somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালডো, কিংবা একজন অতিমানবঃ "টেস্টেড টু দ্য লিমিট!!"

০৬ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গড়ন পুরোদস্তুর নায়কের মতন। ছ ফুট এক ইঞ্চি, পেশীবহুল কাঁধ, মেদহীন পেট, উদ্ধত পুরুষালী চোয়াল, মুখে মোহনীয় হাসি। যে হাসি দিয়ে সে ভুলিয়েছে সমস্ত বিশ্বকে। কাছের বিপাশা বসু থেকে বহুদূরের প্যারিস হিলটন, মারিয়া শারাপোভা... কোন বিশ্বখ্যাত সুন্দরীই মনে হয় বাকি নেই আর তার গার্লফ্রেন্ডের খাতায় নাম লেখাতে! কোথায় যেন পড়েছিলাম, তার অনেক গার্লফ্রেন্ডই নাকি গোপনে তার নাম দিয়েছে ‘Wild Geese!!’ কিছুদিন আগে এক সন্তানের বাবাও হয়ে গেছে! সাধারণত মানুষ অনেকসময় গালি দেয়ার সময় বাবার পরিচয়-টরিচয় টেনে আনে, কিন্তু তার অন্য সবকিছুর মতোই, এটাও অন্যরকম! সন্তানের বাবাকে আমরা খুব ভাল করে জানি, কিন্তু মাকে খুঁজতে গিয়ে সারা বিশ্বের ঘাম ছুটে যাচ্ছে!

বুঝতেই পারছেন কার কথা বলছি। দ্য ওয়ান অ্যান্ড ওনলি- ক্রিশ্চিয়ানো রোনালডো।

এ বছরের শুরু থেকেই বিখ্যাত তেল ও লুব্রিক্যান্ট ডিলার মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী ক্যাস্ট্রল-এর গ্লোবাল ব্র্যান্ড ম্যানেজার শন রিহ্যালের মাথায় একটা আইডিয়া ঘুরঘুর করছিল। ফেব্রুয়ারী –মার্চ নাগাদ সে চমৎকার আইডিয়া নিয়ে হাজিরও হয়ে গেলেন কোম্পানীর ডিরেক্টরী বোর্ডের সামনে, যেটা মানুষের মনে স্থান নেয়ার পাশাপাশি ক্যাস্ট্রলের বিজ্ঞাপন হিসেবেও ভাল কাজ করবে। অবশেষে গত অগাস্ট মাসে সে আইডিয়ারই পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হল; এবং সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হল ডকুমেন্টারী শর্টফিল্ম ‘Castrol EDGE Presents: Ronaldo- Tested to the Limit’।

অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে মাদ্রিদে এই ব্যতিক্রম এক্সপেরিমেন্টের আয়োজন করা হয়। এতে মূল বিশেষজ্ঞ হিসেবে ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন লেফট উইঙ্গার প্লেয়ার অ্যান্ডি আনসাহ, যিনি কাকা, রুনি, মেসিদের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।

পুরো এক্সপেরিমেন্টকে মোট চারভাগে ভাগ করা হয়েছিল-



১. শারীরিক শক্তিঃ

এ পরীক্ষায় অ্যান্ডিরর সাথে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ছিলেন ইংল্যান্ডের উইনিভার্সিটি অফ চেচেস্টারের বায়োমেকানিক এক্সপার্ট ড. নিল স্মিথ এবং প্রাক্তন স্প্রিন্ট অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন ড্যারেন ক্যাম্পবেল। এতে বিখ্যাত স্প্যানিশ দৌড়বিদ অ্যাঙ্গেল ডেভিড রড্রিগেজ-এর সাথে রোনালডোকে ২৫ মিটার দীর্ঘ একটি স্প্রিন্ট রেসে অংশ নিতে হয়। এরও আবার দুটি অংশ ছিল- একটি স্ট্রেইট রেস, আরেকটি জিগ-জ্যাগ রেস।

২৫ মিটারের স্ট্রেইট রেসে রড্রিগেজ ৩.৩১ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রথম হয়েছিল, যেখানে রোনালডোর সময় লেগেছে ৩.৬১ সেকেন্ড।

২৫ মিটারের জিগ-জ্যাগ রেসে রোনালডো ৬.৩৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রথম হয়েছিল, যেখানে রড্রিগেজের সময় লেগেছে ৬.৮১ সেকেন্ড।

