somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে দেখা ডিসেম্বর (১০-১৬)

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১০ ডিসেম্বর
মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে পাক হানাদার মুক্ত হয় ময়মনসিংহ, মাদারীপুর ও নড়াইল। ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর ঘাঁটিগুলোতে ভারতীয় যুদ্ধবিমান বোমা হামলা চালায়। এরই সূত্র ধরে পাকিস্তানের অন্যতম সহযোগী চীন সেনা মোতায়েন করে সিকিম-ভুটান সীমান্তে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাৎ করার উদ্দেশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নির্দেশে বঙ্গোপসাগরে রওনা হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম নৌবহর মালাক্কা প্রণালীতে অবস্থান নেয়। ভারতীয় বিমানবাহিনীর বোমা হামলা ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে পাকিস্তান।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে বন্দরনগরীর আউটার স্টেডিয়ামে আজ থেকে শুরু হচ্ছে বিজয় মেলা। এই বিজয় মেলার আয়োজনে সাবেক মেয়রের সঙ্গে মহাজোটভুক্ত বাম ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও যুক্ত রয়েছেন।

আজ বিকেল ৩টায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ. বি. তাজুল ইসলাম “বিজয় শিখা” প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে মেলার উদ্বোধন করার কথা। মেলা চলবে ২৫শে ডিসেম্বর পর্যন্ত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যাতে কেউ নস্যাৎ করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে এবারের মেলার মূল স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে “বীর বাঙ্গালি এক হও, যুদ্ধাপরাধের বিচার করো”।

মেলা কমিটির মহাসচিব ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম জানান, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরাই এই বিজয় মেলার লক্ষ্য। মেলায় অংশ নেয়ার জন্য ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, তোফায়েল আহমেদ, সাংসদ রাশেদ খান মেনন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সহ আরো অনেককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।


১১ ডিসেম্বর
মুক্তিযুদ্ধের এই সময়ে চারিদিক থেকে মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের খবর আসতে থাকে আর একের পর এক জায়গায় পাকিস্তান বাহিনী নাস্তানাবুদ হতে লাগলো। আজকের এই দিনে কুষ্টিয়া পাক হানাদার মুক্ত হয়। ২৫শে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী কুষ্টিয়ায় অবস্থান নেয়। কিন্তু ১ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে কুষ্টিয়া। পরবর্তীতে ১১ এপ্রিল ভেড়ামারায় এক যুদ্ধে পাক বাহিনী আবারো দখলে নেয় কুষ্টিয়া শহর। অবশেষে আজকের এই দিনে কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত হয়।

মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকা মুক্ত করতে থাকে। এই দিন মিত্রবাহিনী হিলি সীমান্তে ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। সন্ধ্যার দিকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় শক্তিশালী পাক হানাদার ও তাদের দোসরদের ঘাঁটির উপর তীব্র আক্রমণ চালায়। সারারাত ধরে চলতে থাকে যুদ্ধ। যৌথবাহিনীর প্রচন্ড হামলার মুখে ঠিকতে না পেরে অবশেষে ভোরের দিকে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।

এদিকে ইয়াহিয়া খান মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাহায্য কামনা করেন। কিন্তু নিক্সন থাকেন নীরব। কারণ সারা বিশ্ব এটা ভালোভাবে বুঝতে পারে যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় সময়ের ব্যাপার মাত্র।

বিদেশী নাগরিকরা যাতে ঢাকা ত্যাগ করতে পারে সে উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের বিশেষ অনুরোধে যৌথবাহিনী এই দিন সকালে ঢাকায় সাময়িকভাবে বিমান হামলা বন্ধ রাখে।





১২ ডিসেম্বর
মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীর পরাজয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু তারা যুক্তরাষ্টের সাহায্যের জন্য মুখিয়ে থাকে। আর অন্যদিকে তাদের মিত্র সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। ১২ ডিসেম্বরের আগের দিন অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর রাশিয়ার ওয়াশিংটন প্রতিনিধিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার সাবধান করে দিয়ে বলেন, “আগামীকাল ভারতকে অবশ্যই যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করাতে হবে। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

