somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন হিমুর গল্প

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন হিমুর গল্প

পরন্ত বিকেলে রংধনুর সাত রঙ আকাশে ডানা মেলেছে আজ। এক রাস সবুজ ঘাসের বুকে দাঁড়িয়ে এক যুবক আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে দুঃখ ভোলার জন্য। তার গায়ে হলুদ পাঞ্জাবি আর পরনে কালো প্যান্ট পা দুখানা খালি। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনের দুঃখ ভোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। কারন আজও তার প্রিয় মানুষটির দেখা মিলল না। সেই চার ঘন্টা বসেছিল দক্ষিণ হাওয়া ভবনের সামনে। আজ সহ তৃতীয় দিন গেল আর অপেক্ষার মোট সময় ২০ ঘন্টা। যতটা মন খারাপ হওয়ার কথা ততটা হয়নি তার। কারন হিমুরা অপেক্ষা করতে ভালোবাসে। তাই তারও অপেক্ষা করতে ভালো লাগে। অপেক্ষার ফল নাকি সুমিষ্ঠ হয়।

"তোমার নাম কি?"
"হিমু। হিমালয় থেকে হিমু।"
"তা তো বুঝলাম তুমি হিমু। কিন্তু তোমার আসল নাম কি?"
"আমার আসল নাম..............।"
"খুব সুন্দর নাম।"
ভদ্রতা মূলক একটা ধন্যবাদ দেয়া উচিৎ ছিল হিমুর কিন্তু সে সেটা করেনি। হুমায়ূন স্যার হিমুকে আবার বললেন,
"বুঝলে হিমু, যখন আমি হিমুদের দেখি বা শুনি কোন হিমু এসে আমাকে না পেয়ে ফিরে গেছে তখন আমার খুব খারাপ লাগে। মনে কর, একজন বাবার সাথে তার ছেলে দেখা করতে এসেছে। অনেক বছর পরে। কিন্তু ছেলেটি বাবাকে না পেয়ে ক্ষুদ্র বুকে এক পৃথিবী সমান দুঃখ নিয়ে চলে গেছে। যখন ঐ বাবা এসে শুনবে, তার ছেলে এসে ফিরে গেছে তাও এত বছর পর তখন ঐ বাবার ক্ষুদ্র বুকে সাত পৃথিবী সমান দুঃখ ভর করে। যেটা সন্তান উপলব্ধি করতে অক্ষম।"
হিমু শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে যাচ্ছে কথায়। আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্যারের দিকে। কোন কথা বলছে না। হুমায়ূন স্যার আবার হিমুকে বললেন,
"চা খাবে?”
" হুম, চা খেতে পারলে ভালই হয়"
"চায়ে চিনি কতটুকু খাও?”
" যে যতটুকু দেয়।"
"ভালো। আসলেই আমি মুগ্ধ হচ্ছি তোমার সাথে কথা বলে। বল, কি চাও?"
"আমি হিমু হতে চাই।"
"তুমি তো হিমু হয়েই আছ। গায়ে পকেট বিহীন হলুদ পাঞ্জাবি পায়ে জুতা নেই। ঠিক মত দাড়ি কাঁটোনা দেখা যাচ্ছে।"
"এটা তো শুধুমাত্র বাহ্যিক। হিমুর মত আমার অনুমান সঠিক হয় না। এজন্য জীবনে বহুবার অপমানিত হয়েছি। হিমুর মত আমি রাতে রাস্তায় হাঁটতে পারি না। কারন, পুলিশ দেখলে ভয় লাগে। কথা বলে মানুষের মন জয় করতে পারিনা। কারন, আমি নাকি গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা। কাউকে কোনদিন বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারিনি, বরং আমি নিজেই জীবনে বহুবার বিভ্রান্ত হয়েছি। সারা রাত জেগে চাঁদ দেখা হয়ে উঠেনি। কারন, রাত বাড়ার সাথে সাথেই ঘুম বেড়ে যায়। তাই বলি আমার ভিতরটা তো হিমু হতে পারেনি।"
"যখন লোকেরা দেখবে তোমার বাহ্যিক রুপ হিমুর মত তখন তারাই তোমার ভিতরটাও হিমু ভেবে নিবে। তাদের এই ভাবনা থেকেই তোমার ভিতরটাও হিমুতে রুপান্তর হবে।"
"আপনি যখন বলছেন তখন অবশ্যই হবে।"
"হুম, আর তোমার এই বিশ্বাসটা তোমার ভিতরটা হিমুতে রুপান্তর করতে আরো সহযোগিতা করবে। আমি বলছি তোমার বাহ্যিক হিমু হয়েছে তার মানে তুমি অর্ধেক হিমু হয়ে গেছ আর বাকি অর্ধেক হয়ে যাবে।"
"স্যার একটি প্রশ্ন করব?"
"অবশ্যই। "
"হিমুকে নিয়ে কিভাবে লিখেন? আমি যতই হিমুকে পড়ি আর ততই অবাক হই। এক পাতা পরলে বাকি পাতায় কি আছে বোঝা মুশকিল। "
"শোন, যখন আমি হিমুকে নিয়ে লিখি তখন আমি নিজেই হিমু হয়ে যাই। আর হিমুকে নিয়ে লেখার সময় আমি নিজেই মেন্টাল হই। কারন, মেন্টাল না হলে হিমুকে খুঁজে পাওয়া যায় না।"
"তাহলে আমিও মেন্টাল হব।"
"আপাতত মেন্টাল হওয়ার দরকার নাই। সময় হলে এমনেতেই নিজের মধ্যেই হিমুকে খুঁজে পাবে।"
"তাই যেন হয় স্যার।"

