somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্বিতীয় পর্বঃ জুলকারনাইন

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম অংশঃ

ঘটনার সূত্রপাত হয় নিরীহ একটি প্রশ্ন থেকে- কে সুখী? গ্রীসের বিখ্যাত আইনজ্ঞ সোলন তখন লিডিয়া ভ্রমণ করছিলেন। খ্যাতনামা এই পণ্ডিতকে কাছে পেয়ে তার সাথে রাজ্য পরিচালনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করার সুযোগ লিডিয়ার রাজা ক্রোসাস হেলায় হারাতে চাইলেন না। সুবিদিত এই ব্যাক্তিত্বকে তিনি সাদরে তার রাজদরবারে স্বাগত জানালেন। একদিন কথাপ্রসঙ্গে ক্রোসাস সোলনকে জিজ্ঞেস করলেন তার দেখা সবচেয়ে সুখী মানুষ কে। কিছুক্ষণ ভাবার পর সোলন উত্তর দিলেন, “আমার জানামতে টেলাস নামের এক এথেন্সবাসী পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ”।

“ভট্টাচার্য মহোদয়, কে এই টেলাস? তার সুখের উৎস কি?”

“মহারাজ, টেলাস একজন সাধারণ, শান্তিপ্রিয় মানুষ ছিলেন। পরিবার-পরিজন সহ নিরূপদ্রব জীবনে আগ্রহী একজন ব্যাক্তি। তিনি তার সন্তানদের মানুষ করে বার্ধক্য উপভোগ করছিলেন। তার সন্তানরা অনুগত ছিল, প্রতিবেশীরাও ছিল তার গুণগ্রাহী। তিনি যখন তার পরিবারবর্গের হাতে সমস্ত গৃহস্থালী তুলে দিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন তখন এথেন্স অন্য রাজ্যের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। জীবনের শেষ শ্বাসগুলো তিনি দেশের তরে ব্যয় করতে চাইলেন। যুদ্ধে যোগ দিয়ে বীরের বেশে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণত্যাগ করলে তার স্মরণে এথেন্সবাসী তার মৃত্যুস্থানে সমাধি গড়ে তোলে। মহারাজ, তিনি আমার দেখা সবচেয়ে সুখী মানুষ”।

ক্রোসাস ঠিক এই উত্তরটা আশা করছিলেন না। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন টেলাসের পর দ্বিতীয় সুখী ব্যাক্তিটি কে হতে পারে।

“ক্লেয়বিস ও বিটো নামের দুই গ্রীক ভাই তাদের শক্তি ও শারীরিক সামর্থ্যের জন্য দেশবাসীর কাছে বেশ সুপরিচিত ছিল। একবার তাদের মায়ের কোন এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেবার জন্য মোষটানা গাড়ি চেপে মন্দির যাবার কথা। তাদের নিজেরদের গাড়ি থাকলেও মোষ ভাড়া করতে হত। মোষ আসতে বিলম্ব হওয়ায় মাকে ভেতরে তুলে দিয়ে দুই ভাই শহরের মধ্য দিয়ে ভারি গাড়িটি টেনে মন্দিরের দিকে রওনা হয়। ব্যাপারটি দেখে পুরো শহর করতালি দিয়ে তাদের উৎসাহ দিতে থাকলে ছেলেদের জন্যে গর্বে মায়ের বুকটা ভরে যায়। টেলাসের পর, মহারাজ, এই দুই ভাই সবচেয়ে সৌভাগ্যবান ও সুখী মানুষ”।

এই উদাহরণেও রাজা সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। কিছুটা ক্ষোভের সাথেই সোলনকে বললেন, “ভট্টাচার্য মহোদয়, আপনি যাদের উদাহরণ দিচ্ছেন তারা ক্ষমতাহীন ও সম্পদহীন সাধারণ মানুষ। তারা কিভাবে পরাক্রমশালী রাজার চেয়ে সুখী হতে পারে তা আমার বোধগম্য হল না…”

সোলন ব্যাপারটি বুঝতে পারলেন, “মহারাজ, বর্তমানে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে ঐশ্বর্যবান ব্যাক্তি এবং অন্যতম পরাক্রমশালী সম্রাট। এতে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু মহারাজ, তা বিচার করে আপনাকে সুখী মানুষ বলা যাবে না। সামনে আপনার জীবনের অনেকটা সময় এখনো পড়ে রয়েছে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুখের দাবি করা অর্থহীন, বস্তুত মৃত ব্যাক্তিই প্রকৃত সুখী”।

সোলনের বক্তব্যে ক্রোসাস মনোক্ষুন্ন হলেন। সোলনের প্রতি তার আগ্রহে ভাটা পড়ল। সোলনও বুঝতে পারলেন তার সমাদরের তুলাদণ্ড হালকা হয়ে গিয়েছে। তিনি রাজধানী সারডিস ছেড়ে পুনর্যাত্রায় বের হন।

দেরি করে হলেও ক্রোসাস সোলনের বক্তব্য অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। ক্রোসাসের দুই পুত্র। বড়জন মূঢ় ও বধির, সুতরাং ছোটছেলে এটিসের উপরই ক্রোসাসের সব আশা-ভরসা টিকে ছিল। এক রাতে রাজা স্বপ্নে দেখলেন লোহার সূঁচালো অস্ত্রের আঘাতে এটিসের মৃত্যু হবে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি পুত্রশোকের আশঙ্কায় ভীত হয়ে পড়লেন। ভবিতব্য এড়ানোর জন্য ক্রোসাস যথাসম্ভব চেষ্টা করলেন- রাজপ্রাসাদ থেকে সব সূঁচালো অস্ত্র সরিয়ে ফেলা হল, এটিসকে সেনাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হল, এমনকি রাজকুমারের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে প্রায় গৃহবন্দী করে রাখা হল। এরকম সময় পাশের রাজ্য ফ্রিজিয়ার এক রাজকুমার, আদ্রাসটাস, ক্রোসাসের দরবারে হাজির হয়। আদ্রাসটাস তার রাজ্য থেকে বিতাড়িত। হতভাগা রাজকুমার দুর্ঘটনাবশত তার ভ্রাতাকে হত্যা করে। শাস্তি হিসেবে তার পিতা তাকে নির্বাসনে পাঠান। রাজ্য ও বান্ধবহারা অসহায় রাজকুমার সামান্য ঠাই পাবার আশায় মিত্ররাজ্য লিডিয়ায় পদার্পণ করে। ক্রোসাসও তাকে স্নেহের সাথেই গ্রহণ করেন, “তোমার রাজ্য সবসময় বন্ধুত্বের মর্যাদা রেখেছে। তার প্রতিদান হিসেবে কিছু করতে পারলে আমি নিজেই কৃতজ্ঞ থাকব। তুমি রাজপ্রাসাদেই থাকবে। আমাদের রাজকুমারও তোমার মত বন্ধু পেলে উপকৃত হবে”।

কিছুদিন পর রাজধানীর নিকটবর্তী প্রদেশ মাইসিয়াতে প্রকাণ্ডদেহী বন্য শুকরের উপদ্রব শুরু হয়। প্রশাসক পত্র মারফত আবেদন জানালেন যেন এটিসের সাথে শিকারী দল ও শিকারী কুকুর মাইসিয়াতে প্রেরণ করা হয়। রাজা এটিসকে প্রেরণ করতে অসম্মতি জানালেন। এতে রাজকুমার পিতার উপর বেশ ক্ষিপ্ত হল, “বাবা, তুমি কি চাও আমি নারীদের ভূষণ গ্রহণ করে অন্দরমহলে বসে থাকি? দেশের বিপদে রাজকুমার এগিয়ে না গেলে বাকিদের সামনে কি উদাহরণ তৈরি করা হবে? তোমার মৃত্যুর পর প্রজারা কি আমাকে মেনে নিতে পারবে? আমি কি নিজেকে সিংহাসনের উপযুক্ত ভাবতে পারব?”

“পুত্র এটিস, আমার এরূপ আচরণের কারণ আছে বৈকি। আমি স্বপ্নে দেখেছি লোহার সূঁচালো অস্ত্রের আঘাতে তোমার মৃত্যু হয়েছে। তুমি আমার বংশের শেষ ভরসা, তোমার প্রাণ বিপন্ন হয় এরকম কাজ তোমাকে কিভাবে করতে দেই বল?”

পিতার অজুহাত শুনে এটিস শান্ত হল, “তোমার পূর্বের উদ্ভট কাজের ব্যাখ্যা এখন পাওয়া যাচ্ছে। আমি তোমার মনে আঘাত দিতে চাইনি। কিন্তু বাবা, স্বপ্ন যে বাস্তব রূপ নিবেই তার নিশ্চয়তা কি? তাছাড়া আমি যুদ্ধে যাচ্ছি না, শুকর শিকারে যাচ্ছি। শুকরের দাঁত লোহার নয়। অন্তত এই ক্ষেত্রে তোমার শঙ্কা অমূলক”।

পুত্রের বক্তব্য বিবেচনা করে ক্রোসাস যাবার অনুমতি দিলেন। রাজকুমারেরা রওনা দেবার পূর্বে এটিসকে দেখে রাখার জন্য ক্রোসাস আদ্রাসটাসকে বারবার অনুরোধ করলেন। আদ্রাসটাসও রাজাকে যথাসম্ভব আশ্বস্ত করল। কিন্তু নিয়তির বিধি অব্যভিচারী। শিকারীরা যখন দলবল নিয়ে শুকরকে ঘিরে ফেলেছিল তখন আদ্রাসটাসের ছোড়া বল্লম লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে এটিসের বক্ষবিদ্ধ করে। তৎক্ষণাৎ এটিসের মৃত্যু হয়। উপকর্তার বিপদের হেতু হবার যাতনায় আদ্রাসটাসের মতিভ্রম হয়। এটিসের চিতাতে ঝাপিয়ে পড়ে সে নিজের অভিশপ্ত জীবনের ইতি টেনে দেয়।

আমি তখন পারস্য সম্রাট কুরুশের সামরিক উপদেষ্টা ও পারিষদ। অস্টিয়েজের মৃত্যুর বছরখানেক পার হয়েছে। অস্টিয়েজকে উৎখাত করার পর কুরুশ তাকে একবাটানার বাইরে একটি বাগানবাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখে। বছরখানেক আগে কুরুশ তাকে পারস্যে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। দুর্ভাগ্যবশতভাবে, পথে আততায়ীদের হাতে অস্টিয়েজ নিহত হন। মাতামহের মৃত্যুতে কুরুশ যারপরনাই ব্যথিত হয়। পুরো মিডিয়া তন্ন তন্ন করে খুঁজে অপরাধীদের শণাক্ত করে তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে। সায়াজারেস কুরুশের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে মিডিয়া তথা পারস্য সেনাবাহিনীতে সেনাপতির পদ গ্রহণ করে। নতুন পারস্য সাম্রাজ্যের রাজধানী আনশান। সাম্রাজ্যের সকল কর্মকাণ্ড সেখান থেকেই পরিচালনা করা হয়। কুরুশ সাম্রাজ্যের জন্য নতুন রাজধানী প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছিল। নতুন রাজধানীর জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। তখন পর্যন্ত একটি স্থান তালিকায় শীর্ষপদ দখল করে রেখেছে- পার্সাগাদে।

মহাদেশের পরিস্থিতি উত্তরোত্তর ঘোলাটে হচ্ছিল। নতুন সাম্রাজ্যে দায়িত্ব অনেক, সেনাবাহিনীর কার্যভার ছেড়ে দিতে হল। কুরুশের যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় আমার, হারপাগাস ও সায়াজারেসের উপস্থিতি অপরিহার্য ছিল। সময়ে সময়ে চিত্ত চঞ্চল হলেও কর্তব্য ত্যাগ করে ভ্রমণে বের হতে পারছিলাম না। হঠাৎ করেই উপায়টা পেলাম, গুপ্তচরবৃত্তি। এতে করে কুরুশের সাথে সাথে নিজেকেও সাহায্য করা হবে। পরামর্শটা কুরুশের মনে ধরলেও আমাকে তার পছন্দ হল না, “আমাকে পরিত্যাগ করার কোন কারণ ঘটেছে, টায়ারসিয়াস?”

