আমার মুখ গহ্বরের ৩২টি দাঁতের সম্মিলিত সংসারে সতীদাহ প্রথা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। ৯ বছর পূর্বে ২০০৬ সালের নভেম্বরে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হওয়ার সময় উপরের পাশাপাশি দুটি দাঁত বিসর্জন দিতে হয়েছিল। বর্তমানে আরো একটি দন্ত দম্পতি (নিচের ডান পাশের ৭ ও ৮ নং দাঁত) দুনিয়া থেকে বিদায়ের কবলে পড়েছে। ৭নং দাঁতটির মাঝখানে কিছুটা ভেঙ্গে সেটি অক্ষম হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞ ডেন্টিস্ট বলছেন যে, সেটি ফেলে দেয়ার পাশাপাশি ৮নং(দিব্যি সুস্থ ও সক্ষম) দাঁতটিও ফেলে দিতে হবে। ওরা নাকি এক জোড়, জোড়বিহীন দাঁতটি নাকি পরে ভীষণ ভোগান্তি উপহার দিতে পারে।
৩ বছর পূর্বে আমার গৃহিণীর ঠিক একই অবস্থা হয়েছিল। নিচের একটি দাঁত কর্মক্ষমতা হারিয়ে যন্ত্রণার কারণে পরিণত হলে ডেন্টিস্ট সেটিকে ফেলে দেয়রার পরামর্শ দেন। দাঁতটিকে ফেলে দিতে গৃহিণীর মন সায় দিচ্ছিল না। তদুপরি ৫৭ কেজি ওজন এবং ৫ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার ছোট-খাট ডাক্তারের ওপর তার আস্থার কিছুটা কমতি পরিলক্ষিত হলো। তার ধারণা জন্মাল, বড়সড় কোন খ্যাতনামা ডেন্টিস্ট দেখালে দাঁতটিকে হয়ত বাঁচানো যেতে পারে। বুদ্ধিমতী স্ত্রী আমার অগোচরে তার দায়িত্বশীল পিতার সহায়তায় দেশের খ্যাতনামা ডেন্টিস্ট প্রফেসর ডাঃ অরূপ রতন চৌধুরীর সিরিয়াল নিলেন। ডাক্তার মহাশয় প্রেসক্রিপশনে লিখিত ১০টিরও অধিক টেস্ট সম্পন্ন সাপেক্ষে ১দিনের মধ্যেই দাঁতটি ফেলে দেয়ার নির্দেশ দেন। অবশেষে গৃহিণীর সম্বিৎ ফিরে এলো। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পূর্বের ডাক্তারের হাতে দাঁতটি ফেলে দেয়া হলো। কিন্তু গোল বাঁধল অন্যত্র- ডাক্তার সাফ জানিয়ে দিলেন এই বরাবর উপরের দাঁতটিও সত্বর ফেলে দিতে হবে। অন্যথায় সঙ্গীহারা উপরের দাতটি নাকি ভবিষ্যৎ কষ্টের কারণ হতে পারে।
৩ বছর পর ডেন্টিস্টের সেই পরামর্শ গুরুত্ব পাচ্ছে। আমার স্ত্রী বলছে যে, বেশ কিছুদিন ধরে সে উপরের কথিত দাঁতটি নিয়ে সমস্যা ভোগ করছে। আমার বর্তমানের উপরে বর্ণিত দন্ত দম্পতি বিসর্জনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দাঁতের আশপাশের তার শাসন এরিয়া অবশ করতে গিয়ে ডাক্তারকে পড়তে হয়েছিল আজব পরিস্থিতিতে সে মজার কথা আরেকদিন বলার আশা রাখি। আমার দন্তদ্বয়ের বিসর্জন সম্পন্ন হলেই নাকি গৃহিণী তার বিধবা দাঁতটিকে বিদায় জানাবেন।
সতীদাহ প্রথা যতই অপছন্দ করিনা কেন দেখা যাচ্ছে সেই ব্যবস্থার অনুপ্রথার কাছে নিরবে আমাদের হার মানতে হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪২