somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘এসো, এক কাপ চা খাই, একটু গল্প করি। ’

২৬ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৮ এপ্রিল, ২০২১ ।
তখন আমি ফার্মগেটের সেঞ্চুরি ডেলের বাসায় থাকি। লকডাউন আর অসুস্থতায় মনের অবস্থা একেবারে নাজুক। পৃথিবীর সাড়ে ৭৮৭ কোটি মানুষের মধ্যে গোটা বিশেক মানুষের সঙ্গে আমার উঠাবসা ছিল মাস দুয়েক। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অনিয়মিত আমি বরাবরই। পত্রিকা আর সংবাদ মাধ্যমগুলোতে দেশের নানানমাত্রিক খবর পাচ্ছি। চাকরির প্রস্তুতিতে সুবিধা হবে, তাই প্রথম আলো প্রায় নিয়মিত দেখি। সঙ্গে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
‘কবরী, এখন তো আপনি সত্যি একলা মানুষ হয়ে গেলেন’ শিরোনামে মতিউর রহমানের নেয়া কবরী সারোয়ারের ২০১৯ সালের প্রথম আলো ঈদসংখ্যার পুরোনো একটি সাক্ষাৎকার সেদিন ছাপানো হয়। ‘এত এত মানুষের সঙ্গে পরিচয়, এত জনপ্রিয়, তারপরও তিনি ছিলেন একলা মানুষ! ’ মতিউর রহমানের এমন বিশ্লেষণ দেখে অবাক হলাম।
পুরো সাক্ষাৎকার পড়লাম।
তখন দেশের তরুণদের মধ্যে নানান সহিংস ঘটনার তুমুল জোয়ায়। কিশোর গ্যাং, নারী হয়রানি, দুর্নীতি, অপমৃত্যুর খবরের মাঝে প্রায় ছয় দশকের ব্যাপক জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রীর একাকিত্বের সংবাদ। সাক্ষাৎকারে তিনি দুঃখ করে মতিউর রহমানকে বলেছিলেন, জীবনে একজন ভালো বন্ধু বা ভালো স্বামী তিনি পাননি। সঙ্গ দেওয়ার মতো একজন ভালো মানুষ পাননি, যাঁকে এ জীবনে বলতে পারেন, ‘এসো, এক কাপ চা খাই, একটু গল্প করি’।
ভাবছিলাম। এত বিচিত্র-বিস্তৃত জগতের মানুষটি শেষবেলা একদম একা। কত মানুষ ঘিরে রাখতেন তাঁকে চারপাশ থেকে! চলচ্চিত্রে অভিনয়, পরিচালনা ও প্রযোজনা ছাড়াও বহু ধরনের সামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, রাজনীতি করেছেন। কবরী ‘মিষ্টি মেয়ে’ হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। সদাহাস্য এই মানুষটির সঙ্গে যাঁদেরই যখন দেখা হতো, তাঁদের মুখও হাসি-আনন্দে ভরে যেত। অফিস বা অফিসের বাইরে তিনি যতটুকু সময় কাটাতেন, গল্পগুজব করতেন, চা খেতেন, পুরো সময়টুকুই আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভরে থাকত।
আপনার ক্ষেত্রে কেন এমন হলো? তাঁর উত্তর ছিল, এটাই হয়তো মানুষের জীবন। মানুষের চাওয়ার তো শেষ নেই। তিনি মনে করেন, এটাও হতে পারে যে কেউ তাঁকে চাইলেও তিনি বুঝতে পারেননি। চিনতে পারেননি সেই মানুষটিকে। তাঁর জীবনের একটা বড় আফসোস, যদি একজন বন্ধু থাকত, সঙ্গ দেওয়ার মতো একজন মানুষ থাকত! সে আনন্দটুকু তিনি কোনো দিন পাননি।
তখন আমি পুরো বাসায় একাই থাকি। সঙ্গী কেবল বই, খাতা, কিছু খাবার আর খবরের কাগজ। অনুভব করছিলাম, একা থাকার সাথে একা লাগার পার্থক্যটা কোথায়। খুব সোজাভাবে বলতে গেলে, একা থাকার অর্থ হচ্ছে আপনি শারীরিকভাবে একা আছেন, অন্য মানুষের থেকে দূরে। অনেকেই কম বেশি একা থাকতে পছন্দও করেন। আমি এটা মাঝে মাঝে উপভোগ করি। একা যদি না-লাগে তাহলে আপনি একাকিত্বে ভুগছেন না।
অন্যদিকে একাকিত্বে ভোগাটা হচ্ছে একটি মানসিক অবস্থা, যখন কেউ একা লাগার কারণে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন বা অর্থপূর্ণ, গভীর সম্পর্কের অভাব বোধ করে। বহু মানুষের ভিড়েও হয়তো আস্থা রেখে মন খুলে কথা বলার, ভরসা করার বা ভালোবাসার কাউকে খুঁজে পায় না। কারো কারো অল্প কজন মানুষের সান্নিধ্যেই পরিপূর্ণ লাগতে পারে, আবার কেউ কেউ বহু মানুষের মাঝেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে পারে না, নিঃসঙ্গতায় ভোগে। আমরা কত মানুষের সংস্পর্শে আছি, সেটা মুখ্য নয়, মুখ্য হল সম্পর্কের অর্থপূর্ণতা এবং গভীরতা। সেটা গড়ে তুলতে সময়ের প্রয়োজন। এজন্য বলতে পারেন- ‘এসো, এক কাপ চা খাই, একটু গল্প করি। ’
রাসেল রুশো
কবি জসীম উদ্‌দীন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
২৬.৮.২০২২/শুক্রবার
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:৩৩
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×