somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনলাইন সংবাদপত্র নীতিমালার প্রয়োজন নেই

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তথ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকার ‘অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা’ চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে: লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য এককালীন পাঁচ লাখ টাকা তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। প্রতিবছর নবায়ন ফি দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা।
বর্তমান মহাজোট সরকারের একটা বড় সাফল্য হচ্ছে: দেশের নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো। সরকার এ ধরনের কর্মসূচিকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগানের মাধ্যমে জনপ্রিয় করে তুলেছে। এই লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ব্যাপক সাফল্য অর্জন না করলেও সরকার এ কর্মকাণ্ডে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের সূচনা পর্বটি সাফল্যের সঙ্গে করতে পেরেছে। আশা, আগামী দিনের সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগানটি বাস্তবেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচির সঙ্গে সম্প্রতি দেখা প্রাইভেট সেক্টরে ‘অনলাইন সংবাদপত্র’ বা সাংবাদিকতা বিকশিত হয়েছে। উন্নত দেশে এখন মুদ্রিত পত্রিকার কদর বা চাহিদা দিনে দিনে কমছে এবং অনলাইন পত্রিকার চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো প্রাথমিক অবস্থায়। অনলাইন সাংবাদিকতা ও দৈনিক সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণ প্রকাশে যারা প্রাথমিক ভিত্তিটি স্থাপন করেছে, তারা সবাই পাঠকের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছে। এই পটভূমিতে আমাদের তথ্য মন্ত্রণালয় সহযোগিতার ভূমিকা পালন না করে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে। তাদের এই উদ্যোগ সমর্থনযোগ্য নয়। মন্ত্রণালয় অনলাইন সংবাদপত্রের জন্য নীতিমালা, লাইসেন্স ফি, নবায়ন ফি, রেগুলেটরি কমিটি করার পাঁয়তারা করছে। তথ্য মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে কিছু টাকা রোজগারের ফন্দি এঁটেছে বলেই আমাদের ধারণা।
অনলাইন সংবাদপত্র ‘যুবক’ বা ‘ডেসটিনি’র মতো জাঁকালো ব্যবসা নয় যে তথ্য মন্ত্রণালয় এর থেকে ফি নেবে। এটা এখনো একটি জ্ঞানভিত্তিক উঠতি ব্যবসা। অনেকের ক্ষেত্রে এটা আদৌ ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
তথ্য মন্ত্রণালয় শুধু একটা কাজ করতে পারে। সংবাদপত্র প্রকাশের নীতিমালা অনুসরণ করে আবেদনকারীকে অনলাইন পত্রিকা প্রকাশনার জন্য একটা ‘ডিক্লারেশন’ দিতে পারে। প্রকাশক যদি ডিক্লারেশন পাওয়ার যোগ্য হন, তা হলে ছাড়পত্র দিয়েই তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব শেষ। এরপর দেশের অনলাইন সংবাদপত্র যদি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা পালন করে, তা হলে বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। বাকি কাজ আদালতের, তথ্য মন্ত্রণালয়ের নয়। কোনো অনলাইন সংবাদপত্র কর ফাঁকি দিলে তা দেখবে এনবিআর। অনলাইন সংবাদপত্র বা মুদ্রিত সংবাদপত্র কারও মানহানি ঘটালে তা দেখতে একটি ডিক্লারেশন দেওয়া ছাড়া তথ্য মন্ত্রণালয়ের আর কিছু করণীয় নেই। মন্ত্রণালয়ের মনে রাখতে হবে, এটাও সংবাদপত্র। শুধু কাগজে ছাপা হয় না। সংবাদপত্রের জন্য যা যা নীতিমালা রয়েছে, অনলাইনের জন্যও একই নীতিমালা প্রয়োজন। সংবাদপত্রের জন্য যেমন লাইসেন্স ফি, নবায়ন ফি নেই, এখানেও তা থাকতে পারে না। বিষয়টা খুব সহজ ও সরল। তথ্য মন্ত্রণালয় কেন এটাকে জটিল করতে চাচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।
সরকার সংবাদপত্রের জন্য নানা শর্ত দিয়ে নীতিমালা তৈরি করছে কেন? সংবাদপত্র প্রকাশনা তো পাবলিক সেক্টরের ব্যবসা নয়, সংবাদপত্র, অনলাইন—সবই প্রাইভেট সেক্টরের ব্যবসা। প্রাইভেট সেক্টর নিয়ে সরকার বেশি মাথা না ঘামালেই ভালো হয়। লাইসেন্স ফির আইডিয়াটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের আমলাদের মাথায় এল কীভাবে! এ মন্ত্রণালয় ভেবেছে, এটা মোবাইল ফোনের মতো রমরমা ব্যবসা। কোনো দিন হয়তো তথ্য মন্ত্রণালয় বলবে, ‘চলচ্চিত্র বা প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করতে হলেও লাইসেন্স নিতে হবে।’ এগুলো নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় কি একটু বাড়াবাড়ি করছে না?
তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আমাদের অনুরোধ হবে: গণমাধ্যমকে বিকশিত হতে দিন। অযথা নানা নিয়মনীতির জালে আবদ্ধ করবেন না। কেউ অন্যায় করলে তাকে শাস্তি দিন।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালনায় রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। একটিও ভালোভাবে চলছে না। শহরাঞ্চলে ‘বিটিভি’র দর্শক নেই বললেই চলে। প্রেস কাউন্সিল, প্রেস ইনস্টিটিউট, গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট—কোনোটিই যথার্থভাবে চলছে না। এসব সরকারি প্রতিষ্ঠান যাতে সাফল্যের সঙ্গে পরিচালিত হয়, মন্ত্রণালয়ের আমলাদের সেদিকে মনোযোগ দিলে ভালো হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা দেখা দরকার। অযথা অনলাইন সংবাদপত্র নিয়ে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। অনলাইন সংবাদপত্র নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অবাঞ্ছিত উদ্যোগ বিফলে যাবে বলে আমরা মনে করি।
 মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর: মিডিয়া ও উন্নয়নকর্মী।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×