পরেরদিন অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা দীর্ঘ বক্তব্য দেয়ার পর উক্ত অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। অন্যদিকে ৯ই ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্দেশে বঙ্গোপসাগরে রওনা দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম নৌবহর এই দিন বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র ২৪ ঘন্টার দূরত্বে গভীর সমুদ্রে এসে অবস্থান নেয়।

৭১ এর এই দিনে বুদ্ধিজীবি হত্যার নীল-নকশা তৈরি করা হয়। সেই দিন রাতে প্রাদেশিক সরকারের বেসামরিক উপদেষ্টা মেজর রাও ফরমান তাদের এ দেশীয় দোসর আল-বদর ও আশ-শামসের কেন্দ্রীয় অধিনায়কদের সদর দফতরে ডেকে পাঠান। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এক গোপন বৈঠক। এই গোপন বৈঠকে বুদ্ধিজীবি হত্যার নীল-নকশা প্রণয়ন করা হয়। মেজর জেনারেল রাও ফরমান তাদের হাতে বুদ্ধিজীবিসহ বিশেষ বিশেষ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের নামের তালিকা তুলে দেন। এই নীল-নকশা অনুযায়ী একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর হত্যা করা হয় জাতির মেধাবী সন্তানদের।

মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে এ.পি.আই. এর জেনারেল ম্যানেজার বিশিষ্ট সাংবাদিক নিজামউদ্দিনকে আল-বদর বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। পাকিস্তানের দোসরা যখন নিজামউদ্দিনের বাসায় হানা দিয়েছিল তখন তিনি বিবিসি’র জন্য রিপোর্ট তৈরি করছিলেন। ঐ অবস্থায় ধরে নিয়ে গিয়ে আল-বদর বাহিনী তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

১৯৭১ সালের এই দিনে সকাল বেলায় শত্রু মুক্ত হয় নরসিংদী। দিনাজপুরের বিরল থানার বহলা গ্রামে এই দিন পাক হানাদার বাহিনী এক নৃশংস গণহত্যা চালায়। ১২ই ডিসেম্বর ঐ গ্রামে পাক বাহিনীর একটি দল অনুপ্রবেশ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে টিকতে না পেরে পাকিস্তান বাহিনী এক পর্যায়ে বহলা গ্রামে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা গ্রামবাসীদের গ্রাম ছেড়ে চলে যাবার নির্দেশ দেয়। গ্রামবাসীরা গ্রাম ছেড়ে যাবার জন্য যখন প্রস্তুতি নেয় তখন পাকিস্তান বাহিনী আবার তাদেরকে একত্রিত হবার নির্দেশ দেয়। ঐ মূহুর্তে মাগরিবের নামাজের সময় হয়। অনেকে মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য নামাজের কাতারে দাঁড়ান। সবাই যখন নামাজের কাতারে দাঁড়ালেন তখন পিছন দিক থেকে ব্রাশ ফায়ার করে পাক হানাদার বাহিনী। তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে শহীদ হন ৩৭ জন। মাত্র কয়েকজন গ্রামবাসী সেদিনের নৃশংস গণহত্যা থেকে রেহাই পান।


১৩ ডিসেম্বর
একাত্তরের এই দিনে বগুড়ার কাহালু উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার অধ্যক্ষ হোসেন আলী সহযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে ১৩ ডিসেম্বর ভোর ৪টায় পশ্চিম কাহালুর কাওড়াশ এলাকা থেকে দুপুর ১২টার পর কাহালু থানা চত্বরে পৌঁছেন। সেখানে পৌঁছে তিনি প্রথমে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং কালালু উপজেলাকে শত্রু মুক্ত ঘোষণা করেন।

অধ্যক্ষ হোসেন আলী তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে কাহালুর কড়িবামুজা এবং শিকড় এলাকায় দুইটি সম্মুখ যুদ্ধসহ বিভিন্ন এলাকায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বহু যুদ্ধ করেন। তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কাহালু উপজেলার শীতলাই থেকে চারমাথা পর্যন্ত এলাকায় বিগ্রেডিয়ার তোজাম্মল হোসেন ও মেজর জাকির সহ শতাধিক পাকিস্তানি সৈন্যকে একদিনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করায়। আত্মসমর্পণ করানোর পর তাদেরকে বগুড়ার গোকুল ক্যাম্পে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।

