somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরিয়ে দাও আবার সে অরণ্য //

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল জীবনের কথা আজ খুব মনে পড়ছে । জীবনে প্রথম বাড়ির বাইরে থাকা , এক অন্যরকম উত্তেজনা কাজ করছিল মাত্র কলেজ পেরুনো জীবনে । আহা ,কতো রকম মানুষের সাথে কথা হবে ,কতোযে আড্ডা দেব ,সন্ধ্যা নামলেই আম্মা চিৎকার করে বলবে না -'পড়তে বসো,' ভোর হলেই আব্বা ডেকে বলবে না -' নামাজ পড়ো ।' এই পড়া পড়া জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দে আমি তখন দিশেহারা ।
আসলেও পড়াটা আমি পড়িওনি ঠিকঠাক , বিষয় ছিল অংক । আমি জাহাঙ্গীরনগর পা রেখেই সাইন্স ফেলে সোজা কমার্সে ভর্তি হতে চাইলাম । আব্বার সেই একই কথা -' বাড়ি থেকে বের হয়ে যা ।'
ওইটুকু বয়সে যদি বাড়ি থেকে বের হয়ে নিজের লেখা পড়ার খরচ নিজেই চালাতে পারতাম তবে আমি অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়েই পড়তাম । যদিও তখন আমাদের জাবিতে আই আর ছিল না,তবু অন্ততপক্ষে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব নিয়ে পড়া যেত । তাতে অবশ্য আমার পরিবারের স্ট্যাটাস থাকতো না । এতো সাইন্টিস্ট সরকারি চাকুরে ফ্যামিলিতে অসাইন্টিস্ট উরাধুড়া কেউ মেনে নিত না । যেমন এই ল্যাপটপ মুখের সামনে ধরে রাখার জীবনটা কেউ মেনে নিতে চাইছে না, এর চাইতে দু'চারটা বাচ্চা পড়ালেওতো মাসে ভালো অংকের পয়সা আসে , আবার মধ্যবিত্তের স্ট্যাটাস রক্ষা হয় ।

