চরিত্রসমূহ
------------
১. জয়নব- ইট ভাঙা শ্রমিক। বয়স -৩০
২. রাহেলা- জয়নবের মেয়ে। বয়স-৯
৩. সালেহা- ইট ভাঙা শ্রমিক। বয়স- ৩২
৪.বস্তিবাসী এক কিশোর ছেলে। বয়স- ১৪/১৫
দৃশ্য - ১
________
সকালের শহর। দু'একটা গাড়ি ছুটছে। সূর্য উঠছে....
কুয়াতলী বস্তি। বস্তির পাশ ঘেষে ড্রেন। এক উঠতি কিশোর সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রসাব করছে।
কাছেই পৌরসভার পানির কলে দীর্ঘ লাইন।
রাহেলা নামে আট/ নয় বছরের একটা মেয়ের এক হাতে স্টীলের মগে ধোয়া ওঠা চা অন্য হাতে পুরির ঠোঙ্গা। ছুটছে মেয়েটি। টুপ করে ঢুকে গেল বস্তির গলিতে।
দৃশ্য -২
_________
জোড়াতালি দেওয়া বস্তির একটা ঘর। জয়নব ভরা পানির কলস নিয়ে সেই ঘরে ঢোকে।
দ্রুত হাতে টুকটাক গৃহস্থালি কাজ সারে। তারপর হাড়ি থেকে দুটো মাঝারি গামলায় পান্তা ভাত নামায়। ভাতের উপর একটু আলুভর্তা রাখে সাথে কাঁচা পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ।
একপাশে একটু নুন রাখে।
রাহেলা ঘরে ঢোকে। জয়নব এক ঝলক মেয়ের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে মন দেয়।
- ওই এত্তক্ষণ কই আছিলি?
-দোকানে বহুত ভীড় আছিল মা।
-ফিরা আইতি। দে চা দে। পুরি কয়ডা দিছে?
-গুইন্যা লই নাই।
- তুই দুইডা ল আর সাকিন ঘুম তন উঠলে ওরে দুইডা দিবি।
-তুমি নিবা না মা?
জয়নব কিছু না বলে চুলগুলো আলগোছে বাঁধে। ভাতের গামলা কাপড়ে বেঁধে, মাথায় কাপড় তুলে পান্তাভাতের গামলা নিয়ে ঘর থেকে বের হয় সে।
- হাড়িতে ভাত রাখছি। ভাত খাইয়া স্কুল যাইস কইলাম। ঘরে তালা মাইরা বকুল খালার কাছে চাবি দিবি। দুপুরে খিদা পাইলে মুড়ি খাইবি। চৌকির গদলার নিচে পাঁচ ট্যাকা রাখছি। পাঁচ ট্যাকা দিয়া চিনি কিইন্যা মুড়ি দিয়া দুই ভাই বোন খাইবি। রাইতে আইয়া ভাত রাধুমনে। বুঝছোস!
- মা একটু মাছ আইন্যো।কতদিন মাছ খাই না। মাছ খাইতে মন চায়।
জয়নবের অসহায় মুখের ছবি ফুটে ওঠে ক্লোজ শর্টে। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে সে।
মেয়েকে আদর করে পথে নামে।
দৃশ্য - তিন
___________
সকাল ১১টা।
ইট ভাঙা শ্রমিকের দল রাস্তার পাশে নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত।
রোদ বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য মাথার উপর ছেড়া ফাটা তালি দেওয়া ছাতা।
আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। কাজের মাঝে অনতিবিলম্বে বৃষ্টি নামে মুষলধারে। বৃষ্টির তোড়ে কাজে ছন্দ পতন।
এই অবসরে সালেহা তার ছোট বক্স থেকে রুটি বের করে।
সালেহা জয়নবকে একটা শুকনো রুটি দেয়।
- জয়নব এই ল।
- কি দেস?
-রুটি।
- আমারে আবার দেস ক্যান? তুই কি খাইবি?
- আমার আছে চিন্তা করণ লাগবো না।
- দুপুরে আমার লগে দুগ্গা খাইস রে বইন।
- কি খাওয়াইবি? পুলাউ?
চকচক করে ওঠে সালেহার চোখ।
- হেই কপাল কি আছে আমাগো?
- মজা করলাম রে।
- পানি পানতা আনছি।
- জসিমরে গার্মেন্টসে দিছি জয়নব।
- স্কুল ছাড়াইলি!
- আমগো আর স্কুল!
ক্লোজ শর্ট ওরা রুটি চাবায়।
আজকাল তো খোয়া ভাঙনের কাম তো উইঠ্যা গেছে। রাস্তায় কাজ হইলে শুধু ডাক পাই। বাসা বাড়িত কাম লইতে হইবো উপায় নাই ?
- হ!জীবনভোর শুধু ভাইস্যা বেড়ানো কাম।
শুকনো রুটি চাবানো যায় না। একটু পানির জন্য জয়নব এদিকে ওদিকে চায়।
- কি বিচড়াইতাছোস?
- পানির বোতল আনতে ভুইল্যা গেছি মনে লয়।
সালেহা পিছনে ফিরে বোতল বের করে তাতেও পানি নেই।
বোতল তুলে ধরে সে।
হায়! হায়!! কপালরে কপাল এট্টু ফুটা পানি তাও জোটে না !
জয়নব বোতলটা হাতে নেয়। ঝুৃম বৃষ্টি হচ্ছে। ছাতার শিক বেয়ে পানি ঝরছে। জয়নব সেখানে বোতলের মুখ ধরে। ধীরে ধীরে বোতল পানিতে পূর্ণ হচ্ছে।
পাওয়ার সুখে দু'জনে হাসি বিনিময় করে।
সমাপ্ত
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৮:৫৭