somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা মধ্যরাতের গল্প (২)

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব নিচের লিংক এ।
Click This Link



মধ্যরাতের শুরু

বাসের শেষ সারির সিটে একটা সাদা চাদর মুড়ি দিয়ে বস্তার মত শুয়ে ছিল আরেকজন। নাম রাশেদ।একক্ষণ এত কিছু ঘটে গেল, ওর এসবে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।ও সাধারণত রাতে ঘুমোতে পছন্দ করেনা। আজ কতরাত পর যে ও ঘুমোচ্ছে, কে জানে?ওর একটি গুণ আছে।ও খুব স্পষ্টবাদী। ভাল-মন্দের পার্থক্য খুবই ভাল বোঝে। কোনটা করলে ভাল হবে, কোনটা খারাপ হবে-বাঁশফাটা ঢ্যারঢ্যারে গলায় সবাইকে উপদেশ দেয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত নিজে ভাল কিছুই করে দেখাতে পারে নি।

চাদর সরিয়ে এই প্রথম বারের মত চারপাশটাকে একবার দেখে নিল রাশেদ।আবার চাদর মুড়ি দিয়ে ঘরঘর করে নাক ডাকতে ডাকতে ঘুমিয়ে পড়ল।

মধ্যরাতের নির্জন রাস্তায় গাড়ি চলতে লাগল কুয়াশার জাল কেটে কেটে।


কাপাসিয়া বাজার পেরিয়েছে মাত্র মিনিট দশেক হল। হঠাৎ বিকট শব্দ করে গাড়ি থেমে গেল।বিকট শব্দে সবা্ই জেগে উঠেছে ততক্ষণে। এমনই হবার কথা।যে গাড়ির গাড়ি, তা মাঝ রাস্তায় থেমে যাবে, এ আর এমন কি।কিন্তু সমস্যা হল, এখন রাত অনেক বাজে। প্রায় একটার মত।এদিকে এলাকাটাও নির্জন।মাঝে মধ্যে দু-একটি গাড়ি আলোর ঝলকানি দেখিয়ে সোঁ করে চলে যায়।

কৃষ্ঞপক্ষের আকাশ।কুয়াশা আর কালিমা অদ্ভূতুড়ে ভঙ্গিমায় চারপাশকে গ্রাস করে রেখেছে।

ড্রাইভার জানাল, শীতে গ্যাস জমে গ্যাছে।ইঞ্জিন গ্যাস পাচ্ছেনা।

একটু গরম পানি দরকার ছিল। কিন্তু এ নির্জন এলাকায় গরম পানি কোথায় পাওয়া যায়?

একটি গাড়ি আলো ঝলমলিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো।রাত্রে টহলরত পুলিশের গাড়ি।একজন পুলিশ এসে জানতে চাইল মাঝরাতে মাঝরাস্তায় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ।সব শুনে পুলিশ ড্রাইভার বেচারাকে বেশ বকা-ঝকা করতে লাগল।

একটু নিচু গলায় সে ড্রাইভারকে বলল, ‘জানিস না, এ এলাকা খুব একটা ভাল না। জানিস, গত সপ্তাহেই এ রাস্তায় দু-দুটা মার্ডার হয়েছে।তুই কোন সাহসে এভাবে যাত্রী নিয়ে এরাস্তায় রওনা দিলি, বেয়াদপ।’

শীতের রাতে আস্তে বলা কথাটাই সবার কানে আসল।ভয় জাগতে শুরু করল সবার মাঝেই।

পুলিশ চলে যাবার আগে সবাইকে আশ্বস্ত করে গেল।বলে গেল, ‘আমরা আশেপাশেই আছি। ভয়ের কিছু নেই।’একটি কার্ড বের করে দিয়ে বলল, ‘কোন সমস্যা হলে এই নম্বরে কল করবেন।’

রাত আরও কালো হতে লাগল।মনে ভয় বাড়তে লাগল।

বেশ কয়েকবার চেষ্টার পরে গাড়ি চলতে শুরু করল।আর যাই হোক, গাড়ি বেশিক্ষণ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রাখা যাবে না।তাহলে ডাকাতদের আক্রমনে সুবিধা হবে।আর গাড়িটি অল্পবেগে হলেও যেন চলতে থাকে। চলন্ত গাড়িকে থামিয়ে ডাকাতি করা অত সোজা কাজ নয়।কিন্তু ওরা তো অবলীলায় মানুষ খুনও করতে পারে।চলন্ত বাসকে থামানো আর এমন কি!

