somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিত্রনাট্যঃ বৃত্ত বন্দী জীবন

০৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চরিত্রসমূহ
------------
১. জয়নব- ইট ভাঙা শ্রমিক। বয়স -৩০
২. রাহেলা- জয়নবের মেয়ে। বয়স-৯
৩. সালেহা- ইট ভাঙা শ্রমিক। বয়স- ৩২
৪.বস্তিবাসী এক কিশোর ছেলে। বয়স- ১৪/১৫
দৃশ্য - ১
________
সকালের শহর। দু'একটা গাড়ি ছুটছে। সূর্য উঠছে....

কুয়াতলী বস্তি। বস্তির পাশ ঘেষে ড্রেন। এক উঠতি কিশোর সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রসাব করছে।

কাছেই পৌরসভার পানির কলে দীর্ঘ লাইন।

রাহেলা নামে আট/ নয় বছরের একটা মেয়ের এক হাতে স্টীলের মগে ধোয়া ওঠা চা অন্য হাতে পুরির ঠোঙ্গা। ছুটছে মেয়েটি। টুপ করে ঢুকে গেল বস্তির গলিতে।
দৃশ্য -২
_________
জোড়াতালি দেওয়া বস্তির একটা ঘর। জয়নব ভরা পানির কলস নিয়ে সেই ঘরে ঢোকে।

দ্রুত হাতে টুকটাক গৃহস্থালি কাজ সারে। তারপর হাড়ি থেকে দুটো মাঝারি গামলায় পান্তা ভাত নামায়। ভাতের উপর একটু আলুভর্তা রাখে সাথে কাঁচা পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ।

একপাশে একটু নুন রাখে।

রাহেলা ঘরে ঢোকে। জয়নব এক ঝলক মেয়ের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে মন দেয়।
- ওই এত্তক্ষণ কই আছিলি?
-দোকানে বহুত ভীড় আছিল মা।
-ফিরা আইতি। দে চা দে। পুরি কয়ডা দিছে?
-গুইন্যা লই নাই।
- তুই দুইডা ল আর সাকিন ঘুম তন উঠলে ওরে দুইডা দিবি।
-তুমি নিবা না মা?
জয়নব কিছু না বলে চুলগুলো আলগোছে বাঁধে। ভাতের গামলা কাপড়ে বেঁধে, মাথায় কাপড় তুলে পান্তাভাতের গামলা নিয়ে ঘর থেকে বের হয় সে।

- হাড়িতে ভাত রাখছি। ভাত খাইয়া স্কুল যাইস কইলাম। ঘরে তালা মাইরা বকুল খালার কাছে চাবি দিবি। দুপুরে খিদা পাইলে মুড়ি খাইবি। চৌকির গদলার নিচে পাঁচ ট্যাকা রাখছি। পাঁচ ট্যাকা দিয়া চিনি কিইন্যা মুড়ি দিয়া দুই ভাই বোন খাইবি। রাইতে আইয়া ভাত রাধুমনে। বুঝছোস!
- মা একটু মাছ আইন্যো।কতদিন মাছ খাই না। মাছ খাইতে মন চায়।
জয়নবের অসহায় মুখের ছবি ফুটে ওঠে ক্লোজ শর্টে। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে সে।
মেয়েকে আদর করে পথে নামে।

দৃশ্য - তিন

___________
সকাল ১১টা।

ইট ভাঙা শ্রমিকের দল রাস্তার পাশে নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত।

রোদ বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য মাথার উপর ছেড়া ফাটা তালি দেওয়া ছাতা।

আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। কাজের মাঝে অনতিবিলম্বে বৃষ্টি নামে মুষলধারে। বৃষ্টির তোড়ে কাজে ছন্দ পতন।

এই অবসরে সালেহা তার ছোট বক্স থেকে রুটি বের করে।

সালেহা জয়নবকে একটা শুকনো রুটি দেয়।
- জয়নব এই ল।
- কি দেস?
-রুটি।
- আমারে আবার দেস ক্যান? তুই কি খাইবি?
- আমার আছে চিন্তা করণ লাগবো না।
- দুপুরে আমার লগে দুগ্গা খাইস রে বইন।
- কি খাওয়াইবি? পুলাউ?
চকচক করে ওঠে সালেহার চোখ।
- হেই কপাল কি আছে আমাগো?
- মজা করলাম রে।
- পানি পানতা আনছি।
- জসিমরে গার্মেন্টসে দিছি জয়নব।
- স্কুল ছাড়াইলি!
- আমগো আর স্কুল!

ক্লোজ শর্ট ওরা রুটি চাবায়।

আজকাল তো খোয়া ভাঙনের কাম তো উইঠ্যা গেছে। রাস্তায় কাজ হইলে শুধু ডাক পাই। বাসা বাড়িত কাম লইতে হইবো উপায় নাই ?

- হ!জীবনভোর শুধু ভাইস্যা বেড়ানো কাম।

শুকনো রুটি চাবানো যায় না। একটু পানির জন্য জয়নব এদিকে ওদিকে চায়।

- কি বিচড়াইতাছোস?
- পানির বোতল আনতে ভুইল্যা গেছি মনে লয়।
সালেহা পিছনে ফিরে বোতল বের করে তাতেও পানি নেই।
বোতল তুলে ধরে সে।

হায়! হায়!! কপালরে কপাল এট্টু ফুটা পানি তাও জোটে না !

জয়নব বোতলটা হাতে নেয়। ঝুৃম বৃষ্টি হচ্ছে। ছাতার শিক বেয়ে পানি ঝরছে। জয়নব সেখানে বোতলের মুখ ধরে। ধীরে ধীরে বোতল পানিতে পূর্ণ হচ্ছে।
পাওয়ার সুখে দু'জনে হাসি বিনিময় করে।

সমাপ্ত

© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৮:৫৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×