নামমাত্র জরিমাণার বিধান থাকলেও তা প্রয়োগ না থাকায় রাজধানীতে হাইড্রলিক ভেঁপু ব্যবহার বেড়েই চলছে। আকস্মিক ভেঁপুর শব্দ একজন মানুষকে বধির কিংবা বেহুঁশ করে দিতে পারে। অথচ এই অপরাধের জরিমানা মাত্র একশ টাকা। এছাড়া ট্রাফিক পুলিশের কাছে শব্দ পরিমাপের কোনো যন্ত্র না থাকায় তারাও বুঝতে পারেন না কোন গাড়ি অতিরিক্ত মাত্রার ভেঁপু বাজাচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দ দূষণ যেকোনো মানুষের জন্য ক্ষতিকর হলেও এতে শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এছাড়াও ট্রাফিক পুলিশ, রিক্সা বা গাড়ী চালক, রাস্তার নিকটস্থ শ্রমিক বা বসবাসকারী মানুষ অধিক হারে ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে। মানুষের শ্রবণ সীমার স্বাভাবিক মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল। যার বেশী হলে শব্দ দূষণে পরিণত হয় যা থেকে মানুষের শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। শব্দ দূষণের ফলে মানুষের শ্রবন ক্লান্তি এবং সর্বশেষ বধিরতা পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া যে সকল রোগ হতে পারে তার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, কন্ঠনালীর প্রদাহ, আলসার, মস্তিস্কের রোগ, কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস, বদমেজাজ বা খিটখিটে মেজাজ, ক্রোধ প্রবণতা স্নয়ূবিক দুর্বলতা, রক্তনালীর সংকোচন এবং হার্টের সমস্যা অন্যতম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৬০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ মানুষকে অস্থায়ী বধির এবং ১০০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ মানুষকে স্থায়ী ভাবে বধির করে দেয়। অথচ ঢাকা শহরে শব্দের মাত্রা ধারণা করা হয় ৬০-৮০ ডেসিবেল যা মানুষকে বধির করে দিতে পারে।।
এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের এক জরিপে জানা যায়, ঢাকায় যানবাহনের শব্দের পরিমাণ ৯৫ ডেসিবেল, কল-কারখানায় ৮০-৯০ ডেসিবেল, সিনেমা হল ও রেস্তোরাতে ৭৫-৯০ ডেসিবেল, যেকোন অনুষ্ঠানে ৮৫-৯০ ডেসিবেল, মোটর বাইকে ৮৭-৯২ ডেসিবেল, বাস এবং ট্রাকে ৯২-৯৪ ডেসিবেল যার সবকটিই মানুষের মস্তিষ্কের বিকৃতি এবং জটিল সব রোগ সৃষ্টি করে।
অধিদপ্তরের অন্য এক জরিপে জানা যায়, শয়ন কক্ষে ২৫ ডেসিবেল, ডাইনিং এবং ড্রয়িং কক্ষের জন্য ৪০ ডেসিবেল, অফিসের জন্য ৩৫-৪০ ডেসিবেল, শ্রেণীকক্ষের জন্য ৩০-৪০ ডেসিবেল, লাইব্রেরীর জন্য ৩৫-৪০ ডেসিবেল, হাসপাতালের জন্য ২০-৩৫ ডেসিবেল এবং সর্বপরি ৪৫ ডেসিবেলের বেশি হওয়া উচিৎ নয়। অথচ রাজধানীতে সৃষ্ট শব্দের সীমা স্বাভাবিক সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে কয়েকগুন বেশী।
ঢাকার রাস্তায় হর্ন/ভেঁপুর শব্দে মনে হয় গাড়ী চালকগন যেন ভেঁপু বাজানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। বিনা প্রয়োজনে হরহামেশাই যত্রতত্র হর্ন বাজানো হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বা সংরক্ষিত এলাকা যেমন মসজিদ, মন্দির, হাসপাতালের পাশের রাস্তাগুলোতেও ভেঁপু বাজানো বন্ধ করেনা এই চালকগন। অথচ গাড়ীর ভেঁপুর এই বিকট শব্দে চলার পথেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে যে কেউ।
গাড়ীতে হাইড্রোলিক ভেঁপু নিষিদ্ধ থাকলেও সে নিষেধ মানার সময় নেই চালকদের। এ ব্যপারে পুলিশ সার্জেন্ট মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গাড়িতে বাইকে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধ। হাইড্রোলিক ভেঁপু ব্যবহার করলে একশ টাকা জরিমানা দিতে হয়। তিনি আরও বলেন, সার্জেন্ট বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে শব্দের মাত্রা পরিমাপের কোন যন্ত্র না থাকায় তারা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারেন না। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কতৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে পরিচালিত অভিযানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয় বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শব্দ দূষণের ফলে তারা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন প্রতিদিন। হঠাৎ করে ভেঁপু বাজানোর ফলে অনেকেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাদের মতে, শব্দ দূষণ সমস্যার জন্য নামমাত্র যে শাস্তি বা জরিমাণার বিধান আছে তা দিয়ে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। প্রথমত নামমাত্র শাস্তি বা জরিমানা, দ্বিতীয়ত সে আইনের বিন্দু মাত্র প্রয়োগও নেই বললেই চলে। তাদের মতে, প্রয়োগহীন এই আইন শব্দ দূষণকারীদের অতিরিক্ত শব্দ দূষণে আরো উৎসাহ যোগাচ্ছে। তারা মনে করেন, শব্দ দূষণ রোধে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়িয়ে শব্দ দূষণ রোধ করা সম্ভব। মাসকো গ্র“পের নির্বাহী পরিচালক এ.টি.এম মাহবুবুল আলমের মতে, নিজেরা সচেতন হলে শব্দ দূষণ রোধ করা খুব বেশী কঠিন হবে না। তিনি বলেন, ‘আমারা সকল বন্ধুরা আমাদের গাড়ী চালকদের বলে দিয়েছি তারা যেন কোনো অবস্থাতেই গাড়ীর ভেঁপু না বাজান। শুধু তাই নয় আমরা কখনো ব্যস্ততার অজুহাতে চালককে ওভার ক্রসিংয়ে উৎসাহ দেইনা।’
বহির্বিশ্বে হর্ণ বাজানো মানে সামনের চালকের কোন গুরুতর ভূল ধরিয়ে দেয়া। এতে মুলত ঐ গাড়ীর চালককে অপমান করা হয়। সেখানে আমাদের দেশে বিনা প্রয়োজনেই যত্রতত্র বাজানো হচ্ছে হর্ণ। হর্ণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে চালক ও ঢাকাবাসীর ধারণার পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যপারে সুন্দর জীবন সংস্থার সভাপতি এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের শব্দ দুষন নিয়ন্ত্রণ কমিটির সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘কোন যানবাহনের রাস্তা সাইড দেয়া বা নেয়ার জন্য হর্ণ ব্যবহার ঠিক নয়। অথচ এই বিষয়টা আমাদের চালকরা জানেনই না।’
বহু আন্দোলন আর প্রতীক্ষার পর সরকার ২০০৬ সালের নভেম্বরে শব্দ দুষন নিয়ন্ত্রন আইন পাশ করেছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি বাংলাদেশের অনেক মন্ত্রণালয়, পরিবেশ এবং শব্দ দুষণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের গাড়িতে হাইড্রলিক হর্ণ ব্যবহার হচ্ছে। হর্ণ বাজানো যেখানে সম্পুর্ণ নিষেধ সেখানে আমরা দেখতে পাই গাড়ী সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকলে বা যানজটে দাঁড়িয়ে থাকলেও অনেক চালক অহেতুক হর্ণ বাজাচ্ছেন।’
তিনি জানান, হর্ণ রাজধানীবাসীর শ্রবণ শক্তি নষ্ট করে দিচ্ছে। হঠাৎ করে হর্ণ দেয়ার ফলে অনেকেই হার্ট অ্যাটাক করে। এছাড়া অতিরিক্ত হর্ণের ফলে মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়; যার ফলে অপরাধ প্রবনতা বেড়ে যায়। হর্ণের ফলে শিশু এবং গর্ভবতী নারীরা বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘এছাড়া আমরা একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাই, শিশু বয়সে বেশীর ভাগ ছাত্র-ছাত্রী মেধাবী থাকলেও বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার একাডেমিক ফলাফলের মান কমতে থাকে। নিু মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক পর্যায়ে যে পরিমাণ মেধাবী দেখা যায় উচ্চ মাধ্যমিকে সে পরিমাণ ফলাফল পাওয়া যায় না।’ ছাত্রÑছাত্রীদের লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারন হর্ণ বা শব্দ দুষণ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ ইচ্ছা করলে এটা কমাতে পারে।’ এজন্য তাদের আরো দক্ষ ও দায়িত্বশীল হতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
শুধু আইন করে বসে থাকলেই এ সমস্যার সমাধান হবে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শব্দ দুষণের এই ভয়াবহতা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে সরকারকে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন। আইন বাস্তবায়নের জন্য জরিমানা আদায় নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।’ শব্দ দুষণের কুফল সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করার দায়িত্ব গণমাধ্যমকে নিতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।
আলোচিত ব্লগ
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।
এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?
আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=
০১।
=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।
পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।
জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন