somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কসমিক সিম্ফোনি... (সায়েন্স-ফিকশান) পর্ব-২৩

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দুটি ছোট্র কুটির, একটি উঠানের দুপাশে দাঁড়ানো। তাদের একটিতে চালা করে বারান্দা দেওয়া আছে গ্রামীন গাছপালার পাতা দিয়ে। চালার একটি থামে ঠেস দিয়ে বসে আছে লিও। চোখ তার আকাশের দিকে। ঈগল নেবুলার বিশাল আকৃতির দুটি বাহু যেন তাকে আহবান করছে উন্মত্ত চিত্তে। পৃথিবী থেকে প্রায় সাত হাজার আলোকবর্ষ দূরে এই অতিপ্রাকৃত স্বর্গ অবস্থিত। কিন্তু এখান থেকে মাত্র দশ আলোক বর্ষদূরে এই মহাজাগতিক অকল্পনীয় সৃষ্টি দু-হাত খুলে ডাকছে তাকে। পৃথিবীর মানুষ কল্পণা করতে পারবে না নিজের চোখে দিগন্ত জুড়ানো আলোকস্তম্ভ দেখতে কেমন লাগে।

ঘরটির সামনের বারান্দায় বসে আকাশের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লিও, তার পা প্লেটফর্মের পাশে ঝুলে আছে। তার পেছনে জেনা দাঁড়িয়ে আছে দরজায় হালকা হেলান দিয়ে, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লিওর দিকে। হঠাৎ করেই যেন কান্না পাচ্ছে তার। পৃথিবীতে চাদের জোছনা সে দেখেছে, কিন্তু অতি মানবীয় নেবুলীয় জোছনার কথা কখনো কল্পনা করেনি সে। এমন সময়ে মন অশান্ত হয়ে উঠে, কারো কাছে একটু সানিধ্য পেতে ইচ্ছে করে, কারো জন্যে মন থেকে কান্না আসে…

কি করছো লিও? অস্ফুটকণ্ঠে বলল এক সময়। হালকা পায়ে তার দিকে এগিয়ে গেল।

তুমি এখনো ঘুমাও নি? তাকে এগিয়ে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে পরল লিও। হালকা বাতাসে জেনার চুল উড়ছে, মায়াবী কোমল আলোতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তাকে। হাতে সবুজাভ আলো জ্বলছে তার। জোর করে দৃষ্টি সরালো তার দিক থেকে।

ঘুম আসছে না… হালকা হেসে বলল জেনা। তুমি?

আমি… আমি আসলাম হিতানকে সমাহিত করে, মৃদু কণ্ঠে উত্তর দিল লিও। ছেলেটা অনেক সরল ছিল! আগে তাদের অস্ত্র বানানোর কারখানায় কাজ করত… কিছুদিন সেখান থেকে বেরিয়ে শিকারের জন্যে এসেছিল… কাল মারা গেছে…

কাল কি হয়েছিল? তুমি কিছুই বললে না… তোমার অজ্ঞান অবস্থায় দেখে আমরা অনেক ভয় পেয়েছিলাম! তারা আমাদের তোমার কাছে যেতে দেয় নি! তাহুদেরও তো অনেকে মারা গিয়েছিল… চোখ বড় বড় হয়ে গেছে জেনার। উজ্বল চোখে লিওর কাছে উত্তর পেতে চাইছে।
হ্যা… একটা ড্রাগন… বিশাল বড়… প্রায় পাহাড়ের মত বিশাল আকারে। হঠাৎ আমাদের আক্রমণ করে বসে।

ড্রাগনটা হিতানকে মেরে ফেলে?

না, তীব্র ক্রোধের সাথে বলল লিও। আমার জন্যে সে মারা গেছে! আমি জানতাম ড্রাগনের রক্ত খুবই বিশাক্ত! মানুষ কি গাছপালা পর্যন্ত বাচে না… আর আমি তখনি ব্লাস্টারের রশ্মি ছুড়ে মেরেছি যখন হিতান ড্রাগনটির নিচে ছিল… দু হাত মুঠো হয়ে গেল তার… হালকা কাপছে…

ছেলেটা অনেক শান্ত ছিল, পন্ডিতের কারখানা বন্ধ দেখে শিকারে যোগ দিয়েছিল… কাল না বের হলে সে আর মারা যেত না… গলা ধরে এলো লিওর।

এভাবে চিন্তা করবে না! তীক্ষ্ণ স্বরে বলে উঠল জেনা। এটা কিভাবে তোমার দোষ হল! তুমি ড্রাগনটাকে না মারলে তারা তো ওটার কিছুই করতে পারত না! আরো অনেক তাহু যোদ্ধা মারা যেত এর জন্যে। তুমি ঠিক কাজটাই করেছ!

