প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ;সাহিত্য চর্চা থেকে স্বেচ্ছায় নির্বাসনের ০১-০১-১৯৩৭ সালে, বেশ কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এক রকম জবরদস্তি করে প্রীতি সম্মেলনে আসতে বলা হয় । এবং অনুরোধ করা হয় সভাপতিত্ব করার । অগত্যা কবি রাজি হন । সেখানে উপস্থিত ছিলেন ,ড.জিয়াউদ্দিন,এ কে ফজলুল হক,জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী,কবি গোলাম মোস্তফা সহ প্রমুখ গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব । নজরুল সেখানে দারুণ এক মনোজ্ঞ ভাষণ দান করেন । অভিভাষণে সাহিত্যে জীবন ও যৌবন ব্যাপারে আলোচনা করেন । সে ভাষণে ব্যক্তি নজরুল সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন-
‘জীবন কে আমি উপভোগ করছি পরিপূর্ণভাবে ।দুঃখকে;বিপদকে দেখে আমি ভয় পাই নি । আমি জীবনের তরঙ্গে তরঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছি । তরুণ সমাজ এই জীবনের মন্ত্রে দীক্ষিত হোক’ ।
অল্প কথায় কি সুন্দর জীবনদর্শন ফুটিয়ে তুলেছেন । একজন হার না মানা নজরুল কে দেখতে পাই । আপনি অভয় দিয়েছেন আামাদের । জীবনের এ মন্ত্রেই বেঁচে থাকতে চাই । সে দিন কবি সংগীত পরিবেশন করেন ;দীর্ঘ সময় পর ,স্বভাব সুলভ হাস্যউজ্জল কবিকে আমরা খুঁজে পাই।
সাহিত্য সম্মেলন-০১-০১-১৯৩৬
এ সাহিত্য সম্মালেন মূলত আয়োজন করা জনপ্রিয় লেখক শরৎ শরৎচন্দ্র চট্টোপায়ের পরলোকগমনের স্বরণে । আয়োজন করেছিলেন নজরুলের পরিক্ষিত বন্ধু সূফি জুলফিকার হায়দার ।তিনি পরলোক গমনের পর কোন মুসলিম কবি সাহিত্যকরা আনুষ্ঠানিক আলোচনা বা শোকসভা করেন নি । শরৎতের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন স্বরুপ এ আয়োজন হয়েছিল । মজার ব্যাপার হলো; সে দিনের অনুষ্ঠানে ফজলুল হক সাহেব একটি কবিতা রচনা করেছিলেন ।
দেখিনু,সেদিন রাত্রে অদ্ভুত স্বপন
শ্মশান মাঝারে এক মহান মানব
জিজ্ঞাসিনু তারেঃ কহ তুমি কেবা ?
কহিল-আমি যে কবি । পৃথিবী
শ্মশানে আমি গায় সদা জীবনের গান ।
ফজলুল হক (মঞ্চে বসে লিখেছিলেন)
ছবিটি বোনাস হক সাহেব ও শেখ সাহেব ।
আচ্ছা তিনি শরৎ চন্দ্রকে কবি হিসাবে তুলনা করলেন কেন ?
সাহিত্য সভা-১৯৪০
মানবতার কবিকে তাঁর বন্ধু এক প্রকার জোর ও অভিমান করে বলছেন-
আপনি আজকাল আমাদের ডাকে মোটেই সাড়া দিচ্ছেন না । প্রায় সকলের অনুরোধ-উপরোধের কোন মর্যাদা দিচ্ছেন না । ….একটিবার অবশই আসুন কোন আপত্তিই শুনবো না ।
কবি কিছুক্ষণ নীরব থেকে সম্মতি জানালেন । সেদিন বসেছিল বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সভা বা আড্ডা (আমার মতে )। কেন এ কথা বলছি;তখনকার আড্ডার সদস্যদের নামগুলো খানিক উচ্চারণ করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবার কথা । সাহিত্যিক আব্দুল ওদুুদ,মুনসর সাহেব,শামসুদ্দীন(আজাদ সম্পাদক),শিল্পী জয়নুল আবেদীন,শওকত ওসমান,কবি আহসান হাবীব সহ দেশ বরেণ্য সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব । আন্ডারলাইনকৃত তিন জন নক্ষত্র শ্রদ্ধেয় নজরুল ইসলামের সাথে প্রথম পরিচয় হয়েছিল ।
বিকেল চার টা থেকে ১২ পর্যন্ত আড্ডা হয়েছিল । মধ্যমণি ছিলেন কবি নজরুল । আবৃত্তি ,সংগীতে,হাস্যরসে প্রাণচঞ্চল করে তুলেছিলেন । কবি মন যেন চঞ্চল হরিণের/হরিণীর মত অবলীলাক্রমে নেচে ছিল ।চা ,পান ছাড়া খাওয়ার কোন বালাই ছিল না । কবি অবিশ্রান্তভাবে গান গেয়ে মুগ্ধ করেছিলেন সবাই কে । বিদ্রোহী কবির হাসি-হুল্লোরে এক একবার ভূ-কম্পনের মত অালোড়িত করে তুলেছিল চারপাশ ।
সে দিন আড্ডার মাঝখানে কাজী ওদুদ সাহেব ,একটি বিষয়ে আলাপ চলাকানীল বাধা দিয়ে বলেন ‘ না,ঠিক তা নয়,আপনি যা বলছেন ভুল।
কবির উত্তর বা প্রতিক্রিয়া কি ছিল শুনবেন না ? আসুন না একটু শুনি,কষ্ট করে পড়ে তো শেষ ই করে ফেলেছেন । কবি নির্বিকারভাবে কোন কিছু না বলে হেসে বললেন-
ও,তাই হবে ।
কাজী নজরুল ইসলামের সে কি পরমত সহিষ্ণুতা ও ধৈর্য কত অপরিসীম । আমি হলে হয়তো বলে ফেলতাম ধমকের সুরে ‘কথার মাঝখানে কথা বলবেন না’ ।
খুব চেষ্ঠা করেছি ছোট করে পোস্ট দেবার । ইনিয়ে বিনিয়ে তিন টা পোস্ট দেওয়া যেত । এত মনোযোগের সাথে কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ নিবেন ।
লেখাটি উৎসর্গ করলাম ব্লগের জনপ্রিয় কবি,ছড়াকার , যার কবিতা পড়ার জন্য হলেও ব্লগে উঁকি মারতে মন চাই, আমার আত্মিক শান্তির বোন চঞ্চল হরিণী আপু কে । তুমি যে মানের কবি,লেখক,ছড়াকার সে রকম কোন লেখা দিয়ে উৎসর্গ করা আমার সম্ভব হচ্ছে না । আশা করেছিলাম ,কবিতা দিয়ে শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা ভালবাসা স্বরুপ উৎসর্গ করবো । কিন্তু সেটা সময় লাগবে । একটি পোস্ট উৎসর্গ করার সুযোগ হারিয়েছি । পরে আবারও করার নিশ্চয় সুযোগ হবে ।
তথ্যসূত্র-সুফি জুলফিকার হায়দার রচিত ‘নজরুল জীবনের শেষ অধ্যায়’ অবলম্বনে
ছবি-গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৫