স্মিথ ও ক্যাম্পবেলের মতে, এর কারণ হল রোনালডোকে ফুটবল মাঠে জিগ-জ্যাগ করে, অর্থাৎ এঁকেবেঁকেই এগোতে হয়, তাই সেখানেই সে সেরা। এছাড়াও দেখা গেছে, জিগ-জ্যাগ করে দৌড়ানোর সময় রোনালডোর শরীর ৪৫ ডিগ্রীর মতো বেঁকে যেতে পারে, শরীরের ব্যালেন্স সম্পূর্ণ ঠিক রেখে। এ সময় তার শরীরের সম্পূর্ণ ভার, অর্থাৎ অভিকর্ষ কেন্দ্র এক পায়ের দিকে সরে যায়। সোজা রেসে সে রড্রিগেজের সাথে পাল্লা দিতে পারেনি, কারণ সে ক্ষেত্রেও তার শরীর অনেকটা এঁকেবেঁকে দৌড়ায়, যেখানে রড্রিগেজ সটান দৌড়ে ওই দূরত্ব পার করতে পারে। তাই সেক্ষেত্রে রোনালডোর সময় একটু বেশি লাগে।

এরপর রোনালডোর জাম্পিং অ্যাবিলিটি পরীক্ষা করা হয়। এক্ষেত্রে ফিক্সড মুভমেন্ট জাম্পে রোনালডো লাফ দিয়ে ৪৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উপরে উঠে, এবং ফ্রি-মুভমেন্ট জাম্পে লাফ দিয়ে প্রায় ৭৮ সেন্টিমিটার উপরে ওঠে, যা একজন বাস্কেটবল প্লেয়ারের গড়ের চেয়েও ৪ সেন্টিমিটার বেশি!

এর কারণ হিসেবে স্মিথ বলেন, মাঠে তাকে দৌড়ে এসে ফ্রি-মুভমেন্টেই জাম্প করতে হয়, তাই সেখানে সে অনবদ্য।

এরপর রোনালডোর শরীরের নিখুঁত থ্রিডি স্ক্যান নেয়া হয়। তার উচ্চতা ৬.১ ইঞ্চি, বুকের ছাতি ৪২.৯ ইঞ্চি, উরুর বেধ ২৪.২ ইঞ্চি। এই হিসাবের দিকে একনজর তাকালেই বোঝা যায় তার শরীর কতোটা সুগঠিত! এছাড়া একজন স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে রোনালডোর শরীরে মেদ ৩% কম, তার উরুর বেধও স্বাভাবিক মানুষের গড়ের চেয়ে বেশি। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, তার হাঁটুর নিচের অংশ তুলনামূলক বেশ সরু, এবং বাঁ পায়ে ডান পায়ের চেয়ে মাংস বেশি! কিন্তু এটা কোন অসুবিধা তৈরির বদলে রোনালডোকে দিয়েছে এক পায়ে ব্যালেন্স করার চমৎকার সুযোগ।

২. মানসিক শক্তিঃ

আমার কাছে এই পরীক্ষাটাই সবচেয়ে কঠিন মনে হয়েছে, এবং রোনালডো যে কতোটা ‘অতিমানব,’ এই পরীক্ষাটা থেকেই বোঝা যায়!

এখানে স্পেশালিস্ট হিসেবে ছিলেন বিখ্যাত স্পোর্টস সাইকোলজিস্ট জো উইমসহার্ট।

এ পরীক্ষায় প্রথমে রোনালডো ও অ্যান্ডির চোখে একটি করে আই ট্র্যাকার বসানো হয়, যা তাদের চোখের মণির মুভমেন্ট নিখুঁতভাবে ট্র্যাক করতে পারে। এরপর রোনালডোকে অ্যান্ডির সাথে আট সেকেন্ড বল নিয়ে ড্রিবলিং করতে হয়।