তাই মনে হয় তোমার! হিসহিসিয়ে উঠল লিও। জিমের ক্ষেত্রেও কি একই কথা বলবে? সেও মারা গেল, কিছুই করতে পারলাম না! তোমার কি মনে হয় না আমি চেষ্টা করি নি! আমি বিপদটাকে বড় করে দেখি নি! জিমকে কিরু২ এর সাথে সোলারেক্সের পাওয়ার ইউনিটে কেন যেতে দিলাম! দলপতি হিসেবে আমার যাওয়া উচিৎ ছিল! কিরু২ এর উচিৎ ছিল আমাকে সেলাস্টিয়াল বিংদের কাছে ধরিয়ে দেয়া! জিমকে নয়! তার চিৎকার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এলো পাহাড়ের গা থেকে।

লিও! আর্তনাদ করে উঠল জেনা! তুমি এসব কি বলছ! জিমকে হারাতে দেখে আমরা সবাই কষ্ট পেয়েছি! আমি জানি সে তোমার ভালো বন্ধু ছিল। কিন্তু সোলারেক্সে আমরা কেউ জানতাম না কি ঘটতে যাচ্ছে! কিরু২ কিন্তু সবাইকেই মারার জন্য এন্টিম্যাটার ওয়ারহেড রেখেছিল নরমেন্ডিতে। তুমি কেন নিজেকে দোষ দিচ্ছ!

তাকে জবাবে কিছু বলতে গিয়ে টলে উঠল লিও। তাড়াতাড়ি তার হাত আকড়ে ফেলল জেনা।

আরে! তোমার তো ভীষণ জ্বর! কপালে হাত দিয়ে আতকে উঠল। তার হাতের কব্জিতে বসানো ছোট্র ট্রিনিটি থেকে সবুজাভ আলো জ্বলছে, তাতে জেনার ঝুকে আসা উদ্বিগ্ন মুখের একাংশ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

তোমাকে এখুনি ঘুমিয়ে পরতে হবে! ইরার ব্যাগ থেকে কিছু ম্যাক-কেপ্সুল নিয়ে আসছি আমি! তুমি দাড়াও!

এসবের দরকার হবে না… জেনাকে বাধা দিতে চাইল লিও, কিন্তু ততক্ষণে জেনা তাদের ঘরটার ভেতরে ঢুকে গেছে। কোনমতে পিলারটার পেছনে হেলান দিল সে। হঠাৎ করেই মাথাটা গুলিয়ে উঠছে তার। জিমকে নিয়ে এসব কথা এর আগে কখনো ইরা, জেনার সামনে উচ্চারণ করেনি। হঠাৎ করে আজ নিজেকে সামলাতে পারল না। হিতানের মৃত্যু জিমের মৃত্যুটা আবারো জাগিয়ে তুলেছে তার মাঝে।

জেনা একটা কেপ্সুল এনে তার ঘাড়ে পুশ করে দিল। আস্তে আস্তে দেখতে পেল চোখের ঘোর ভাবটা দূর হয়ে যাচ্ছে। জ্বরটাও কমে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।

ধন্যবাদ তোমাকে। আলতো করে হাসল সে। কিছুই হয় নি আমার! শুধু শুধু এত ভয় পেয়েছিলে আর কি।

জবাবে মাথা কাত করল জেনা, লিওর পাশে পাটাতনটায় বসল। হাতে কেপ্সুলটা ধরে রেখেছে। গালটা হালকা লাল হয়ে গেল তার। লিও তার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছে।

এই দুই গ্যাসের দ্বারকে কি বলে জানো? আঙ্গুল দিয়ে আকাশের মাঝে উজ্জ্বল দুই নেবুলার বাহুকে দেখালো লিও। এদের প্রাচীন আমলে বলত পিলারস অব ক্রিয়েশন (Pillers of creation). আদিকালে মানুষ ভাবত এই দরজা দিয়েই স্বর্গে পৌছানো যায়। সাত হাজার আলোকবর্ষ দূরে কি আছে তা নিয়ে তারা না জানি কত জল্পনা কল্পনা করত… আনমনা হয়ে লিও বলল।