“আমাকে ভুল ভাবছ, কুরুশ। তোমাকে এখানে সাহায্য করার জন্য হারপাগাস আছে, সে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সেনাপতিদের একজন৷ তোমার মত সায়াজারেসও আমার শিষ্য, তোমাদের দুইজনকে যা শিখিয়েছি তার মূল্য আমার উপস্থিতির চেয়েও অধিক। তাছাড়া গুপ্তচরবৃত্তিতে আমার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যে কারো চেয়ে বেশি। বসে বসে তুমি খাঁটি সংবাদটা পাবে৷ খুব প্রয়োজন বোধ করলে ডেকে পাঠালেই আমি চলে আসব”।

আমার দশা দেখে হারপাগাস মুখ টিপে হাসছিল, “টায়ারসিয়াসকে ছেড়ে দাও, কুরুশ। বেচারা চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী থাকতে পারে না। এটা ওর ব্যাক্তিগত কোন এক রোগের উপসর্গ, আশা করি ভবিষ্যতে বৈদ্যরা এর প্রতিকার বের করবেন”, এরপর কিছুটা গম্ভীর স্বরে বলল, “পরিস্থিতি ভাল নয়। পুত্রশোকে ক্রোসাসের মতিভ্রম হয়েছে। তুমি জানো বোধহয়, ক্রোসাস তোমার মাতামহের শ্যালক। তার জীবদ্দশায় সম্পর্ক যাই থাকুক না কেন, আত্মীয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবার অজুহাতে সে একবাটানা আক্রমণ করতে পারে। তার কার্যকলাপের উপর নজর রাখা দরকার। আমিও টায়ারসিয়াসের সাথে একমত, একাজে সেই সবচেয়ে উপযুক্ত”।

পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে কুরুশও সম্মত না হয়ে পারল না, ঠাট্টার সুরে বলল, “কিন্তু টায়ারসিয়াস, তোমার কি গুপ্তচরবৃত্তির পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে? তোমার জীবনবৃত্তান্তে তো সেরকম কিছু লেখা নেই…”

কুরুশের ঠাট্টায় যোগ দিয়ে বললাম, “আমি বহুরূপী, সম্রাট, আমার ভেলকির কিয়দংশই আপনারা দেখেছেন। আমি ইন্দ্রের বিদ্যাপ্রাপ্ত, মায়াজালের কারিগর”। পুবে ভারতে ইন্দ্রকে দেবতার মর্যাদা দেয়া হলেও জরথুস্ত্র ধর্মে বিশ্বাসীরা তাকে অপদেবতা হিসেবে গণ্য করে। জরথুস্ত্র বিশ্বাসে আহুরামাজদা ছাড়া বাকি সবাই অপদেবতা, কিন্তু তাদের মধ্যে হিব্রুদের ধর্মীয় গোঁড়ামিটা নেই।

হাসি-তামাশার মধ্য দিয়ে বৈঠক শেষ হলেও সেখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হল। আমার দায়িত্ব ক্রোসাস ও লিডিয়ার সেনাবাহিনীর গতিবিধির উপর নজর রাখা, সায়াজারেস একবাটানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং হারপাগাসের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে যে কোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখা।

যত দ্রুত সম্ভব গোছ-গাছ করে লিডিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। লিডিয়া আমার কাছে অপরিচিত নয়। জেরুজালেম থেকে লিডিয়া ঘুরে মিডিয়ায় অস্টিয়েজের দরবারে পৌছেছিলাম। তখন ক্রোসাসের পিতা অ্যালিটেস লিডিয়ার সিংহাসনে অধীন। কিছুদিনের জন্য অ্যালিটেসের দরবারের মেহমান হবার সৌভাগ্য হয়েছিল। তখন লিডিয়া সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়।

অনেকদিন আগের কথা, লিডিয়া তখন হেরাক্লিদ রাজবংশের অধীনে। তৎকালীন হেরাক্লিদ রাজা ছিলেন ক্যান্ডোলাস। ক্যান্ডোলাসের স্ত্রী নিসিয়া ছিলেন জগদ্বিখ্যাত সুন্দরী, এ নিয়ে ক্যান্ডোলাসের গর্বের অন্ত ছিল না। সুযোগ পেলেই সভ্য ও অসভ্য, দুই ভাষায় স্ত্রীর সৌন্দর্যের প্রশংসায় মেতে উঠতেন। ক্যান্ডোলাসের এক অনুগত পরিচারক ছিল গাইজেস, রাজা তাকে সবসময়ই সাথে রাখতেন। একদিন স্বভাবসিদ্ধ প্রশংসাকালে ক্যান্ডোলাস গাইজেসকে এক প্রস্তাব দিলেন, “আমার মুখে শুনে নিসিয়ার সৌন্দর্য বুঝতে পারবে না, গাইজেস। তার রূপের বর্ণনা দেবার মত শব্দ আমার ভান্ডারে নেই। তার চেয়ে তুমি এক কাজ কর, আজ রাতে গোপনে আমাদের শোবার ঘরে এসো। নিসিয়া যখন পোশাক পাল্টাবে তখন তার রূপ গভীরভাবে উপভোগ কোরো। চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি তোমার লুকানোর ব্যবস্থা করে দিব”।

রাজার প্রস্তাব শুনে গাইজেস হতভম্ব হয়ে গেল। সে আতংকের সাথে বলল, “এ কি বলছেন প্রভু! এতো ঘোর পাপ! নারীর সম্মান খেলো করা জঘন্যতম অপরাধ, এ আইন সৃষ্টির সমান। আমি মেনে নিচ্ছি রাণী সুন্দরী, আমার মত নিচু জাতের কাছে তা প্রমাণ করার কোন প্রয়োজন নেই। দয়া করে এই কুচিন্তা দূর করুন, আর আমাকেও পাপাচার থেকে রেহাই দিন।”

ক্যান্ডোলাস গাইজেসকে আশ্বস্ত করে বললেন, “আরে কোন ভয় নেই, কিছু হবেনা। অন্তত এতটুকু তোমাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে আমার তরফ থেকে তোমার কোন ভয় নেই। আর রাণী? সে তো জানতেই পারবে না। আমি তার স্বামী, আমি তোমাকে অনুমতি দিচ্ছি, তোমাকে পাপ স্পর্শ করবে না।”

তারপরও গাইজেস বারবার রাজাকে অনুরোধ করল। কিন্তু ক্যান্ডোলাস তার অনুরোধে কর্ণপাত তো করলেনই না বরং আদেশ না মানলে তার গর্দান নেয়ার হুমকি দিলেন। অগত্যা সে রাজার আদেশ মানতে বাধ্য হল। ক্যান্ডোলাস গাইজেসকে অন্দরমহলের একটি খোলা দুয়ারের পিছে লুকিয়ে রাখলেন। শোবার সময় হলে রাণী অন্দরমহলে ঢুকে পোশাক বদলানোর সময় সেই দুয়ারে নড়া-চড়া দেখে গাইজেসকে চিনে ফেললেন। মত্ত রাজাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে নিসিয়া যা বুঝার বুঝে গেলেন। তার মন ঘৃণায় ভরে গেল। পরের দিন নিসিয়া গাইজেসকে ডেকে পাঠালেন। রাণী ঠাণ্ডা গলায় বললেন, “তোমাদের গত রাতের কর্ম সম্পর্কে আমি অবহিত। স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষ আমার নিরাভরণ দেহ উপভোগ করবে তা মেনে নেয়ার মত নারী আমি নই। হয় তোমাকে মরতে হবে অথবা রাজাকে। কাল এক অর্থে আমার স্বামী তোমার কাছে আমাকে সমর্পণ করেছে। এখন যদি তুমি রাজাকে হত্যা করে আমাকে বিয়ে কর তাহলে সব কিছু আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে”।

গাইজেস রাণীর কাছে অনেক অনুনয়-বিনয় করল। সে কথা দিল পরের দিনই সে রাজ্য ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু তাতে নিসিয়ার মন গলল না, বরং তিনিও রাজার মত শিরোচ্ছেদের হুমকি দিলেন। গাইজেস ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে পড়ল। আর কিছু না হোক ঈশ্বর প্রদত্ত প্রাণ আগে, উপরিলাভ হিসেবে নিসিয়ার মত অপ্সরীর সঙ্গ। গাইজেস গর্দান খোয়ানোর চেয়ে এই বন্দোবস্তকেই শ্রেয় মনে করল। রাণীকে জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু, কাজটা কিভাবে করব?”

