somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থ্রিলারঃ অমীমাংসিত রহস্য

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




হঠাৎ ই আজ বিশেষ কোন কাজ নেই অফিসে। এ রকমটা সাধারণত হয় না। পুরো পুলিশ স্টেশনটা অদ্ভুত অলসতায় মুড়ে গেছে একেবারে । ওসি সাহেবের মাথার উপর জোরে জোরে শব্দ করে একটা অতি প্রাচীন ফ্যান চলছে। ঘট ঘট ঘট ঘট আওয়াজ। এই আওয়াজকে থোড়াই কেয়ার করে তিনি সমান তালে পা নাচাচ্ছেন আর মোবাইলে ইয়ারফোনের মাধ্যমে গান শুনছেন। কি গান শুনছেন কে জানে।বরষায় কেউ ফ্যান ছাড়ে নাকি?ওসি সাহেবের রক্ত মনে হয় খুব বেশি গরম হয়ে আছে। সাব ইন্সপেক্টর সুরাইয়া খানিক মনে মনে হাসলো।
ফ্যানের শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই কোথাও। কেউ কোন কথাও বলছে না। কারণটা অবশ্য ভিন্ন ভালো করে লক্ষ করে দেখা যাবে সবাই কম বেশি নিজ নিজ মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত।যা কিছু দুনিয়ায় সব বুঝি মোবাইলের ভিতরেই, বাইরে আর কিছু নেই। কি একটা অবস্থা। মোবাইলকে আজ অনেকে কোকেন বলে,এটা একেবারে ভুল বলে না মনে হয় ।এসব হাবিজাবি ভাবছে আর ফ্ল্যাক্স থেকে একমনে চা ঢালছে সাব ইন্সপেক্টর সুরাইয়া ।
আরেক দিকে ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীরের হাতে একটা থ্রিলার বই। অবসরে তিনি প্রায় গল্পের বই পড়তে ভালোবাসেন।বিশেষ করে রহস্য গল্প। অন্য পাশে প্রায় গেটের মুখে দাঁড়িয়ে কন্সটেবল হারুণ আর মোমিন মাথায় মাথা লাগিয়ে মোবাইলের স্ক্রীনে কৌতুক পড়ছে আর মুখ টিপে হাসছে তবে দুএকবার মুখ ফসকে জোরে হেসেও ফেললে। তাদের অবশ্য হাসাহাসি করা নিষেধ। বিরক্ত হয়ে ওসি নেহাল কটমটিয়ে তাকিয়ে বলেন
- কি রে কি খবর সব। পাগল হলো নাকি?
কোন উত্তর নেই। যে যার কাজে ব্যস্ত।
কি মনে হতে ওসি নেহাল আরেকবার কটমটিয়ে তাকালেন বটে তবে কিছুক্ষণের মধ্যে আবার তিনি তার নিজের কাজে মন দিলেন।হাতে কাগজ কলম টেনে নিয়ে কি যেন লেখালেখি শুরু করলেন।
বই পড়তে পড়তে ইন্সেপেক্টর জাহাঙ্গীরের হঠাৎ মনে পড়লো মিলি আজ কদমফুল নিয়ে যেতে বলেছে। কদম মিলির প্রিয় ফুল। থানার পিছনে অবশ্য একটা কদম ফুল গাছ আছে।ফুল এসেছে কি না কে জানে? তিনি জানালা দিয়ে কদম গাছটা দেখার চেষ্টা করলেন। বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। আষাঢ়ের প্রথম দিন হয়তো আজ। বাংলা দিন তারিখ আজকাল আর ঠিক মনে থাকে না কেন জানি। কাউকে জিজ্ঞেস করলে হয়। কিন্তু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে না।মিলি বাসায় একা আছে। একা একা কি করছে কে জানে?
সাব ইন্সপেক্টর সুরাইয়া ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীরের টেবিলে চা রাখতে রাখতে বলল,
-স্যার চা নিন।
-হঠাৎ চা?
- না এমনিই। স্যার খুব কি ব্যস্ত?