আমি অবশ্য এতো কিছু ভাবার সময় পাই না, আমার সামনে দিয়ে আস্ত হাতি হেঁটে গেলেও অনেক সময় টের পাই না ; বিশেষ করে যখন আমার কানে হেড ফোন থাকে । যাই হোক, হলের কথা কেন বার বার মনে পড়ছে ; এই চোখের সামনে কাপর ঝুলে থাকা দেখে । প্রীতিলতা হলের নতুন বিল্ডিং-এ ২৫ তম ব্যাচ হিসেবে আমাদের প্রথম জায়গা হয় । রুম ভাগ বাটোয়ারা হয় নম্বর হিসেবে ,সেই ক্রমেই আমি নীচতলা পেলাম যদিও কোন আবাসে নীচের তলা আমার পছন্দ নয় । ওতে রোদ পড়ে না, মশা আসে আবার জাবিতে আছে সাপের ভয় ।
কিন্তু নতুন টেবিল-নতুন বিছানা আর সুন্দর কপাট দেওয়া আলমারি দেখে রুমের প্রেমে পড়ে গেলাম ।রুম শেয়ারিং জীবন শুরু হলো রুমমেট নিয়ে ,মাত্র একজনের সাথে রুম শেয়ার করতে হবে ; এটা এমন কোন বিষয়ি নয় । কিন্তু আমার জন্য ব্যাপক ঝামেলা হয়ে গেল ।
ছোটবেলা থেকেই আমার দু;বার করে ঘর মোঝার অভ্যাস । না ,শুচিবাই রোগ নয় । আম্মা আমাকে সব সময় বিছানা পড়ার টেবিল গুছিয়ে রাখা শিখাতেন ,জায়গার জিনিস জায়গায় না থাকলে খুব রাগ করতেন আর যদি ভুলেও বাইরের স্যান্ডেল পড়ে রুমে ঢুকতাম তাহলেতো সেই দিন মারের ওপর থাকতে হতো । তাই সব সময় পরিষ্কার থাকাটা আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল । আমি ঘরের ভেতর কাপর মেলা পছন্দ করি না, বিছানার ওপর বই ছাড়া অন্য কোন দ্রব্য দেখতে পছন্দ করি না , রুমের মধ্যে সবজি কাটাকাটি পছন্দ করি না । । কিন্তু হলে শত শত মেয়ে ,শত শত রকমের ,অনেকেই আসতো আমার রুম গোছানো দেখতে । আমি অবাক হয়ে দেখতাম ; আমার রুমমেট পড়তে পড়তে বাতি জ্বালিয়েই ঘুমিয়ে গেছে । আমি কতোবার যে ওর মাথার ওপর জ্বলতে থাকা আলোটা নিভিয়ে ওকে মশারি করে দিয়েছি তা তার আজ মনে নেই । এইগুলো আমি করতাম নীরবে ,কারন ঘুম ভেংগে গেলে সে আবার পড়তে শুরু করবে । আর আমি শব্দ করে পড়াটা সেই তখন থেকেই ভয় পেতাম ।
হলের ভেতর আমার বেশিরভাগ সময় কাটতো কনার সাথে । এই সুন্দর মুখের তরুনীর কোন কাজই আমার ভালো লাগতো না। সারাক্ষন মুখের সামনে বই ধরা ,জীবনেও সে তার পরণের কাপর ক্লাশ থেকে ফিরে এসে বদলাতো না । বাইরের বাতাস যে কতো উপকারি তাকে আমি কিছুতেই বোঝাতে পারতাম না ,সে জানালা বন্ধ করে শুয়ে থাকতো ।
কী এক অদ্ভূত কারনে আমিও তার পাশে ওভাবেই রাতের পর রাত কাটিয়ে দিতাম । কখনো সিঁড়িতে বসে,কখনো লনে ,আবার কখনো কমন রুমে ।
সেই সুন্দর মুখের মেয়েটা একদিন পি এইচ ডি করতে চলে গেল ইউ এস ,আমি সেদিন প্রথম বুঝতে পারলাম এক সাথে থাকার জন্য দুটো মানুষকে এক রকম হতেই হবে এমন কোন কথা নেই । যে মেয়েটা কষ্ট করে ডাইনিং হলে গিয়ে খেতে হবে বলে রাতে শুধু বিস্কিট খেয়ে ঘুমাতো সে এখন দিব্যি সংসার করছে ,জব করছে ,উন্নত বিশ্বে কারো সাহায্য ছাড়াই তিন তিনটে বাচ্চা মানুষ করছে । আর ভীষন উদ্যমী আমি দেশে বসে কেবল কী-বোর্ডে লেখালেখি করছি । আমার সেই পরিষ্কার থাকা রোগটা আজো যায় নি। আজো মাঝ রাতে ঘুম ভেংগে গেলে টের পাই , কনা চোখের ওপর বাতিটা ঠিকঠিক জ্বালিয়ে রেখেছে । উফ ,এই অলস মেয়েটা কী করে যে এতো কিছু ম্যানেজ করছে ...নাকি এখনো ছেলেকে বুকে নিয়ে ঘুমানোর সময় বাতিটা মুখের ওপর জ্বলতে থাকে !
এখনো কী আলসেমী করে দুপুরের লাঞ্চ আর করা হয় না , নিজের গাড়িটা পরিষ্কার করতে করতে হয়তো ভাবে '-ইস ,যদি এখন কেউ হাত লাগাতো আমার সাথে !'
মানুষকে সব কিছুতেই ছোটবেলা থেকেই অভ্যসে করে নিতে হয় । কারন আমরা কেউ জানিনা কবে কোথায় কীভাবে জীবনের শেষ সময়টা কাটাবো । আমিও একটু একটু করে অনেক কিছু রপ্ত করে নিচ্ছি । একটি আবাসিক হল ,একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে শিখিয়েছে কী করে মানিয়ে চলতে হয় । হয়তো অনেক সময় অনেকের সাথে মানিয়ে চলতে পারিনি ,সেটা আমার ব্যর্থতার লিস্টেই রেখে দিলাম । কিন্তু সবুজ মায়ায় ভরা আমার ক্যাম্পাস আমাকে জীবন উপভোগ করতে শিখিয়েছে আর আমি প্রতি মুহূর্ত সেই জন্যই বাঁচি ; সুন্দর ভাবেই বাঁচি ।

ছবিতে প্রথম বর্ষের আমি ।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩০
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×