“যে উপায়ে আমার দেহ দেখেছ সেভাবেই রাজাকে হত্যা করবে…”

সেই রাতে রাণীর সহায়তায় গাইজেস ক্যান্ডোলাসকে হত্যা করল। নিসিয়াকে বিয়ে করে সে লিডিয়ার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হল। পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ডেলফিতে সংবাদ পাঠানো হলে সেখান থেকে গাইজেসের পক্ষে রায় আসে। যাজকেরা জানালেন, ক্যান্ডোলাস অত্যান্ত গর্হিত কর্ম করেছেন, সে হিসেবে নিসিয়ার সিদ্ধান্ত উপযুক্তই বটে। তবে পঞ্চম প্রজন্ম গাইজেসের কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে। গাইজেস থেকে লিডিয়ার ভূমিতে মার্মনাদ রাজবংশের উত্থান ঘটে। ক্রোসাস সেই রাজবংশেরই সম্রাট।

হ্যালিস নদী- লিডিয়া, মিডিয়া ও সিলিসিয়া সাম্রাজ্যের সীমানা চিহ্নিতকারী এলাকা। হ্যালিসের কল্যাণে লিডিয়ার ভূমি ছিল সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উর্বর, তাছাড়া প্রাকৃতিকভাবেও সমৃদ্ধ, তবুও ক্রোসাসের আয়ের মূল উৎস ছিল বাণিজ্য। ভৌগোলিক অবস্থান লিডিয়াকে এসব সুবিধা প্রদান করেছিল। সমুদ্র পথে মহাদেশের সাথে গ্রীস নগরগুলো ও মিশরের যোগসূত্র লিডিয়ার অর্থনীতিকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ করেছে। সাম্রাজ্যের প্রধান দুইটি সমুদ্র বন্দর মিলেটিস ও ট্রয়। জলপথ ছাড়াও মহাদেশের অভ্যন্তরে, বিশেষ করে ব্যাবিলন ও টায়ারের সাথে, যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য এর সড়কপথগুলোও জালের মত পুরো সাম্রাজ্যে ছড়ানো। তার মধ্যে সুপ্রাচীন সড়কটি ছিল সারডিস থেকে গোর্ডিয়াম হয়ে নিনেভা ও সুসা পর্যন্ত বিস্তৃত। রাস্তাগুলো আমার পরিচিত। ভবঘুরে জীবনে অভ্যস্ত মানুষের কাছে প্রাসাদের চেয়ে রাজপথ বেশি পরিচিত হবে সেটাই স্বাভাবিক। পূর্বের ভ্রমণের স্মৃতিচারণ করতে করতে কিছুটা ধীরে ধীরে গ্যালাশিয়া প্রদেশের মধ্য দিয়ে ঘোড়সওয়ারী করছিলাম। গেল বার এই পথে চলার সময় আমার সঙ্গী ছিলেন তৎকালীন সম্রাট অ্যালিটেস ও রাজকুমার ক্রোসাস। অ্যালিটেস ইহলোক ত্যাগ করেছেন, ক্রোসাস এখন লিডিয়ার সম্রাট। আর আমি? আমি এখন কুরুশের সারথী, সে আমার অর্জুন; পারস্য কলিকে সাম্রাজ্য হয়ে ফুটতে সাহায্যকারী একজন আগন্তুক। রাত নামলে সীমান্তবর্তী একটি গ্রামের সরাইখানায় ঢুকে পড়লাম। গ্রামের সরাইখানাগুলো আমার অত্যান্ত প্রিয় জায়গা। তাজা খাবারের সাথে তাজা সংবাদ পাবার জন্য এর চেয়ে ভাল স্থান আর হতে পারেনা। শুকনো রুটি, মাংস ও মদিরা নিয়ে আয়েশ করে বসতেই বিভিন্ন ধরণের তথ্য আশে পাশে ভেসে আসতে লাগল। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য হল ক্রোসাসের ডেলফির শরণাপন্ন হওয়া। লিডিয়ার শাসকেরা বহু বছর ধরেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ডেলফির ভবিষ্যদ্বক্তাদের সেবা গ্রহণ করে আসছেন। শাসকেরা তো বটেই, এমনকি লিডিয়ার প্রজারাও রাজার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করার ক্ষেত্রে ডেলফির পানে তাকিয়ে থাকে। তৎকালীন সময়ে ছোট-বড় মিলে প্রায় সাত-আটটি এরকম আশ্রম ছিল। মহান সাগরের তীরবর্তী রাষ্ট্রগুলো এসব আশ্রমগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করত। সবগুলোর মধ্যে ডেলফি ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী।

ক্রোসাস প্রচুর উপহার-সামগ্রী সহ ডেলফিতে দূত প্রেরণ করেন। দূত আশ্রমে জানায় ক্রোসাস হ্যালিস পার করে মিডিয়া ও পারস্য আক্রমণে ইচ্ছুক, এক্ষেত্রে ভবিষ্যদ্বক্তারা কি পরামর্শ প্রদান করবে। আশ্রম থেকে ভবিষ্যদ্বাণী করা হল- “লিডিয়ার সম্রাট যদি হ্যালিস অতিক্রম করেন তাহলে বড় একটি সাম্রাজ্যের পতন ঘটবে। সম্রাটের উচিৎ হবে মিত্র রাজ্যকে তার অভিযানে অন্তর্ভুক্ত করা”।

ভবিষ্যদ্বাণী শুনে ক্রোসাস অত্যান্ত আনন্দিত হলেন। তিনি ডেলফিতে আরেক দফা উপহার প্রেরণ করেন। ডেলফির আশ্রম থেকেও কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মুফতে আরেকটি ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়- “মিডিয়ার সিংহাসনে আরোহণ করবে যেদিন কোন খচ্চর/ মহান ক্রোসাসের পরাজয় হবে সেই বছর”। দ্বিতীয় ভবিষ্যদ্বাণী শুনে ক্রোসাস যারপরনাই খুশি হয়েছেন। তিনি এই ভেবে আশ্বস্ত হলেন যে কুরুশের কাছ থেকে ক্রোসাসের বিপদের কোন কারণ নেই। আর যাই হোক কোন খচ্চর তো আর মিডিয়ার সম্রাট হতে পারে না। ক্রোসাস মিডিয়া আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে লাগলেন।

ক্রোসাস তিনটি কারণে মিডিয়া আক্রমণে আগ্রহী ছিলেন- প্রথমত, তার নিজের সাম্রাজ্য বৃদ্ধি করা; দ্বিতীয়ত, কুরুশকে প্রথম আঘাত করার সুযোগ না দেয়া; এবং, তৃতীয়ত, অস্টিয়েজের হয়ে প্রতিশোধ নেয়া। যতই সারডিসের নিকটবর্তী হচ্ছিলাম তথ্যের পরিমাণ ও গুরুত্ব ততই বেড়ে চলছিল। মাইসিয়াতে পৌছার পর জানতে পারলাম ক্রোসাসের সেনাবাহিনীতে স্পার্টার সৈনিকেরা যোগ দিবে।

গ্রীক রাষ্ট্র লেসিদোমোনিয়ার প্রধান শহর হল স্পার্টা। শহরটি পেলোপোনেসাস উপদ্বীপে সৈনিক তৈরির কারখানা। শিশুকাল থেকেই ছেলেদেরকে সৈনিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার সাথে সাথে বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। প্রথমে, শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খুঁতের জন্য পরীক্ষা করা হয়। খুঁত পাওয়া গেলে তাকে এ্যাপোসথেটা নামক স্থানে পরিত্যাগ করা হলে সেখানেই অরক্ষিত অবস্থায় শিশুর মৃত্যু হয়। সাত বছর বয়সেই বালকদের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। অনেকেই সে কঠোর প্রশিক্ষণ সহ্য করতে পারে না, কিন্তু যারা টিকে থাকে তারা হয়ে ওঠে অদম্য যোদ্ধা। আমার শহরে ভাড়াটে সৈনিকের পেশা বেছে নেয়ার কারণটা অর্থনৈতিক, কিন্তু স্পার্টাতে তা গৌরব ও সম্মানের বিষয়। পয়সার চেয়ে সম্মানকে তারা গুরুত্ব দেয় বেশি, এজন্য তারা মজুরি নিয়ে মাথা ঘামায় না। কোন রাজাকে সাহায্য করার আগে এরা যুদ্ধের ভার মাপে, নিয়োগকর্তার ট্যাক নয়- একিলিস বাইয়ে আক্রান্ত হুজুগে এক রাষ্ট্র।

গ্রীক ও মহাদেশীয়দের কাজিয়ার মূল কারণ নারী। ইতিহাসবিদরা এজন্য ফিনিশিয়দের দায়ী করে থাকেন। ফিনিশিয়রা ভারত সাগরের পাড় থেকে বিতাড়িত হয়ে টায়ারে তাদের ঘাটি গাড়ে। গ্রীস ও থিবস থেকে ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত বাণিজ্য পথ তাদেরই অবদান। বহু বছর আগে তারা আর্গোসে তেজারতি করার সময় সেখানকার রাজকন্যা আয়োকে অপহরণ করে মিশরে নিয়ে যায়। অবশ্য ফিনিশিয়দের দাবি রাজকন্যা নিজ থেকেই তাদের সাথে মিশরে গমন করে। বণিকদের বক্তব্য ছিল, কুমারী আয়ো তখন সন্তান সম্ভবা ছিল। লোকলজ্জার ভয়ে ফিনিশিয়দের সাথে মাতৃভূমি ত্যাগ করা ছাড়া তার কোন উপায় ছিল না। এর প্রতিশোধ হিসেবে ক্রীটের বণিকরা কোলচিসের ঈয়া বন্দর থেকে সেখানকার রাজকন্যা মিডিয়াকে হরণ করে। কোলচিসের রাজা গ্রীকদের কাছ থেকে রাজকন্যা ফেরতসহ ক্ষতিপূরণ চাইলে গ্রীকরা তা অযৌক্তিক দাবি বলে হেসে উড়িয়ে দেয়। তৎকালীন রীতি অনুযায়ী নারীঘটিত সমস্যাগুলি সম্মানের সাথে এড়িয়ে যাওয়া ছিল বুদ্ধিমানের কাজ। এসব ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে প্রিয়াম পুত্র প্যারিস মেনেলাউসের পত্নী হেলেনকে ভাগিয়ে নিয়ে আসে। তার ধারণা ছিল তার ক্ষেত্রেও অন্যথা হবে না৷ কিন্তু মেনেলাউসের অহংকার ও তার ভাই আগামেমননের লোভ তা হতে দিলনা। আগামেমনন সমগ্র গ্রীসকে একত্রিত করে ট্রয় আক্রমণ করে তা মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। মহাদেশীয় ইতিহাসবিদেরা পুরো ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক তকমা লাগিয়ে এর তীব্র সমালোচনা করেন। এরপর থেকেই পুবের সাথে গ্রীসের চিরস্থায়ী প্রতিযোগের সূচনা হয়। এত কিছুর পরও ক্রোসাস গ্রীসের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন- কিছুটা জোর করে, কিছুটা সন্ধির মাধ্যমে, আর কিছুটা বন্ধুত্ব স্থাপন দ্বারা। স্পার্টানরা ডেলফির বাণী সম্পর্কে অবহিত ছিল। ক্রোসাস প্রস্তাব পাঠালে খুশি মনেই তারা সাহায্য করতে রাজি হয়। এর অবশ্য একটা কারণ ছিল। কূল-দেবী আর্টেমিসের মন্দির তৈরির জন্য স্পার্টানদের স্বর্ণের প্রয়োজন ছিল। সে সময় তারা ক্রোসাসকে স্বর্ণের বিনিময়ে চুক্তি করার প্রস্তাব দেয়। ক্রোসাস প্রয়োজনীয় স্বর্ণ বিনামূল্যেই প্রদান করলে স্পার্টাও তাদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়।

