somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি ফ্রাঞ্জ রাইট-এর একটি সাক্ষাৎকার (১ম পর্ব)

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ফ্রাঞ্জ রাইট

পনেরো কিস্তির কবিতার বইয়ের লেখক ফ্রাঞ্জ রাইট। জন্ম ১৯৫৩র মার্চে। আমেরিকার কবি তিনি। ইংরেজী কবিতায় ফ্রাঞ্জ রাইট এবং তাঁর বাবা জেমস রাইট এক অভূতপূর্ব উদাহরণ হয়ে আছেন। কারণ, বাবা আর ছেলে দু'জন‌ই এক‌ই ক্যাটাগরিতে পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী হয়েছিলেন। কিশোর বয়সে কবিতা লিখতে শুরু করেন ফ্রাঞ্জ। তখন তার বাবা আলাদা থাকতেন। তার প্রথম কবিতা পড়ে প্রতিউত্তরে বাবা চিঠিতে লেখেন, “তুমিও কবি হয়ে জন্মেছো। এসো, এই নরকে তোমাকে স্বাগতম।”

ভিয়েনায় জন্মেছিলেন এই কবি। বেড়ে ওঠেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। এমারসন কলেজ আর আরকানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। মেসাচুসেটস্ এ মানসিক স্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। স্বেচ্ছাসেবী হয়ে কাজ করেছেন সেন্টার ফর গ্রিভিং চিল্ড্রেন এ।

১৬ বছর বয়সে তার প্রথম ডিপ্রেশন দেখা দেয়। পরবর্তীতে মানসিক বিষণ্নতা প্রকট আকার ধারণ করে। বহু বছর এই সমস্যায় ভোগেন তিনি। নিজের ড্রাগ আশক্তি আর মদ্যপান-এর বিরুদ্ধে বহুকাল লড়ে গেছেন। শেষ জীবনে তা কাটিয়ে উঠেছিলেন।

২০১৫ সালের ১৪ই মে এই কবির মৃত্যু হয়।

তার উল্লেখযোগ্য ব‌ইয়ের মধ্যে রয়েছে—

I11 Lit: New and Selected Poems (1998),
The Beforelife (2001),
Walking to Martha's Vineyard (2003),
God's Silence (2006)

এছাড়া অনুবাদ করেছেন René Char, Erica Pedretti আর Rainer Maria Rilke. ২০০৪ সালে Walking to Martha's Vineyard কাব্যগ্রন্থের জন্য পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হন।



কবিকে জানতে, আসুন আমরা আজ এই কবির একটি সাক্ষাৎকার পড়ি।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন যৌথভাবে আইলিয়া কামিনস্কি এবং ক্যাথরিন তাওলার।
ভাষান্তর : ঋতো আহমেদ

সাক্ষাৎকারী : প্রথম কখন বুঝতে পারেন আপনি লিখতে চান? আপনার এমন কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতা আছে কি যা আপনাকে কবিতায় নিয়ে এসছে?