কাহালু উপজেলার লক্ষ্মীপুর, ডোমরগ্রাম, জয়তুল, গিরাইল, নশিরপাড়া, পালপাড়া গ্রামের শতাধিক নিরীহ মানুষকে পাক হানাদার বাহিনী একদিনে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে।

৭১ এর এই দিনে পাক হানাদার মুক্ত হয় মানিকগঞ্জ। কৌশলগত কারণে মানিকগঞ্জ শত্রুদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন যুদ্ধে ৫৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এই অঞ্চলের যুদ্ধে বীরত্ব পূর্ণ অবদান রাখার জন্য ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা বীরত্বের খেতাব পান। তারমধ্যে বীর উত্তম খেতাব পান- স্কোয়াড্রন লিদার (অব.) বদরুল আলম। বীর প্রতীক খেতাব পান- শহীদ মাহফুজুর রহমান, আতাহার আলী এবং ইব্রাহীম খান।





১৪ ডিসেম্বর
১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় উৎসবের জন্য যখন সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের দোসরদের সহায়তায় জাতির সূর্য সন্তানদের হত্যার নেশায় মেতে উঠে। বাঙালি জাতির সেরা শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিকিত্সক, প্রকৌশলীদের আজকের এই দিনে হত্যা করে পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা।

পাক বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আল-বদর, আশ-শামসরা যখন বুঝতে পারলো যে মুক্তিযুদ্ধে তাদের পরাজয় খুবই নিকটে তখন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা করে পাক বাহিনী। ৭১ সালের ১২ই ডিসেম্বর প্রাদেশিক সরকারের বেসামরিক উপদেষ্টা মেজর রাও ফরমান তাদের দোসরদের সাথে সদর দফতরে রাতে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। সেখানে প্রণয়ন করা হয় বুদ্ধিজীবি হত্যার নীল-নকশা। সেই নীল-নকশা অনুযায়ী হত্যা করা হয় জাতির মেধাবী সন্তানদের।

মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় সাভার, দিনাজপুর, বগুড়ার শিবগঞ্জ, জয়পুরহাটের পাঁচবিবিসহ চট্টগ্রামের বান্দরবন।


১৫ ডিসেম্বর
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পুরোপুরি কোণঠাসা হয়ে পড়ে ৭১-এর এই দিনে। চারদিক থেকে বিভিন্ন জায়গা শত্রুমুক্ত হওয়ার খবর আসতে থাকে। বীর সন্তানরা তাদের মূল লক্ষ্য রাজধানী ঢাকার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। সারা দেশের বেশির ভাগ জায়গায় উড়তে থাকে লাল-সবুজের প্রিয় মাতৃভূমির পতাকা।

মুক্তিযোদ্ধারা যখন প্রিয় দেশকে শত্রুমুক্ত করে বিজয়ের একদম দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিল তখন পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দালালরা বেপরোয়া হয়ে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে যা ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের আগ পর্যন্ত অব্যাহত রাখে। কিন্তু পুরোপুরি কোণঠাসা পাকিস্তানি বাহিনী শুধু নিশ্চিত হতে চাইছিল যে আত্মসমর্পণের সময় তাদের হত্যা করা হবে না। কারণ পাকিস্তানকে বাঁচানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের নির্দেশে বঙ্গোপসাগরে রওনা দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম নৌবহর যখন বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র ২৪ ঘন্টার দূরত্বে গভীর সমুদ্রে এসে অবস্থান করছিল তখন ভারতীয় নৌবাহিনীর সহায়তায় ১৫ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের রণতরীর ২০টি জাহাজ ভারত মহাসাগরে অবস্থান নেয়। এরপর যুক্তরাষ্টের ৭ম নৌবহর যুদ্ধে অংশ নেয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখে। যার ফলে পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত যে বিদেশি সাহায্যটুকু পাওয়ার আশা করেছিল তা নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।

