somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

দিল মোহাম্মদ মামুন
আমি একজন সচেতন মুসলিম, খুব সাধারণ জীবনযাপন পছন্দ করি।প্রবাসের হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও দেশের ও দেশের মানুষের খবরা-খবর জানতে পছন্দ করি, তাদের সাথে মিশে যেতে চাই..... আমার সোনার বাংলা, আমি তোমার অনেক অনেক ভালোবাসি।

ড.আফিয়া সিদ্দিকী মরে গিয়ে প্রমান করেছিলেন-মালালা জীবিত থেকেও মৃত।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ড. আফিয়া সিদ্দিকী মরে গিয়ে প্রমান করলেন-মালালা জীবিত থেকেও মৃত।
মরে গিয়ে বরং বেঁচেই গেলেন আফিয়া। বিশ্বের একমাত্র নিউরো সাইন্টিস্ট ড.আফিয়া সিদ্দিকী অবশেষে মুক্তি পেলেন নারকীয় যন্ত্রনা থেকে। নিস্তার পেলেন আমেরিকান ধর্ষকদের খেলা থেকে, বিশ্ব দর্শকদের হেলা থেকে। বেঁচে গেলো পিচ্চি মেয়ে মালালাও। আশ্চর্য এক ম্যাসেজ মিলছে এই দু’জন থেকে। দু’জনেই পাকিস্তানি। মালালা স্কুল পড়ুয়া এক কিশোরী। আফিয়া পিএইচডি হোল্ডার। একজনকে ওরা খুবলে খায়, অন্যজনকে নিয়ে মেতে ওঠে পরিকল্পিত খেলায়! ড. আফিয়াকে আল-কায়েদার সাথে জড়িত সাজিয়ে ইউএস আদালত তাকে সাজা দেয়। সাথে দেয় গণ ধর্ষণের অলিখিত লাইসেন্স। আর মালালাকে কোলে তুলে গেয়ে উঠে মানবতার গান ! বিশ্ব বিবেক গা ভাষায় স্রোতের অনুকূলে! মানবতার ধ্বজাধারীরা বসে থাকে মুখে কুলুপ এটে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার এক চোখা দৃষ্টিভঙ্গি এড়িয়ে যায় এই দিক।

২০০৩ সালে প্রথমে কিডন্যাপ করা হয় ড. আফিয়াকে। এই কিডন্যাপিংয়ে সহায়তা করে খোদ পাকিস্তান সরকার। গুম করে রাখা হয় ২০০৮ পর্যন্ত। নিয়ে যাওয়া হয় আমেরিকান টর্চার সেলে। চলতে থাকে গণ ধর্ষণ, দিনের পর দিন। তাকে উলঙ্গ করে কুরআন শরীফের পাতা ছিড়ে মেঝেতে বিছিয়ে রেখে বলা হত, যাও, কুরআনের উপর দিয়ে গিয়ে কাপড় নিয়ে এসো। ড. আফিয়া সেটি করতে পারতেন না কারণ, তিনি মুসলমান। কারণ তিনি কুরআন ভালবাসতেন। ৩০ পারা কুরআন যে তার বুকেও ছিল। তিনি যে একজন হাফেজাও ছিলেন। তখন তার উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যেত আরো। ২০০৮ সালে তাকে নিয়ে সাজানো হয় মূল নাটক। এক আমেরিকান সেনা হত্যা চেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার দেখানো হল। শুরু হয় বিচারিক প্রহসন। আমেরিকান আদালত তাকে ৮৬ বছরের সাজা ঘোষণা করে! একজন নারী, একজন মুসলিম সাইন্টিস্ট কুরআনে হাফেজা নারীকে নিয়ে বিশ্ব মোড়লরা মেতে উঠলো নোংরা খেলায়, দেড়’শ কোটি মুসলমানের এই দুনিয়ায়, ছয়’শ কোটি মানুষের এই পৃথিবীতে কেউ কিছু বললো না! কেউ না! আশ্চর্য এক পৃথিবীতে আমাদের আবাস !