ফ্রাঞ্জ রাইট : আমার বয়স তখন চৌদ্দ, কিন্তু লিখব এমন তখনও মনে হয় নি। বরং আমার আগ্রহ ছিল সঙ্গীত শিল্পী হ‌ওয়ার কিংবা বিজ্ঞানী। তারপর পনেরোতে এসে কিছু একটা হলো আমার। আপনার মতো এরকম প্রশ্ন অনেকে করেছে আমাকে, আর আমি হাস্যকর একটি কথা সবসময় বলি, “লিখা ব্যপারটা আমাকে বজ্রবিদ্যুতের মতো আঘাত করে।” কথাটা আসলে সত্যি নয়। গ্রীষ্মের ছুটিতে একবার সৎবাবা, মা আর আমি ক্য‌ালিফোর্নিয়ার নাপা উপত্যকার উপর দিয়ে ক্লিয়ার বিলে ঘুরতে গিয়েছিলাম। একদিন খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেল আমার, অদ্ভুত এক অনুভবে আবিষ্ট হয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিচে নেমে আসি। সেখান আখরোট বাগানে এসে বসি। দারুণ এক ঘোরের ভেতর পরমানন্দে লিখতে শুরু করি। সাত লাইনের একটি কবিতা লিখে ফেলি। তারপর বাবাকে পাঠিয়ে দিই। এরপর কবিতা বিষয়ে আমরা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ আরম্ভ করি। পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম এমন ঘোরের ভেতর দিয়ে আমাকে আবারো যেতে হবে। আগে কখনো এমন অনুভূতি হয় নি আমার। মনে হচ্ছিল এটাই করা উচিত ছিল এদ্দিন। সেই থেকে এইরকম আচ্ছন্ন হ‌ওয়া কখনো বন্ধ হয়নি আর। তাগিদ অনুভব করেছি সবসময়। আধ্যাত্মিক ব্যাপারের মতো কিছুটা রহস্যময় এই ডাক। সব ছেড়েছুড়ে আমাকে লিখতে হবে। সাংঘাতিক মনে হয়েছে একে। ভেবেছি আমার সম্পূর্ণ ভবিষ্যত দেখতে পাব। হয়তোবা আমাকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ত্যাগ করতে হবে। হয়তো এটি কোনো আত্ম পূর্ণতায় পৌঁছানো, দৈববাণী, কারণ পরবর্তীতে সত্যি কথা বলতে আমার কোনো জীবন ছিল না, আমি ছিলাম মাতাল, আর উন্মাদ। মনে হয় তখন কিশোর হিসেবে, সেই অনেক আগে, ড্রাগ নিয়ে কখনো বিপদে পড়তে হয়নি, এমনকি মানসিক সমস্যাও হয়নি আমার, কবিতা লিখাই ছিল আমার কাজ। দারুণ আনন্দিত ছিলাম যা অন্য কিছুতেই পাইনি। এছাড়া বলার মতো আর কোন অভিজ্ঞতা নেই আমার। সবসময় একটা ঘোর আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, প্রথম কবিতা লিখার সেই ঘোর আমার।

সাক্ষাৎকারী : কবি হতে হলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ত্যাগ করতে হবে এমন কেন মনে হয়েছিল আপনার?

ফ্রাঞ্জ রাইট : জানি না। ওটা এক ধরনের প্রবণতা বলতে পারেন। মনে হয়েছিল কিছু মানুষ আছেন যারা সাফল্যের সাথে শিল্পী জীবন আর সাধারণ জীবন যাপনে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন। আবার কেউ কেউ আছেন পারেন না। অনেক কবি আছেন, যাদের আমি জানি তারা সাহিত্য চর্চা ছাড়া আর কিছুই পারেন না। তাদের জীবন কঠিন ও দুঃখ দুর্দশাগ্রস্ত। আমিও সেই রকম একজন। ধীরে ধীরে এটা প্রকাশ পেয়েছে। ব্যাপারটা আমার ইচ্ছাধীন ছিল না। ছিল অবশ্যম্ভাবী।

সাক্ষাৎকারী : আপনার বাবাও কি সেই রকম সাহিত্যিক ছিলেন যাকে কঠিন জীবনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল?

ফ্রাঞ্জ রাইট : না, বাবার জীবন ছিল সাফল্যমন্ডিত। আমার বাবা স্বাভাবিক জীবনের বাইরে গিয়ে যোগ্য হয়ে ওঠেন নি, বরং জীবনের গতির ভেতরে থেকেই দারুণ যোগ্য ও শক্তিমান ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রকৃত শিক্ষকদের একজন। আরো অনেকে ছিলেন এইরকম, যেমন বেরিম্যান, রোথেক, আমার বাবা। সাহিত্য বিষয়ক তাদের আলাপচারিতা শুনতে পারা মানে এক বিস্ময়কর শিক্ষা গ্রহণ। আমার শোনা কথাবার্তার মধ্যে তার কথা গুলো ছিল সবচেয়ে মেধাবী। অস্কার ওয়াইল্ড অথবা স্যামুয়েল জনসন সম্পর্কে মানুষ যেমন বলে অনেকটা সেই রকম। তিনি ওইসব অসাধারণ, অশেষ আর উদ্দীপ্তকারী বক্তব্য দিয়ে গেছেন। এমনভাবে গল্প উপন্যাসের চরিত্র নিয়ে কথা বলেছেন মনে হয়েছে যেন ওইসব চরিত্রের সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। তিনি ক্যাটালাস কে নিয়ে কথা বলেছেন যেন সে তার পাশের বাড়িতে থাকে। ক্লাস-এ তিনি ছিলেন অসাধারণ। শিক্ষক হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য উপযুক্ত ছিলেন। বাবা ছিলেন দায়িত্ববান। নিজের খেয়াল রাখতে পারতেন। ওইরকম জীবনের বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থেকেও লিখতে পারতেন।

তবে, আমি সেরকম ছিলাম না। স্কুলে ভালো করেছিলাম যদিও। তবু, ভরণপোষণ সংক্রান্ত বিষয়ে আর আমার বাবার অনুপস্থিতির কারণে আমার কিছু সমস্যা হচ্ছিল। আমার মা পরবর্তীতে যাকে বিয়ে করেন সে ছিল বর্বর প্রকৃতির। শারীরিক ভাবে নির্যাতন করতো। মাঝেমধ্যে আমাকে আর আমার ভাইকে মারধর করতো। বাবা মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদে আমরা ভেঙে পড়েছিলাম। যখন ওই সৎবাবা এলো তখন আমার বয়স এগারো কী বারো, মন ভেঙ্গে গিয়েছিল আমার। আঠারো হতে হতেই নিজেকে সম্পূর্ণ পরাজিত মানুষ মনে হতে লাগল। জগৎ সংসার ভীতিপ্রদ হয়ে উঠলো। বেঁচে থাকার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ওবার্লীনে গিয়ে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু খুব দ্রুত সেই দিনগুলোও ফুরিয়ে যায়। চার্লস রাইটের সাথে আমিও চেয়েছিলাম ইউসি আইয়ারভিন এ স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হবো। ওটাই আমার জন্য দারুন বাস্তবতা ছিল। কিন্তু পড়ালেখার ওই জগতে আমি দাঁড়াতে পারিনি আর। স্পষ্টতই মনে আছে, ছয় মাসের মাথায় স্নাতক ছেড়ে দিই আমি। ভাবি পথ‌ই আমার ঠিকানা, পথেই আমার শিক্ষা।



বাবার প্রভাব আমার উপর এতোটাই বিস্তার করেছিল, কিশোর হিসেবে তখন নিজেকে তাঁর সন্তান জেনে গর্ব বোধ করতাম। একধরনের অতিরঞ্জিত ধারণা পোষণ করেছি তাঁর ব্যপারে। এখন আমি অনুধাবন করতে পারি বিখ্যাত হওয়া আসলে কি। আমি একজন বিখ্যাত কবি আজ। এর মানে আসলে তেমন কিছুই না। যখন ছোট ছিলাম, মনে হোতো বাবা একজন দেবতুল্য ব্যক্তিত্ব। উনিশ বছর বয়সে যখন আমার কবিতা ছাপা হওয়া শুরু হলো সবাই বললো, “হ্যা, তোমার জন্য এ-তো খুব সহজ কারণ তোমার পেছনে আছেন তোমার বাবা।” এখন ভেবে দেখলে মনে হয় ব্যাপারটা উল্টো। যখন কোনো প্রতিষ্ঠিত লেখকের সন্তান লিখতে আর প্রকাশ করতে চেষ্টা করে আমার কেমন যেন সন্দেহ হয়। ছোট বেলায় আমার এমন হয়নি। কিন্তু এখন হয়। আমি নিশ্চিত তখন মানুষ ওভাবেই আমাকে দেখেছে।

সাক্ষাৎকারী : অনেক লেখককে বলতে শুনেছি কীভাবে লিখা তাদেরকে সুস্থির রাখে আর তাদের বেঁচে থাকাকে অর্থবোধক করে তোলে। আপনার ক্ষেত্রেও কি এটা সত্যি?

ফ্রাঞ্জ রাইট : আমি বলবো যথাসম্ভব লিখা-লিখি আমার ভালো থাকার একটি কারণ। যখন আমার অসুস্থতা অথবা মদ্যপান নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন আমার লিখাই আমাকে প্রেরণা যোগায়, নিজেকে বলতে পারি “দাঁড়াও” আর আমি ঘুরে দাঁড়াতে নিজেকে তৈরি করি এবং সুস্থ হয়ে উঠি। এর মধ্যে কোনো থেরাপি টেরাপি বলতে কিছু নেই। বরং উল্টো। উন্মত্তের মতো এগিয়ে নেয় যেন। লেখা আমাকে স্থিরতা দেয় আর জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে শক্ত ধারণা প্রদান করে। সময়ে সময়ে নিজেকে এর জন্য গড়ে নিই আমি।

পৃথিবীকে উপলব্ধি করি ভাষার মাধ্যমে, যেমনটি সব লেখক করেন। ছোটবেলা থেকেই, ব‌ই পড়তে গিয়ে সবসময় মনে হয়েছে আমি দ্বৈত জীবনে আছি, যাকে বলা যায় দু'বার বাঁচা, জাপানি কবিরা যেমনটি বলেছেন। আমার সৌভাগ্য যে‌ এমন শাশ্বত দ্বিতীয় জীবন পেয়েছি, এমন দ্বিতীয় মহাবিশ্ব আমার ভেতর, যাকে সর্বদা আশপাশে বয়ে বেড়াচ্ছি। যেন এক প্রেমের ভেতর, যেন এক দারুণ গোপন জীবন। পৃথিবীকে জ্যোতির্ময় করে তোলে। এ এক এমন কিছু যা পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুকে প্রাণময় করে তুলতে আমার প্রয়োজন। একে পাই আমার কাব্য-প্রেমের ভেতর। শুধু মাত্র লেখা নয়, বরং কাব্য-প্রেমে স্বয়ং। আমি সবসময় কবিতা লিখতে চেয়েছি যেন সেই সব মানুষের সহচর্য পাই, যেন তাদের একজন হতে পারি যারা পৃথিবীতে এমনটা বাস্তবে করে দেখিয়েছেন।

মনে আছে ছোটবেলায় আমার ধারণা ছিল পৃথিবীর এমন‌ই একজন কবি আছেন। কখনোবা যদি তুমি খুব ভাগ্যবান হও আর খুব পরিশ্রম করো, হয়তোবা তুমি কিছুক্ষণের জন্য সেই কবি হয়ে উঠতে পারো। এক মুহুর্তের কবি হয়ে উঠতে তোমার সমস্ত সময় ব্যায় করে আসছো। ইতিমধ্যে, কবিতাকে তুমি ভালবাস। নিজেকে কবি বলতে এখনও অস্বস্তি হয় আমার। বরং কবিতায় নিয়োজিত একজন ভাবি নিজেকে। যদি আবারও সেই আশির্বাদ পুষ্ট চেতনায় আবিষ্ট হতে পারি, লিখতে পারি কবিতা, আমার মনে হয় কেবল ওই মুহূর্তেই আমি একজন কবি।



সাক্ষাৎকারী : এই আশীর্বাদ পুষ্ট চেতনায় আবিষ্ট হ‌ওয়া ব্যাপারটা আসলে কী, যা আপনাকে লেখায়?

ফ্রাঞ্জ রাইট : আসলে এটা কোত্থেকে আসে আমি জানি না । আমি এমন ন‌ই সবসময়। হঠাৎ আবিষ্ট হ‌ওয়ার মতো, মানসিক অবস্থার কেমন এক পরিবর্তন যেন। সাধারণ ভাবে আমার মনের অবস্থা ওরকম থাকে না। স্পষ্টতই বিশেষ স্তরের অনুভূতিশীল হয়ে উঠি আমি। প্রতিদিন লিখতে চেষ্টা করি আর নিরানব্বই ভাগ সময়ই নিজেকে উজবুক মনে হয়। আর যখন ওই বিশেষ চেতনায় আবিষ্ট হ‌ই যখন আমার সেরা কাজ গুলো করি, তখন এক ধরনের আরাম আর প্রতিভার অনুভব হয় আমার ভেতর। বলতে গেলে এইসব মুহূর্তগুলোর জন্যই আমার এই বেঁচে থাকা। কিন্তু এগুলো এতোই দুর্লভ, যদি আমি অপেক্ষায় থাকি তাহলে হয়তো বছরে দুটোর বেশি কবিতা লিখা হবে না আমার। দিনের মধ্যে বেশ কয়েক ঘণ্টা লিখতে চেষ্টা করি, রসদ খুঁজে জড়ো করে রাখি যেন সেইসব মুহূর্ত এসে আবিষ্ট করলে তা কাজে লাগে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি প্রেরণার আশায় বসে থাকাটা একরকম বোকামি। তাই আমি সেটা খুঁজতে থাকি।

বিভিন্ন ভাবে আমি এটা ভুল পথে পেতে চেয়েছিলাম— মাদক সেবন, অবাধ যৌনাচার আর সমস্ত রকম শোচনীয় ব্যবহারের মাধ্যমে চেয়েছিলাম খুঁজতে। কিন্তু এখন আমি আশাবাদী,-- বদলাচ্ছি নিজেকে। জীবনের অধিকাংশ সময়, যে কোনো চরম অভিজ্ঞতাকে প্রেরণা হিসেবে পেতে চেয়েছি। কখনো কখনো সেটা ঠিক ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গিয়েছি, আঘাত পেয়েছি বারবার এবং অবশ্যই অন্যদের‌ও কষ্ট দিয়েছি খুব। এখন আমি জানি, সত্যিকার অর্থে সেই প্রেরণা এসব থেকে আসে না। আসে অন্য কোনো জায়গা থেকে। আমার করণীয় শুধু এর জন্য নিজেকে তৈরি রাখা, এর আবির্ভাবের পথের দিকে নিজেকে স্থির দাঁড় করানো, কামনা করা, আকাঙ্ক্ষা করা, এর জন্য নিজেকে যোগ্য করে তোলার চেষ্টা করা। অভাবনীয় নম্রতার প্রয়োজন, প্রয়োজন সেই সত্যিকারের প্রেরণার গতির ভেতর পৌঁছুতে ব্যর্থতার অসংখ্য পথ মাড়িয়ে যাবার দারুণ ইচ্ছেশক্তির।

সাক্ষাৎকারী : মনে হচ্ছে যেন আপনি এক আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছেন।

ফ্রাঞ্জ রাইট : অনেকটা এক‌ইরকম হলেও, ভিন্নতা আছে। গুলিয়ে না ফেলার চেষ্টা করি আমরা। আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় অবশ্যম্ভাবী মুহূর্তগুলো, আর সৃষ্টির প্রেরণার মুহূর্তগুলো, আর সমাগত সেইসব প্রেমপূর্ণ মুহূর্তগুলো যেগুলো পৃথিবীর আর পৃথিবীর অন্য প্রাণের প্রতি ভালোবাসায় উৎসারিত হয়—এদের সবার একই রকম আবেগানুভূতির রং থাকলেও প্রত্যেকে কিন্তু আলাদা। যখন শিল্পের প্রেরণায় উজ্জীবিত হই তখন আমি নির্মম আর স্বার্থপর। এর জন্য সব কিছুই করতে পারি তখন। নিজেকে, এমনকি পরিপার্শের যে কাউকে উৎসর্গ করে ফেলতে পারি। সত্যি বলতে এটা আমাকে একধরনের অপরাধীয় পরমানন্দ দেয়। একটা সমস্যাই বলা যায়। তবে, একটা সাধারণ ব্যাপার ঠিক দুটো বিষয়েই আছে। সেটা হচ্ছে সেখানে পৌঁছতে হলে তোমাকে অবশ্যই দীর্ঘ, রুক্ষ, ভয়ানক আর যন্ত্রণাময় সময়ের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। সেই মোক্ষম মুহূর্তে পৌঁছুতে হলে যেতে হবে এক‌ই আনন্দ, ইচ্ছেশক্তি আর সক্ষমতার মধ্য দিয়ে।

নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অতীতের দিকে ফিরে তাকিয়ে আমার কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে এখন, যা কিছু সৌভাগ্যের, সুন্দর আর আনন্দের চেহারা নিয়ে উচ্চকিত হয় তার পরিনতি হয় ঠিক এর বিপরীত, ঠেলে দেয় বিপর্যয়ের দিকে। আর যা কিছু বিপর্যয়ের, বেদনার আর ভয়ঙ্কর তা আমাদের নিয়ে যায় আত্মার উন্মেষের দিকে। তাই আমি এখন এইসব বেদনাক্লীষ্ট সময়কে ভালো কিছু হিসেবে গ্রহণ করতে সক্ষম যেখানে প্রেরণা আমাকে সামগ্রিক ভাবে হৃদ্ধ করে তোলে। মানে হলো আমি ঠিক পথেই এগুচ্ছি।

সাক্ষাৎকারী : সাত বছর আগে আপনি ক্যাথলিক হয়েছেন। আমরা জানতে চাইছি কীসের প্রেরণায় একজন খ্রিস্টান ধর্ম যাজক হয়েছেন আপনি?

(চলবে..)

ছবিসূত্র : ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:২৯
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×