তখনই মনে হয় শান্তি ছিল… মানুষ একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বাস করত। মহাকাশ দেখে কল্পনা করত! দূর থেকে সব ভালোই মনে হত তাদের। এখন মহাকাশ জয় করে কি লাভ হয়েছে? একে একে সবাই হারিয়ে চলেছে…

জেনার দিকে তাকালো লিও। জেনা কবে নিজে থেকেই তার কথা গুলো বলবে অপেক্ষা করছে সে। তার হাতের দিকে চোখ পরতে চমকে উঠল। জেনার কব্জিতে ট্রিনিটি আটকানো নেই, সেখানে উলটো পিঠে অদ্ভুত দুটি গর্ত হয়ে আছে।

কি হয়েছে এখানে! জেনা! অবাক হয়ে তার হাত সামনে বারিয়ে ধরল। দেখতে পেল কব্জির উলটো পিঠে সুক্ষ্ণভাবে দুটি ক্ষত গভীর পর্যন্ত ডেবে গিয়েছে, হাল্কা রক্ত পরছে সেখান থেকে। একেবারে শিরা কেটে ভেতর পর্যন্ত গর্তগুলো ঢুকে গেছে।

আশ্চর্য! তুমি নিজের সাথে কি করছ! চেচিয়ে উঠল লিও। ট্রিনিটিকে এখনি ফেলে দেবে হাত থেকে! আমি ভাবতেও পারি না…

ঝটকা দিয়ে হাত সরিয়ে নিল জেনা, গাল লাল হয়ে গেছে তার। তোমার ভাবতে হবে না এটা নিয়ে। ট্রিনিটিকে আমার দরকার! আর ট্রিনিটিরও আমাকে দরকার! তোমার চিন্তা করতে হবে না। দাঁড়িয়ে পরল সে, চোখদুটো জ্বলছে। মৃদু বাতাসে তার চুলগুলো উড়ছে।

তাই বলে হাতে এভাবে গর্ত করতে হবে? সূচ ফুটিয়ে রাখতে হবে সারাক্ষণ? তুমি এটা করতে পারবে না জেনা! একটা কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে এভাবে নিউরণের সাথে যুক্ত করে রাখতে পারবে না।

তুমি এখনো আমার কমান্ডার নও লিওনার্ড, ভেবো না আমরা এখনো নরমেন্ডিতেই আছি। গলা চড়ে গেল জেনার। আমি তোমার কথা মানতে বাধ্য নই!

রক্ত সরে গেল মুখ থেকে লিওর। জেনা একেবারে তার মনের গভীরে আঘাত করেছে। এখনো সে ভেবে যাচ্ছে তারা তার কমান্ড মেনে চলতে বাধ্য। সে তাদের ভালো মন্দ নিজের হাতে নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু তারা বিজ্ঞান একাডেমির নিয়ন্ত্রিত কোন মিশনের অন্তর্গত নয়, এসকল বিজ্ঞানিদের তার কথা মেনে চলতে হবে এমন কোন বিধি নেই। দির্ঘশ্বাস ফেলে আরেক দিকে তাকালো সে।

দুঃখিত জেনা, আমি বুঝতে পারি নি। আমাকে ক্ষমা করো…

হঠাৎ করে নির্গত রাগটা যেন মুহুর্তের মাঝেই মিলিয়ে গেল জেনার। লিওর ভরা গলা শুনে তার অনুশোচনার সীমা রইল না। লিওর দিকে তাকিয়ে দেখল সে আরেক দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে…

আমার… হাতে ট্রিনিটিকে পরতে পরতে বলল জেনা। আমার ট্রিনিটিকে লাগে একটি কাজের জন্যে… আমি আসলে… ইতস্তত করে লিওর পাশে প্লেটফর্মটায় বসে পরল সে। আসলে আমি একজনকে খুজছি…

বুঝতে পারল লিও কার কথা বলছে জেনা। ট্রিনিটি খুজতে পারে এত দূর থেকে?

হ্যা তা পারে, মাথা দোলালো জেনা। সে একটা চতুর্থ গ্রেডের কোয়ান্টাম কম্পিউটার, সে আমার মস্তিষ্কের বিদ্যুত তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে সাথে সাথে কাজ করতে পারে… এজন্যে তার জন্যে কোন ইনপুট দিতে হয় না। আসলে তার কোন ইনপুট নেই আমার নার্ভ ছাড়া… হালকা হাসল সে। তাই সবসময় আমার নার্ভের সাথে যুক্ত থাকতে হয়। আমার মাধ্যমেই সে বাহ্নিক সবকিছু জানতে পারে…

কাকে খুজছো তুমি?