- নাহ ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর টেনে বললেন।
- স্যার গত পরশু বলেছিলেন সময় পেলে অদ্ভুত একটা কেসের কথা শোনাবেন।আজ কি সময় হবে?ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর সুরাইয়ার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবলেন।
এই সুরাইয়া মেয়েটা বেশ অদ্ভুত । নতুন এসেছে যদিও কাজের প্রতি তার ডেডিগেশন দেখলে অবাক হতে হয়। অতীতের কেস স্টাডিতে তার সবচেয়ে বেশি আগ্রহ। যে কোন কাজে গভীর মনোযোগ। সময় পেলেই সে কোন না কোন অতীত কেস পর্যালোচনায় বসে কলিগদের সাথে । কেউ কেউ বিরক্ত হয় তবে ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীরের কিন্তু ভালোই লাগে ব্যাপারটা।তিনিও এক সময় নতুন ছিলেন। তার মনে হয় মেয়েটির কাজের প্রতি আন্তরিকতা তাকে অনেক দুর নিয়ে যাবে যদি ঠিক ঠাক গাইড পায়। ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর হেসে বললেন,
-না আজ তেমন কোন কাজ নেই যেহেতু সেহেতু আলোচনা হতেই পারে আর এইসব নিয়েই যখন আমাদের কারবার তখন আর বসে থাকা কেন শুরু করা যায়। তিনি হাতের থ্রিলারটি মুড়ে রাখলেন।
তারপর চায়ে চুমুক দিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসলেন।
-চা টা কিন্তু দারুণ হয়েছে সুরাইয়া।
- বাসা থেকে বানিয়ে এনেছি শুধু আপনার জন্য।
- শুধু আমার জন্য!!শব্দ চয়নে সতর্ক হতে হবে সুরাইয়া। না হলে লোকে নানা কথা বলবে, গুজব ছড়াবে।তোমার ক্যারিয়ার শেষ করে দেবে। হো হো হো
সুরাইয়া স্নিত হেসে বলল,
-স্যার আপনি শুরু করেন না হলে কোন কাজ পড়ে যাবে আবার। দেখা গেল এখনি উপর মহল থেকে ডাক এলো....
ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর বললেন
-ঠিক, আচ্ছা শুরু করি তাহলে।
এই বছর কয়েক আগের ঘটনা।তখন আমি নতুন পোস্টিং খুলনা বিভাগীয় এক জেলা শহরে। সবে জয়েন করেছি পুলিশে। তেমন কিছু জানি না বা বুঝি না শুধু এর ওর কাজ দেখি।দেখে বুঝে শিখতে চেষ্টা করি। কোন দায়িত্ব পড়লে হাঁচড়ে পাঁচড়ে সেই কাজটা কোন রকমে শেষ করি। তো সেই জেলা সদরের উমেশ দত্ত লেনে একটা বাড়িতে অদ্ভুত ঘটনা ঘটল।
যে বাড়িটাতে ঘটনাটি ঘটে সেই বাড়িটার নাম উমিলা নিবাস।ঘটনার দিনঃ সম্ভবত মঙ্গলবার ছিল । রাত তখন আনুমানিক দুটো হবে। নাইট ডিউটি ছিল আমার হঠাৎ একটা ফোন কল এলো থানায় -
উমেশ দত্ত লেনের উর্মিলা নিবাসে আগুন জ্বলছে। পর পর আরও ফোন। তার মানে খবরটা ভূয়া নয়। খুব দ্রুত আমরা সেখানে পৌঁছাই একটুও দেরি না করে। প্রায় একই সময় দমকল বাহিনী আর হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স ও সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল। সেই মাঝরাতে আগুনে পোড়া এক যুবককে তালাবদ্ধ কলাপসিবল গেট ভেঙে উদ্ধার করা হয়। কলাপসিবল গেট ভেঙে দেখা গেল ভিকটিম একজনই থাকে বাড়িতে । আহ! কি হৃদয় বিদারক দৃশ্য কি বলবো। জ্বলন্ত মানুষের বাঁচার আকুতি আর ছুটে চলার দৃশ্য আমার জীবনে সেই প্রথম দেখা এবং তার তীব্র গোঙানি শোনা। উফ এখনও সেই দৃশ্যের কথা মনে এলে গায়ে কাঁটা দেয়। কী যে ভয়ংকর কি বলবো,নিজের চোখে না দেখলে এই দৃশ্য