বাস ধীরে ধীরে চলতে শুরু করল।ধীরে না চলে উপায়ও নেই।সামনের রাস্তা দেখা যায়না কুয়াশায়। রাস্তার মাঝখানের সাদা দাগগুলোকে মাঝখানে রেখে গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ করে সাদা দাগগুলো ডানে-বায়ে বেঁকে যাচ্ছে।ড্রাইভারও সাথে সাথে স্টিয়ারিং ঘোরাচ্ছে, কখনও ডানে-কখনও বায়ে।

অপলক চোখে এসব কাহিনী দেখে চলছে অনি।শরীরে প্রচুর ক্লান্তি। কিন্তু কোনভাবেই চোখের পাতাদুটোকে এক করতে পারছে না ও।

হঠাৎ দেখা গেল, রাস্তায় সামনে আর সাদা দাগ নেই।তাহলে সামনে কি? সামনে খাল।রাস্তা বেঁকে গ্যাছে বামে, অনেকটা প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণে।বুঝতে পারার সাথে সাথে ড্রাইভার বাঁয়ে স্টিয়ারিংয়ে মোচড় দিল।গাড়িটি বেঁচে গেল।অনি অনুভব করল, আর মাত্র ২-৩ সেকেন্ড দেরি হলেই এখানেই হয়ত সব শেষ হয়ে যেত।

অন্যরা মোটামুটি প্রায় সবাই চোখ বুজে ছিল।এ ভয়ংকর ঘটনা ওরা দেখতে পেল না।


গাড়িটি বড়জোড় ৩০-৪০ মিনিট চলল।তারপর আবার থেমে গেল।
এবার থামল একটি বিদঘুটে জায়গায়। সামনে একটি ছোট্ট ভাঙ্গাচোড়া ব্রিজ।আশপাশে গাছ-গাছালিতে ভরা।

রাত তখন প্রায় দু’টা।

গাড়ি সাড়াতে সময় লাগবে, ড্রাইভার বলে দিল।
কিন্তু বাস থেকে না নামাই ভাল।এত রাত, নির্জন জায়গা।আর বাসে যে মেয়েরা আছে, এটা বাহিরের পরিবেশকে বোঝাতে দেওয়া যাবে না। ড্রাইভার বেশ চেষ্টা করছে।কান ফাটানো শব্দে ইঞ্জিন স্টার্ট নেবার চেষ্টা করছে।কিন্তু এ অযাচিত প্রচেষ্টারও তো একটা শেষ আছে!

শেষ হল।ইঞ্জিন এবার ভালভাবেই বন্ধ হয়ে গেল।বন্ধ হয়ে গেল গাড়ির লাইটও।বাইরে অন্ধকার। ভেতরেও অন্ধকার।নির্জন অন্ধকার রাস্তায় অন্ধকার গাড়ির ভেতরে ওরা বসে থাকল দম বন্ধ করে।এবার সত্যিই সবাই ভয় পেতে শুরু করল।

একটা মিনিবাস যে এ রাস্তায় আছে, সেটা বোঝার আর কোন উপায়ই নেই।একটি ট্রাক বা বড় বাস যদি ওদের মিনিবাসটিকে চাপা দিয়ে চলে যায়, তবে তাকে দোষ দেবার কোন উপায়ই নেই।

আরিফ, তমাল, বর্ষন-ওদের সাহস আবার একটু বেশিই।ড্রাইভার বলল,‘মামারা, বাইরে যাইয়েন না। বাইরটা খুব একটা ভাল না।’
ওরা কথা শুনল না।গটগট করে নিচে নেমে এল। যাওয়ার আগে তমাল অনিকে টিটকারি কাটল, ‘কি রে ভীতুর ডিম, এখানেই বসে থাক।দেখিস, আবার মেয়েদের মত কান্নাকাটি শুরু করে দিস্ না।তোর তো আবার কান্নাকাটির অভ্যাস আছে…।’

একথা শুনে অনি স্থির থাকতে পারল না। শতহলেও ও তো পুরুষ। পৌরুষত্বকে অপমান করলে একজন পুরুষ সবথেকে বেশি লজ্জা পায়।তখন নিতান্ত ভিরু পুরুষটিও নিজের সাহস দেখানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে।

ওদের পেছন পেছন অনি নেমে পড়ল।

বাইরের তাপমাত্রা নিশ্চই পাঁচ ডিগ্রির নিচে হবে।বাংলাদেশের ইতিহাসে এত শীত কোনবার পড়েছে কি না, সন্দেহ।