আট সেকেন্ডের দুর্ধর্ষ ড্রিবলিং এর পর পরীক্ষা করে দেখা যায়, ড্রিবলিং এর সময় রোনালডোর চোখ আট সেকেন্ডে ৩০ বার, অর্থাৎ সেকেন্ডে প্রায় ৩.৮ বার ঘুরে, যা একজন স্বাভাবিক মানুষের চোখের চেয়ে ১.৫ গুণ বেশি। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, অ্যান্ডির চোখ যে সময়ে রোনালডোর পায়ে থাকা বলের উপর ঘুরে আসে, সেই একই সময়ে রোনালডোর চোখ অ্যান্ডির কোমর, থাই থেকে শুরু করে দুই পায়ের ফাঁক, পায়ের আশেপাশের ফাঁকা জায়গা, পায়ের পাতা, এমনকি হাতের মুভমেন্ট থেকে পর্যন্ত ঘুরে আসে! এবং একই সাথে সে অনবরত পায়ের মুভমেন্ট দেখে সিদ্ধান্ত নিতে থাকে ড্রিবলিং-এর পরের স্টেপ কি হবে। অথচ এই পুরো সময়ে অ্যান্ডির চোখ শুধু রোনালডোর পা এবং বলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

এ পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপটা সবচেয়ে তাক লাগানো। রোনাল্ড নামে এক প্রফেশনাল ফুটবলারকে এক্ষেত্রে রোনালডোকে সঙ্গ দেয়ার জন্যে ডাকা হয়। পরীক্ষাটা হচ্ছে, অ্যান্ডি কর্ণারের জায়গা থেকে শুট করবে, এবং শুট করার পরই বাতি নিভিয়ে ঘর অন্ধকার করে দেয়া হবে। দেখা হবে সেক্ষেত্রে রোনালডো বা রোনাল্ড কেউ গোল দিতে পারে কিনা।

প্রথমেই রোনাল্ডকে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু সে গোল দিতে পারেনি। নাইটভিশন ক্যামেরা দিয়ে দেখা যায়, বল তার মাথার বেশ উপর দিয়ে গিয়েছে।

এরপর রোনালডো। দেখা গেল, বাতি নেভানোর পরও ঘুটঘুটে অন্ধকারে অতি চমৎকার হেড দিয়ে সে গোল করে ফেলেছে! ব্যাপারটা যে নেহাৎ ভাগ্য নয়, সেটা পরীক্ষার জন্যে এই টেস্ট আবার নেয়া হয়। এবারও দেখা যায় গোল, এবং আগেরটার চেয়েও চমৎকার! অ্যান্ডি এই শটটি বেশ নিচু দিয়ে মেরেছিল, রোনালডো অন্ধকারের মধ্যেই সেই বলে ভলি কিক করে গোল দিয়েছে। পুরোপুরি নিশ্চিত হবার জন্যে আবারও এই পরীক্ষা নেয়া হয়। এবার আগের চেয়েও তাড়াতাড়ি, অর্থাৎ অ্যান্ডি শুট করার ঠিক আগমুহূর্তে বাতি বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তবুও... ধড়াম!! আবারও গোল!! এবং এবার কাঁধ দিয়ে!!

পরীক্ষা করে দেখা গেল, যেখানে রোনাল্ডের চোখ ছিল শুধুমাত্র বলের দিকে, এবং অ্যান্ডি কিক করার পর সে হেড করার জন্যে দৌড়ানো শুরু করেছে, সেখানে রোনালডোর চোখ কিক করার আগেই ২০০ থেকে ৫০০ মিলিসেকেন্ডের মধ্যে অ্যান্ডির পায়ের মুভমেন্ট আর অ্যাঙ্গেল মেপে নিয়েছে, এবং কিক করার আগেই সে তার মাপ অনুযায়ী দৌড়ানো শুরু করেছে!! তার এই মাপটা কতোটা নিখুঁত, সেটা নাইটভিশনে রিপ্লে দেখেই বোঝা যায়। সাইকোলজিস্ট উইমসহার্ট পর্যন্ত স্বীকার করেছেন, তিনি সম্পূর্ণ হতভম্ব, এবং এমন আর কখনো দেখেননি!!

