ফ্যাসিসম কে গণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে একটি দাবিকে পদদলিত করার পূর্ণ প্রয়াস দেখাল সরকার। আধাবেলার হরতালে ধরপাকড়, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, আহত হওয়ার ঘটনা এবং ভাঙচুরের মত বিছ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু ঘটে নাই, এমনটিও উল্লেখ করতে ছাড়ল না।
দেশের গণমানুষের সম্পদ বিদেশের বেনিয়াদের কাছে তুলে দেয়ার চক্রান্তের বিরোধীতা করে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি নামক একটি টোকাইদের সংগঠন রোববার রাজধানী ঢাকাতে এ অর্ধদিবস হরতাল আহ্ববান করে।
যেহেতু সরকার এই সম্পদ বিক্রীর মত মহান কর্মে নিয়োযিত হয়েছে এবং কিছু টোকাই এই কর্মে বাধা প্রদান করবার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছে, তাই যেকোন ভাবেই হোক এদের দমন করা সরকারের কর্তব্য। আর এই কর্তব্য পালনে ব্রতী হয়েই সরকার এদের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে তার সর্বকালের সবচে ঘৃণ্য বাহিনী। 'পুলিশ বাহিণী'
যেহেতু এই তথাকথিত দেশপ্রেমিক টোকাইশ্রেনী খুবই তৎপর তাই যেমন করেই হোক এদের দমন করতে হবে। আর তাইতো প্রায় ৮,০০০ 'আইন ভঙ্গকারী' দুঃখিত, আইন রক্ষাকারীকে মাঠে নামানো হয়। উদ্দেশ্য, টোকাইদের মাঠে নামতে দেয়া যাবেনা, কথা বলতে দেয়া যাবেনা। কেননা, সংবিধানের কোথাও টোকাইদের শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করার, কথা বলার অধিকারের বিষয়টি উল্লেখ করা নেই।
তারপরেও এই অদম্য, অপরাজেয়, নীর্ভিক টোকাইরা একত্রিত হয়েছে, লাঠির বাড়ি খেয়েছে, জেলেও গিয়েছে। ঘটনাটা একটু এরকম,
ভোর সাড়ে পাঁচটার পরপরই তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি'র নেতা কর্মীরা পল্টনস্থ মুক্তি ভবনের সামনে জড়ো হতে চেষ্টা করে এবং এতে বাধা দেয় পুলিশ। তখন সেখান থেকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, কেন্দ্রীয় নেতা বহ্নি শিখা জামালী, মোশরেকা অদিতিসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ।
এরপর, সকাল ৭টার পরপরই মুক্তি ভবনের সামনে থেকে জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনু মুহাম্মদ ও সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ বেশ কজনকে আটক করা হয়।পরে ৮টার দিকে আনু মুহাম্মদকে ছেড়ে দেওয়া হলেও পুলিশের ধরপাকড় অব্যাহত থাকে।
পল্টনের মুক্তি ভবনের তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কার্যালয় ঘিরে রাখে পুলিশ।এ সময় কয়েকজন কর্মী পুলিশের বাধা ঠেলে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে প্রায় ১২ জনকে আটক করে পুলিশ। সেখান থেকে নেতা-কর্মীদের কাউকে বের হতে ও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এক প্রকার অবরুদ্ধ করে রাখে নেতা কর্মীদের।
বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কি মোড় থেকে সকাল ৯টার দিকে পল্টনে মিছিল করে আসার সময় পল্টন মোড়ে পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় পুলিশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গার্মেন্টস্ শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু, সুলতান, নাসিরসহ ৮ জনকে আটক করে। এছাড়াও তোপখানা রোড থেকে সকাল ৯ টা ১০ মিনিটে জলি তালুকদার, জাহিদ হোসেনসহ ১১ জনকে আটক করে পুলিশ।
গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, গণ সংহতির দীপক রায়, সাইফুল হক, বহ্নি শিখা জামালী, মোশরেকা অদিতি সহ আরও অনেক নেতাকর্মী হরতাল শেষ হয়ে যাবার পরও পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ি, ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ, মতিঝিল, আনোয়ার হোসেন পল্টন-বিজয়নগর এলাকা থেকে ৫২ জনকে আটক করার কথা স্বীকার করে।
তেল গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটি'র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ি, তাদের প্রায় ২ শতাধিক নেতাকর্মী পুলিশ দ্বারা আটক হয়েছে।
হরতালের ভয়াবহতা: হরতাল ভয়াবহ রুপ ধারন করে যখন পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বেশ কয়েকজন হরতাল সমর্থক কে আটক করে। পুলিশ হরতাল সমর্থনকারীদের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় ধাওয়া করলে তারা টিএসসিতে অবস্থান নেন।পরে পুলিশ টিএসসিতে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে।