মাইসিয়াতে বসেই ক্রোসাসের যুদ্ধপ্রস্তুতির খবর পাচ্ছিলাম। পুরো অভিযানের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল হ্যালিস পার করা। এতবড় সেনাবাহিনী নিয়ে হ্যালিসের মত নদী পার করা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু ক্রোসাস সহজেই সমস্যার সমাধান বের করলেন। সমাধানের নাম থ্যালেস- দার্শনিক ও প্রকৌশলী। খুব সম্ভবত থ্যালেসই প্রথম থিবসের পিরামিডের উচ্চতা পরিমাপ করেছে। মিত্র গ্রীক রাষ্ট্ররা থ্যালেসকে ক্রোসাসের কাছে উপহার হিসেবে প্রেরণ করেছে। দেখে খুশি হলাম, পৃথিবীর তাবৎ বড় শক্তিগুলো কুরুশকে সমীহের চোখে দেখছে। আমি গ্রীকদের যতটুকু চিনি তা থেকে এটা স্পষ্ট যে গ্রীকরা কুরুশকে বড় হুমকি হিসেবে গ্রাহ্য করছে। তাদেরকে টেক্কা দেয়ার মত কেউ একই আকাশের নিচে বাস করবে তা গ্রীকরা যে পছন্দ করে না সেটা একিলিস ও আগামেমননরা প্রমাণ করে দিয়ে গেছে। সামনাসামনি যুদ্ধে সম্ভব না হলে অন্য কারো সহযোগিতায়, তাও সম্ভব না হলে ভাষায় প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতেই হবে। তারা অজেয়- এই ভুল ধারণাকে দম্ভের সাথে জাহির করার কোন সুযোগই তারা হাতছাড়া করতে চায় না।

ক্রোসাসের হ্যালিস পার করার জোগাড় আখেরে কুরুশকেই সুবিধা দেবে বুঝে স্বস্তি পেলাম। হ্যালিস আমাদের জন্যও বড় প্রতিবন্ধকতা। পুরো পৃথিবী কুরুশকে একঘরে করে রাখার পরিকল্পনা করছে। গ্রীকরা যেমন ক্রোসাসের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তেমনি ব্যাবিলনও তার দিকে মৌখিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। অস্টিয়েজের রাজত্বকালে কিঞ্চিৎ উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও বড় শক্তিগুলোর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য ছিল। বছরের পর বছর সংঘর্ষের পর রাজপরিবারগুলোর মাঝে আন্তঃবিবাহের সুবাদে মহাদেশে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছিল। অস্টিয়েজ বিয়ে করেছিলেন ক্রোসাসের ভগ্নী আরিয়েসকে এবং নেবুচাঁদনেজার অস্টিয়েজের ভগ্নীকে জীবনসাথী করে পৃথিবীতে স্ত্রী প্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। ব্যাবিলন ও লিডিয়ার মধ্যে সবসময়ই সুসম্পর্ক বজায় ছিল। কিন্তু কুরুশের সিংহাসনে আরোহন পুরনো ভারসাম্যে বড় রকমের ধাক্কা দেয়। পুরনো শক্তিগুলো সেই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে কুরুশের বিরুদ্ধে একত্রিত হচ্ছিল। কুরুশের সামনে দুইটি রাস্তা খোলা- প্রতিরক্ষা বা আঘাত। ছোট থেকেই কুরুশ প্রথম আঘাতে বিশ্বাসী।

যতটাসম্ভব তথ্য জোগাড় করে ক্রোসাস সারডিস ত্যাগ করার আগেই মাইসিয়া থেকে সীমান্তের দিকে রওনা হলাম। মাইসিয়া থেকে আনশানের দূরত্ব চার-পাঁচদিন। আমার পরিকল্পনা ছিল ক্রোসাস হ্যালিস পার করে নদীতীরেই যেন পারস্য সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়৷ সীমান্ত পাড়ের পারস্য ফাঁড়ি থেকে আনশানে দূত প্রেরণ করলাম। দূত কুরুশকে তথ্যগুলো পৌছে দেবে। তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে সীমান্তের দিকে রওনা হবে। আমি সীমান্তেই তাদের জন্য অপেক্ষা করব। এর মধ্যে সীমান্তের নিরাপত্তা মজবুত করার কাজে হাত দিলাম। আশে পাশের প্রদেশগুলো থেকে সৈন্য জমায়েত করে তাদেরকে প্রস্তুত করতে লাগলাম। তাছাড়া প্রতিনিয়ত সীমান্তের উপর নজর রাখছিলাম। কিছুদিন পর লিডিয়ান সৈন্যবাহিনীকে হ্যালিসের অপর প্রান্তে জমায়েত হতে দেখা গেল।

থ্যালেস কিভাবে হ্যালিস জয় করে তা দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। নদীর এপাড়ে একটি গোপন জায়গা থেকে থ্যালেসের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছিলাম৷ প্রথম দিন থ্যালেস নদীর পাড় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করল। পাড়ের একমাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত বারবার পায়চারি করে হিসেব-নিকেশ করে নিচ্ছিল। নদীর পাড়গুলোর সব জায়গা সমতল ছিল না, কিছু কিছু নিম্নভূমি ছিল। পরের দিন থেকে থ্যালেস শ্রমিকদের নিচু অংশগুলোতে খাল কাটার নির্দেশ দিল। থ্যালেস কি করতে চায় বুঝে গেলাম। নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে সৈন্য পারাপারের জন্য খাঁড়ি বানাতে চায়। মুসাকে ঈশ্বর সমুদ্রের মধ্য দিয়ে রাস্তা করে দিয়েছিলেন। ক্রোসাস তো আর মাসিহা নয়, রাস্তা বানানোর কাজটা তার নিজেকেই করতে হবে, এক্ষেত্রে থ্যালেসকে ক্রোসাসের ব্যাক্তিগত মাসিহা বললে ভুল হবে না। প্রায় দশদিনের অমানুষিক পরিশ্রমের পর লিডিয়া বাহিনী হ্যালিস অতিক্রম করে মিডিয়ার মাটিতে পা দিল।

গ্রীক সাহিত্যের সবচেয়ে গর্বের উপকরণ তাদের নাটকগুলো। ইতিহাস নিয়ে রচিত তাদের বিয়োগান্ত নাটকগুলোতে নাট্যকারেরা সত্য-মিথ্যার মশলা মিশিয়ে তা ইতিহাসের চেয়েও বেশি নাটকীয় করে তোলার উদ্যোগ করে। এরা যে কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই৷ নাটকীয়তা সৃষ্টির জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার যে প্রয়োজন নেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নাট্যকার কালে কালে তা প্রমাণ করেছেন- সেই নাট্যকার স্বয়ং ঈশ্বর। ক্রোসাস বাহিনী মিডিয়ার মাটিতে পদার্পণের সাথে সাথে কুরুশ সীমান্তে হাজির হল।

মিডিয়া-পারস্য সাম্রাজ্যের কাপাদোসিয়া প্রদেশের সীমান্ত তীরবর্তী এলাকা টিরিয়া৷ দুই বাহিনী টিরিয়ার সমভূমিতে পরস্পরের মুখোমুখি হল। লিডিয়া ও ফ্রিজিয়ার সেনাবাহিনী, এবং ব্যাবিলন, আরব যাযাবর, মিশর, দার্দানেলিস ও গ্রীক ভাড়াটে সৈন্য, সব মিলিয়ে প্রায় দুই লক্ষাধিক সৈন্যের বিরুদ্ধে অর্ধ লক্ষের কিছু বেশি পারস্য সেনাবাহিনী। প্রচণ্ড যুদ্ধ হল৷ সংখ্যায় কম হলেও পরাক্রমশালী পারস্য বাহিনী ছেড়ে কথা বলল না। কুরুশ ও আমি শিবির থেকে কৌশলগত নির্দেশনা প্রেরণ করছিলাম। হারপাগাস ও সায়াজারেস যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ পরিচালনা করছিল। দুই সেনাপতির অবদানে পারস্য বাহিনী সংখ্যাগরিষ্ঠ বাহিনীর বিরুদ্ধে সমান টক্কর দিচ্ছিল। তাদের বজ্র সমান উপস্থিতি পারসিক সেনাদের মনে সাহস জুগিয়ে চলছিল। গ্রহণের যুদ্ধের মত এ যুদ্ধও কোন নিষ্পত্তি পেল না। সন্ধ্যার পর হিসেব-নিকেশ করে দেখা গেল চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না পাওয়া গেলেও কৌশলগতভাবে কুরুশের জয় হয়েছে, কারণ ক্রোসাস পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে। লিডিয়া শিবিরে কি হিসেব হয়েছে জানি না, কারণ পরের দিন তারা হ্যালিস অতিক্রম করে সারডিসের দিকে রওনা হল।

পারস্য শিবিরে তখন সেনাপতিদের আলোচনা চলছে। ক্রোসাস কৌশলগত অপগমন করেছে নাকি সারডিসে ফিরে গেছে তা জানার প্রয়োজন ছিল। কুরুশ আমাদের পরামর্শ চাইছিল, “যুদ্ধ যত সহজ হবে ভেবেছিলাম তত সহজ হয়নি, কি বল?”

হারপাগাস বিতৃষ্ণার সাথে বলল, “ক্রোসাস ফিরে না গেলে কি হত বলা খুব মুশকিল। ক্রোসাসের পয়সা আছে, কাউকে ভাড়া করতে বাদ রাখেনি৷ মিদাসের স্বর্ণ ভালই কাজে লাগাচ্ছে…”

“মিদাসের স্বর্ণ আবার কি?” কুরুশ অবাক হল।

“অনেক কাল আগে ফ্রিজিয়ার এক রাজা ছিল মিদাস। দেবতাদের সেবার পরিবর্তে দেবতারা তাকে বর প্রদান করেন যে সে যা ছোঁবে তা স্বর্ণে পরিণত হবে। কিন্তু বর দিনে দিনে অভিশাপে পরিণত হয়, তার খাদ্য পর্যন্ত স্বর্ণে রূপান্তরিত হচ্ছিল। ক্ষুধায় মুমূর্ষু অবস্থায় মিদাস দেবতাদের কাছে বর তুলে নেয়ার জন্য আর্জি জানায়। তার বিপত্তি দেখে দেবতারা তাকে প্যাক্টোলাস নদীতে স্নান করতে বলেন। নদী অবগাহনের পূর্বে মিদাসের ছোঁয়ায় তীরবর্তী বহু বস্তু স্বর্ণে রূপান্তরিত হয়, পরে সেগুলো নদীতে ভেসে যায়। আর এই প্যাক্টোলাস ফ্রিজিয়া থেকে লিডিয়ায় প্রবেশ করেছে। সেই রূপান্তরিত বস্তুগুলো, বিশেষ করে নদীর সোনালি ধূলিকণা, ক্রোসাসের রাজভান্ডার সমৃদ্ধ করেছে”।

“তাহলে লিডিয়া দখল করতে পারলে ভালই লাভ হবে দেখছি…”

“স্বর্ণের জন্য না কুরুশ, লিডিয়া দখল না করলে ক্রোসাস শান্তিতে থাকতে দিবে না”।

“জীবন শান্তিতে কাটাতে চাইলে সম্রাট হতাম না, হারপাগাস। আনশানে আমাদের ছোট্ট ঘরে যথেষ্ট শান্তি আছে। কালে কালে পৃথিবীতে পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, আমার ইচ্ছা এবার আমি সেই পরিবর্তনের প্রধান প্রভাবক হব। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শান্তি দুয়ারের বাইরেই থাক, আমার আত্মার জন্য অপেক্ষা করুক। টায়ারসিয়াস, তোমার দূত খবর নিয়ে এসেছে?”