আমার ভাইকে… নিজের হাতের দিকে ঝুকে এলো জেনা। অনেক দিন ধরেই তাকে খুজছি আমি… সে… সে একজন স্পেস রেঞ্জার ছিল, সেকেন্ড গ্রেডের। আমাকে গ্যালাকটিক স্কুলে ভর্তি করার জন্যে তার অনেক ইউনিট খরচ যোগান দিতে হত, সে জন্যে তার অনেক ওভারটাইম ডিউটি দিতে হত… তিন মাসের বন্ধের মাঝে সে আবারো চলে যেত অন্য সোলার সিস্টেমগুলিতে… সেখানে স্পেস পেট্রোল দিত… নিজের হাতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে, চোখ ছলছল করছে। আশেপাশের পারিপার্শিক যেন সম্পূর্ণ ভুলে গেছে।
আমার খরচ বহন করার জন্যে কোন দিন রাগ করে নি সে। আমার বড় ভাইটা বাইরে স্পেস রেঞ্জার হলেও ভেতরে একদম বাচ্চাদের মত নমনীয় ছিল, বাসায় তার জন্যে সবকিছু প্রস্তুত করে দিতে হত। এই ছোট্র বোনটা না থাকলে খালি তালগোল পাকিয়ে ফেলত… বাবা মা একটা বিটলশীপ এক্সিডেন্টে মারা গেলে জেমসই ছিল আমার বাবা মা… সে ছিল… কিছু বলতে পারলো না আর জেনা, একদৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে ফোটা ফোটা পানি ঝরে পরল মেঝেতে। মোছার চেষ্টা করল না সে। লিও তার দিকে তাকিয়ে আছে বড় বড় চোখে কেয়ার করল না। শুধু মাঝে মাঝে কেপে উঠল। তার হাতের মাঝে বসানো ষড়ভূজাকার ট্রিনিটি থেকে ক্রমেই চাপা একটি গুঞ্জন বেড়ে চলছে, সবুজাভ আলো থেকে উজ্জ্বল সবুজে পরিণত হচ্ছে।

লিও তাকে কিছু বলল না। শুধু কোমলভাবে তার পিঠে হাত বুলাতে থাকল। যেন ভেতরের জ্বালাগুলোকে বের করে দিচ্ছে জেনার। জেনার কালো চুলগুলোর স্পর্শ আজ তাকে অন্যরকমভাবে ব্যথিত করে তুলছে।

এরকম এক ওভারটাইমের ডিউটি পরে তার সেজিটেরিয়াস কন্সটেলেশনে। সেটাই ছিল তার… শেষ মিশন… ঠোট কাপল জেনার। সে মারা গেছে বিজ্ঞান একাডেমির বার্তায় প্রকাশ হবার পর বিশ্বাস করতে পারি নি আমি। হাত দিয়ে মুখ ঢাকল জেনা। আমি প্রথমেই তাদের বার্তা হ্যাক করে বের করে ফেলি, প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো খবরটা সত্যি… তাদের রেঞ্জারশীপটা মহাকাশের এক কন্সটেলেশনে বিস্ফোরিত হয়ে যায়… কিন্তু… কোন ট্রেস, কোন মানুষ উদ্ধার করা, কোন কিছুতে বিজ্ঞান একাডেমির উৎসাহ দেখতে পাই না… যেন ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করছে তারা। কেউ তাদের মুখ বন্ধ করে রেখেছে… হঠাৎ একসময় দেখলাম এই ধ্বংসের সব খবর এক্সেস করা বন্ধ করে দিয়েছে বিজ্ঞান একাডেমি। এসব দেখে আমি পাগলের মত হয়ে যাই… বিজ্ঞান একাডেমির অনেক গোপনীয় ফাইল খুলে ফেলি আমি… প্রায় তিন বছর পর হঠাৎ একটা ফাইল খুলতে গিয়ে দেখতে পাই প্রোজেক্ট’ ১২ সম্পর্কে। এখানে হঠাৎ জেমসের নাম দেখতে পাই, সাবজেক্ট ৪ হিসেবে কিসের একটা বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্যে কাজ করছে… এছাড়া আর কিছু বের করতে পারি নি সেখান থেকে… এরপরই আমি চলে আসি আমাদের এই মিশনে… ভেবেছিলাম এখান থেকে ফিরে গিয়ে প্রোজেক্ট’১২ এর সম্পর্কে আরো কিছু জানার চেষ্টা করব… কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, তারা নিশ্চয় এমন গোপনীয় কিছু করছে যে আমাকে আর বাচতে দিতে চায় নি…

