somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যখন চিত্রনাট্যকার নজরুল; পরিচালক ও অভিনেতার ভূমিকায় শেখ সাহেব । :-B

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কে বলেছে স্রষ্টা অবতার পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে ?এখনও পাঠাচ্ছে মানব সমাজের মুক্তি বা সংস্কারে । ত্রাণকর্তা হিসাবে আবির্ভূত হয় কেউ না কেউ । যাদের কে পাঠান তাঁরা যুগের স্রষ্টা । তাঁরা গেয়ে যান মানবতার জয়গান । হ্যা তাঁদের অলৌকিক ক্ষমতা নেই ,নাযিল হয়নি কোনো ঐশী বাণী বা স্রষ্টার সানিধ্যে সাক্ষাত করাও সুযোগ হয়নি । কিন্তু সে সব মহাপুরুষদের স্রষ্টা একটু বেশিই বোধহয় দিয়েছেন । তাদের কে আমি অবতার বলবো না ঠিক, এ স্থানের পরে, যা থাকবে নিশ্চয় সেটাই ফেলা যাবে ।

গোবরে পদ্ম ফুল ফোটে এই লোক কথাটি শতভাগ প্রযোজ্য কাজী নজরুল ইসলাম ও শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষেত্রে । কেউ কল্পনাও করতে পারেনি; চরুলিয়া,টুঙ্গি পাড়ার মত অজপাড়া গাঁয়ে
সর্বশ্রেষ্ঠ দুই বাঙালির জন্ম হবে । যেখানে অশিক্ষা,কুসংস্কার,অনাহারে-অনাদরে ক্ষুধায় কান্না ভেসে আসতো আকাশে বাতাসে ।অনেকের সন্ধ্যার পর ঘরে প্রদীপ জ্বেলে দেবার মত ও ক্ষমতা ছিলো না ।

বাংলাদেশ নামক চিত্রনাট্য রচনার কাজ শুরু হয়েছিলো হাজারো বছর আগে । যেখানে সমাজের নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তর কারও অবদান কম নয় । এসব গণমানুষের দাবি অগ্নিময় হাতে কলম ধরেছেন নজরুল;কলম নিঃসৃত অগ্নি ফুলিঙ্গের মাধ্যমে ছিঁড়েছেন বাঙালির মন । তিনি ভীরু বাঙালিকে প্রতিবাদী হওয়ার মন্ত্র শেখালেন আর তার বাস্তব রুপ দিতে উচ্চ কণ্ঠে পর্দার সামনে আনলেন শেখ মুজিব । তার ও আগে বাংলাদেশে ভ্রণ জন্ম নিয়েছিল কবির ‘বাংলাদেশ’ কবিতায় ।তখন বাঙালীর প্রবাদ পুরুষ হয়তো ব্যস্ত ছিলেন ঘুড়ি উড়াতে,কোন পাখির বাসায় কয়টা ডিম,কবে বাচ্চা ফুটবে, সে সব শৈশবের কাজে :)

……..সময়কাল ১৯২৯ সালের ১৫ ডিমেস্বার ।কাজী নজরুল ইসলামকে বাঙালী জাতির পক্ষ থেকে জাতীয় সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়েছিল । সে দিন আরেক গুণী বাঙালি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেছিলেন‘‘ফরাসি বিপ্লবের সময় প্রত্যেক মানুষ অতি মানবে পরিণত হয়েছিল,আমার বিশ্বাস,নজরুলের কবিতা পাঠে আমাদের ভাবী বংশধরেরা এক অতি মানবে পরিণত হবে ।

এই গুণীজনের আহবান কি বিফল হয়েছে ? আচ্ছা ১২ বছর বয়সী শেখ মুজিব কি সেদিন, শুনেছিলেন এ আহবান ।!সেটার প্রমাণ তো ৫২,৬৬,৭১ সালেই পাচ্ছি আমরা ।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কবির কিছু কথা না বললেই নয় ।

