টি২০ বিশ্বকাপে সেমিতে খেলার আশা দিয়ে খেলতে গিয়ে প্রাথমিক পর্যায়েই সব শেষ করে দিয়ে বাংলাদেশ দল হেরে গেছে গতকাল.. ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম আর ফেরার পথে বৃষ্টি আর জ্যাম এর ফাঁদে পড়ে টিভিতে খেলে দেখার দূর্ভাগ্য হয় নি। তবে মোবাইল ইন্টারনেটের কল্যানে মিস করিনি একটাও ওভার। রাতভর ব্লগে এই নিয়ে অসংখ্য পোষ্ট নতুন আর কি লিখবো ভাবছিলাম। তবুও মনের হতাশা আর ক্ষোভ একপাশে রেখে কাজে মন যাচ্ছেনা কিছুতেই
আইপিএল আইসিএল বিতর্কে আমি সর্বদাই আইসিএল এর পক্ষে... বাংলার অনেকেই যে আমার সহযাত্রী তা বুঝলাম গতকাল... ল্যাব এইডের সাত তলায় ছোট্ট একটা টিভির সামনে অনেক লোক খেলা দেখছিলো গতকাল, রোগী থেকে শুরু করে হাসপাতালের লোকজন সবাই.. আশরাফুল একটা ক্যাচ থেকে বেঁচে গেলো সবাই হই হই করে উঠলো আর এক ওভারের বেশী টিকবে না.. আপামর বাঙ্গালী কে জোতিষি প্রমান করতেই যেনো দু-তিন বল পরেই স্লীপকে ক্যাচ প্রাকটিসের সুযোগ দিতে আশরাফুলের বিদায়.. মজার কান্ড হলো ঐখানে জড়ো হওয়া ত্রিশ পয়ত্রিশ জনের প্রায় সবারই তাৎক্ষনিক মন্তব্য ছিলো ইস এইখানে আফতাব থাকলে অন্তত দু চারটা ভালো শট দেখা যেতো.. কেউ দ্বিমত করেনি বরং আশরাফুলের প্রতি যে সব গালির বন্যা ভেসে আসছিলো তা আর বলে ব্লগের পরিবেশ নষ্ট করলাম না
বোধ হয় মাসখানেক আগের কথা... চট্টগ্রামে আরম্ভ হবে পোর্ট সিটি ক্রিকেট লীগ.. আমার অতি প্রিয় একটা জায়গা চট্টগ্রাম আর পিসিএল নিয়ে তাই আগ্রহ ছিলো আর সবার চেয়ে হয়তো একটু বেশিই। আগ্রহ ছিলো নিলাম নিয়ে। টিভি খুলে দেখি তামিম এর মূল্য সাত লাখ টাকা তাও প্রতি ম্যাচে
আরেকটা মজার কথা বলি.. প্রথম আলোতে একবার লিখলো আমাদের ক্রিকেটাররা নাকি হতাশ তাদের বেতন ভাতা নিয়ে..তাই বিসিবি তাদের বেতন ত্রিশ শতাংশ বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা করছে (ইতিমদ্ধ্যে বাড়ানো হয়ে গেছে)... এই শুনে ভাবলাম একটু সার্চ দিয়ে দেখি তাদের করুণ বেতনের অংকটা কতো.. লে বাবা ক্রিক ইনফো বলে টপ র্যান্কের প্লেয়াররা নাকি ১০০০ ডলার মানে প্রায় বাহাত্তর হাজার টাকা বেতন পায় প্রতি মাসে.. যোগ করুন ত্রিশ পার্সেন্ট বেতন বৃদ্ধি, সাথে ম্যাচ ফি, ফ্রি ফাইভ স্টারে থাকা খাওয়া, ট্রেনিং ক্যাম্পের হাত খরচ, স্পন্সর ফি ব্লা ব্লা ব্লা... তার মানে সব মিলিয়ে এক আশরাফুলের কিংবা মাশরাফির মাসে ইনকাম প্রায় দেড় লক্ষ টাকার কাছাকাছি... বাকিদেরও কম না
আমরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে বেতন দিয়ে খেলোয়াড়দের পুষি.. মাসে দেড় লাখ টাকা ইনকামের একজন খেলোয়াড়ের খেলা দেখতে নিজের দু-তিনটা ট্রিপ বাদ দিয়ে সামান্য তিন হাজার টাকা ইনকামের একজন রিক্সাওলা কি অধীর আগ্রহে রাস্তার টিভির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে খেলা দেখে.. চা এর দোকানের ছোট্ট টিভির সামনে অসংখ্য মানুষ বুক ভরা আশা নিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে.... একজন ছাত্র তার ভবিষ্যৎ কে হুমকীর মুখে ফেলে পরীক্ষার পড়া বাদ দিয়ে টিভির সামনে বসে পড়ে.. আমরা কাজে ফাঁকি দেই, অফিসে ক্রিকইনফো অপেন করে বসে থাকি, রাস্তায় জিপির আগ্রাসী বিলের হুমকি অগ্রাহ্য করেও মোবাইলে বার বার স্কোরকার্ড রিফ্রেশ করি... এখনও প্রিয় দলের খেলার সময় মনে মনে প্রার্থনা চলে, আবার সেই প্রিয় দলের পরাজয়ে বাথরুমে লুকিয়ে কান্না চলে...
বাংলাদেশে ক্রিকেট স্রেফ খেলা নয়, বাংলাদেশে ক্রিকেট একটি উম্মাদনার নাম... এটা আমাদের খেলোয়াড় দের কে বোঝাবে? কে বোঝাবে তোমরা জাতীয় ভাবে বেতনভুক্ত, দেশের মানুষের কাছে তাই তোমাদের দ্বায়বদ্ধতা অনেক... আমাদের এই প্রজন্মের খেলোয়াড়রা কি সেই উন্মাদনার রেশ বুঝতে পারে? একের পর এক ব্যর্থতার পরেও আশরাফুলের নির্বোধ চেহারা দেখে কি মনে হয় সেই দ্বায়বদ্ধতা কিংবা ক্রমাগত ব্যর্থতার নুন্যতম লজ্জাবোধ তাদের মাঝে আছে? আমার তো মনে হয় না আপনাদের ধারণা কি???
শেষ কথা: বাংলাদেশ দলের এই বুধবার সকাল আটটা ত্রিশে দেশ ফেরার কথা। জাতি তাদের জন্য কি অভ্যর্থনা প্রস্তুত করে রেখেছে কে জানে...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


