somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার আড়ালে লুকায়ি থাকা হিংস্রতা

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অভিশাপ্ত রাত
রাজিবুল হাসান দুরন্ত

আমি লিমা। আমার জন্ম এক গরিব পরিবারে। আমার জন্মস্থান নোয়াখালি। আমি ওখানেই বড় হই।

আমার বাবা ঠিক মত কাজ করে না তাই আমাদের সংসারে সবসময় অভাব লেগেই থাকে। তাই সংসারের অভাব দূর করার জন্য মা একটি কাজ বেছে নেয়। তিনি কিছু ব্যাসেলর ছেলেদের রান্না করে খাওয়ানো শুরু করে।

আমার বয়স তখন ১২ বছর। আমি তখনও কিশোরী। তবে আমরা পাঁচ ভাই বোন থাকার কারনে বাবা মায়ের সংসারের ঘানি টানতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। এই বার বছর বয়সেই যাদের রান্না করে খাওয়াতেন তাদের একজনের কাছে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেন। আমি তখন ভাল মন্দ বুজতে শিখিনি।

বিয়ের পরে জানতে পারলাম আমি মায়ের কপাল নিয়ে জন্মেছি। বাবার মত আমার বরও ঠিক মত কাজ করে না। একদিন কাজ করলে তিনদিন বসে থাকে। দূর হলনা আমার অভাবের কপাল।

আমার বর আমাকে নিয়ে ঢাকা চলে আসে। তার এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে তার কাছে চলে আসে। সেই লোক আমাদের খুব সস্থা একটি রুম ভাড়া করে দেয়। চার পাশে টিনের বেড়া এবং উপরেও টিনের ছাওনি। রুম ভাড়া মাত্র ১২০০ টাকা। মাত্র ১২০০ টাকা আমার বর ঠিকমত সোধ করতে পারে না প্রতি মাসে। আমার রুমে একটি পাটি, দুটি খাতা, দুটি বালিশ আর কিছু হাড়ি পাতিল ছাড়া কিছুই নেই। ফ্লোরে বিছানা কারে থাকতাম আমার বরকে নিয়ে।

সেখানে কিছুদিন থাকার পর আমার পরিচয় হয় এক ছেলের সাথে। ও একটি প্রাইভেট কম্পানিতে জব করে। তার নাম সাকিন। ধীরে ধীরে ছেলেটিকে ভালোলাতে শুরু হয় আমার। ও... একটি কথা বলতে ভুলে গেছি, আমার বর প্রতি রাতে বাসায় ফিরত না। সাকিনের প্রতি আমার দুর্বলতা সাকিন বুঝে ফেলে। সেও আসতে থাকে আমার কাছাকাছি। আমাকে ভালোবাসার কথা বলে। আমি তেমন কিছু বলতাম না। কারন স্বামীর সম্পর্ক আমাকে পিছু টানত। আর সাকিনের সাথে আমার ভালোবাসা হতে পারে না। আমি বিবাহিত। কিন্তু তারপরও তার কাছে যেতাম তার মুখ থেকে ভালোবাসার মিষ্টি কথা শোনার জন্য। কারন, আমি কোন দিক থেকেই সুখি ছিলাম না। আমার বরের মুখ থেকে কোনদিন আমি ভালোবাসার কোন মিষ্টি কথা শুনিনি। রাতে ঘুমাতে গেলে তার গায়ে হাত পর্যন্ত রাখা যেত না। তাতে তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।

ভালোবাসা কি জিনিস তা আমি সাকিনের কাছ থেকে শিখি। তারপরও সাকিনের প্রতি আমার কোন বাসনার ইচ্ছা জাগেনি। শুধু একটা ব্যাপার আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। আর সেটা হল আমার বৈবাহিক জীবন। ভাবতাম বিয়েটা না হলে সাকিনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা যেত।

সাকিনের সাথে আশে পাশের মহিলা পুরুষদেরও ভাল সম্পর্ক ছিল। মিশুক ছেলে ছিল সাকিন। সবার সাথে মিশত। একদিন বাসায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল। বিরিয়ানি পাকানো হল। নাচ হলো গান হলো। আমিও নাচছিলাম সেদিন। অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত দুটো বাজলো। ঐদিন আমার বর বাসায় ছিল না এবং তার পরের দিনও বাসায় ফিরবে না বলে গেছে। আমি ঘুম প্রিয় মানুষ। অনুষ্ঠান শেষে বাসায় এসে ঘুমিয়ে পরলাম। পরদিন সাকিন আমাকে বলল রাত তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত সে নাকি আমার ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছিলো কিন্তু কিছুতেই আমার ঘুম ভাঙ্গেনি। আমার একটু খারাপ লাগল, কেন সে রাতে আমার ঘুম ভাঙ্গাতে যাবে। তার সাথে সেরকম কোন সম্পর্কে আমি জরাইনি। তাকে আমার ভালোলাগতো তাই কথা বলতাম। কিন্তু আমি নিজের অজান্তেই তখন বলে ফেললাম যে আজ রাতে দেখা করব।

আমি চলে আসলাম ওর কাছ থেকে। ভাবতে লাগলাম একি বললাম আমি সাকিনকে। ও রাতে আসলে কি বলব ওকে। চলে যেতে বললে তখন তো ও বলবে, তুমিই তো আমাকে আসতে বলেছ তাহলে এখন কেন চলে যেতে বলছ। আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।

ভাবতে ভাবতে কখন যে রাত হয়ে গেল টেরই পেলাম না। রাত ঠিক ১১ টা বাজে। তখন আমার টিনের দরজায় টোকার আওয়াজ পেলাম। আমি ভয়ে আতকে উঠলাম। শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকলাম দরজা খুলব কি-না। আবার টোকার শব্দ হলো। তখন উঠে বাতি জ্বালালাম। দরজা খুলে দেখলাম সাকিন দরজার সামনে দারিয়ে আছে। আমি ওকে চলে যেতে বলার আগেই ও আমার রুমের ভিতর ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।

খুব জোরে কথা বলতেও পারলাম না আমি কারন পাশের রুমে লোক। টিনের বেড়া, শ্বাস করলেও পাশের রুমের লোক শুনতে পায়।

আমি হাত জোর করে ওকে চলে যেতে বললাম। ও আমার কোন কথাই শুনল না। বাতি নিভিয়ে হিংস্র বাঘের মত ঝাপিয়ে পারল আমার উপর। জরিয়ে ধরে আমাকে পাগলের মত চুমু খেতে শুরু করলো। ওর আদর আমার কাছে বিষের মত লাগতে শুরু করল। কারন, আমি কখনই এরকমটা আশা করিনি সাকিনের থেকে। এটার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। অনেক কষ্ট করেও নিজেকে বাঁচাতে পারলাম না সাকিনের হাত থেকে।

আমার সব কিছু শেষ করে দিল সাকিন। চরিত্রে মেখে দিল কলঙ্কের দাগ। এটা ছিল আমার জীবনের অভিশাপ্ত রাত। এ রাতের যন্ত্রনা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। কারো কাছে শেয়ার করতে পারছিনা এ যন্ত্রণা। যতদিন বেচেঁ থাকব এ কলঙ্কের ভার আমার একারই বইতে হবে।

তারপর থেকে আমি আর সাকিনের সাথে কথা বলিনি। সেও আমার সাথে আর কথা বলেনি। কিছুদিন পর আমরা পালিয়ে আসি সেখান থেকে বসা ভাড়া না দিতে পেরে।
(এক রাস হতাশা ভরা বুক আমার)


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×