“কিছুক্ষণ আগে এসেছে। ক্রোসাস সারডিসে ফিরে গেছেন। তার ভাড়াটে সৈন্যরাও যার যার দেশে ফিরে গেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি হওয়া সত্ত্বেও ক্রোসাস শীতে ভাড়াটে সৈন্যদের ভরণ-পোষণের খরচ বহন করতে চাইবেন না। তিনি তাদের আদেশ দিয়েছেন বসন্তে আসার জন্য”।

কুরুশ অবাক হল, “বসন্তে কেন?”

“এই এলাকায় শীতে যুদ্ধ করা একটু কঠিনই। বিশেষ করে সৈন্যদের খাদ্যের জোগান দেয়া বেশ দুরুহ ব্যাপার। যুদ্ধ করলে দুই পক্ষেরই অসুবিধা হবে”।

কিছুক্ষণ ভাবার পর কুরুশ বলল, “ক্রোসাস তো আমাদের কাজ সহজ করে দিল। আমরা সারডিস ঘুরতে যাব। সেখানে ক্রোসাসের সৈন্যসংখ্যা কম থাকবে। আক্রমণ করার জন্য এর চেয়ে ভাল সুযোগ হয় না”।

আমি কুরুশের প্রস্তাবে সম্মত হতে পারলাম না, “উহু,এটা যুদ্ধরীতির পরিপন্থী। যুদ্ধের সময় হল বসন্ত থেকে শরৎকাল। তাছাড়া যুদ্ধ করতে হলে সারডিস নগরীর বাইরে সমতল এলাকায় করতে হবে৷ নিজ এলাকায় ক্রোসাস আলাদা সুবিধা পাবে। তাছাড়া এই মুহূর্তে আমাদের অশ্বারোহীর সংখ্যা অনেক কম। সমতলে ক্রোসাসের অশ্বারোহী বাহিনী সহজেই আমাদের পরাস্ত করবে।”

“সেটা দেখা যাবে, আগে যাই তো…”

বিরক্ত হয়ে বললাম, “তুমি কি সবাইকে আত্মহত্যা করাতে নিয়ে যাবে?”

কুরুশ হেসে বলল, “তোমার সমস্যার সমাধান আমার কাছে আছে, টায়ারসিয়াস। সেই সমাধানের নাম উট”।

“উট!”

“হ্যাঁ, উট।”

কুরুশ তার যুদ্ধ কৌশল খোলাসা করে বলল না। ক্রোসাস সারডিস পৌছানোর দুই-একদিন পরই আমরা পৌছাই। আমাদেরকে স্বাগত জানানোর জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। নগরীর বাইরে থিম্ব্রার ময়দানে দুই বাহিনী মুখোমুখি হল। ক্রোসাসের ভাড়াটে সৈনিকদের অধিকাংশই দেশে ফেরত চলে গেলেও মিশরের ভারি পদাতিক বাহিনী রয়ে গিয়েছিল। এ ধরণের বাহিনীকে গ্রীকরা বলত ফ্যালান্কস্। এছাড়া ছিল লিডিয়ার জগদ্বিখ্যাত অশ্বারোহী, তীরন্দাজ, রথ ও পদাতিক বাহিনী। সব মিলিয়ে প্রায় লক্ষাধিক সৈন্য। আমাদের সেনাবাহিনীর সম্মুখভাগে ছিল স্পারাবারা বা ভারি পদাতিক বাহিনী, তাদের ঠিক পিছেই টাকাবারা বা সাধারণ পদাতিক বাহিনী, এবং তৃতীয় সারিতে বিখ্যাত পারসিক তীরন্দাজ বাহিনী। ডানপ্রান্তে ছিল কুরুশের উটবাহিনী, এবং বাম প্রান্তে ছিল আমার গোপন অস্ত্র, আমার নিজস্ব সৈন্য অ্যামাটাকা, দশ হাজার সৈন্য সংবলিত অক্ষয় বাহিনী। অক্ষয় বলার কারণ এদের সংখ্যা কখনো দশ হাজারের নিচে নামে না, মৃত সৈন্যের শূন্য স্থান পূরণের জন্য সর্বদাই অতিরিক্ত সৈন্য অপেক্ষমান থাকে। নামটা কুরুশের দেয়া, সে ঠাট্টা করে বলে নামকরণে সে আমার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত। ক্রোসাসই প্রথম আক্রমণ করে। তার পদাতিক বাহিনী ও মিশরীয় ফ্যালান্কস্ আমাদের সম্মুখভাগে স্পারাবারাদের উপর চড়াও হবার চেষ্টা করে। কিন্তু তৃতীয় প্রতিরক্ষা সারির তীরন্দাজদের আঘাতে লিডিয়ার আক্রমণ ভাগ বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। লিডিয়ার পদাতিক বাহিনী আক্রমণ চালিয়ে গেলেও ফ্যালান্কস্ বাহিনী কৌশলগত সুবিধার জন্য পিছু হটে যায়। স্বাভাবিকভাবেই স্পারাবারা ও টাকাবারা অগ্রগামী লিডিয়ার পদাতিক বাহিনীকে রীতিমত কচুকাটা করে। এমতাবস্থায় যুদ্ধে কিছুটা নিশ্চল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতিকে গতিশীল করতে রথ বাহিনীর সেনানায়ক আব্রাটাডাস লিডিয়ার রথবাহিনী ও মিশরীয় ফ্যালান্কস্- এর উপর চড়াও হয়। আমাদের রথ বাহিনী আকারে ছোট ছিল, তার উপর মিশরীয়রা বল্লম হাতে যুদ্ধ করছিল। লিডিয়ার রথবাহিনীর অন্তর ফুটো করে আব্রাটাডাস মিশরীয় সৈন্যদের চক্রে প্রবেশ করলে পুরো বাহিনীসহ সেই বীর, আত্মত্যাগী যোদ্ধার মৃত্যু হয়। কিন্তু সে তার উদ্দেশ্য ঠিকই পূরণ করেছিল। চক্রের কেন্দ্রে আক্রমণ হতে দেখে ক্রোসাস তার বাম প্রান্তের অশ্বারোহী বাহিনীকে সামনে এগিয়ে দেয়। দুর্ভাগ্যবশত তারা আমাদের উট বাহিনীর সামনে পড়ে। কুরুশের উটতত্ত্বের ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখার মত ছিল। বোঝা গেল শৈশবে মেষপালের প্রশিক্ষণ তার ভালই কাজে লেগেছে। লিডিয়ার হতবম্ভ ঘোড়াগুলো অপরিচিত কিম্ভুতকিমাকার প্রাণীর দর্শনে বা গন্ধে সামনে এগোতে চাচ্ছিল না। এ সুযোগে আমাদের সম্মুখভাগের স্পারাবারা ক্রোসাসের বাম প্রান্তের অশ্বারোহী বাহিনীর উপর চড়াও হয়। তখন ক্রোসাসের সৈন্য বলতে মিশরীয় ফ্যালান্কস্ ও ডানের অশ্বারোহী বাহিনী। এবার আমি আমার অক্ষয় বাহিনী অশ্বারোহীদের বিরুদ্ধে এগিয়ে দেই। বিগত চার বছর ধরে আমি এই বাহিনীকে গড়ে তুলছিলাম। আমি দাবি করে বলতে পারি এরা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সৈন্যদল। আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যা জমেছিল এদের তৈরি করতে তার সব বিদ্যাই ব্যবহার করেছিলাম। অ্যামাটাকাদের আপাদমস্তক বর্ম ও অপার্থিব মুখোশ সম্বলিত শিরণাস্ত্র যে কোন যোদ্ধার বুকে মৃত্যুর ভয় জাগাতে সক্ষম। অ্যামাটাকাদের হাতে ক্রোসাসের শেষ অশ্বারোহী বাহিনীর পতন ঘটলে বাকি সৈন্যদের নিয়ে তিনি পিছু হটে রাজধানী অবরুদ্ধ করে দেন। মিশরীয়রা তখনও যুদ্ধক্ষেত্রে। তখনও তারা বৃত্তাকার চক্র গঠন করে আমাদের সম্মিলিত বাহিনীর আক্রমণ পরাক্রমের সাথে প্রতিহত করে যাচ্ছিল। তাদের সাহস দেখে কুরুশ আক্রমণ স্থগিত করার আদেশ দিল, “টায়ারসিয়াস, মিশরীয় বাহিনীর সেনানায়ককে আমার কাছে আসতে বল।”

সেনানায়কের নাম সেটি। প্রায় হাজার বছর আগে সম্রাট রামসেসের সেনাবাহিনীতে সেটি নামের একজন সেনাপতি ছিলেন। হয়ত তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এই সেনানায়কের নামকরণ করা হয়। সেটিকে উদ্দেশ্য করে কুরুশ বলল, “তোমাদের বীরত্বে আমি মুগ্ধ। আমি ভেবেছিলাম মিশরের সোনালী দিন ফুরিয়ে গেছে। তোমাদের মত বীর থাকতে মিশরের এরকম দশা কেন হল বল তো?”

সেটি কুরুশকে কুর্নিশ করে বলল, “হে পারস্য সম্রাট, যুদ্ধ বন্ধ করে আমাদেরকে বীর দাবি করা কি প্রহসন নয়? মানুষ বীর হয় মৃত্যুর পর, আমাদের কাছে শহীদ ও বীর সমার্থক। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমরা শুধুই যোদ্ধা।”

“একজন যোদ্ধা হিসেবে তোমাদের অনুভূতির প্রতি আমার পূর্ণ সম্মান আছে। কিন্তু সম্রাট হিসেবে আমি স্বার্থপর। ভাল কিছু চোখে পড়লে তা পাবার অদম্য ইচ্ছাকে দমন করতে পারি না। তাছাড়া সেনাপতি হিসেবে এরকম যোগ্য সেনাদলকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিতে পারি না।”

সেটি মুখ তুলে জিজ্ঞেস করল, “সম্রাট কি মিশরীয়দের নিজের বাহিনীতে পেতে চান?”