৭১-এর এই দিনে পাক বাহিনী চট্টগ্রামে তাদের ঘাঁটি ছেড়ে রাউজান হয়ে শহরের দিকে পালিয়ে যায়। এর ফলে শত্রুমুক্ত হয় রাঙ্গুনিয়া। এই দিনে আরো শত্রুমুক্ত হয় পার্বতীপুর, নীলফামারী, গোয়ালন্দ। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। সারারাত ধরে চলতে থাকে যুদ্ধ। অন্যদিকে বগুড়া জেলা ও পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়ি শত্রুমুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। এই বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যোগ দেন মুক্তিবাহিনীর ৭ নং সেক্টরে। তার গুনাবলীর কারণে খুব অল্প সময়ে তিনি সকলের শ্রদ্ধাভাজন হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর দিনের বেলায় অপারেশনের পরিকল্পনা করতেন আর রাতের বেলায় গেরিলাদের সাথে অপারেশনে বের হতেন।

রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঘাঁটি হানাদার মুক্ত করার যুদ্ধে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মহানন্দা নদী পার হয়ে যখন তিনি একের পর এক শত্রু বাংকার দখল করে জীবনের পরোয়া না করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন হঠাৎ শত্রুর একটি গুলি বিদ্ধ হয় তার কপালে এবং তিনি শহীদ হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার অন্তর্গত ঐতিহাসিক গৌড়ের সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন জাতির এই বীর সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর।





১৬ ডিসেম্বর
মহান বিজয় দিবস। বাঙ্গালী জাতির জন্য গৌরব, অহঙ্কার ও সবচেয়ে আনন্দপূর্ণ দিন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সূচীত বাংলাদেশের বিজয়। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পৃথিবীর বুকে জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম নতুন একটি দেশ, বাংলাদেশের। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বাঙ্গালী জাতি।

৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলার বীর সন্তানদের কাছে পরাজিত হয়ে রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) অবনত মস্তকে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ৭১-এর এই দিনে বিকেল সাড়ে ৪টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সামনে হানাদার বাহিনী অস্ত্র ফেলে দিয়ে অবনত মস্তকে দাঁড়াতে বাধ্য হয়।

একাত্তরের এই দিনে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক কর্মকর্তা জন কেলি সকাল বেলায় ঢাকা সেনানিবাসের কমান্ড বাঙ্কারে পৌঁছেন। সেখানে লে. জেনারেল নিয়াজীকে পাওয়া গেল না। বিধ্বস্ত অবস্থায় পাওয়া গেল জেনারেল রাও ফরমানকে। রাও ফরমান জন কেলিকে বলেন, মিত্রবাহিনীর কাছ থেকে তারা আত্মসমর্পণের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। কিন্তু মিত্রবাহিনীর সাথে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় এই খবরটি তাদের জানাতে পারছে না।

এই সময় জন কেলি রাও ফরমানকে জাতিসংঘের বেতার সংকেত ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। এ সময় আত্মসমর্পণের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয় বিকেল সাড়ে ৪টা। ঢাকাবাসী যখন এই আত্মসমর্পণের সময় জানতে পারল তখন তারা মেতে উঠে আনন্দ উল্লাসে। তাদের উল্লাস আর দেখে কে!

এই দিন সকাল ১০:৪০ মিনিটে মিত্রবাহিনী ঢাকায় প্রবেশ করে। তার আগেই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী মিরপুর ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় ঢুকে পড়ে। বিকেল বেলায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রস্তুত হলো এক ঐতিহাসিক বিজয়ের মুহূর্তের জন্য। বিকেল সাড়ে ৪টায় লে. জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বে আত্মসমর্পণ করে ৯১ হাজার ৫৪৯ জন পাক হানাদার বাহিনীর সৈন্য। মেজর জেনারেল জ্যাকবের তৈরি করা আত্মসমর্পণের দলিলে বিকালে সই করেন লে. জেনারেল নিয়াজি ও লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। এ সময় মুজিবনগর সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ক্যাপ্টেন এ.কে. খন্দকার। জন্ম নেয় আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।


ফিরে দেখা ডিসেম্বর

ফিরে দেখা ডিসেম্বর (২-৯)

খবরটোয়েন্টিফোর.কম পত্রিকায় প্রকাশিত।
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×