগিয়ে এসে বলল,‘কি,তাই তো?’
অনি পাথরের মত চুপ হয়ে থাকল।‘কি,কথা কানে যায় না?’শাসিয়ে উঠল শিবরাম।

অনি ভয় পেল ঠিকই্।কিন্তু উত্তর করল দৃড় গলায়,‘আমি নেশা করিনা।আপনি বিশ্বাস না করলে আমার কিছুই করার নেই।’

হেলিয়ে হেলিয়ে শিবরাম ডাকু এবার গেল তমালের কাছে,‘কি, তুই তো নেশা করিস। চেহারা দেখেই বোঝা যায়।কি তাই না?’

তমাল মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,‘না।’

বেশ জোরে একটি আঘাতের আওয়াজ শোনা গেল।তমাল আর্তচিৎকার করে উঠল।

শিবরাম ডাকু আবার বলল,‘আমার চোখের দিকে তাকিয় আজ পর্যন্ত কেউ মিথ্যে বলার সাহস পায়নি।ওই ছেলেটা বলেছে(অনিকে দেখিয়ে) যে ও নেশা করেনা।ও সত্য বলেছে। সেটা আমি বুঝতে পেরেছি।আমি আজ পনের বছর ধরে ডাকাতি করি।তোরা তো বাচ্চা।তোদের বাপদেরকেও আমি শায়েস্তা করেছি।যাক, এবার সত্য কথা বল, কি নেশা করিস?’

এবার আর তমাল না বলার সাহস পেল না।

সাথে সাথে আরও একটি আঘাত এবং তমালের আরও একটি আর্তচিৎকার।
শিবরাম ডাকু আবার বলতে শুরু করল,‘বাপ-মা কষ্ট করে টাকা কামায় তোদেরকে খাওয়ানো-পরানোর জন্য। আর তোর নেশা করে বাপ-মা’র রক্ত ঘাম নিয়ে খেলা করিস?’

শিবরাম ডাকু এবার গেল আরিফের কাছে।বলল, তোর জ্ঞান আছে। আমি জানি। যাই হোক,‘প্রশ্নের উত্তর দে।তুই নেশা করিস?’

আরিফ এমনিতে অনেক সাহসী।কিন্তু তমালের পরিণতি দেখে আরিফ আর মিথ্যে বলতে পারল না।

সাথে সাথে আরও একটি আঘাতের শব্দ শোন গেল।কোন চিৎকার শোনা গেল না।বোধহয় চিৎকার করার মত শক্তি আরিফের ছিল না।

ততক্ষণে কালাচাঁদ ডাকু ফিরে এসেছে। ও বলল,‘একটি মিনিবাস রাস্তায় থেমে আছে ওস্তাদ।বাসে বোধহয় দু’একটা মেয়েছেলেও আছে।ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।আমি আড়াল থেকে দেখে এসেছি।’

বিকট শব্দে খেঁকিয়ে উঠল শিবরাম ডাকু, ‘আজ শালা কাউকে ছাড়ব না। সবকটাকে নিয়ে যাব।রাত-বিরাতে মেয়ে-মানুষ নিয়ে চলাচল করা, তাই না?এই তো তোদের আধুনিক সভ্যতা। আজ এর এমন পরিণতি তোদের দেখাবো, আর কোনদিন এমন করার সাহস পাবি না। ’

পেছন থেকে একজন ডাকাত চেঁচিয়ে উঠল,‘সাহস পাবে ক্যামেনে সর্দার। বেঁচে থাকলে তবে তো সাহস পাবে।’

একযোগে নিষ্ঠুর অলৌকিক হাসি হেসে উঠল সবাই।

শিবরাম ডাকু আদেশ করল,‘কালাচাঁদ আর মাফিয়া(পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা বন্দুকধারী দু’জন), তোরা যা।বাস থেকে আগে মেয়েগুলাকে তুলে আন।কেউ বাঁধা দিলে সাথে সাথে ফায়ার। যা।’


কিন্তু এটা হতে পারেনা।অনি কিছুতেই ভাবতে পারছে না ডাকাতরা মেয়েদের গায়ে হাত দেবে। কিছু একটা করা দরকার।ওদের তিনজনের মধ্যে এখন পর্যন্ত একমাত্র সুস্থ আছে অনিই।তাই যা করার ওকেই করতে হবে।

কালাচাঁদ আর মাফিয়া ডাকু চলে গেল সর্দারের আদেশমত।খুব ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে যাচ্ছে। (চলবে)

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৪৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×