রংমহল
________________
তালাটি মুঠো করে ধরার আগে একটু ভাবলাম। স্পর্শ করা কি ঠিক হবে?এদিক ওদিক তাকালাম। নাহ! হাতের কাছে তো তেমন কিছুও নেই যে পরিষ্কার করে নেব। মনে মনে একটা বিশ্রি গালি দিলাম। হারামজাদা, বর্জ্য ত্যাগ করার জায়গা পায় নি আর !
দেরি করা ঠিক হবে না।কেউ আসবার আগে আমাকে কাজ সেরে নিতে হবে।অন্যকিছু আর কিছু না ভেবে তাড়াহুড়ো করে চাবি ঢোকাতেই চাবি মধ্যখান থেকে ভেঙে গেল।
ধুস!
এদিকে আমার নেশার টান প্রবল হয়ে উঠছে ক্রমশ কিন্তু বিকল্প চাবির অভাবে তালা ভাঙতে গেলে শব্দ হবে এখন। সবাই টের পেয়ে যাবে। তিনতলার এই ঘরটার ভুতুড়ে বলে বদনাম আছে তাই এদিকটায় কেউ খুব একটা আসে না।সেই সুযোগে আমি আমার কাজ সারি নির্বিঘ্নে কিন্তু আমাদের তো এখন এই ঘরটাতে ঢুকতেই হবে। নিঃশব্দে।
উপায়?
গোশত
_________________
-মা তুমি খাইবা না?
- না রে বাপজান।তোমরা খাও। আরাম কইরা খাও। আরেকটু ভাত দেই? গোশত আরেকটা নিবা?
ছোট ছেলে জসীম অতি আনন্দে বলল
- মা গোসত রান্না খুব ভালো হইছে। মজা লাগতাছে খুব।
- তোরেও আরেকটু দেই।
বড় ছেলে খলিল এবার প্রশ্ন করে
- মা তুমি গোশত খাও না কেন?
- এম্নিই!
হঠাৎমাথা নিচু করে বাতাসী।কিছুক্ষণ পরে কি মনে হতে ঘরের কোনে এক দলা থুতু ফেলে সজোরে।
শরীর বেচা পয়সায় গোশত খেতে তার কেমন যেন ঘেন্না করে। কেন করে তার জানা নাই।
অবেলায় বকুল
_______________________
আসাদ গেট থেকে আটপৌরে শাড়ি পরা একজন ৩০/৩৫ বছরের নারী ভীষণ ব্যস্ততা নিয়ে বাসে উঠলো। আমি গেটেই ছিলাম সে দাঁড়ালো ঠিক আমার সামনে। কিছু সময় বাদে বিরক্তি নিয়ে বলল
- একটু সরে দাঁড়ান তো প্লিজ। আমি দাঁড়াতে পারছি না।
অনুপমা!
আমি সরবো কি বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়েই রইলাম। কত বছর! বারো বছর তো হবেই। কিন্তু অনুপমা তো মারা গেছে সেই কবে? আবার কোথেকে উদয় হলো সে? তবে কি তার মৃত্যুর গল্প ইচ্ছে করে ছড়ানো হয়েছিল? নাকি আমারই ভুল!...
সব মিথ্যে!
--------------------------------
- একটু বসবো?
লুৎফর সবে দোকান খুলল। এখন বেঞ্চগুলো নামিয়ে রাখছে একে একে। আজ একটু বাড়তি কাজের চাপ আছে তাই সকাল সকাল দোকান খুলে বসেছে সে। রেজওয়ান সাহেবের মেয়ের বিয়ে অনেক বাজার সদাই নিবে তাই এই ব্যস্ততা। এর মধ্যে চেনা একটা মুখ উদয় হলো হঠাৎ। চরম বিরক্তিভাব জাগলো তার মনে। চোখ কটমট করে তাকিয়ে প্রথমে নিচু স্বরে একটা কুৎসিত গালি দিল তারপর বেশ জোরেই বলে উঠলো
-তোমাকে না কতবার বলেছি আমার দোকানে সামনে আসবা না। অপয়া অলক্ষী মেয়েছেলে কোথাকার!কথা বললে শোনে না। দিলে তো সকালটাকে মাটি করে। মাস গেলে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি তাতেও হচ্ছে না,আবার এখানে আসা লাগছে?
- কি করবো?বাড়িওয়ালা কালকে বলল এ মাস থেকে ঘর ভাড়া আরো পাঁচশো টাকা বেশি দেওয়া লাগবে, সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আর আমাকেও কিছু টাকা বাড়িয়ে দিস সত্যি সব জিনিসের খুব দাম বেড়ে গেছে ।তোর দেওয়া ও কয়টা টাকায় চলতে খুব কষ্ট হয় ।
-তোমার কি মনে হয়? টাকা গাছের পাতা। চাইলেই পাওয়া যায়? সকাল সকাল আসছো ঝামেলা করতে। আমার সংসার নাই? বউ ছেলে মেয়ের পিছনে খরচ নাই? তুমি কি আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না?
-তোর ওখানে নিয়ে গেলেই তো সব ঝামেলা চুকে যায়।একসাথে থাকি না হয়। আমিও একটু এই বয়সে শান্তি পাই।
-কোন পরিচয়ে থাকবা?তোমার পরিচয় দেওয়া মত আছে কিছু ? জন্ম দিয়েছো তাই পারি না ।অন্য কেউ হলে ঝামেলা অনেক আগে চুকাতাম। সবাই আমাকে বলে বেশ্যার ছেলে । কি লজ্জা! কি লজ্জা!! মুছতে পারি নি তোমার এই কলঙ্কের দাগ।
-তবুও আমি তোর মা রে লুৎফর ?
- বেশ্যাগিরি করতে ভালো কথা। মা হতে বলেছিল কে? জন্মের সময় আমার গলা টিপে মারতে পারো নাই? যাও যাও সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করিয়ো না।এখান থেকে বের হও।
শেফালির খুব কষ্ট হচ্ছে,খুব ।যদিও কারো কথায় এখন আর সে কষ্ট পায় না।তবে নাড়ি ছেড়া ধন এমন করে বললে সে কোথায় যাবে? কোথায় মুখ লুকাবে? বুক ফেটে যাচ্ছে তার।এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ার পর মলিন আঁচল দিয়ে মুখটা মোছার ছলে সে চোখের পানি মুছল। আত্নহত্যা করার মত মানুষ সে নয়, তাই বেঁচে থাকা। তার জীবনের ভয়ঙ্কর অতীতের কথা সে কাউকে জানাতে চায় না। তবু সেসব কথা বারবার সামনে এসে যায়। কেন এমন হয়?
শেফালি ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাত ধরে চলছে। এখনও পুরোপুরি জাগেনি এ শহর।
সে ধীর পায়ে হেঁটে চলেছে তাঁর গন্তব্যে। আজকাল তাঁর হাঁটতেও ভীষণ কষ্ট হয়, হাড়ের জোড় গুলোতে খুব ব্যথা । আজকাল প্রায় তার মনে হয় এ জীবন, সংসার আশেপাশের মানুষ, সন্তান, মায়ার টান,ভালোবাসা সব ভুল....ইন্দ্রজাল ..সব মিথ্যে।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:০০