somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ত্রিফলা (৩ টি ছোট গল্প)

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সবার জন্য শিক্ষাঃ

একদিন একটি ছেলে তার বৃদ্ধ বাবাকে একটি দামি রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে নিয়ে গেল। তার বাবা ছিল খুব বৃদ্ধ এবং দুর্বল। খাবার খেতে গিয়ে তার শার্ট এবং প্যান্টে খাবার পড়ে গেল। এটা দেখে সেই রেস্টুরেন্টে খেতে আসা অন্যান্য লোকেরা খুব বিরক্ত হলো। তারা নিদারুন বিরক্তির সাথেই বৃদ্ধ লোকটিকে দেখছিল কিন্তু বৃদ্ধ লোকটির ছেলেটি খুব শান্ত ভঙ্গিতেই বসে রইল। আহার শেষ হলে পরে, ছেলেটি, যে কিনা খুব শান্ত এবং অবিব্রত ভঙ্গিতে বসে ছিল, তার বাবার হাতটি ধরল, তাকে ধীরে ধীরে হাত ধোয়ার রুমে নিয়ে গেল। তারপর ছেলেটি তার বাবার গায়ে লেগে থাকা খাবারে টুকরাগুলো সযত্নে সরিয়ে দিল, কাপড়ে লেগে থাকা দাগ জল দিয়ে মুছিয়ে দিল, তার চুলগুলো সুন্দর করে আঁচড়ে দিল এবং সবশেষে তার চশমাটি স্থিরভাবে পড়িয়ে দিল। যখন তারা ফিরে আসলো, রেস্টুরেন্টে খেতে আসা সকল লোকেরা পিনপতন নিস্তব্দতায় তাদের লক্ষ্য করছিল। তারা বুঝতে পারছিল না কিভাবে একজন লোক জনসম্মুখে এইভাবে সবাইকে বিব্রত করতে পারে।

ছেলেটি খাবারের বিল পরিশোধ করে তার বাবার হাত ধরে বাইরে বের হতে উদ্যত হলো।

ঠিক সেই সময়, রেস্টুরেন্টে খেতে আসা লোকদের মধ্য হতে একজন বৃদ্ধ লোক ছেলেটির কাছে এসে দাঁড়াল এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলঃ বাছা, তোমার কি মনে হয় তুমি কোন কিছু রেখে চলে যাচ্ছ?

ছেলেটি উত্তর দিলঃ না জনাব। আমি তো কোন কিছু ফেলে যাচ্ছি না।

বৃদ্ধ লোকটি তাকে বললঃ হ্যাঁ, পুত্র, তুমি রেখে যাচ্ছ। এখানে উপস্থিত সকল ছেলেদের জন্য শিক্ষা এবং সকল বাবাদের জন্য আশা রেখে যাচ্ছ।


সবথেকে মিষ্টি আপেলটিঃ

খুব সুন্দর এবং মিষ্টি একটি ছোট মেয়ে তার দুই হাতে দুইটি আপেল নিয়ে দাড়িয়ে ছিল।

তার মা তাকে দেখে তার কাছে আসলো এবং তার পাশে হাঁটু গেঁড়ে বসলো। তারপর মিষ্টি হেসে তাকে একটি চুম্বন করলো এবং তাকে বললোঃ মা, তোমার এই দুইটি আপেল থেকে আমাকে একটি খেতে দিবে?

মেয়েটি কিছু সময় তার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো, তারপর হঠাৎ করেই তার আপেল দুইটির একটিতে এক কামড় দিল এবং অপর আপেলটিতে আরেকটি কামড় দিলো।

এটি দেখে তার মা তার মিষ্টি হাসিটি মুখেই রেখে দিলেন। তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলেন যাতে তার মনোভঙ্গ হওয়া কিছুতেই প্রকাশ না পায়।

তখন ছোট্ট মেয়েটি তার কামড় দেয়া একটি আপেল তার মায়ের দিকে বাড়িয়ে দিলো আর বললোঃ মা, এই যে, এই আপেল টি নাও। এটাই সবথেকে মিষ্টি।