৩. কৌশলঃ

এবার রোনালডোর আরেক অসাধারণ গুণ নিয়ে পরীক্ষা- তার ফ্রি-কিক অ্যাবিলিটি। এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ফ্রি-কিকার যে রোনালডো, সেটা মোটামুটি সবাই স্বীকার করে নেবেন।

এ পরীক্ষায় অ্যান্ডি আর স্মিথের পাশাপাশি ছিলেন ফুটবল ও রাগবি কোচ ডেভিড অলরেড। পরীক্ষায় গোলকিপার হিসেবে আনা হয় পর্তুগালের সাবেক গোলকিপার হোসে কে। রোনালডোর সারা শরীরে থ্রিডি সেন্সর লাগিয়ে তাকে দুবার দুধরনের কিক করতে বলা হয়- একবার কার্ভ বা বাঁকানো শট, আরেকবার পাওয়ার শট।

প্রথম শটে গোলকীপারকে সম্পূর্ণ বোকা বানিয়ে বল জালে ঢুকে যায়। দ্বিতীয় শট সেভ করার ভাল চেষ্টা নিলেও বলের তীব্র বেগের কারণে গোলকীপার সেটা সেভ করতে পারেনি।

পরীক্ষা করে দেখা যায়, কার্ভ শটের ক্ষেত্রে রোনালডো স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় তিন মিটার বেশি বল বাঁকা করতে পেরেছে। এর কারণ হিসেবে স্মিথ বলেছেন রোনালডোর নিখুঁত পায়ের কৌশল। লম্ব অক্ষের সাথে সে রীতিমতো পারফেক্ট অ্যাঙ্গেলে কিক করেছে, যার ফলে বল এতোটা কার্ভ করতে পেরেছে। এছাড়া সে কিক করে পায়ের গোড়ালি দিয়ে বলের একেবারে কিনার বরাবর, যার ফলে বলের একপাশে লো-প্রেশার এবং অন্য পাশে হাই-প্রেসার তৈরি হয়, এবং বল নিজের অক্ষের উপর খুব দ্রুত স্পিন করতে থাকে। এয়ারোডিনামিক্সের সূত্র অনুযায়ী বল তাই লো-প্রেসারের দিকে ঘুরে যায়, যা গোলকীপারকে বোকা বানানোর জন্যে যথেষ্ট।

আর পাওয়ার শটের ক্ষেত্রে রোনালডো কিক করে পায়ের পাতা দিয়ে বলের ঠিক কেন্দ্র বরাবর, যার ফলে তার থাইয়ের শক্তি সম্পূর্ণ কাজে লাগে, এবং বল বুলেটের গতি পায়। এক্ষেত্রে বল কার্ভ শটের মতো অতো বেশি বাঁকে না, কিন্তু নিজ অক্ষের উপর ধীরে ধীরে স্পিন করে, যার ফলে বল শেষ মুহূর্তে কিছুটা বেঁকে যায়। তাই বল ট্র্যাক করা গোলকীপারের জন্যে দুঃসাধ্য হয়ে যায়।

ডেভিড অলরেডের মতে, একটা পারফেক্ট ফ্রি-কিকের জন্যে যে ধরনের বডি পোশ্চার তিনি সারাজীবন কল্পনা করে এসেছেন, তার সবটুকুই আছে রোনালডোর মধ্যে!
এরপর রোনালডোর সামনে অনেকগুলো কাঁচের দেয়ার রেখে তাকে যতো জোরে পারা যায় সেখানে কিক করতে বলা হয়। এক কিকে সে তিনটা কাঁচে দেয়াল ভেঙে ফেলে, এবং বলের গতি ছিল ঘণ্টায় ৮০ মাইল!!

৪. দক্ষতাঃ

সর্বশেষ পরীক্ষা, এবং অতি কঠিন একটা পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় নিল স্মিথ ও অ্যান্ডির সাথে ছিলেন উইমসহার্ট।

এখানে তিনজন স্নাইপার ঠিক করা হয়, যারা রাইফেল থেকে গুলির বদলে আওয়াজ বের হয়! লেজার স্কোপ লাগানো এ রাইফেল দিয়ে বলে গুলি করার চেষ্টা করা হবে, এবং গুলি লাগলে তীব্র একধরনের শব্দ হবে। রোনালডোর কাজ হচ্ছে যতোক্ষণ পারা লেজারের হাত থেকে বলকে বাঁচানো ড্রিবলিং করে।

প্রথম ধাপে একজন স্নাইপার, দ্বিতীয় ধাপে দুইজন, এবং তৃতীয় ধাপে তিনজন স্নাইপার থাকে। রোনালডো তিনটি ধাপই তীব্র ড্রিবলিং-এর মধ্য দিয়ে পার করে, এর মধ্যে মাত্র একবার বলে লেজার পড়ে গুলি লাগে।