দীর্ঘ তিন দিন টানা বিশ ঘন্টা অপেক্ষা করে আজও পাঁচ ঘন্টা অপেক্ষার পর হিমু হুমায়ূন স্যারের সাক্ষাৎ পেয়েছে। উপরোক্ত কথাগুলো তাদের মধ্যে হয়েছিল। হিমু এখন হুমায়ূন স্যারের ধানমন্ডির বাসা থেকে বের হয়ে তার গন্তব্যে যাচ্ছে।

চলতে থাকল তার হিমু হওয়ার প্রাকটিস আর হিমুকে নিয়ে লেখা সব বই সংগ্রহ করে পড়া। কিন্তু সে বুঝে উঠতে পারছিল না সে হিমু হয়েছে কিনা। কারন, আজও সে জুতো ত্যাগ করতে পারেনি। একটি ছোট চাকরি করে এই হিমু। নিজের জীবিকা ও পারিবারের সামান্য সহযোগিতা করার জন্য। কিন্তু হিমুরা তো বৈরাগি।

হঠাৎ একদিন এক খবরে আঁতকে উঠল হিমু। ২০ জুলাই ২০১২ তারিখে দোকানে বসে চা খাচ্ছে আর টিভি দেখতেছে হিমু। সকাল ১০টার খবর দেখছে সে। খবরে শুনল,
"বাংলাদেশের সাহিত্য ভূবনে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ গত কাল নিউইয়র্কে একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।"
এতটুকুই শুধু শুনল আর শুনতে পারল না। তার মস্তিষ্ক যেন অবশ হয়ে গেল। সে তখন ডিউটিরত অবস্থায় ছিল। বাহিরে এসেছিল চা-পানের জন্য। সে অবশ মস্তিষ্ক নিয়ে উঠে তাল-বেতালে হাটা শুরু করল গন্তব্যহীন পথে। ধীরে ধীরে যখন তার মস্তিষ্ক সক্রিয় হতে শুরু করল আর তখনই শুরু হল নয়ন যুগলে অশ্রুর প্লাবন। কোন মতে বাসায় আসল সে। সেদিন সারা দিন সে কিছুই খায়নি। শুধুই নয়নের অশ্রু বিসর্জন দিয়েছে। একাধারে সাত দিন শুধু রুমের ভিতরেই ছিল। এক মিনিটের জন্য বের হয়নি কোথাও। ব্যবহারযোগ্য মোবাইলটা বন্ধ রেখেছে যাতে কেউ যোগাযোগ করতে না পারে। অফিসেও সে অনুপস্থিত। ঘুম কম হওয়াতে তার চোখের নিচে কাল দাগ পরে গেছে।

ধীরে ধীরে ভুলে যেতে থাকল ব্যাথা। তার জীবন হতে থাকল স্বাভাবিক। কিন্তু তার হিমু হওয়ার ইচ্ছা শেষ হয়ে যায়নি। প্রতিদিন রাতে সে হিমুকে নিয়ে ভাবতে থাকে আর পড়তে থাকে হিমুকে নিয়ে যত লেখা। এক সময় সুয়ে সুয়ে ভাবতে থাকে যদি আবার হিমু ফিরে আসে তাহলে কেমন হত....। কল্পনায় চলে যায় এই বাস্তব হিমু শুরু হয় হুমায়ূন স্যারের সৃষ্টি হিমুকে নিয়ে তার কল্পনা। তার কল্পনায় হিমু ফিরে এসে ধরা দেয় এই বাস্তব হিমুর কাছে। শুরু হয় আবার নতুন করে হিমুর পথচলা।





সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×