গতকাল ব্লগার রুদ্রছায়া লিখিত "মুজাহিদের বিরুদ্ধে দূর্বল কন্ঠে ফাঁসির আর্জিঃ রাষ্ট্রপক্ষের নর্দন-কুর্দন জঘন্য!" ব্লগটি কিউরিসিটি নিয়েই দেখতে গেলাম। সেখানে বিপুল তর্ক হবে বলে ধারনা ছিলো। আর আইনের মারপ্যাঁচে আমরাও কিছু জানতে পারতাম। অথচ এখন ব্লগটিতে গেলে 'সেটা স্থগিত অথবা বাতিল করা হয়েছে' বলা হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদদের আত্মার প্রতিশোধের বিপরীতে লিখা ব্লগটি পড়ে নিজের কাছে প্রচন্ড কষ্ট লাগলেও, দেশের সর্বাধিক আলোচিত বিষয়ে অনেকদিন পর একটি জমজমাট আলোচনা দেখতে পাব বলে মনে হয়েছিল। যেখানে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ যুক্তির সৌন্দর্যে নিজেদের শক্তিমত্তা ও গ্রহনযোগ্যতার প্রমাণ রেখেই নৈতিক ও আইননত উভয় দিক থেকে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেই আশাটি ছিলো। সেটি হলে মুক্তমন ও যুক্তির পুজারী হিসেবে ব্যাক্তিগত ভাবে প্রশান্তি লাভ করতাম।
লেখাটির শক্তিশালী প্রকাশ এবং নির্ভুল তথ্যগুলোই আশান্বিত করেছিলো জমজমাট বিতর্কে একপর্যায়ে নিজের মুক্তমনকে সঁপে দেয়ার ইচ্ছায়। গতকাল ফাঁসির পক্ষে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সরকারী এটর্নি জেনারেলের বক্তব্যগুলো আমার কাছেও কাংখিত ও শক্তিশালী মনে হয়নি। অন্তত বিচারিক দিক থেকে। আমাদের দেশের সরকারী কর্মচারীদের অবস্থা তো জানাই আছে। সেক্ষেত্রে ঐসব দূর্বল যুক্তির বাইরে যুক্তিবাদী তরুন প্রজন্ম যথার্থ মতামত প্রতীষ্ঠা করতে স্বক্ষম হবেন সেই ভরসা ছিলো।
সেক্ষেত্রে সুস্পষ্টতই রুদ্রছায়ার গতকালের ঐ ব্লগটি মানবাধিকারকে ভিত্তি করে লেখা ছিলো। তথ্য দেয়া হয়েছিলো সুস্পষ্ট। দেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে প্রমাণ ভিত্তিক লেখা ছিলো সেটা। বর্ণনায় কোন ধরনের অস্পষ্টতাও ছিলোনা। স্পষ্ট ভাবেই লেখাটিতে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক বিরোধীতারকে মত গ্রহণের স্বাধীনতা ও সেই স্বাধীনতার গ্রহনযোগ্যতাকে প্রকাশ করা হয়েছিলো।
এর পরেও মুক্তচিন্তার জনপ্রিয় প্লাটফর্মে লেখকের পুরো ব্লগটি স্থগিত ও বাতিল করা হয়েছে দেখতে পাচ্ছি!
এখন সভাবতই প্রশ্ন দেখা দেবে- আদালতে ফাঁসির মত স্পর্ষকাতর ব্যাপারে আমাদের আইনজীবিদের দ্বারা আইন বনাম আবেগ চর্চার মত গুরুতর বিষয় নিয়ে যুক্তিপূর্ণ লেখাটি বাতিল করে সামু কর্তৃপক্ষ কি আবেগকেই আইনের ওপর তুলে রাখলেন?
চিন্তার মুক্ত প্রবাহের সমর্থক হিসেবে উপলব্ধি করতে পারি যে মানবাধিকার, আইন, বিচার, দন্ড, মুক্তমন এই বিষয়গুলো এমন যে এককেন্দ্রীক আবেগ চর্চায় সেগুলোকে কেবল লুন্ঠিতই করা যায়!
সেক্ষেত্রে আমাদের মিডিয়া, বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী, প্রশাসন যেভাবে নিজেদের আবেগকে যাচ্ছেতাই ভাবে জনগনের ওপর প্রবাহিত করার চর্চা শুরু করেছেন তাতে বাংলাদেশে মানবাধিকার ও মুক্তমন চর্চা মাথা তুলে দাঁড়াবার ক্ষেত্রে স্থায়ী হুমকিতে পতিত হয়েছে।
ভবিষ্যতে ভিন্ন মতাবলম্বীদের গনতান্ত্রিক উত্থান ঘটলে, তাদের দ্বারা মানবাধিকার প্রশ্নে বিশ্ববিখ্যাত বিপ্লবীদের নামগুলো, ক্ষমতাসীনদের আবেগ ও প্রাপ্তভোট বিবেচনায় সংখ্যাগুরু আবেগের নামে আইনত লুন্ঠিত হলে তা প্রতীরোধের নৈতিক ভিত্তিকে অগ্রিম নষ্ট করা হল কি? এসব উপমাগুলো মুক্তমনাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবনে দাঁড়াবে না তার নিশ্চয়তা কী?
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মিডিয়া গুলো ভবিষ্যত 'দৈনিক সংগ্রাম' হয়ে ফিরে না আসুক। মানবতা বিরোধী সকল শক্তির পথ যুক্তির হাতে স্থায়ী ভাবে রুদ্ধ হোক।
আশা করি,
সামু কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে মুক্তমনা ব্লগারদের সার্বজনীন মানবাধিকার সংক্রান্ত উদ্বেগ দূর করবেন।
মাতৃভূমীকে সাজাই সার্বজনীণ মানবাধিকার রক্ষার যুক্তি নির্ভর মঞ্চ করে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