ড.আফিয়ার বিরুদ্ধে প্রহসনের বিচারিক রায় ঘোষণার সময় তাকে কিছু বলতে বলা হলে বিচারকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, “আপনি তাদের ক্ষমতা দিয়েছেন আমাকে রেফ করার, উলঙ্গ করে সার্চ করার! আপনার কাছে কিছুই বলবার নেই আমার। আমি আমার আল্লাহর কাছে যেয়েই যা বলার বলবো। আমি তো সেদিনই মরে গেছি যেদিন আমাকে প্রথম ধর্ষণ করা হয়েছিলো। আমাকে ছেড়ে দিন। আমাকে আমার দেশে যেতে দিন।” ড.আফিয়ার সাথে নোংরা খেলার এই নায়কদেরই যখন দেখি মালালাকে নিয়ে মাথা ঘামাতে, হা হুতাশ করতে, মানবতার পক্ষে বড় বড় বুলি আওড়াতে, তখন সন্দেহ করতে ইচ্ছে করে মালালা তাদের নিজেদেরই প্রোডাকশন কিনা! অথবা উদ্দেশ্য হাসিল করবার জন্যে তারা নিজেরাই তালেবান সেজে মেয়েটিকে গুলি করেছে কি না!

বিশ্বের একমাত্র স্নায়ূ বিজ্ঞানী ড. আফিয়া সিদ্দিকির তাঁর মূল অপরাধ ছিলো তিনি এতো উচ্চ শিক্ষিত হয়ও কুরআনের প্রতি ঝুকে ছিলেন কেনো? কুরআন থেকে কেনো রেফারেন্স টানতেন? ১৯৯৩ সালের একটি ভিডিও ক্লিপের সৌজন্যে আমার সুযোগ হয় একুশ শতকের এই হযরত সুমাইয়ার বক্তব্য শোনার। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম আমার বোনের কথাগুলো। কুরআনের একটি একটি আয়াত তেলাওয়াত করে বৈজ্ঞানিক সূত্রে কথা বলছিলেন তিনি। তিনি বলছিলেন, ইসলাম হলো নারীর সুরক্ষক। ড.আফিয়া সিদ্দিকার বক্তব্যের অংশ ইউটউব দেখতে পারেন। মানুষটিকে ওরা মেরে ফেললো তিলে তিলে। অকথ্য নির্যাতন করে। বিশ্ব মিডিয়া চেপে গেলো খবরটি, সেই প্রথম থেকেই। ইন্টারনেটে প্রকাশিত এক চিঠিতে মুসলিম জাতিকে তিনি ঘুমন্ত মৃত জাতি বলে সম্ভোধন করে কিছু আক্ষেপের কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, আমি আর তোমাদের সাহায্যের আশা করি না। আমি তোমাদের বোন না। তোমরা কেউও মুহাম্মদ বিন কাসেম না। আমি আমার আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাই, আর কারো কাছেই না আফিয়া মিথ্যে বলেননি মোটেও।

সেকুলার লিবারেল ছোট্ট একটি মেয়ে মালালাকে এই সময়ের সেরা বুদ্ধিজীবি বানিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হলো আর ওদিকে আফিয়ার উপর চলতে থাকলো পৈশাচিক নির্যাতন। কেউ কিছু বললো না। কেউ বললো না ছোট্ট মেয়ে মালালাকে যে বা যারাই গুলি করেছে, অন্যায় করেছে, চরম অমানবিক কাজ করেছে। তালেবানরা এটা করে থাকলে তাদের অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। দোষীদের খোঁজে বের করে ফাসিতে ঝুলানো উচিত। কিন্তু কথা তো এখানেই শেষ হতে পারে না। এক মালালাকে নিয়ে এতো দৌড় ঝাপ কিন্তু বিশ্বে যে আরো মালালা আছে ইরাকে, আফগানে, ফিলিস্তিনে, সিরিয়ায়, পশ্চিমা ন্যাটো ঝুটের অবিরত ড্রোন হামলায় যে মালালারা মারা যাচ্ছে, তাদের কী হবে?