“কেন? সেটা সম্ভব নয়? তোমরা ভাড়াটে সৈনিক। যতদূর জানি ভাড়াটে সৈনিকদের কোন মাতৃভূমি নেই,” তারপর আমার দিকে ইঙ্গিত করে বলল, “এই ভদ্রলোক নিজেও একজন ভাড়াটে সৈন্য। আমার সেবার পরিবর্তে তোমরা ধন-সম্পদ তো পাবেই তাছাড়া তোমাদের আমি একটা মাতৃভূমি উপহার দিব। শেষ বয়সে তো বটেই, বিনিময়ে যা দিব তা তোমাদের উত্তরপুরুষেরও কাজে লাগবে।”

কিছুক্ষণ ভাবার পর সেটি বলল, “আপনার মত সম্রাটের অধীনে যুদ্ধ করতে পারলে ধন্য থাকব। অন্য শাসকেরা আমাদের যুদ্ধের হাতিয়ার ছাড়া কিছু ভাবেন না। এই প্রথম কোন সম্রাট আমাদের দক্ষতার মর্যাদা দিতে চাইছেন। তবে, একটি শর্ত, সম্রাট, দয়া করে লিডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমাদের শামিল করবেন না। লিডিয়ার কাছ থেকে আমরা পয়সা নিয়েছি, বেইমানি করতে পারব না।”

কুরুশ উৎফুল্ল হয়ে বলল, “তোমাদের তো ধীরে ধীরে বেশি পছন্দ করে ফেলছি। টায়ারসিয়াস, দেখ, আনুগত্য ও সততা কাকে বলে। আমি তো ভয়ে ভয়ে থাকি তুমি কবে উড়াল দিবে। সেটি, আমি কথা দিচ্ছি ক্রোসাসের বিরুদ্ধে তোমাদের যুদ্ধ করতে হবে না। তোমরা শিবিরে গিয়ে বিশ্রাম নাও, তোমাদের জন্য এখানকার যুদ্ধ শেষ। সারডিস আমার নিজের বাহিনী সহজেই দখল করে ফেলবে।”

কুরুশ যতটা সহজ ভাবছিল সারডিস দখল প্রকৃতপক্ষে ততটা সহজ ছিল না। সারডিসের দেয়ালগুলো ছিল বেশ উঁচু। কিংবদন্তি অনুযায়ী ম্যালেস নামের লিডিয়ার এক রাজার স্ত্রী সিংহাকৃতি শিশুর জন্ম দেন। ডেলফি থেকে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় যে শিশুটিকে কোলে নিয়ে সারডিসের দেয়াল প্রদক্ষিণ করলে তা হবে দুর্ভেদ্য। এক পরিচারক শিশুটিকে নিয়ে প্রদক্ষিণ করার সময় নগরীর পিছে মুলোস পর্বত সংলগ্ন অংশটি এই ভেবে বাদ দেয় যে তা পূর্ব থেকেই দুর্ভেদ্য। গল্পটি জানা ছিল, এ্যালিটেস নিজেই আমাকে গল্পটি বলেছিলেন। মুলোস পর্বতের অংশে প্রহরী মোতায়েন করে রাখলাম। এর মধ্যে চৌদ্দদিন পার হয়ে গেছে। কুরুশ কিছুটা অধৈর্য হয়ে পড়েছে। সে নগরীর দুয়ার ভাংগার কথা ভাবছিল। আমি তাকে কোনমতে আটকে রেখেছি। এরকম একটা সময়ে প্রহরারত সৈন্যরা দেয়ালের দুর্বল স্থানের খবর নিয়ে আসে৷ তাদের ভাষ্যমতে, দেয়ালে প্রহরারত এক সৈনিকের শিরণাস্ত্র দেয়ালের এপাশে পড়ে গেলে সে পর্বতের পাশের অংশের একটি ফোঁকর দিয়ে বের হয়ে তার শিরণাস্ত্র উদ্ধার করে আবার প্রহরায় ফিরে যায়। ফোঁকরটি ছোট হলেও তা দিয়ে সৈন্য প্রবেশ করানো যাবে৷ একথা কুরুশকে জানাতেই তার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল।

সেই দিনই রাতের আধাঁরে কিছু সৈন্য ঢুকে প্রধান নগরদ্বার খুলে দেয়। আমরা সেনাবাহিনী নিয়ে নগরে প্রবেশ করি৷ কুরুশের স্পষ্ট আদেশ ছিল যেন পারস্যের কোন সৈনিকের অস্ত্র সাধারণ নাগরিকের রক্তে রঞ্জিত না হয়৷ নগরপাল, প্রহরী ও সৈন্যদের পরাস্ত করার পর রাজপ্রাসাদে ঢুকে ক্রোসাস ও অভিজাতদের বন্দী করা হয়। নগরের ভেতরে তেমন কোন প্রতিরোধ ছিল না। সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পর নগরের প্রধান চত্ত্বরে শেকল পরিহিত অবস্থায় বন্দীদের আনা হয়। কুরুশের নির্দেশে বড় চিতা তৈরি করা হয়েছিল। নগরবাসী জমায়েত হবার পর ক্রোসাস ও চোদ্দ জন অভিজাতকে চিতায় তুলে দেয়া হল। সৈন্যরা চিতায় আগুন জ্বালানোর জন্য এগোতেই ক্রোসাস উচ্চস্বরে বিলাপ করতে লাগলেন, “সোলন! সোলন!”

ক্রোসাসের বিলাপ শুনে কুরুশ আগ্রহী হয়ে ওঠে। সে সৈন্যদের অপেক্ষা করার নির্দেশ দেয়। ক্রোসাসকে চিতা থেকে নামিয়ে কুরুশের সামনে আনা হল। কুরুশ ক্রোসাসের বিলাপের ব্যাখ্যা জানতে চাইল, বিশেষ করে সোলনের প্রসঙ্গে। আমি দোভাষীর দায়িত্ব পালন করছিলাম। ক্রোসাস বিশদভাবে সোলন সম্পর্কিত গল্পটি বর্ণনা করলেন। ক্রোসাসের গল্প শুনে কুরুশ তার মৃত্যুদন্ড রদ করল। শুধু তাই নয়, সেনাপতি ট্যাবালাসকে লিডিয়াতে প্রশাসক নিযুক্ত করে পারস্যে ফেরার সময় তাকে সঙ্গী করে নিল।

আনশানে পৌছে ক্রোসাস তার বন্দীবস্থার শেকলগুলো ডেলফিতে পাঠিয়ে দিলেন। কারণ জানতে চাইলে বললেন, ডেলফিই তার সর্বনাশের মূল। ডেলফির ভবিষ্যদ্বাণীর উপর ভিত্তি করেই তিনি তার পারস্য অভিযান পরিচালনা করেন। স্বভাবসিদ্ধভাবে আগ্রহী কুরুশ দূত মারফত ডেলফির ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর ব্যাখ্যা চাইল। দূতের মাধ্যমে ডেলফি তাদের সাফাই পাঠালো। তাদের প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী ভুল ছিল না- একটি বড় সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছে, তবে সেটা লিডিয়ার সাম্রাজ্যের। উপরন্তু, ক্রোসাসের পূর্বপুরুষ গাইজেসের পাপের কর্মফল ভোগ বাকি ছিল। আর যা কিছু হোক না কেন, ক্যান্ডোলাস তার মনিব, গাইজেস মনিব হত্যার দায় এড়াতে পারে না। দ্বিতীয় বাণীর খচ্চর কুরুশ নিজে- পারসিক পিতার ঔরস ও মিড মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া সংকর সন্তান। ব্যাখ্যা শুনে কুরুশ হাসিতে ফেটে পড়ল, “আমি তাহলে খচ্চর?”

কুরুশের হাসি দেখে ক্রোসাসও না হেসে পারলেন না, “আমি কিন্তু তোমাকে খচ্চর বলিনি, কুরুশ। তবে ওদের ব্যাখ্যা ফেলে দেয়ার মত না। আমার কোন অভিযোগ নেই, তবে আমি আর ভবিষ্যদ্বাণীতে ভুলতে রাজি নই। অনেক হয়েছে, আর না”।

“তুমি তো দুনিয়ার অনেক কিছু দেখেছ, টায়ারসিয়াস। ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে তোমার মতামত কি?”

“দুনিয়ার সব কিছু যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, সম্রাট। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে ভবিষ্যদ্বাণী ও গণার প্রচলন, সব যে ভুল বা মিথ্যে তা নয়। জিওশুদ্র ভবিষ্যদ্বাণী পেয়েছিলেন বলেই মানবজাতি মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পেয়েছে। ফারাওয়ের স্বপ্নে পাওয়া দৈববাণী মিশরকে দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা করেছিল। সব ভবিষ্যদ্বাণী ফেলে দেয়ার মত নয়। হিব্রুদের মধ্যে ভবিষ্যদ্বাণীর প্রচুর প্রচলন আছে, মোটামুটিভাবে ফলে সবই”।

“হিব্রুদের ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে কিছু বল দেখি। ডেলফিরগুলো তো জানলাম, অন্যদেরগুলোও কিছু শুনি”।

“আমার ব্যাক্তিগত আগ্রহ আছে এরকম বিশেষ একটা ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে বলি। শোনো তাহলে...জেরুজালেমে একজন পুরোহিত ছিল, জেরেমিয়া। হিব্রুরা যখন ইহ্ওয়ার প্রদর্শিত পথ ভুলে পাপ ও অনাচারে মেতে উঠতে শুরু করেছে তখন নেবুচাঁদনেজার জেহোকিমকে সরিয়ে জেডেকিয়াকে সিংহাসনে বসান। জেডেকিয়ার রাজত্বে পাপাচার না কমে বরং বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরকম সময় জেরেমিয়া জেরুজালেমের জনগণকে সাবধান করতে শুরু করে, ঈশ্বরের পথভ্রষ্ট হতে নিষেধ করে। এতে কিছু মানুষ শঙ্কিত হয়, আবার কেউ কেউ ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। জনগণকে ফুসলানোর দায়ে জেরেমিয়াকে গ্রেপ্তার করে বিচারকদের সামনে আনা হয়। বিচারকদের সামনে জেরেমিয়া তার ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করে, “আমরা ঈশ্বরের পথ থেকে সরে গিয়েছি। ঈশ্বর অবাধ্যতা অপছন্দ করেন। আমাদের শাস্তি দেয়ার জন্য ঈশ্বর নেবুচাঁদনেজারকে প্রেরণ করেছেন। আমরা যদি সত্য পথে না ফিরি ঈশ্বর নেবুচাঁদনেজারকে দ্বিতীয়বার প্রেরণ করবেন। তখন শুধু মানুষ নয়, ঈশ্বরের মন্দিরও ধূলোয় মিশে যাবে”।