এক্ষেত্রেও রোনালডোর স্কিল দেখে থ’ হয়ে যেতে হয়। পায়ের গোড়ালি থেকে বুড়ো আঙুলের মাথা পর্যন্ত সম্পূর্ণ পায়ের পাতাই কোন না কোনভাবে কাজে লাগিয়ে সে ড্রিবলিং করেছে। এবং তার প্রতিটি মুভমেন্টের মধ্যেই প্রতিপক্ষকে ধোঁকা দেয়ার ব্যাপারটা রয়েছে।
একটা গুলি লাগার ব্যাপারে সে বলে, মাঠে সে অনেক স্পেস নিয়ে ড্রিবলিং করতে অভ্যস্ত, এই অল্প জায়গায় ড্রিবলিং করা তার জন্যে টাফ। নাহলে হয়তো সে এই পরীক্ষাতেও ১০০% সফল হতো!

পুরো এক্সপেরিমেন্টের ফাঁকে ফাঁকেই রোনালডো সম্বন্ধে নিজেদের বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন আর্সেনালের বর্তমান কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গার ও ইংল্যান্ডের বর্তমান কোচ ফ্যাবিও ক্যাপেলো।

সবার শেষে উইমসহার্ট বলেছেন, এই পরীক্ষার সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, সম্পুর্ণ অজানা ধরনের কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হলেও একমুহূর্তের জন্যেও রোনালডো নার্ভাস হয়নি, এবং প্রতিটা কাজই সে এমনভাবে করেছে, যেন সে এসবে অভ্যস্ত! কোন শটই তাকে দু বার নিতে হয়নি, কোন পরীক্ষাই দু বার করতে হয়নি। একজন স্বাভাবিক মানুষের যেখানে এরকম পরিবেশে সবচেয়ে বড় চিন্তা হয় ‘পারব কিনা’, কিংবা ‘না পারলে কি হবে,’ সেখানে রোনালডোর মধ্যে এ ধরনের কোন চিন্তাই ছিল না। এক মুহূর্তের জন্যে সে বলের দিক থেকে অন্যদিকে মনযোগ সরায়নি, অথচ এমন একটা মুহূর্তই তাকে ব্যর্থ করার জন্যে যথেষ্ট ছিল। তাকে যা করতে বলা হয়েছে, সে শুধু তা-ই করেছে। ক্যাপেলোও মনে করেন, এটাই রোনালডোর সবচেয়ে বড় শক্তি। সে তার মগজ মুহূর্তের ভগ্নাংশের জন্যেও অন্য কাজে লাগায়না।

পোস্ট শেষ করার আগে সেই ব্যাপারে আসি, যা অবধারিতভাবে সবার মনেই এতোক্ষণ ঘুরপাক খাচ্ছিল। সেটা হচ্ছে-

মেসি????????????????????????????????????


হ্যাঁ ভাই, আমি রোনালডোর চেয়ে মেসির অনেক বড় ফ্যান, এবং শুধু আমার না, স্বয়ং ফিফার মতেই মেসি বর্তমান বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ প্লেয়ার। রোনালডোর চোখ যদি ড্রিবলিং-এর সময় ৩.৮ বার ঘুরে, মেসির চোখ ঘুরবে অন্তত ৫ বার!! কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, মেসিকে নিয়ে এখনো এমন কোন ‘টেস্টেড টু লিমিট’ টেস্ট করা হয়নি, যে কারণে আমরা মেসি আর রোনালডোর মূল তুলনাটা করতে পারছি না। তবে এটা ঠিক, মেসির পরেই সন্দেহাতীতভাবে রোনালডো বিশ্বের সেরা প্লেয়ার, এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সে মেসিরও কয়েক ডিগ্রী উপরে! মেসিকে ১০-এ ৯.৯ দিলে আমি রোনালডোকে দেব ৯.৭।