লিওর মনে পরল কিরু২ সোলারেক্সে বলছিল তুমি বিজ্ঞান একাডেমির সার্ভার হ্যাক করে অনেক গোপন তথ্য জেনে ফেলেছো। তাই তোমার মুখ বন্ধ করাটাও তাদের জন্যে জরুরী হয়ে পরেছে।

আমি আগে এমন জেনা ছিলাম না… কখনো না। মুখ ঢেকে কাদছে সে, কাধগুলো কেপে কেপে উঠছে তার। আমার ভাইকে তারা কি করেছে তাও জানি না, তার কোন প্রয়োজনে আমি কিচ্ছু করতে পারি নি… আমি অতি ক্ষুদ্র! কিচ্ছু করতে পারি নি… কথা আটকে গেল তার, শ্বাস আটকে যাচ্ছে। ট্রিনিটির উজ্জ্বল আলো যেন আকাশের নেবুলাকেও হার মানাচ্ছে এখন, যেন জেনার মনের কষ্ট সেও বুঝতে পারছে।

আর পারলো না লিও, তার হাতটা ধরে নিজের দিকে টেনে আনল। অবাক হয়ে কান্না ভেজা চোখে তার দিকে তাকালো সে। মুখে কিছু বলল না। নিজের হাতে জেনার দুচোখ মুছে দিল লিও, কঠোর চেহাড়াটা খসে পরতে এই মেয়েটাকে যেন চেনাই যাচ্ছে না… নিজের মাঝে কেমন একটা ব্যথা তৈরি হলো লিওর। পেছন থেকে তাকে আকড়ে ধরল।

আর কাদতে হবে না তোমাকে, আলতো করে বলল। আমি তোমাকে সাহায্য করব! তোমার ভাইকে খুজে বের করতে আমিও তোমার সাথে যাব… সবকিছুই মনে হচ্ছে একই সূত্রে গাথা, আমাদের খুজে বের করতে হবে। হালকা করে জেনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকল সে, হাত বুলাতে থাকল যতক্ষণ না তার হাপানিভাবটা কমে এলো, ট্রিনিটির আলোও একসময় হাল্কা সবুজ বীকনে পরিবর্তিত হলো, তখন দুজনে এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে… গাঢ় অন্ধকার আকাশে লাল নীল উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত পিলার অব ক্রিয়েশন, তাদেরকে দুহাত খুলে ডাকছে। তন্ময় হয়ে দেখতে লাগল নবীন দুই মানুষ, গ্যালাক্সির নিকৃষ্ট রাজনীতি, উচ্চবিলাসীতা থেকে অনেক দূরে, ক্ষমতার দখলদার থেকে অনেক দূরে। এই মায়াবী রাতের টানেই কোন একদিন তাহুদের আদিপুরুষ হয়তো স্পেস আর্মাডা থেকে চলে এসেছিল, হয়তো তারা বসতি স্থাপন করেছেই এই মায়াবী গ্রহটাতে শুধুমাত্র এই দৃশ্যটি দেখবার জন্যে। হয়তো তারা চিরকাল এখানেই থাকবে বিজ্ঞান একাডেমির উন্নত প্রযুক্তি থেকে অনেক দূরে শুধুমাত্র এই অদৃশ্য বাধন থেকে মুক্ত হতে না পেরে। লিওর দিকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে ঝুকল জেনা, হালকা ভাবে তার কাধে মাথা রাখল। জীবনের কষ্টগুলো আরেকজনের সাথে ভাগ করে তার ভেতরের ভারটাও কমে গেছে অনেকটা। হাল্কা স্বরে কথা বলতে থাকল লিওর সাথে, লিও ও যোগ দিল তার সাথে।

তাদের নিস্পলক অনুভূতিগুলোর সাক্ষি হয়ে রইল রাতের আকাশ, অজস্র তারা আর আকাশ আলোকিত করা নেবুলার দল।

আগের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:৩৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×