অনুধাবন করা যাবে না । দ্রুত যুবকটিকে হাসপাতালে নেওয়া হলো যুবকটির দেহের প্রায় অর্ধেক পুড়ে গেছিলো ততক্ষণে। আগেই বলেছি পরে তদন্তে উঠে আসে যুবকটি বাসায় একাই ছিল। কিভাবে আগুন লাগলো সেটাও একটা রহস্য। পরবর্তীতে যুবকটির ধারাভাষ্য নেওয়া হয় যদিও কিন্তু তা বিশ্বাস যোগ্য ছিল না। কেন ছিল না সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। যাহোক দমকল বাহিনী ঘন্টা খানিকের চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে এনেছিল। এত সহজে অবশ্য আগুন আয়ত্তে আসতো কিনা সন্দেহ। যদি পাশে একটা বড় পুকুর না থাকতো। তবে পুরো বাড়িটি পুড়ে গিয়েছিল। আমার জানা মতে সেই বাড়িটি এখনও একই অবস্থায় আছে। কেউ সেখানে আর বাস করে না। জায়গা ভুতুড়ে বাড়ি বলে খ্যাতি লাভ করেছে। শুনেছি এখনও সেখানে দিনের বেলাতে কেউ যায় না।তবে যুবকটি লড়াই করেছিল অনেক দিন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য টিকতে পারেনি জীবন যুদ্ধে। কিছুটা সুস্থ হলেও হার্ট এটাকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।
তবে কথা হলো কি করে বা কি কারণে এই অগ্নি কান্ড? আগুনের উৎস কী?
যেটুকু বোঝা যায় গ্যাস সিলিন্ডার থেকে এই আগুনের উৎপত্তি। কিন্তু যুবকটি বার বার বলতে থাকে তাকে হত্যা চেষ্টা হয়েছে। স্বাভাবিক ব্যাপার মৃত্যু পথযাত্রী মানুষ অকারণে মিথ্যা বলে না। আর যার প্রতি এই অভিযোগের তীর সে তো আরও ক'বছর আগে মারা গেছে। তাহলে রহস্যটা কি? তার কথা আসছে কেন বারবার? আর তাকে মারার বা হত্যা চেষ্টার অন্য কোন কারণ খুঁজেও পাওয়া গেল না। ব্যাপারটা সত্যি অদ্ভুতুড়ে।
অনেক তদন্ত করেও কি কারণে বা কে তাকে আগুন ধরিয়ে মারতে চেয়েছে তার কুল কিনারা পাওয়া গেল না তো গেলই না। তবে এটাও তো ঠিক কেউ তো আর ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজের গায়ে নিজে আগুন লাগাবে না যদি না সে মানুষিক ভাবে অসুস্থ না হয়ে থাকে।
সেই বাড়িতে ছেলেটি সেই রাতে একাই ছিল এটা নিশ্চিত। বাড়িটি এমন ভাবে তৈরি বাড়ির ভিতর অনাহুত কেউ চট করে ঢুকতে পারবে না। এটাও নিশ্চিত। আর আমরা তো কলাপসিবল গেট ভেঙে তাকে বের করে ছিলাম তার মানে এটা নিছক দূর্ঘটনাই হবে কিন্তু যখন যুবকটির জবানবন্দি নেওয়া হল তখন আমরা ঘটনার বিবরণ শুনে বিষ্ময়ে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে গেলাম। হিসাব কিছুতেই মেলাতে পারলাম না।তবে এই ঘটনার ধারাবাহিকতায় আরেকটি অমিমাংসীত কেসের সমাধান মিলেছিল সহজে,হত্যাকারী কে জানা গিয়েছিল । যা ক্লোজ হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই।
সুরাইয়া বলল
- তারপর?
চল যুবকটির জবানিতে শুনি তাহলে ঘটনাটি। যুবকের কথামত যদিও এটি একটি হত্যাকান্ড মনে করা হয় তবে কে তার হত্যাকারী আজ অবধি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কেউ তা খুঁজে বের করতে পারেনি।যদিও যুবকটি বারবার হত্যাকারীর নাম বলেছে দ্ব্যর্থহীনভাবে ।কয়েক বছর পর এটি একটি অমীমাংসিত কেস হিসাবে ক্লোজ করা হয় সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে।

(২)
শুরুটা ছিল এরকম....
