somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্রুজ জাহাজ

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বের সর্ববৃহৎ জাহাজ ‘ক্রুজ জাহাজ’। এগুলো ১৮ তলা বিল্ডিং এর চেয়েও বড় হয়। একসঙ্গে ৯ হাজারের বেশি যাত্রী একইসঙ্গে এই জাহাজে চড়তে পারে। প্রতিটি জাহাজের দাম ১.৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি হয়। এক একটি ক্রজ জাহাজ যেন সমুদ্রের ওপর একটি ভাসমান শহর। এই ধরনের জাহাজের নকশা, নির্মাণ এবং চালুর প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ হয়ে থাকে। ক্রুজ জাহাজ তৈরি করতে প্রায় ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। প্রতিটি ক্রুজ জাহাজে ওয়াটার পার্ক থেকে শুরু করে অসংখ্য বিলাসবহুল রেস্তোরাসহ অবিশ্বাস্য সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

প্রতিটি ক্রুজ জাহাজকে শিপইয়ার্ডে নির্মাণের আগে কোম্পানি টেন্ডার বা অর্ডার নিয়ে থাকে। মূলত ক্রুজ লাইনের মালিক যিনি অর্ডার দিয়ে থাকেন। এর নকশা তৈরি হয়ে গেলে সেই অনুযায়ী জাহাজের এক একটি খণ্ড আলাদা আলাদাভাবে তৈরি করা হয়। এরপর পাজেল আকারে একের পর এক সাজানো হয়। যেমন মনে করুন ক্রুজ শিপ কেবিন এবং স্টিলের হোল প্লেট যা আলাদাভাবে তৈরি করা হয়। যেহেতু অনেক বড় প্রজেক্ট তাই এই জাহাজে প্রায় ৫০০জন সাব কন্টাক্টর ও সাপ্লাইয়ার থাকে।

জাহাজের বাইরের কাঠামোটি তৈরি করতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগে। বাকি সময় যাত্রী কেবিন, রেস্তোরা, বাথরুম, শত শত মাইল বৈদ্যুতিক তার ও সাজসজ্জার কাজ চলে। বাইরের সাজসজ্জা ছাড়াও এই ধরনের জাহাজের জন্য প্রয়োজন হয় একটি শক্তিশালী ইঞ্জিন। বিশেষ ক্ষেত্রে ইঞ্জিন রুমে পাঁচ থেকে ছয়টি ইঞ্জিন লাগানো থাকতে পারে। ক্রুজ জাহাজের প্রপেলার বিশাল আকৃতির হয়ে থাকে। একটি বিশাল জাহাজে কুড়ি ফুট দৈর্ঘ্যের প্রপেলার থাকে এবং প্রতিটি জাহাজে তিনটি করে প্রপেলার লাগানো হয়। পানির মধ্যে দিয়ে চালানোর জন্য এই বিশাল আকৃতির প্রপেলারগুলি প্রতি মিনিটে ২৫০টি ঘুর্ণন দেয় যা জাহাজকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

বিশ্বের বেশ কয়েকটি বড় ধরনের ক্রুজ জাহাজ রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম ‘ওয়ান্ডার অফ দ্য সি’। এর দৈর্ঘ্য ১১৮৭ ফুট এবং এটি ৬৯৮৮ জন যাত্রীকে একত্রে জায়গা দিতে পারে। ‘আইকন অফ দ্য সি’ নামে একটি ক্রুজ জাহাজ এখনো যাত্রা শুরু করেনি তবে এর উচ্চতা হবে ১১৯৮ ফুট এটি প্রায় ১০ হাজার জন যাত্রীকে জায়গা দিতে পারবে।

আল্লুর অফ দ্য সিস নামে ১১৮৭ ফুট লম্বা ক্রুজ জাহাজ যখন ২০০৯ সালে চালু হয় তখন এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ ছিল । যার নির্মাণ প্রকল্পে ১.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল। ২৫ টি ডাইনিং ও ১৩০৮ টি বসার কক্ষ সম্পন্ন একটি থিয়েটার হল ওই জাহাজে। এতসব সুবিধার জন্যই এই ধরনের অবিশ্বাস্য খরচ হয়ে থাকে। এই ধরনের জাহাজে ভ্রমণ করতে ব্যয় করতে হয় মোটা অংকের টাকা। এই ধরনের জাহাজের সুযোগ সুবিধার ওপর নির্ভর করে একটি ভ্রমণ টিকিটের মূল্য ২৫ হাজার ডলার থেকে ১ মিলিয়ন ডলার হয়ে থাকে।

এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ক্রুজ জাহাজ হল ‘7c এক্সপ্লোরার’। যার টিকেট মূল্য প্রায় এক দশমিক তিন মিলিয়ন ডলার। যে টিকিটের মাধ্যমে আপনি ১২৩ দিনে ১১ টি দেশের ৪১ টি পোর্ট ভ্রমণ করতে পারবেন। যার মূল্য দিন হিসেবে প্রায় ৯৩৯৮ ডলার। এই যাত্রায় সিডনি, টোকিও, হংকং এর মত শহরে পাঁচটি বিলাসবহুল হোটেলে থাকার পাশাপাশি শহরে ব্যক্তিগতভাবে ভ্রমণ অন্তর্ভুক্ত আছে। যদিও ওই টিকেটের খরচ সবসময় এক থাকে না। কখনো কখনো সেটি পরিবর্তন হয়ে থাকে।

যেসব ক্রুজ জাহাজ তৈরি হয়েছে তার মধ্যে ‘আইকন অব দ্য সিস’ অন্যতম। নামের মত জাহাজটি অত্যাধুনিক বৃহৎ ও আইকনিক। এটি রয়েল ক্যারিয়ার ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা নির্মিত সর্বশেষ জাহাজ। জাহাজটি প্রায় ১২০০ ফুট লম্বা এবং পাঁচ হাজার দুইশ অতিথিসহ ২৩৫০ জন ক্রু সদস্যকে জায়গা দিতে পারে। জাহাজের প্রত্যেকটি ডেকে রয়েছে অসাধারণ সুযোগ সুবিধা। আধুনিক পুল, থিয়েটারসহ বিশাল জানালা রয়েছে।

অন্যতম একটি ক্রুজ হলো, ‘রয়েল ম্যান হারমনি অফ দ্য সিস’ জাহাজটি ৫৪৭৯ জন অতিথিকে একসাথে বহন করতে পারে। পৃথিবীতে যত ব্যয়বহুল ক্রুজ জাহাজ নির্মাণ হয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। এটি ১১৮৭ ফুট দুর্গের যে আইফেল টাওয়ারের উচ্চতার চেয়ে ১৬৪ ফুট লম্বা। এখানে রয়েছে মিউজিক্যাল আসরসহ একটি থিয়েটার ও রোবট দ্বারা পরিবেশিত বার।

যেহেতু এসব জাহাজ বিভিন্ন ভেন্যু থেকে লোক তুলে থাকে। তাই তাদের খাবার, ওয়েলকাম ড্রিংকসহ বিভিন্ন কাজের জন্য লোক প্রয়োজন হয়। জাহাজ যাত্রা করার আগে ক্রুদের বিশেষভাবে সবকিছু দেখে নিতে হয়। পর্যাপ্ত খাবার এবং জিনিসপত্র নিয়ে ক্রুদের যাত্রা শুরু করতে হয়। যদি মাঝপথে কখনো ক্রুজ জাহাজের খাবার শেষ হয়ে যায় তখন ক্রুরা অন্য জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং অন্য জাহাজ খাবার পৌঁছে দেয়।

ক্রুজ জাহাজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সবচেয়ে আধুনিক উপায়ে জাহাজগুলোকে তৈরি করা হয়। তবুও অনেকে অনেক ক্ষেত্রেই ক্রুজ জাহাজের দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। গত ১০০ বছরেও ২২টি ক্রুজ জাহাজ দুর্ঘটনা শিকার হয়েছে। ক্রুজ জাহাজগুলোতে মর্গও রয়েছে। যদি কেউ মারা যায় তাহলে তাকে মর্গে রাখা হয়। এরপর জাহাজের পক্ষ ডেথ সার্টিফিকেটও প্রদান করা হয়। মৃতের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য রাখা হয় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্রু।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:৪১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×