বলেছিলেন-
বিংশ শতাব্দীর অসম্ভবের সম্ভবনার যুগে জন্মগ্রহণ করেছি।এরি অভিযান সেনাদলের তুর্যবাদকের একজন আমি ।এই হোক আমার বড় পরিচয়। আমি জানি ,এই পথ যাত্রার পাকে পাকে বাঁকে বাঁকে কুটিল ফণা ভুজঙ্গ,প্রখর দংশন শার্দুল পশুরাজের ভ্রুকুটি! এবং তাদের নকর দংশনের মত আজো আমার অঙ্গে অঙ্গে। তবু এই পথ আমার ,ওই পথ আমার গতি,ওই আমার ধ্রুব।আমি শুধু সুন্দরের হাতে বীণা,পায়ে পদ্মফুলই দেখিনি,তাঁর চোখে জলভরা জল ও দেখেছি।শ্মাশানেরপথে, গোরস্থানের পথে তাকে ক্ষুধা-দীর্ণ মূর্তিতে,ব্যথিত পায়ে চলে যেতে দেখেছি । যুদ্ধভূমিতে তাঁকে দেখেছি,কারাগারে অন্ধকারে তাকে দেখেছি,ফাঁসির মঞ্চে তাকে দেখেছি ।’

আমার রবীন্দ্রনাথের একটি গান মনে পড়েছে‘‘আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান’
নজরুলও জেনে শুনে অমৃতের বিষ পান করেছিলেন এবং অমরত্ব পেয়েছেন ।
বিদ্রোহী কবিতা শুনেননি এবং ৭ মার্চের ভাষণ দেখেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না । একটি জিনিস খেয়াল করেছেন কি ?

বল বীর -
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির!..
...

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অঙ্গ ভঙ্গি সাথে কণ্ঠ সব কিছুই মিলে গেল বিদ্রোহী কবিতার সাথে । এ তো কবির বিদ্রোহী কবিতার বাস্তব রুপ । এমন ই কি চেয়েছিলেন সংগ্রামী কবি 8-| ?

দু’জন মানুষের মাঝে অনেক মিল খুঁজে পাই । উভয়ে একই সাথে মানতাবাদী,গণতন্ত্রে বিশ্বাসী,সমাজতন্ত্রী, সাম্যবাদী,সংগ্রামী,নীতির কাছে আপোষহীন ,সকল জাতির , মানবতাবাদী,,গণ মানুষের বাঙালি । এমন ধর্মনিরপক্ষ বাঙালি একজনও নেই ।নজরুলের সাম্যবাদী যারা পড়েছেন । তাঁরা জানেন কতটা ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন তিনি।

‘কোন্ রণে কত খুন দিল নর,লেখা আছে ইতিহাসে,
কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর,লেখা নাই তার পাশে’’
সাম্যবাদী-নজরুল


একজনের কিছু কথা যোগ করি ।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলার বাস্তব স্রষ্টা । নজরুল বাঙালির বিদ্রোহী আত্মার রুপকার ,মুজিব বিদ্রোহীর প্রত্যক্ষ প্রতিকৃতি।নজরুল চেয়েছিলেন প্রতিটি বাঙালি সৈনিক হোক আর বঙ্গবন্ধু ভীরু বাঙালিকে পরিণত করেছিলেন মরণজয়ী মুক্তিযোদ্ধায়।নজরুলের বাংলার জয় আর বঙ্গবন্ধুর জয় বাংলা অভিন্ন উৎস থেকে উৎসারিত ।
মুহাম্মদ নরুল হুদা