অনি খেয়াল করল, বাস থেকে নেমেই রাস্তার বাম পাশে একটি বাঁশঝাড়।বাঁশঝাড়টি বেশ ঘন,কালো।রহস্যময়।ভালকরে দেখলে গা ছমছম করে ওঠে। এ বাঁশঝাড় নিয়ে কত অলৌকিক গল্পই না শুনেছে ও।সবক’টি গল্প একটি একটি করে ধীরে ধীরে মনে পড়তে লাগল ওর।


এদিকে বাসের ভেতর একটা কান্ড ঘটে গ্যাছে।হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠে বিকট শব্দে অপবায়ু বিসর্জন করেছে রাশেদ।সাধারণত মানুষের বিসর্জিত অপবায়ুর শব্দ যত বেশি হয়, গন্ধ হয় তত কম ! কিন্তু রাশেদের ক্ষেত্রে আলাদা।ওর সাথে পৃথিবীর কোন হিসেবই মেলে না।ওর শব্দও যেমন, গন্ধও তেমন……।

রাশেদ জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখল, কারা যেন রাস্তার ডাল-পালা কুড়িয়ে আগুন জ্বালিয়েছে।তিনপাশে তিনটা ইট বিছিয়ে চুলার মত তৈরি করেছে।আগুন ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটা ছেলে।

কৌতূহল মেটাতে নিচে নেমে এল ও।দেখল ওর বন্ধুরাই আগুন জ্বালিয়েছে।একটা পাত্রে পানি গরম করছে।আগুনের তাপ পেয়ে যেন স্বর্গসুখ পাচ্ছে ওরা।

‘গরম পানি দিয়ে কি হবে’, প্রশ্ন করল রাশেদ।

‘আররররে রাশেদ যে,মনে করছিলাম তুই আজ রাতে আর উঠবি না। যাক উঠছিস্ যখন ভালই হইছে। গাড়ির গ্যাস জমে গ্যাছে।গরম পানি লাগবে।তাই।’, উত্তর করল আরিফ।

রাশেদ আরিফকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে গেল। বলল, তোর কাছে যেটা ছিল,ওইটা কোই।

‘দোস্ত, কিছু মনে করিস না। আমি, তমাল আর ড্রাইভার মিলে শেষ করে ফেলছি।’, উত্তর করল আরিফ।

‘এটা ক্যামন কথা।কাটার সময় তো আমার কাচি দিয়েই কাটিস।তোদেরকে হাতে ধরে বানানো শেখালাম আমি, আর তোরা আমাকে ছেড়ে শেষ করে দিলি।ভগবান এটা সহ্য করবে না।তোরা কি মনে করিস্। আমার কাছে নাই।’,উত্তপ্ত উত্তর রাশেদের।

ওদের উত্তপ্ত ক্ষিপ্ত কথাগুলো শীতল বাতাসের গা চিড়ে ছড়িয়ে পড়ছিল।
বানানো চুলায় উত্তপ্ত পাত্রে পানি টগবগ করে ফুটতে লাগল।আগুনের দু’একটি উদ্ধত ফুলকি কুয়াশার সাথে মিশে যেতে লাগল।



হঠাৎ অনির ভয়ার্ত কন্ঠ শোনা গেল।
ও সাবাইকে থামতে বলল।

বাঁশঝাড়েরর ভেতর থেকে খুব চিকন স্বরে একটি বাচ্চা মেয়ের কান্না শোনা যাচ্ছে। সবাই চুপ করে কান খাড়া করে শুনতে লাগল।

সত্যিই তাই। কে যেন কাঁদছে, বলল তমাল।

মাঝরাতে নির্জন যায়গায় এলে এমন অনেক কিছুই শোনা যায়।ওসবে তোরা কান দিস না, বলল অনি।

বেশ অশ্লীলভাবে হেসে উঠল আরিফ।

শালা ভিতুর ডিম।তুই এখানেই বসে থাক।তমাল, চল তো দেখি কে কাঁদে, ও বলে উঠল।

তমালও বেশ এ্যাডভেঞ্চার প্রিয়।এককথাতেই উঠে দাঁড়াল।বলল, চল যাই।

অপমানের জ্বালা আর সহ্য করতে পারছিল না অনি।মনে ভয় থাকলেও সাহস করে পায়ে পায়ে ও এগিয়ে গেল ওদের পিছু পিছু। (চলবে)
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×