somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনেকের প্রশ্ন তাবলীগে কূরআন ও সহীহ হাদীসের কিতাবগুলো বাদ দিয়ে ফাজায়েলে আমালের তালীম দেয়া হয় কেন ?? (১)

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জবাব -

একজন মানুষকে দিয়ে আমি কঠিন একটা কাজ করাবো ! এখন কঠিন কাজ করানোর জন্য আমি যদি তার মধ্যে জসবা সৃষ্টি না করতে পারি, তাহলে কি সেই কঠিন কাজটি কাউকে দিয়ে করানো সম্ভব ??!

ইসলামের হুকুম আহকাম গুলোর ধরনও দেখেন -

মক্কী জীবনে সেরফ নামাযের হুকুম আসছে তাও একদম শেষ পর্যায়ে গিয়ে ! আর ১৩ বছর যাবত মেইনলি সাহাবীদের ইমানেরই তালিম দেয়া হয়েছে,তাদের মনকে আগে শক্ত করা হয়ছে যাতে পরবর্তিতে কোন কঠিন হুকুম আসলে যাতে তারা সহজেই মেনে নিতে পারে ! তো এই ১৩ বছর চলেছে ইমানের মেহনত,এরপর যখন ইমান পাকাপোক্ত হয়েছে এবং যে কোন আমলের কথা আসলে তারা মেনে নিতে পারে সেই যোগ্যতা যখন তৈরি হয়ে গেছে,তখন তাদের উপর একের পর এক আমলের হুকুম জারী করা হয়েছে !

এখন একজন মানুষের ইমানের দৃঢ়তা নাই,কাজের লাভ-ক্ষতির ভাল বুঝ নাই,তো এই মানষটাকে যদি আমি আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে চাই ??

তো প্রথমেই যদি আমি তার সামনে পেশ করি,যে শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে বরফশীতল পানি দিয়ে ওযু করে তার পর তাহাজ্জুযে দাড়াতে হবে,তাহলে কি ঐ লোকটা তা করবে ?

যে লোকের কৃপণতায় হাতের পানি সরেনা,তাকে যদি আমি বলি তোমার তো ১ কোটি টাকা আছে,তা থেকে আড়াই লক্ষ টাকা তুমি গরীব-মিছকীনদের দিয়ে দাও ! ঐ লোকটা কি তা দিবে ?

এখন এই লোকদের দিয়ে যদি আমাকে কাজ করাইতে হয় তাহলে কি করতে হবে ? একদিকে বর্ণনা করতে হবে যাকাত আদায়ের লাভ কি,অপরদিকে তার সামনে বর্ণনা করতে হবে যাকাত না আদায় করার ক্ষতি কি ? এই দুইটা দিকই যখন আমি তার সামনে তুলে ধরবো তখন তার মনের মধ্যে পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে,তখন সে যাকাতের হুকুম সহজ ভাবে পালন করতে পারবে !

তো ফাযায়েলে আমল কি ?

যে মানুষটি আমলের উপর উঠতে পারেনি তাকে আমলের উপর উদ্বুদ্ধ করার জন্যই তো হল ফাযায়েলে আমল ! এখন এই কাজতো বুখারী দিয়ে হবেনা,এই কাজতো ফাযায়েলে আমল দিয়েই হবে !

হ্যা তবে কথা এই,যে ফাযায়েলে আমলের মধ্যে যদি আপনাদের দাবি অনুযায়ী জাল-যয়ীফ হাদীস থেকে থাকে তাহলে জাল হাদীস গুলো আমাদের চিহ্নিত করে দিন ! আমরা তাহলে তালিমের মধ্যে আর সেগুলো আনবোনা !

আর যদি যয়ীফ হাদীস থাকে,তো হাদীস গ্রহনের যে একটা নীতিমালা আছে যেটাকে বলা হয় উসূলে হাদীস ! কিসের ভিত্তিতে হাদীস গ্রহন করা হবে যেমন - কোনটা সহীহ, হাসান বা যয়ীফ,এটাকে বলে উসূলে হাদীস !

এই উসূলে হাদীসের বক্তব্য হল এই,যে ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীস দলিল হিসেবে গ্রহনযোগ্য ! তাহলে ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে যদি যয়ীফ হাদীস থাকে তাহলে,মুহাদ্দীসিনে কেরামগণ যদি একথা বলে থাকেন যে যয়ীফ হাদীস ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে দলিল হিসাবে গ্রহনযোগ্য সেখানে আমাদের দোষটা কাথায় ?!

আমরা কি হাযার বছর পিছনে গিয়ে সেই ইমাম বুখারীর সময়কার মুহাদ্দীসদের গিয়ে বলে এসেছিলাম যে ১৪'শ হিজরীতে গিয়ে আমরা একটা কিতাব লিখবো 'ফাযায়েলে আমল' যার মধ্যে যয়ীফ হাদীস থাকবে ?! তোমরা আগের থেকেই একটা নীতিমালা রেখে দাও যে যয়ীফ হাদীস ফাযায়েলে আমলে চলে ?!

এই মূলনীতিটা মেশকাত শরীফের ভূমিকার মধ্যে (শায়েখ আব্দুল হাসান সাব) আছে,ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) এর লেখা সুবিখ্যাত উসূলে হাদীসের যে কিতাব “শরহু নুখবাতিল ফিকার” এর মধ্যেও এই কথা বর্ণিত আছে যে,ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীস দলিল হিসাবে গ্রহণযোগ্য !