বই পড়তে পড়তে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম নিজেই জানি না। হঠাৎ কপালে ঠান্ডা হাতের স্পর্শে আমার ঘুম ভেঙে গেল। চমকে
চোখ মেলে দেখি সুরমা দাড়িয়ে আছে। মিষ্টি করে হাসছে ও, যেমনটি হাসে সবসময় আর কি।
-ঘুম ভালো হলো?
- ঠিক ঘুমাইনি তো। বই পড়ছিলাম।হঠাৎ চোখ মুদে এলো....এখন দেখি তুমি। কিভাবে?
-কি কিভাবে?
-কখন এলে?
-অনেকক্ষণ।
-তালা খুললে কি করে?.
-চোখে মুখে পানি দাও তো মাথায় মনে হচ্ছে কাজ করছে না।স্বপ্ন দেখছিলে নাকি?
-যাচ্ছি...না স্বপ্ন দেখেছিলাম না।
-তাড়াতাড়ি কর , খেয়ে নেবে রাত অনেক হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই কিছু রান্না করোনি।
-ঠিক ধরেছো আমি তো রান্না করিনি। বার্গার আনিয়ে খেয়েছি সেই দুপুরে। আমি সুরমার হাত ধরে একটু স্পর্শ করলাম সন্দেহ বশত।কেন করলাম নিজেই জানি না।
- তোমার হাত এত ঠান্ডা কেন সুরমা? সাপের মত?
-শীতকালে হাত ঠান্ডা থাকবে নাতো গরম থাকবে নাকি? আর শোন রাত দুপুরে আবার সাপের গল্প শুরু করো না প্লিজ। সাপে আমার ভীষন ভয়।
হাসতে হাসতে হালকা আড়মোড়া ভেঙে বললাম
- কটা বাজে এখন?
- বারোটা পাঁচ।
- ও মাই গড অনেক রাত তো। বুঝতেই পারিনি।কেমনে কি?
-আমি এসেছি অনেক আগে, ঘুমিয়ে আছো দেখে ডাকলাম না, এদিকে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হতে হতে রান্নায় দেরি হয়ে গেল।
-কে দিয়ে গেল তোমাকে?
- আব্বা। সাথে এত এত বাজার। তুমি তো আর গেলে না এবার!তাই..
তলপেটে চাপ অনুভব করাতে অভিযোগের তীরের খোঁচা থেকে মুক্তির উপায় বের হয়ে গেল যেন ।আমি ঝটপটিয়ে উঠে টয়লেটে গেলাম।টয়লেট সারার পর মনে হলো পেটের ভিতর হাজারটা ছুঁচো নাচছে। সুরমা কি রেধেঁছে কে জানে? তবে সুস্বাদু খাবারের গন্ধ নাকে আসছে। যা রেঁধেছে ভালোই রেঁধেচে মনে হয়।
টেবিলে পৌছে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ। এত রকম আয়োজন? এই রাতে? কি ব্যাপার বল তো? আরো কেউ কি এসেছিল?
- আশ্চর্য! কে আসবে? কি শুরু করলা।
-আব্বা কি আছে না চলে গেছেন।
- চলে গেছেন।
-খেয়ে গেলে পারতেন।
-রাত হয়ে যাবে বলে খেতে বলিনি।
-এত খাবারের আয়োজন বলে বলছি আর কি।
- বলতো কেন আয়োজন?
আমি খেতে খেতে বললাম,
-জানিনা। আসলে খিদে মুখে আর এত সুস্বাদু ঘ্রাণে আমি দ্রুত নানা উপাদেয় খাবার উদরস্থ করতে লাগলাম। অন্য সব চিন্তা বাদ দিলাম।
- কি হলো বলো?
- জানি না।
- একটু ভাবো আর আস্তে খাও।গলায় আটকে যাবে তো।হাঁসের মত করতেছে।আল্লাহ মনে হচ্ছে কত কাল খাওনি। আজিব !