স্ত্রীর জন্যে ভালবাসাঃ

এক শহরে একজন লোক বাস করত এবং সে সেই শহরের সব থেকে সুন্দর মেয়েটিকে বিয়ে করেছিলো। সেই শহরের প্রায় প্রত্যেক ব্যাক্তিই লোকটির কাছে তার স্ত্রীর সৌন্দর্যের প্রশংসা করতো। আর তা দেখে তার স্ত্রী অনেক খুশি হতো আর গর্ব বোধ করতো। তারা একসাথে খুব সুখী জীবনযাপন করতো।

কয়েক বছর পরে, হঠাৎ করেই স্ত্রীলোকটির বিরল একধরনের চর্মরোগ দেখা দিলো। তারা সেই শহরের প্রত্যেক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিল কিন্তু কেউই বিরল সেই রোগটির চিকিৎসা করতে পারলো না। যখন স্ত্রীটি জানতে পারলো এই রোগের কারণে তার সৌন্দর্যের সবটুকুই হারিয়ে যাবে, সে খুবই ভীত হয়ে পড়লো এই ভেবে যে তার স্বামী তাকে হয়ত আগের মতো ভালবাসবে না যেহেতু তার সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে।

তার স্বামী তাকে সবসময় উৎফুল্ল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিল কিন্তু স্ত্রীটি আরও বিষণ্ণ হয়ে পড়ছিলো আর ধীরে ধীরে তার স্বামীর সামনে আসা বন্ধ করে দিল।

একদিন লোকটি তার ব্যাক্তিগত কিছু কাজে শহরের বাইরে গিয়েছিলো। কাজ শেষে বাসায় ফিরে আসার পথে হঠাৎ করেই তার একটি দুর্ঘটনা ঘটলো। সেই দুর্ঘটনায় তার দুইটি চোখই নষ্ট হয়ে গেল।

এই ঘটনায় লোকটির স্ত্রী খুবই দুঃখ পেল কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তারা দুজনেই স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেল। স্ত্রীটি তার স্বামীকে আর উপেক্ষা করছিল না বরং তার পাশে আরও বেশি বেশি করে থাকতে লাগলো আর তার কাজ কর্মে তাকে সাহায্য করতে লাগলো।

সময় গড়িয়ে গেল আর স্ত্রীটির সৌন্দর্য ক্রমেই ম্লান হয়ে গেল। সে নিজেকে আর আয়নায় দেখতে পারতো না কিন্তু সে নিজের অবস্থার কথা ভুলে তার স্বামীর পাশেই থাকত।

একদিন, স্ত্রী মারা গেল এবং লোকটি সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়ল। লোকটি তার স্ত্রীকে খুব বেশি ভালবাসত আর তাই সে তাদের বাসস্থানের জায়গায় আর থাকতে চাইছিল না কারণ সেই জায়গার সব স্থানেই তার স্ত্রীর স্মৃতি জড়িয়ে ছিল। তাই তার স্ত্রীর মৃত্যু পরবর্তী ক্রিয়াকর্ম শেষে সে শহর ত্যাগে উদ্যত হলো।

সে বেড়িয়ে যাচ্ছে এমন সময় তার একজন প্রতিবেশী তার কাছে আসলো আর জিজ্ঞাসা করলঃ তুমি কি একা একা জীবনযাপন করতে পারবে? বিগত বছরগুলোতে তোমার স্ত্রী সর্বদা তোমার পাশে ছিল কিন্তু এখন তো তুমি সম্পূর্ণ একা। তুমি কি কারো সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারবে??

লোকটি তাকে উত্তর দিলোঃ বন্ধু আমার, আমি তো অন্ধ নই। এতদিন ধরে আমি শুধু অন্ধের অভিনয় করে গিয়েছি কারণ আমার স্ত্রী যদি জানতে পারতো যে তার সেই বীভৎস রোগে আক্রান্ত চেহারা আমি দেখতে পাই, তাহলে সে আরও বেশি মন খারাপ করতো। আর তার সে অনুভূতি তার সেই রোগের থেকেও তাকে বেশি কষ্ট দিতো। সে অনেক বেশি কষ্টে ছিল আর আমি চাইনি তা কষ্টের আরও বৃদ্ধি হোক। তাই এত সুদীর্ঘ সময় ধরে আমি অন্ধের ভান ধরে ছিলাম। সে ছিল খুবই ভালো একজন স্ত্রী আর আমি শুধুই চেয়েছিলাম সে সুখী হোক।


** সবগুলোই সংগৃহীত ও অনুবাদকৃত **

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৬
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×