জেরেমিয়ার কথা বেশিরভাগ মানুষ পাগলামি বলে উড়িয়ে দিল। উড়িয়ে দেয়ার অবশ্য কারণ ছিল। তৎকালীন রাজা জেডেকিয়া স্বয়ং নেবুচাঁদনেজারের বসানো পুতুল। মুখে না বললেও তারা সেটাই বিশ্বাস করত। জেরেমিয়াকে গৃহবন্দী করে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়া হল। কিন্তু তাই বলে জেরেমিয়া চুপ থাকলো না। সে তার ভৃত্য বারুখের মাধ্যমে তার বাণী প্রচার করতে থাকল। সে সময় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কপট পুরোহিতরা জেরেমিয়ার বাণীকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিল। জেরেমিয়া গৃহবন্দী থাকার সময় তার চাচাত ভাই তার কাছে কিছু জমি বেচতে আসে। সঠিক উপায়ে স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময়ে জেরেমিয়া জমির কাগজ-পত্র করে বারুখকে আদেশ দেয় যাতে তা সংরক্ষিত করা হয়। তার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী নেবুচাঁদনেজার জেরুজালেম মাটিতে মিশিয়ে দেয়ার সত্তর বছর পর একজন মাসিহা আসবেন যিনি আবার জেরুজালেম পুণঃপ্রতিষ্ঠা করবেন। তখন জমির প্রমাণ দেখানোর প্রয়োজন হবে।

তার কিছুদিন পর প্রতিপক্ষদের ইন্ধনে জেরেমিয়াকে কারাগারের পাতালপুরীতে প্রেরণ করা হয় এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়। জেরেমিয়ার ভবিষ্যদ্বাণীর অর্ধেক ফলেছে, বাকিটা মাসিহার হাতে”।

আমার কথা শুনে কুরুশ অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকল। তারপর ভুরু কুঁচকে বলল, “ব্যাবিলন কি বেশি কঠিন হয়ে যাবে না?”

“ঈশ্বরের ইচ্ছায় সবই সম্ভব…”

কিন্তু সময় ব্যাবিলন আক্রমণ করার জন্য উপযুক্ত ছিল না। সারডিসে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে, পুবে সিদিয়ানরাও ঘন ঘন সীমান্তে হানা দিচ্ছিল। পার্সাগাদের পরিবর্তে কৌশলগত দিক বিবেচনা করে পার্সিপোলিসে নতুন রাজধানী প্রতিষ্ঠার কাজও চলছিল। সারডিস ত্যাগের পূর্বে ক্রোসাসের কোষাগার রক্ষণা-বেক্ষণ ও বেসামরিক প্রশাসন চালানোর জন্য কুরুশ প্যাক্টিয়াস নামক এক লিডিয়ানকে নিযুক্ত করে। আমরা সারডিস ত্যাগ করতেই প্যাক্টিয়াস কিছু লিডিয়ান অভিজাতদের নিয়ে ট্যাবালাসকে বন্দী করে বিদ্রোহ করে বসে। এ খবর আনশানে পৌছাতেই কুরুশ যারপরনাই রাগান্বিত হয়। লিডিয়ানদের সমুচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য ফৌজ তৈরির নির্দেশ দেয়। এ সময় ক্রোসাস তার রাগ দমন করতে উদ্যামী হন, “সম্রাট, লিডিয়ানরা এখন আপনার নিজের প্রজা। দয়া করে তাদের সাথে পারসিক বা মিডদের মত আচরণ করুন। প্যাক্টিয়াস মাত্র একজন মানুষ, তার ভুলের শাস্তি পুরো নগরবাসীকে দিবেন না”।

“তাহলে আমাকে কি করতে বলেন? আমি কি কোনই ব্যবস্থা নিব না?”

“অবশ্যই নিবেন। ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ নিলেই এই বিদ্রোহ তো প্রশমিত হবেই তার উপর তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবও আপনার সাম্রাজ্যের পক্ষেই যাবে। প্রথমত, নাগরিকদের আদেশ করুন সব ধরণের অস্ত্র জমা দেয়ার জন্য। এরপর তাদেরকে বিলাসিতার অভ্যাস করতে দিন, লিডিয়ায় বিলাস সামগ্রীর অভাব নেই। তাদেরকে সংগীত ও কাব্যের চর্চা করতে বলুন। গ্রীকদের মধ্যে এথেন্সবাসী জ্ঞানী ও সুসংস্কৃত, কিন্তু সামরিক ক্ষেত্রে স্পার্টার নখেরও তারা যোগ্য নয়। শিক্ষা ও সংস্কৃতি মনকে নরম করে। এভাবে লিডিয়ানদের আপনার প্রতি অনুগত করে তুলুন। অনন্তকাল তারা আপনার পূজো করে যাবে। বিলাসী মন আর যাই হোক বিদ্রোহের চিন্তা করে না। আর প্যাক্টিয়াসের জন্য আপনার সেনাবাহিনীর যে কোন ছোট অংশই যথেষ্ট”।

ক্রোসাসের কথা কুরুশের মনে ধরল। সে ম্যাজারাস নামক এক মিড সেনানায়কের অধীনে কিছু সৈন্য সারডিসে প্রেরণ করল। ম্যাজারাস যখন সারডিসে পৌছায় তখন প্যাক্টিয়াস নগর ছেড়ে সমুদ্র উপকূলের দিকে সাইম নগরে আশ্রয় নেয়। ম্যাজারাস ট্যালাবাসকে মুক্ত করে, সারডিসে পারস্য প্রশাসন চালু করে সাইমে হাজির হয়। সে নগরবাসীর কাছে দাবি করে যাতে প্যাক্টিয়াসকে তার হাতে তুলে দেয়া হয়। নিয়মনুযায়ী নগরবাসী দৈবাদেশের জন্য মিলেটিসের প্রাচীন ভবিষ্যদ্বক্তাদের শরণাপন্ন হল। সেখান থেকে দৈববাণী করা হল যাতে প্যাক্টিয়াসকে পারস্য বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়। এমন সময় এরিস্টোডিকাস নামের এক নাগরিক এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। সে প্যাক্টিয়াসকে ম্যাজারাসের হাতে তুলে না দেয়ার জন্য নগরবাসীকে রাজি করল, “পারস্যের সামনে আমরা অতি ক্ষুদ্র কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু একজন মানুষ দেবতাদের ভরসায় আমাদের কাছে আশ্রয় চেয়েছে। সে ভরসা না রাখতে পারলে দেবতাদের কাছে আমরা কিভাবে মুখ দেখাব? আসুন, দেবতাদের হয়ে এই অসহায় মানুষটিকে আমরা রক্ষা করি”। নগরবাসী এরিস্টোডিকাসের সাথে একমত পোষণ করলেও আশ্রমবাসী দৈবাদেশের বিরোধিতার তিরস্কার করল। তারা জানাল, দেবতাদের আদেশের অন্যথা করলে সাইমবাসীকে এর চরম মূল্য দিতে হবে। এরিস্টোডিকাস শুধু নগরবাসীকে রাজি করিয়েই ক্ষান্ত হল না, সকলের আড়ালে আশ্রমের পাশে গাছগুলোতে আশ্রয় নেয়া পাখিদের নীড়গুলো ভেঙে ফেলে। এতে আশ্রমের যাজকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে অভিশাপ দিল, “পাষণ্ড, কিভাবে দেবতাদের আশ্রয়ে থাকা পক্ষীদের ক্ষতি করার সাহস করলে?”

“সম্মানিত ঋত্বিক মহোদয়, পক্ষীরা তাদের প্রাকৃতিক স্বভাবনুসারে এই গাছগুলোতে নীড় রচনা করেছে। এখানে দেবতা বাস করেন তা তারা কিভাবে জানবে? তারা যে দেবতার আশ্রয় লাভ করেছে তা তো তাদের জানার কথা নয়”।

“দেবতার ঘরে আশ্রয় নেয়া যে কোন প্রাণীই দেবতার শরণ লাভ করবে। কেউ যদি তাদের ক্ষতির চেষ্টা করে তবে তাদের উপর অমোঘ বিপদ নেমে আসবে…”

এরিস্টোডিকাস দাবি করল এরপর দ্বিধার আর কোন স্থান নেই। প্যাক্টিয়াসও পক্ষীদের মতই সুরক্ষার দাবিদার। সাইমবাসী গোপনে প্যাক্টিয়াসকে সুরক্ষিত স্থানে পাঠিয়ে দিল। এদিকে ম্যাজারাস ধৈর্য্যের সাথে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছিল। নগরবাসীর হাব-ভাব দেখে সে গোপনে তাদের উপর নজর রাখছিল। প্যাক্টিয়াসের সাইম ত্যাগ তার দৃষ্টি এড়াল না। সেও তার দল-বল নিয়ে তাদের পিছু করতে লাগল। নগরের পর নগর ঘুরে শেষ পর্যন্ত সে প্যাক্টিয়াসকে বন্দী করে আনশানে প্রেরণ করল। কিছুদিন পর তার মৃত্যু হলে কুরুশ হারপাগাসকে প্রশাসক নিযুক্ত করে লিডিয়ায় পাঠালো।

সারডিস পুণঃদখলের পর হারপাগাস পশ্চিমের দিকে নজর দিল। প্রাচীন গ্রীকরা চারটি গোত্রে বিভক্ত ছিল- ডোরিয়ান, এ্যাওলিয়ান, এ্যাকিয়ান ও আইওনিয়ান। ক্রোসাসের শাসনামলে ডোরিয়ানদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল লেসিদোমোনিয়া ও আইওনিয়ানদের মধ্যে এথেন্স। জিওশুদ্রের পুত্র জ্যাপেথের বংশধর জাভান থেকে গ্রীক রাষ্ট্রগুলোর জন্ম। জাভানের চার সন্তান। বড় পুত্র এলিশার ঔরসে এ্যাওলিয়ানদের জন্ম, টারশিশ থেকে টায়ারের প্রাচীন অধিবাসী, কিট্টিম আইওনিয়ানদের পূর্বপুরুষ এবং ডোডানিম থেকে ট্রয় ও তার আশে-পাশের গ্রীক রাষ্ট্রগুলোর উৎপত্তি। গ্রীকরা অবশ্য তাদের উৎপত্তি সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা প্রদান করে তা মূলত পৌরাণিক। আর্কাডিয়ান রাজা লাইকেনের পঞ্চাশ পুত্রের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে গ্রীক পুরাণের মূল দেবতা জিউস মহাপ্লাবন প্রেরণ করেন। পিতা প্রমিথিউসের উপদেশ অনুযায়ী থেসালীর ডিউক্যালিওন তার দলবল সহ জিওশুদ্রের মতই কিশতি চেপে সভ্যতা রক্ষার হেতু হন। নয়দিন পর তার কিশতি উত্তরে পারনেসাস পর্বতের চূড়ায় ভেড়ে। ডিউক্যালিওনও জিওশুদ্রের মত গ্রীসের বার দেবতার উদ্দেশ্যে পশু বলি দেন। ডিউক্যালিওনের তিন সন্তান- হেলিন, অ্যাম্পিকটিয়ন ও কন্যা প্রোটোজেনিয়া। হেলিনের আবার তিন সন্তান- ডোরাস, জাথাস ও অ্যাওলাস। গ্রীকদের বিশ্বাস এই তিনজন থেকেই গ্রীসের উল্লিখিত চারটি প্রধান গোত্রের উৎপত্তি।