-খুব খিদে।
- বাচ্চাদের মত করো না তো। প্রশ্নের উত্তর দাও আগে।
- আমি সত্যি ভাবতে পারছি না।
হঠাৎ অভিমানী সুরে বলল সুরমা,
- তুমি আর এখন আমায় আগের মত ভালোবাসো না।
-শুধু শুধু অভিযোগ করছো।
-আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী ভুলে গেছ তুমি। সরাসরি অভিযোগ
- ওহ সরি সরি বলে আমি তাড়াতাড়ি খেতে লাগলাম, ভাবছি এত বড় ভুল কি করে হলো । তবে আজ আমার আর সুরমার বিবাহ বার্ষিকী কিনা মনে করতে পারছি না। আমরা কি শীত কালে বিয়ে করেছিলাম। কে জানে? কিন্তু..... চুলোয় যাক সব ভাবনা।
- খাওয়ার পরে আমার একটা সিগারেট ধরানোর অভ্যাস। সুরমা আবার সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারে না আর তাই আমি এই কাজটা ব্যলকনিতেই সারি।
আমার সিগারেট টানা শেষ হতে হতে সুরমার রান্নাঘরের কাজ শেষ হয়ে যায়। তারপর দুজনে গল্প করি।কোন কোনদিন কফি বা চা পান করি। এটা আমাদের নিত্য দিনের অভ্যাস।
একটু দেরি হতে আমি রান্নাঘরে উকি দিলাম, দেখলাম,সুরমা গ্যাস স্টোভের কাছে কি নিয়ে যেন ব্যস্ত।
- আসবে না।
- আসছি দাড়াও।
সুরমা বেশ কিছুটা পরে এলো আজ সে দারুণ করে সেজেছে,সম্ভবত কিছু আগে। সে খুব দ্রুত সাজতে পারে। আরেকজনও অবশ্য এই সাজগোজের ব্যপারে পটু ছিল।সেসব অনেকদিন আগের কথা। সে ছিল প্রফেশনাল মেকআপ আর্টিস্ট।যাক তার কথা এখন না আর মনে করি । সে অন্য গল্প।কিছুটা একান্ত কিছুটা গোপনীয়।
আমি হাত বাড়াতে যাবো তখন সুরমা বলল
- আমার একটা অনুরোধ রাখবে?
- অবশ্যই
-দারুণ ঠান্ডা পড়েছে তুমি দু কাপ কফি বানিয়ে আনো না। তোমার হাতের কফি আমার ভীষণ প্রিয়। আর আমি দোতালায় যাচ্ছি পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফিরবো। এসে দুজন কফি পান করবো।
-দোতালায় কি আবার?
সুরমা হেসে বেরিয়ে গেল
-আসছি এক মিনিট।
আমি অন্য কিছু আর না ভেবে কফি বানানোয় মনোযোগ দিলাম।
আসলেই আমি ভালো কফি বানাই। বিয়ের আগে থেকে সুরমা আমার কফির ভক্ত।গুনগুন করে একটা গান ধরলাম,সুরমা ফিরে আসাতে আমি দারুন খুশি কিন্তু সুরমা কি করে বাড়ির চাবি পেল আমি কিছুতেই হিসাব মেলাতে পাছি না। চাবি তো সে নিয়ে যায় নি।ভুলে ফেলে রেখে গিয়েছিল।আচ্ছা সুরমা তো প্রেগন্যান্ট ছিল কিন্তু..... যাহোক আমি রান্নাঘরে ঢুকে গ্যাস জ্বালতে ই দপ করে সারা ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়লো। আমার গায়ে আগুন লাগতে কয়েক সেকেন্ড লাগলো মাত্র । আমি উদ্মাদের মত চিৎকার করতে লাগলাম আর দৌড়াতে লাগলাম। সেই অবস্থায় মনে হলো আমি সিড়িতে দেখতে পেলাম উর্মিলাকে। আশ্চর্য উর্মিলা তো মারা গেছে বছর কয়েক আগে।সে কোথা থেকে এলো? সেদিন এই পর্যন্তই।ছেলেটা আর কিছু বলতে চাইলো না। আমিও আর জোর করলাম না। ও বেশ ক্লান্ত ছিল।
ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর এবার থামলেন।
সুরাইয়া বলল
-ভেরি ইন্টরেস্টিং তারপর কি হলো?
-আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম উর্মিলা যুবকটির প্রথম স্ত্রী এবং এটাও জানতে পারলাম সেই স্ত্রীও সিলিন্ডারের গ্যাসের আগুনে মারা গেছেন। ও হ্যাঁ যুবকটির নামটাই তো জানানো হয়নি তাই না?
-তাইতো। কি নাম ছিল ওর?
