somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য - বন্ধুর প্রেম কাহিনী

২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার বাল্যবন্ধু হাসনাত । বন্ধু মহলে তাকে ডাকা হতো বিপাশা । কারন স্কুল জীবনে বিপাশা নামের এক মেয়েকে সে গভীরভাবে ভালোবেসে দিয়েছিল একটি প্রেমপত্র । যা বিপাশার বদলে বিপাশার বাবার হাতে পড়ে ।
পরের দৃশ্য অত্যাধিক করুন , বেদনার , ট্র্যাজিডির । যে মেয়ে রূপসী অতি অবশ্যি তার পিতা বদরাগী বড় ভাই গোঁয়ার আর ছোট ভাই কুটনা । এইটাই চিরন্তন সত্য ।
বিপাশারও পিতা আছে যিনি কেবল বদরাগী নন , তিনি বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত (!!) এসপি । লও ঠ্যালা । বিপাশার আছে একটি ষণ্ডা মার্কা বড় ভাই যিনি যেমন গোঁয়ার তেমন টাকলা । সবসময় মাথা ছিলা রাখেন । উনার গরম বেশি তাই আরাম কম । থেমে যাবেন না বিপাশার আছে একটি ছোট ভাই । মুফতে । নাম মুহিত । ( এলাকায় তাকে ডাকা হয় মুতি , কই মুতে সেটা অজানা ) এই চাল্লু পোলাই মূলত চিঠি বিপাশার পিতার হাতে তুলে দিয়ে একটি গেইম জয় স্টিক বাগিয়ে নেয় ।

যেই বিপাশার এতো কিছু সেই বিপাশাকে আটচল্লিশ বার আইলাবিউ লিখা প্রেমপত্র দিয়ে ধরা খাওয়া আমাদের বন্ধু হাসনাত ধরা খাবার প্রথম রাতেই বিপাশার গোঁয়ার ভাইয়ের হাতে খেল ঢলা । ঢলা ভালো খেয়েছে , সাতদিন পর্যন্ত সে কোথাও বসতে পারিনি ।
বিপাশার এসপি বাপ হাসনাতের পিতা মাতাকে বিচার দিয়েই ক্ষান্ত হন নি তিনি এলাকায় সালিশির ব্যবস্থা করেন । হাসনাতের পিতা মাতা ভীরু প্রকৃতির , উনারা ক্রসফায়ার অপেক্ষা সালিশির একশ দোররাকে শ্রেয় ও কার্যকরী মনে করেছেন ।

সালিশিতে একশ দোররা খাওয়া থেকে হাসনাত বেঁচে গেলেও বাঁচাতে পারিনি নিজের নাম । আমাদের বন্ধু মহলে সে হাসনাত থেকে হয়ে যায় বিপাশা ।

ন্যাড়া বারবার বেল তলায় যায় না । আমাদের বন্ধু বিপাশাও ( হাসনাত ) আর প্রেমের পথে নিজে পা বাড়ায়নি । তবে তরুন প্রেমিকদের প্রেমে সফলতার জন্য অব্যর্থ টিপস দিয়ে সে রাতারাতি বনে যায় -- প্রেম গুরু ।
নিজের করুন অভিজ্ঞতার আলোকে সে অনভিজ্ঞ প্রেমিকদের দিয়ে যায় একের পর এক পরামর্শ । কিভাবে প্রেমিকার বদরাগী বাবা কিংবা বড় ভাইদের চোখ ফাকি দিয়ে প্রেম পত্র প্রেমিকার পড়ার টেবিলে পৌঁছানো যায় , কিভাবে প্রেমিকার মন জয় করতে হয় , কিভাবে প্রেম করবে অথচ ধরা পর্বে না – এরুপ কঠিন বিষয়ে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে অল্প সময়ে সে কামাতে থাকে নগদ অর্থকড়ি । তার প্রতি সাজেশনের জন্য সে চার্জ করে দশটাকা । আমি যেই সময়ের কথা বলছি সেই সময়ে দশ টাকা অনেক কিছু ।