পুলিশ সেখান থেকে বেশ কজন নারী সমর্থক কে আটক করে।
এর আগে শাহবাগ থেকে হরতালকারীদের একটি মিছিল কার্জন হল দিয়ে পলাশীর দিকে যাওয়ার সময় দোয়েল চত্বরের সামনে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় বেশ কজন মিছিলকারী আহত হন।
ইতিহাসে নজিরবিহীন একটি ঘটনা যা অতীতে কখনই ঘটেনি এবার তাই করল পুলিশ। টিএসসি তে অভিযান চালিয়ে রুম থেকে বেশ কজন হরতাল সমর্থনকারীকে গ্রেপ্তারের ঘটনা অতীতে আগে কোনদিন ঘটেনি বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীখ্খার্থিরা ।
বিভিন্ন স্থানে হরতালের সমর্থনকারীদের ওপর পুলিশি ও সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের হামলা, সিপিবির নেতা-কর্মীদের আটক, ব্যানার-লিফলেট ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
মুন্সীগঞ্জ শহরে রোববার সকালে আয়োজিত তেল-গ্যাস-খনিজ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির বিক্ষোভ সমাবেশ পুলিশের দফায় দফায় হামলায় পণ্ড হয়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সকাল ১০টার দিকে তেল-গ্যাস-খনিজ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির মুন্সীগঞ্জ জেলা শাখার সদস্যরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পূর্ব-নির্ধারিত বিক্ষোভ সমাবেশ করতে গেলে সদর থানা পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে এ সময় কমিটির সদস্যদের তর্কবিতর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশের তাদের ধাওয়া দিয়ে পিটুনি শুরু করলে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে শহরের মেথরপট্টি মোড় ও সুপার মার্কেট এলাকায় দু’দফায় বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দেয় ও কর্মীদের ওপর চড়াও হয়। এতে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির সদস্য নাসির উদ্দিন নাসু, রাজিব আহত হন।
নারায়ণগন্জ এলাকাতেও পুলিশের হামলায় ব্যাহত হয় হরতাল কর্মসূচি। তখন পুলিশ হামলা চালিয়ে সেখান থেকে বাসদ নেতা আবু নাইম খান কে আটক করে।
তেল গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটি'র তথ্য অনুযায়ি, তাদের প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয় পুলিশের অমানুষিক ও বর্বর আক্রমনে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় যে দশ জনকে ঢাকা মেডিকেল এ ভর্তি করা হয় তারা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রীনা, ইডেন কলেজের মুনিয়া, তিতুমীর কলেজের ছাত্র মাসুদ ও সাজ্জাদ, বুয়েটের স্বপন বসু, ছাট্র ফ্রন্ট নেতা মলয় সরকার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসুদ রানা, স্বীদ্ধেশ্বরি কলেজের তানিয়া ও বাসদ ফতুল্লা শাখার শফিক।
কমিটির ডাকা শান্তিপূর্ণ হরতালে পুলিশের বর্বরচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কমিটির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শ.ম. কামাল, সদস্য মাসুদ ফকরী খোকন, হামিদা বেগম প্রমুখ।
জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেছেন, দমন পীড়ন, গ্রেপ্তার আর লাঠিচার্জ করে আন্দোলন থামানো যাবে না।
এ সময় তিনি জানান, ভোর ৫টা থেকে পুলিশ তাদের নেতা-কমীদের উপর হামলা চালায় এবং ধর পাকড় শুরু করে।
তিনি বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের হামলায় আমাদের অর্ধশতাধিক কর্মী আহত হয়েছেন। জনগণ যখন তাদের সম্পদের মালিকানা চিহ্নিত করতে সক্ষম, তখন দমন পীড়ন গ্রেপ্তার লাঠিচার্জ আর হামলার হুমকি দিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না।‘
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, আগামী সোমবার বিকেল ৫টায় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই সরকারের দমন-পীড়ন, হামলা ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
যখন সমগ্র জাতি এমনই সোচ্চার তখন সরকারের কিছু চাটুকার, অপরিনামদর্শী লোক এই সব দেশপ্রেমিকদের টোকাই বলে সম্বোধন করে। তারমানে, এই সরকার এই বাংলাদেশের মানুষদেরি অপমান করেছে। এর পরিণাম মন্দ বৈ ভাল হবেনা।


সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





