somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ ফকির লালন শাহের ১২২তম তিরোধান দিবস ।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘সব লোকে কয়, লালন কি জাত সংসারে/ লালন বলে জাতের কি রূপ, দেখলাম না তা-নজরে’। কেউ যদি তার স্বরূপকে চিনতে পারে, তবে জাত-কুলের বেড়াজাল তাকে আটকাতে পারে না। ফকির লালন সেই আধ্যাত্বপুরুষ যিনি এই বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে মানবতার গান গেয়েছেন। সুরের সঙ্গে বসত করে বলেছে অসাম্প্রদায়িকতার কথা।
ফকির লালন শাহের অনুসারীরা মূলত সহজিয়া। তারা যা পেতে চান তাও সহজ আনন্দ। তাদের সাধন প্রণালী বক্র নয় সহজ দেহ। তারা মনে করেন আত্মার মাঝে পরমাত্মার স্থিতি। যেহেতু আত্মার স্বরূপ বিশ্লেষণ সম্ভব নয় তাই দেহ যন্ত্র বিশ্লেষণ করে পরমাত্মার সন্ধান লাভ করা হয়। আর এভাবেই লালনের অহিংস রূপের প্রকাশ ঘটে।
আজ মঙ্গলবার, পহেলা কার্তিক অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই মহাপুরুষের ১২২তম তিরোধান দিবস। ১২৯৭ বঙ্গাব্দ সালের পহেলা কার্তিক চাদরমুড়ি দিয়ে গান শুনতে শুনতে নশ্বর এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন সাধু-ভক্তদের সাঁইজি। দেহত্যাগের সময় তিনি তার ভক্তদের বলে যান ‘আমি চললাম’। সাধক পুরুষ লালন চলে গেলেন। তার রেখে যাওয়া মত ও পথের বিশ্বাসী ভক্তরা আজো এখানে ভিড় জমায়। তারা একতারায় সাঁইজির সুর তুলে পরম ঈশ্বরকে সন্ধান করে।
প্রতি বছর সাঁইজির তিরোধান দিবসে কুষ্টিয়ার ছেঁউরিয়ার কালীগঙ্গা নদীর তীরের লালন আখড়ার ছুটে আসেন লালনের ভক্ত-অনুরাগীরা। এবারো ব্যতিক্রম ঘটেনি। কুষ্টিয়ার ছেঁউরিয়ায় বসেছে সাধুর হাট। তিরোধান উৎসবকে সামনে রেখে সহজিয়া বাউলরা এখানে এসেছে। লালনের মাজার প্রাঙ্গণ এখন সাধুর হাট। তাদের পদচারণায় মুখরিত কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া লালনের আখড়া বাড়ি। শুধুমাত্র প্রাণের টানে হাজার হাজার লালন ভক্ত ছুটে আসছে লালনের আখড়ায়। একতারা বাজিয়ে গলাছেড়ে গাইছেন লালনের গান। যার বাণী ও সুরে কেবলই ধ্বনিত হয়েছে অসাম্প্রদায়িকতার কথা।
ফকির লালন সাঁইয়ের ১২২তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বিকালে থেকে আখড়া বাড়িতে শুরু হচ্ছে ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। ফকির লালনের তিরোধান দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে লালন একাডেমি এবং কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। সহযোগিতায় রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পুরো আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি ‘বাংলালিংক’।
লালনের এই উৎসবে অংশ নিতে দূর-দূরান্তের লালন ভক্তদের আগমনে এখন মুখরিত ছেঁউরিয়া। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান। পাঁচদিনের জন্য রাখাল সেবা, পূর্ণ সেবাসহ সকল প্রকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিন লালন মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান। এছাড়া রয়েছে গ্রামীণ মেলা। ইতোমধ্যে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মেলায়।
ফকির লালন শাহের জন্ম-মৃত্যু, জাত-পাত নিয়ে রয়েছে বহু বিতর্ক। লালন ফকিরের জীবন সম্পর্কে বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় না। প-িতরা এই নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। তবে বাউলদের এই নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা সাঁইজির ধামে আসেন সাধু সংঘে অংশ নেন ভালোবাসার টানে। অনুষ্ঠান শেষে চলে যান আবার নিজ নিজ ঠিকানায়।
ফকির লালন সাঁইজির জন্ম সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও ‘সাপ্তাহিক হিতকরী’ পত্রিকার মহাত্মা লালন ফকির প্রতিবেদন থেকে প-িতরা অনেকটা নিশ্চিত তিরোধানের তারিখ সম্পর্কে। তবে ড. আহমদ শরীফ, বসন্ত কুমার পাল, ড. আবুল আহসান চৌধুরীসহ বিভিন্ন লালন গবেষক ফকির লালন শাহ সম্পর্কে নানা কথা বলেছেন।
তবে অধিকাংশ প-িতদের মতে, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়ার ইউনিয়নের ভাড়রা গ্রামে ফকির লালন শাহের জন্ম। হিন্দু কায়স্থ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা মাধব কর, মাতা পদ্মাবতী। বাবা-মা তাকে আদর করে ডাকতেন লালু। ছোটবেলা থেকেই লালন স্বরচিত গীত গাইতেন। ফকির লালন শাহ আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। জনশ্রুতি রয়েছে, তীর্থভ্রমণে বেরিয়ে লালন বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। এ সময় তার সঙ্গীরা তাকে ত্যাগ করে নদীর জলে ভাসিয়ে দেন। ভাসতে ভাসতে লালন গড়াই নদীর অববাহিকা কালীগঙ্গায় আসেন। এখানে তাকে স্থানীয় কারিগর সম্প্রদায়ের হাফেজ মলম শাহ উদ্ধার করেন। মলম শাহ ও তার স্ত্রী লালনকে সেবা যতেœর মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তোলেন। এ সময় লালন কিছুদিনের জন্য মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। পরে তার ভারসাম্য ফিরে আসলে তিনি তার গ্রামে ফিরে যাননি। এখানেই তিনি দেখা পান নিজের গুরু ফকির সিরাজ সাঁইয়ের। ফকির সিরাজ সাঁইয়ের সান্নিধ্যে আসার পর লালনের মধ্যে আধ্যাত্মিকভাব চলে আসে। সিরাজ সাঁইয়ের দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে লালন সংসার বিবাগী হন। এ সময় একবার তিনি তার গ্রামে ফিরে গেলেও মুসলমান বাড়ির অন্নগ্রহণ করায় তাকে তার পরিবার ও গ্রামের লোকজন মেনে নেয়নি। ফিরে এসে ছেঁউড়িয়ার কারিগর সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় তিনি আখড়া বাড়ি স্থাপন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই আখড়া বাড়িতেই সময় কাটিয়েছেন।
-সংরিহিত।

View this link

৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×