অবাক হলেও সত্য তার পকেটে টপাটপ দশ টাকা নোট জমতে থাকে । তাকে আমরা জিজ্ঞাস করতাম -- এতো এতো দশ টাকা নিয়ে করবিটা কি ?
সে উদাস নয়নে উত্তর দিত --- বিপাশা মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট বানাবো । সেখানে সকল প্রেমিক জুটিকে দজ্জাল পরিবারের লাল চোখ এড়িয়ে অবাদে প্রেম করবার সুযোগ দেয়া হবে ।
কথাগুলো বলতে বলতে বন্ধু কেঁদে দিত । আমরা বন্ধুরা শুকনো মুখে তার পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলতাম – কাঁদিস না বিপাশা , কাঁদিস না । তোর কান্না আমাদের আর সহ্য না ।

বাবার বদলীর জন্য আমাকে এলাকা ছাড়তে হয় । কলেজের গণ্ডী শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় , তারপর চাকুরী । মাঝে দীর্ঘসময় । হাসনাতের সাথে আর যোগাযোগ হয়নি । জানা হয়নি বিপাশা মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট এর অগ্রগতি বা নিম্নগতি ।

গতপরশু দিন বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের ফুড কোর্টে হঠাৎ দেখা সেই হাসনাতের সাথে । হ্যাংলা পাতলা হাসনাতের গায়ে এখন পাহাড় সমান চর্বি । থলথলে পেট ভাসিয়ে সেই আমায় ডাক দিল । পুরনো বন্ধুর সাথে বহুদিন পর দেখা ।
একেরপর এক বহু কথার পর জিজ্ঞাস করলাম – বন্ধু , তোর বিপাশা মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট এর খবর কি রে ?

হাসনাত মুচকি হেসে – “ এই শৈলীর মা , এইদিক দেখে যাও “ বলে ডাক দিল এক নারীকে ।
আমি বিস্ময়ে দেখলাম – ফুটফুটে এক বাচ্চা মেয়ের হাত ধরে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো বদরাগী পিতার , গোঁয়ার বড় ভাই আর চাল্লু ছোট ভাইয়ের সেই বিপাশা !

বন্ধু হাসনাত হাসতে হাসতে বললো – একেবারে জীবন্ত বিপাশা মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছি রে দোস্ত ।

আর পিছনে দাঁড়ানো একটা চ্যাংড়া ছেলেকে দেখিয়ে বলল - আর এঁকে তো চিনতে পারছিস ? আরে বিপাশার ছোট ভাই মুহিত ।
দেখলাম ছেলের হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ । শপিং ব্যাগের ভারে সেই চাল্লু মুতি বেঁকে গেছে । তবুও অসহায়ের মতো দুলাভাইয়ের পিছনে দাড়িয়ে !

মানুষ অধিক শোকে পাথর হয় এবং মাঝে মধ্যে অধিক বিস্ময়ে ইটের চাক্কা হয় । হতবাক আমায় হাসনাত ধাক্কা দিয়ে বলল -- শ্যামলীতে এইমাসের নতুন ফ্ল্যাটে উঠেছি , বাসায় আসিস কিন্তু ।( চুপি চুপি বলে দেয়া ভালো , ১২ শো স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাটখানা বিপাশার বাবা জামাইকে উপহার দিয়েছে )

বন্ধু ও বন্ধু পত্নীকে অভিনন্দন জানিয়ে দিয়ে , তাদের ছোট্ট কন্যার হাতে একটি গিফট তুলে আবার দেখা হবে কথা দিয়ে সেদিনের মতো বিদায় নিলাম ।

মনে মনে বললাম – প্রেমের জয় হোক ।


কার্টুন - মৌরিন
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ৮:৫০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×