তবে আমার মতে মেসি কেন রোনালডোর চেয়ে সেরা, সেটা বোঝার জন্যে আর্সেনালের উইঙ্গার আরশাভিনের একটা চমৎকার উক্তিই যথেষ্ট- “রোনালডো বিশ্বের জটিলতম সব ট্যাকটিকস এবং ট্রিকস দিয়ে ড্রিবলিং করতে পারে, কিন্তু তার ৫০ ভাগ কাজ করে, ৫০ ভাগ করে না। মেসি অতি সহজ কিছু ট্রিকস প্রয়োগ করে ড্রিবলিং করে, কিন্তু তার ৯০ ভাগই কোন না কোনভাবে কাজে লাগে!!”
এছাড়া মেসি-রোনালডোর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা তো মনে হয় আমরা সবাই জানি! মেসি পরপর দু বার ব্যালন ডি অর জেতার পর রোনালডোর ফোঁসফোঁসানি এখনও যেন শোনা যায়! এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিন্তু আরও তীব্র হয়েছে রোনালডো রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেয়ার পর! লা লিগার সাথে সাথে এল ক্ল্যাসিকোর মাধুর্যও শতগুণ বেড়ে গেছে! এরই সাথে আছে আরেক মজার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা মেসি আর রোনালডোর দুই অফিসিয়াল স্পন্সরের মধ্যে- অ্যাডিডাস আর নাইকি। মেসির স্পন্সর অ্যাডিডাস, আর রোনালডোর নাইকি।

আরেকটা কথা না বললেই নয়। রোনালডোকে আমি হয়তো ৯.৮-ই দিতাম দশে, কিন্তু দেইনি তার অতি উদ্ধত ব্যবহারের জন্যে! এই একটা জিনিস তার মধ্যে না থাকলে সেও আমার অসম্ভব প্রিয় প্লেয়ার হত। আমার তো রোনালডোর তুলনায় তাই মেসিকে রীতিমতো দেবসশিশু মনে হয়! ম্যানার কি, বিনয় কি, প্রত্যেকটা ফুটবল প্লেয়ারের মনে হয় মেসির কাছ থেকে শেখা উচিত!! যতোই ভালো খেলুক না কেন, আমার ধারণা আমার মতোই রোনালডোকে অনেকে অপছন্দ করেন এই উদ্ধত, অতিরিক্ত অহংকারী স্বভাবের জন্যে। এবং অবশ্যই, গার্লফ্রেন্ডপ্রীতির জন্যে। (সে বর্তমানে তার ৬১ তম গার্লফ্রেন্ডের সাথে অবস্থান করছে!



শত হলেও সন্দেহ নেই, স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের আবিষ্কৃত ফুটবলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সূর্যসন্তান ক্রিশ্চিয়ানো রোনালডো। ২০০৩ সালে যার যাত্রা হয়েছিল ফার্গুসনের ছায়াতেই, ম্যাঞ্চেস্টার উইনাইটেডে, ১২.৪ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে। ২০০৯ সালে ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে সে যোগ দিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদে, এবং সেখানে তার বাৎসরিক বেতন ১১ মিলিয়ন পাউন্ড। অথচ ২০০৩ সালে রোনালডোকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে ম্যানইউতে নেয়ায় ফার্গুসনের কি সমালোচনাই না হয়েছিল! সেটা আরও বেড়েছিল রোনালডোকে ঐতিহ্যবাহী ৭ নম্বর জার্সি দেয়ায়। অথচ সেই সাত নম্বর জার্সিধারী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালডোই আজকে CR7, কোটি নারীর রাতে ঘুম করা পর্তুগীজ ফুটবল দস্যু!!

যাই হোক, এই দুই অতিমানবের লড়াই বজায় থাকুক, সেটাই আমরা চাই। তবে সেইও সাথে চাই, রোনালডোর মতোই মেসির শ্রেষ্ঠত্বের সার্টিফিকেট, “মেসি- টেস্টেড টু দ্য লিমিট”।

সম্পূর্ণ ডকুমেন্টারীর ডাউনলোড লিঙ্ক

আমার আগের কিছু পোস্টঃ

মাইক্রোএক্সপ্রেশনসঃ মনের কথা পড়ার যে বিদ্যা!! প্রথম পর্ব- মিথ্যা শনাক্ত করবেন যেভাবে...

007---> দ্য নেম ইজ বন্ড...জেমস বন্ড

কোহ-ই-নূরঃ হাজার বছরের অভিশপ্ত খুনী, কিংবা নারীর অলঙ্কার যে পাথর
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৩:২৪
২৯টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×