-ওর নাম ছিল আলম।দুদিন পরে পুরানো কেস ফাইল ঘেটে সন্দেহ হওয়াতে কিছু প্রশ্ন করলাম আলমকে। কিছুতেই স্বীকার করলো না বেশ চাপাচাপিতেও স্বীকার করলো না । ঘাঘু মাল ছিল বটে কিন্তু মৃত্যুর ঠিক দুদিন আগে আলম খবর পাঠালো সে কিছু কথা বলতে চায় আমার সাথে। একান্তে।
খুব দ্রুতই গেলাম। কারন কেসটা যথেষ্ট রহস্যময়। এই রহস্য ভেদ করা যদি সম্ভব হয় তাহলে তো ভালোই হয়। কিন্তু এর পর যা হলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আলম অকপটে স্বীকার করলো যে ও ওর আগের স্ত্রীকে নিজে গ্যাসের আগুনে হত্যা করেছে নিঁখুত ছক কষে।যে কায়দায় ও পুড়েছে সম্প্রতি ঠিক ওই কায়দায়।এটা তারই পাপের শাস্তি । আগুনে পোড়া যন্ত্রনা সে আর সহ্য করতে পারছে না। নিরাপরাধ উর্মিলাকে হত্যার কারণ সুরমাকে নিজের করে পাওয়ার অদম্য বাসনা আর সম্পত্তিতে ওর নিজের একার কতৃত্ব পাবার লোভে এক্ষেত্রে প্রধান কারণ বলে জানালো এবং এটা ও দাবি করলো যে উর্মিলা ওকে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিশোধ নিতে ও কে প্ল্যান করে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে।উর্মিলাই সুরমা রূপে এসে তাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে।
আমি বিশ্বাস না করলেও কোন যুক্তি তর্কে সে তার নিজের অবস্থান থেকে একচুল ও নড়লো না।
সুরাইযা প্রশ্ন করলো
-তাহলে বোধহয় সুরমা এই কেসে কোন ক্রমে ফেসে না যায় তাই এই চাল হয়তো!
-না সুরাইয়া তোমার ধারনা ভুল সুরমা সেদিন ক্লিনিকে ভর্তি ছিল। সে সন্তান সম্ভবা ছিল। তার সিজার করা হয়েছিল । যখন আলম অগ্নিদগ্ধ হচ্ছিল ঠিক তখনই সুরমা হাসপাতালে একটি মেয়ে সন্তান প্রসব করেছে।
-তাহলে কি এটা আত্নার প্রতিশোধ। উর্মিলার আত্নার। আলমের কথা মত আর কি।
-আমার তা মনে হয় না। আসলে আত্নার প্রতিশোধ বলে কিছু নেই। তবে প্রকৃতির প্রতিশোধ বলতে পারো হয়তো আলমের হ্যালুসিনেশন হয়েছিল কোন কারনে। সে কল্পনায় উর্মিলাকে দেখে থাকবে। যা আসলে ছিল মনের ভুল। হ্যালুসিনেশন।

- আচ্ছা উর্মিলাকে কেন মেরেছিল জহির? জানা গেছিল।
-ওই যে বললাম সুরমার সাথে আগে থেকে আলমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু উর্মিলাকে বিয়ে করে অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ আর নিরাপদ বাসস্থানের আশায়। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে ছিল উর্মিলা। মিলেছিল সবই রাজকন্যা রাজত্ত্ব সব। কিন্তু সুরমার সাথে সম্পর্ক আরো উচ্চভিলাষী করে তোলে দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা আলমকে।

এই স্বীকারোক্তির পরে আলমের অবস্থা আরও অবনতি হয় এবং দু'দিন পরে আলম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। অবাক ব্যপার হচ্ছে সে হার্ট এটাক করে মারা যায়।


আসলে অনেক কেসের মধ্যে এটাও একটা আনসলভ কেস ছিল । কিছুদিন পরে স্বাক্ষ্য প্রমানের অভাবে কেসটি ক্লোজ হয়ে যায়। বলল ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর। ঠিক সে সময় থানার বাইরে একটি দামীগাড়ি এসে দাড়ায়। গাড়ী থেকে নামে এক জোড়া দম্পতি......

সমাপ্ত

© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:০৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×