তো উসূল অনুযায়ী বা মুহাদ্দীসিনে কেরামগণের সর্বসম্মত মত অনুযায়ী যদি 'ফাযায়েলে আমল' কিতাবে যয়ীফ হাদীস এসে থাকে তাহলে তাতো দলিল হিসেবে গ্রহনযোগ্যই ! তো সেই ক্ষেত্রে আমাদের অন্যায় কোথায় ?! . . .

স্বয়ং হুজুর পাক (সাঃ) সাহাবীদেরকে আমলের ফাযায়েল বলে বলে তাদের আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন ! নবীজি ফাযায়েল বলেছেন বিধায় ফাযায়েল বলতে হবে ! নবী বর্ণিত ফাযায়েল যারা অস্বীকার করে তারা নিজেদের মুমীন মুসলমান বলে পরিচয় দেয় কিভাবে ?

সাধারণ মানুষের পক্ষে তো আর সম্ভব নয় বিভিন্ন হাদীসের কিতাব থেকে আমলের ফাযায়েল সম্বলীত হাদীসগুলো খুজে খুজে বের করে আমল করা ! সেজন্য উলামাগণ বিভিন্ন হাদীসের কিতাবে থাকা বিসৃত হাদীসগুলো আমলের সুবিধার জন্য আলাদা ভাবে ফাযায়েলের কিতাব গুলোতে সংকলীত করেছেন ! যাতে মানুষকে আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা সহজ হয় ! এতে দোষের তো কিছু নেই !

আর হযরত শায়খুল হাদীস (রহঃ) কর্তৃক রচিত এ কিতাবটি ফাযায়েল সম্পর্কিত প্রথম কিতাব নয় ! বরং দ্বিতীয় শতাব্দীতেই ফাযায়েল,তারগীব,তারতীব ও তারহীব,আদব-আখলাক যুহদ ও পরকাল ভাবনা সম্পর্কে সংকলনকার্য শুরু হয় ! এখনও কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক হাদীস সংকলনের পূর্ণতা আসেনি ! নিম্নে এ বিষয়ে লিপিবদ্ধ কিতাব সমূহের তালিকা দেয়া হলঃ

১.কিতাবুয যুহদ (আব্দু্লাহ আল মোবারক,১৮১ হিঃ)
২.ফাযায়েলে কূরআন (ইমাম শাফেয়ী,২০৪ হিঃ)
৩.ফাযায়েলে কূরআন (আবু উবাইদ,২২৪ হিঃ)
৪.কিতাবুয যুহদ (ইমাম আহম্মদ বিন হাম্বল,২৪০ হিঃ)
৫.আল আদাবুল মুফরাদ (ইমাম বুখারী,২৫৬ হিঃ)
৬.কিতাবুল আদাব (ইমাম বায়হাকী)
৭.কিতাবুয যুহদ (ইমাম বায়হাকী)
৮.ফাযায়েলুল আওকাত (ইমাম বায়হাকী,৪৫৮ হিঃ)
৯.আত তারগীব ওয়াত তারহীব (ইবনে শাহীন,৩৮৫ হিঃ)
১০.আত তারগীব ওয়াত তারহীব (আবুল কাশেম,৫৩৫ হিঃ)
১১.আত তারগীব ওয়াত তারহীব (হাফেয আব্দুল আযীম,বিন আব্দুল্লাহ ক্বাবী আল মুনযীরু,৫৫৬ হিঃ)

যিকির ও দুআ সম্পর্কিত কিতাব -

১২.আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাতি (নাসাই,৩০৩ হিঃ)
১৩.আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাতি (ইবনে নাসাই,৩৬৩ হিঃ)
১৪.কিতাবুদ দুআ (তাবরানী,৩৬০)
১৫.আদ দাওয়াতুল কাবীর (বায়হাকী,৪৫৮ হিঃ)
১৬.আল আযকার (নববী,৬৭৬ হিঃ)

দরূদ শরীফ এবং উহার শব্দ বিশেষের ফাযায়েলের উপর 'হাফিয শামছুদ্দীন সাখাবী রহঃ' (৯০২) এর লিখিতঃ

'আল ক্বউলুল্‌ বাদী ফিস্‌ স্বলাতি ‘আলাল ‘হাবিবিশ্‌ শাফী'

অধিক প্রসিদ্ধ একটি কিতাব . . !

শাইখুল ‘হাদীস যাকারিয়্যা রহঃ লিখিত “ফাযায়েলে ‘আমাল” এই সোনালী ধারাবহিকতায় প্রণিত।

যা উর্দ্দু ভাষায় নিজ স্বকীয়তা,সুসংক্ষিপ্ততা এবং শরাহ-বিশ্লেষন ও ব্যাখ্যা হিসেবে আলাদা বিশেষত্বের অধিকারী।

বিস্তারিত -
ইতিহাসে ফাযায়েলের কিতাব সমূহ -

https://www.facebook.com/671776092904818/photos/a.672089142873513.1073741828.671776092904818/682881908460903/?type=1&theater

(চলবে) . . . r_R_
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×