এদের বেলায় মানবতা নিরব কেনো? নাকি বিশ্ব সভ্যতার ঠিকাদার কর্তৃক অসভ্যতা চললে সেটাকে অসভ্যতা বলতে হয় না! এই শিশুরা তো কোনো পাপ করেনি। এই শিশুরা তো অস্ত্র ধরেনি। কেনো তবে হত্যা করা হচ্ছে এদের? মালালা আমার বোন। সে সুস্থ হোক। কিন্তু ইরাকের এই শিশুরা কি মালালা থেকে কম? তাহলে কেনো তাদের বেঁচে থাকার অধিকার থাকবে না? ডবল স্ট্যান্ডার্ড আর কতদিন চলবে? পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মহাত্মা গান্ধীর ভারতে গেলো চল্লিশ বছরে সাত হাজারের বেশি কাশ্মিরী শিশুকে জীবন দিতে হয়েছে। এই শিশুরা, আফগান, ইরাক আর কাশ্মিরের এই শিশুরাতো আর সন্ত্রাসবাদী ছিলো না। এরা কোথাও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেয়নি। এরা জীবনে কাউকে একটা গুলিও করেনি। তাহলে এদের মেরে ফেলা হলা কেনো? এই শিশুদের অপরাধ কী ছিলো? বিশ্ব মানবতা এদের বেলায় নিরব কেনো? মানবতার নামে কেনো এই উপহাস?

মারা গেলেন ড. আফিয়া সিদ্দিকি। নয় নয়টি বছর লাগাতার ধর্ষণ আর নির্যাতনের সাথে সাথে তার শরীরে ক্যান্সারের বীজও পুতে দিয়েছিলো সভ্যতার মুখোশপরা নরপশুরা। শারীরিক আর মানসিক যন্ত্রনার দু:সহ নারকীয় একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। বুকে কুরআন নিয়ে মাথা উচু করেই বিদায় নিলেন আফিয়া। চলে গেলো বোনটি আমার। আমরা তাকে বাঁচাতে পারলাম না। তারচে’ দু:খজনক হলো বাঁচানোর চেষ্টাটা পর্যন্ত করলাম না। কেউ বললাম না ড. আফিয়া যদি অপরাধ কিছু করেই থাকেন, নিরপেক্ষ আদালতে তাঁর বিচার হতে পারে (যদিও জানি না সেটি কোন গ্রহে আছে) কিন্তু একটি মেয়েকে, বিশ্বের একমাত্র নিউরো সাইন্টিস কোরআনে হাফিজ একটি মেয়েকে এভাবে বছরের পর বছর আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করা আর নির্যাতন করা তো কোনো সভ্য পৃথিবীতে চলতে পারে না। হায়রে সভ্যতা! হায়রে মানবতা! আজকাল মানুষে আর পশুতে পার্থক্যটা এতো কমে এসেছে যে, ফারাক করতে কষ্ট হয়।

মালালা ইউসুফজাইকে ওরা কোলে তুলে নিয়েছে এই বলে, মালালা ছিলো নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে সোচ্চার কণ্ঠ। আফিয়াকে ওরা মেরে ফেলেছে তিলে তিলে কারণ, আফিয়া ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত, নিউরো সাইন্টিস্ট। তবু ওরা কী চায়, কীভাবে চায়, বিশ্ব বিবেক তবুও বুঝে না নাকি বুঝেও বুঝে না, আমি সেটাই বুঝি না! আফিয়া তো চলে গেলেন! বিশ্ব বিবেকের গালে চপেটাঘাত করে। একজন আফিয়া এভাবে নিষ্পেষিত হয়ে বিদায় নিলো আমাদের চোখের সামনে। কেউ কিছু বললো না! কেউ কিছু করলো না! বুঝতে পারছি না ধিক্কার আমি কাকে দেবো? লাম্পট্যবাদে জড়িত আমেরিকানদের? বৈশ্বিক বোবা বৃহন্নলাদের? মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দকে? নাকি এই সময়ের অংশ হিসেবে নিজেকেই?
পুরানো লিখাটি এই ব্লগে পোষ্ট করলাম
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২৭
৬৫টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×