ক্রোসাসের বিরুদ্ধে অভিযানের পূর্বে কুরুশ আইওনিয়ান ও এ্যাওলিয়ানদের কাছে সাহায্য চেয়ে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ক্রোসাসের প্রতি অনুগত গ্রীক রাষ্ট্রগুলো কুরুশের আবেদন প্রত্যাখান করে। হারপাগাস পশ্চিমে অভিযান শুরু করলে এই দুই গোত্র কুরুশের কাছে তাদের প্রতিনিধি পাঠায়- উদ্দেশ্য ছিল ক্রোসাসের কাছ থেকে তারা যে সুবিধাগুলো ভোগ করত কুরুশও যেন তাদের সেগুলো প্রদান করে। প্রতিনিধিদের দাবি শুনে কুরুশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “ আপনাদের একটা গল্প শোনাই। একবার এক বংশীবাদকের সমুদ্রের মাছ দেখার শখ হল। সে সমুদ্রের তীরে গিয়ে বাঁশি বাজাতে লাগল যাতে বাঁশির সুর শুনে মাছেরা পাড়ে আসে। কিন্তু তার বাঁশির সুরে মাছদের অনীহা দেখে সে এবার একটা জাল নিয়ে আসল। সমুদ্রে জাল ফেলতেই মাছেরা জালের মধ্যে লাফালাফি শুরু করল। মাছেদের তড়পানো দেখে বংশীবাদক তাদের উদ্দেশ্য করে বলল, “বড্ড দেরি করে ফেলেছিস তোরা। বাঁশির সুরে নাঁচলে আর জালে আটকাতে হোত না”। আশা করি আমার কথার অর্থ আপনারা বুঝতে পেরেছেন…”

তৎকালীন গ্রীকদের মধ্যে আইওলিয়ানরা ছিল সর্বাপেক্ষা দুর্বল। তারা এতই দুর্বল ছিল যে এথেন্স নিজেকে আইওনিয়ান বলে স্বীকার করতে লজ্জা বোধ করত। কিন্তু গোত্রের বাকি বারটি নগর- মিলেতুস, মাইয়ান, প্রিয়েন, ইফেসাস, কলোফোন, লিবেডাস, তিওস, ক্লাজোমিনী, ফসীয়া, স্যামোস, কিওস ও ইরিত্রিয়া মিলে সর্বদলীয় আইওনিয়াম জোট গঠন করে। এই জোটের সদর দপ্তর ছিল একটি মন্দির। মন্দিরে অন্য গোত্রের মানুষের প্রবেশ নিষেধ ছিল। ডোরিয়ানদের মধ্যেও এ ধরণের রীতি প্রচলিত ছিল। তাদের মন্দিরের নাম ছিল ত্রিপিয়ম। যাই হোক, কুরুশের কাছ থেকে উপেক্ষিত হয়ে আইওনিয়ানরা স্পার্টার শরণাপন্ন হল। ডোরিয়ানরা আইওনিয়ানদের অপছন্দ করলেও প্রতিবেশীর অনুরোধ ফেলে দিতে পারল না। স্পার্টা থেকে এবার প্রতিনিধি দল কুরুশের দরবারে হাজির হল। প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন ল্যাক্রিনেস নামের একজন স্পার্টান। আমরা তখন পুবে অভিযানের পরিকল্পনা করছিলাম। সীমান্তে সিদিয়ানদের তাণ্ডবলীলা দিনকে দিন বেড়েই চলছিল। এরকম এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে স্পার্টান প্রতিনিধিদের আগমন দরবারের কেউই ভালভাবে নিল না। তাছাড়া স্পার্টানরা এথেন্সের মত কূটনীতিক নয়, তাদের ঠোঁটকাটা কথা-বার্তা রাজনীতির জন্য সহায়কও নয়। অবশ্য মাথামোটা সৈনিকদের বোঝার কথা নয় যে ঔদ্ধত্য আর কূটনীতি এক পথে হাটে না। আর সব কিছু বাদ দিলেও প্যাক্টিয়াসকে বিদ্রোহের উস্কানি যে লেসিদোমোনিয়া থেকেই দেয়া হয়েছিল তা গোপন ছিল না। সুতরাং ল্যাক্রিনেসের আগমনকে স্বাগত জানানোর কোন কারণ ছিল না।

“পারস্য সম্রাট কুরুশ দীর্ঘজীবী হোক। লেসিদোমোনিয়া থেকে সম্রাটের জন্য বার্তা নিয়ে এসেছি”।

খুব স্বাভাবিকভাবেই অসময়ে স্পার্টান প্রতিনিধিদের দেখে কুরুশ বিরক্ত হল। কোনরকমে বিরক্তি চেপে বলল, “বার্তা কি বন্ধুত্বের নাকি যুদ্ধ ঘোষণার?”

কুরুশের প্রশ্নের জবাবে গর্বিত স্পার্টান ভারি গলায় বলল, “সকল গ্রীক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বন্ধুত্বসুলভ উপদেশ মহারাজ। পারস্য কোন গ্রীক রাষ্ট্রের উপর চড়াও হলে লেসিদোমোনিয়া চুপ করে বসে থাকবে না। আশা করি পৃথিবী এখনও ট্রয়ের পরিণামের কথা ভোলেনি…”

ল্যাক্রিনেসের জবাব শুনে কুরুশ রাগ চেপে রাখতে পারল না। সে তখনও জানত না তার উত্তর ভবিষ্যতে পারস্য ও গ্রীসের মধ্যে শত শত বছরের অনিবার সংঘর্ষের কারণ হয়ে দাঁড়াবে, “এই লেসিদোমোনিয়া কোথায়? এই স্পার্টান কারা? এরা কি এমন এক জাতি না যারা বাজারের পাশে মন্দির স্থাপনা করে? এরা কি সেই অধার্মিক জাতি না যাদের দেবতারা নশ্বর নারীদের সাথে সঙ্গমের জন্য লালায়িত? এরা কি সেই দেবতাদের পূজারী না যারা নিজেদের মধ্যে মানুষের মত করে লড়াই করে? আহুরামাজদার শপথ, পারসিকরা এসব সাকারবাদীদের ভয় করতে শেখেনি। সময় হলেই গ্রীকরা পারসিকদের শক্তির পরিচয় পাবে। আপনারা এখন যেতে পারেন, আহুরামাজদা চাইলে কোন একদিন যুদ্ধক্ষেত্রে সাক্ষাৎ হবে”। কুরুশের সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছিল, কিন্তু সে গল্প বলার সময় এখনো হয়নি।

কুরুশের কাছ থেকে অনুমোদন পাবার পর হারপাগাস প্রথম আইওনিয়ানদের যে নগর আক্রমণ করে তা হল ফসীয়া। ফসীয়া পৌছেই হারপাগাস নগর অবরুদ্ধ করে ফেলে। সে নগরবাসীকে প্রস্তাব পাঠায় যাতে তারা কুরুশের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে। ফসীয়রা তার কাছে সময় চাইল। তারা পারস্যের গোলামি করতে রাজি ছিল না। রাতের অন্ধকারে পরিবার-পরিজন নিয়ে নদীপথে কিওসের উদ্দেশ্যে রওনা করে। পরের দিন হারপাগাস লোকশুন্য নগর দখল করে। কিছু মানুষ বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে অন্য কোথাও বসতি স্থাপন করতে নারাজ ছিল। দিন কয়েক পর কিছু মানুষ ফিরে আসলে হারপাগাসের সৈন্যরা সবাইকে হত্যা করে। হারপাগাস তখন ফসীয়াতে ছিল না। এ সংবাদ তার কাছে পৌছালে সে জড়িত সৈন্যদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে। কয়েক দিন পর আরো কিছু মানুষ ফিরে আসলে তারা পারস্যের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে কুরুশের প্রজা হিসেবে আবার মাতৃভূমিতে বসবাস শুরু করে। ততদিনে হারপাগাস পরের নগর তিওস অভিমুখে রওনা করেছে।

তিওসেও ফসীয়ার ঘটনার পুণরাবৃত্তি ঘটে। হারপাগাস একে একে আইওলিয়ানদের সব নগরগুলো দখল করে নেয়। কুরুশের ইচ্ছা ছিল গ্রীক রাষ্ট্রগুলোকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার পর ব্যাবিলন অভিযান করা। আমি তার সেই পরিকল্পনায় বাধা দেই। কারণ সাগরের মাঝের দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর মূল শক্তি ছিল তাদের নৌবাহিনী, সেই তুলনায় পারস্য স্থলচর প্রাণী। প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি ছাড়া দ্বীপরাষ্ট্রগুলো আক্রমণ করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। সুতরাং সেই মুহূর্তে উপকূলীয় নগরগুলো দখল করে সেখানে নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আইওনিয়ানদের দমন করার পর হারপাগাস ক্যারিওন, কাউনীয়ান ও লাইকেনদের আক্রমণ করে। ক্যারিওন ও কাউনীয়ানদের সহজে পরাস্ত করা গেলেও লাইকেনরা হার মানতে রাজি ছিল না। সংখ্যায় কম হলেও তারা বীরের মত যুদ্ধ করে। পরাজয় যখন তাদের ঘরের চৌকাঠ পার করছিল তখন তারা নগর অবরুদ্ধ করে সবাইকে একত্রে জমায়েত করে পুরো নগরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আশিটি পরিবার ছাড়া উপস্থিত সকলেই মারা যায়। এই আশিটি পরিবার তখন নগরের বাইরে অবস্থান করছিল। পরে এই পরিবারগুলোই নগরের জনসংখ্যা আবার সমৃদ্ধ করে।

(চলবে)
পূর্বের পর্বঃ
https://www.somewhereinblog.net/blog/Quayum/30270229
https://www.somewhereinblog.net/blog/Quayum/30270349

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৪৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×