জানি আপনার পড়তে কষ্ট হচ্ছে,দয়া করে একটু সময় দিন,শেষ প্রায় । চমক বাকি :-B !
শেখ সাহেব যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গঠনের সাথে দৃপ্ত হাতে উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন; কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে নিয়ে অাসতে । কবির জন্ম দিন উপলক্ষে স্বস্বাক্ষরিত ‘হে কবি’ সম্মোধন করে আমন্ত্রণ জানিয়ে পত্র পাঠান শেখ মুজিব ।ভারতের বেশ কিছু প্রভাবশালী মানুষ স্বাভাবিক ভাবে বিরোধীতা করেছিলেন । কিন্তু মুজিব বোন ইন্ধীরা গান্ধীর আন্তরিকতা ও তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কাছে সব কিছু গুড়ে বালি
হয়ে গিয়েছিলো ।
কবি আসলেন,বিমান বন্দরে হাজার হাজার ফুলের ডালি নিয়ে আগত কবিকে বরণ করে নিতে জড়ো হয়েছিলো হাজার হাজার বাঙালী । এত লোক সমাগমের কারণে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। কবিকে আ্যাম্বুলেসে করে সোজা কবি ভবনে নিয়ে যাওয়া হয় । কবি ভবনকে শেখ মুজিব খুব সুন্দর করে সাজিয়েছিলেন । কিছুক্ষণ পর কবি ভবনে কবিকে বরণ নিতে উৎসুক হয়ে হাজির হন বঙ্গবন্ধু । হাতে ছিলো বিরাট ফুলের ডালি,মুখে বিজয়ের হাসি ।রাজনীতির কবি ও বিদ্রোহী কবির এই মিলনে পিনতন নীরবতা কাজ করেছিলো কিছু সময়ের জন্য । যেন এ নীরবতা না ভাঙ্গলেই ভালো হত 8-|
বাকরুদ্ধ নজরুল অবাক নয়নে দেখছিলেন বঙ্গবন্ধু কে :|| । তখন কি তিনি ভেবেছিলেন রবার্ট ব্রাউনিংয়ের Patriot জনরোষে প্রাণবধ হলেও আমার বিদ্রোহীর সৃষ্টি ব্যর্থ হয়নি !:#P !নজরুল কি এই বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন ?
মুজিব কি ঠিক এই সময়টাতে ভেবেছিলেন ‘মহা বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত আজ শান্ত কেন B:-) ? এখনো তো উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে!অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে! তবে কেন কবি নির্বাক :|| !!

বাঙালির কবি যে দিন ঢাকায় এসেছিলেন ,সে দিনের ছবি । :)



আমি শ্রদ্ধেয় অন্নদাশঙ্কর রায়ের পংক্তিমালা একটু এদিক সেদিক করে বলতে চাই :-B -
‘যত কাল রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা বহমান
ততকাল রবে র্কীতি নজরুল-শেখ মুজিবুর রহমান’ ।।

শওকত ওসমান স্যার বলেছিলেন‘‘বাঙালি মুসলমান সমাজ হাজার বছরের ইতিহাসে দু’জন বাঙালি সৃষ্টি করতে পেরেছে’।
খুব সুন্দর বলেছেন তিনি ।

বাংলাদেশ নামক চলচ্চিত্র নির্মাণের পান্ডুলিপি লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম এবং সেটা দক্ষ হাতে পরিচালনা করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান । যেখানে অভিনয় করেছেন ,সকল ধর্মের মানুষ,নারী-পুরুষ,বাদ যায়নি চোর,বাটপার কিংবা ডাকাতরাও । কিন্তু এ গল্পে নায়কের প্রস্থান হয়েছে নির্মমভাবে |-)


লেখাটি লিখতে যে সবের সাহায্য নিয়েছি-
বিদ্রোহী ও কবি বঙ্গবন্ধু,সাম্যবাদীএবং প্রথম আলো ।

লেখাটি উৎসর্গ করলাম ব্লগের নক্ষত্রের মত বিচরণকারী ব্লগার ও মুক্তিযোদ্ধা চাঁদগাজী স্যার কে :-B । আপনার মত করে বলতে চাই । নজরুল কে বাংলাদেশে নিয়ে আসা,শেখ সাহেবের জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজগুলোর একটি । দীর্ঘজীবী হোন আপনি । সুস্থ থাকুন সব সময়

নজরুল বিষয়ক আমার লেখা

যে তিনটি সাহিত্য আড্ডা বাংলা সাহিত্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার । :-B
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৩
২১টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রম্য: টিপ

লিখেছেন গিয়াস উদ্দিন লিটন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৫




ক্লাস থ্রীয়ে পড়ার সময় জীবনের প্রথম ক্লাস টু'এর এক রমনিকে টিপ দিয়েছিলাম। সলজ্জ হেসে সেই রমনি আমার টিপ গ্রহণ করলেও পরে তার সখীগণের প্ররোচনায় টিপ দেওয়ার কথা হেড স্যারকে জানিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈশাখে ইলিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৪০



এবার বেশ আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে । বৈশাখ কে সামনে রেখে ইলিশের কথা মনে রাখিনি । একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে যে ইলিশকে কিঞ্চিত হলেও ভুলতে পেরেছি । ইলিশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×