somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুটো ঘটনা আমাদের হিপোক্রেসি এবং আমার একান্ত কিছু কথা( বিষয় নারী )

০৮ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা এক: সেদিন রাতে সফিক ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিল। তার সখের দামি মোবাইল, টাকা ভর্তি মানিব্যাগ সব ছিনতাইকারীরা নিয়ে গেল। কিছু করার ছিল না সফিকের। সফিক ছিল একলা আর ওরা ছিল চার জন তার উপর আবার একজনের হাতে ইয়া বড় একটা চকচকে ছুরি। সব না দিয়ে উপায় ছিল না তার। কিন্তু তার সখের মোবাইল সেট আর মোটা অংকের টাকার মায়া সে ভুলতে পারছিল না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল সে থানায় যাবে যদি কোন ভাবে উদ্ধার করা যায়। থানায় গিয়ে সফিক পুলিশকে তার দুর্গতির কথা খুলে বলল। সফিক ভাবল এইবার নিশ্চই পুলিশ একটা কোন পদক্ষেপ নেবে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে কিন্ত সে অবাক হয়ে গেল। তার অভিযোগ শুনে ওসি সাহেব তার দিকে চোখ পাকিয়ে বলল তাহলে আপনি ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে এসেছেন? আপনার সাহসতো কম না ! নিজে দোষ করে আবার ছিনতাই কারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। সফিক যেন আকাশ থেকে পড়ল, ওসি সাহেব কি বলছেন এসব! সফিক কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল জ্বি আমিতো ভিকটিম আমিই তো অভিযোগ করবো। খামোশ! গর্জে ওঠেন ওসি, পুরা দোষ তো আপনার আপনি কেন ছিনতাইকারির সামনে পড়লেন? হেরা সামনে পাইলে তো ছিনতাই করবোই, এতে ওদের দোষ কি? আপনে কেনো ওদের সামনে পড়লেন? কন আপনি কেনো মোবাইল ইউস করেন? ক্যান আপনি পকেটে টাকা ভরা মানিব্যাগ নিয়া ঘুরবেন? ফাইজলামি পাইছেন? আবার কন ছিনতাই কারিদের দোষ। ওরা তো এমনই, ওরা ছিনতাই করতেই পারে। ওই মিঞা আপনে ঘর থিকা বাইর হন ক্যান? ঘর থিকা বাইর না হইলে তো ছিনতাইকারীরা ধরতো না। এহন আইছেন অভিযোগ দিতে? সেন্ট্রী, এই আবালডারে ধইরা লকাপে পোর, আর আমার সবচেয়ে মোটা ডান্ডা টা নিয়া আয়। শালা বেকুব! জানেনা, এই পৃথিবী ছিনতাই কারীদের, ভিকটিমদের জন্য না।

ঘটনা দুই: প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার পথে এই জায়গাটায় আসলেই রীনার বুকটা ধুকপুক করে কাঁপতে থাকে কারন এলাকার সবচেয়ে বখাটে ছেলে গুলো এই সময় টাতে আড্ডা দেয়। আর যখনি রীনারা আসে তখনি শুরু হয় ওদেরকে উদ্দেশ্য করে আজে বাজে কথা ছুড়ে মারা। যেগুলো শুনলে রীনার গা গুলিয়ে আসে। এমন আজেবাজে কথা মানুষ বলতে পারে? তার সাথে আছে আবার নানা বাজে অঙ্গভঙ্গী। কিছু দিন আগে একটা বখাটে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে বলেছে তার কথা না মানলে নাকি সমস্যা আছে। সেদিন এসেই সে মাকে এই কথা বলে দিয়েছিল কিন্তু মা যা বলল তা শুনে রীনার মনটা আরো খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মা সব শুনে বলল , ওরা ছেলে মানুষ, ছেলেরা এরকম করবেই, তুই এখন বড় হইছস কাল থেকে বুরখা পরে স্কুলে যাবি আর বাবা নাকি বলেছে মেয়েদের এত পড়াশুনা কইরা কি হইব? একটা ভাল ছেলে পাইলে বিয়া দিয়ে দেবে। কিন্তু মা কি জানে? বুরখা পড়লেই ওদের যন্ত্রনা থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। সীমা তো বুরখা পরেই যায় তাওতো ঐ শয়তান গুলা আজে বাজে কথা কয়, কয় বুরকার নিচে কুরকা নাচে। আজে বাজে গান গায় , একটা বুরখা পরা মেয়ে পাগল করেছে। আর সে তো কখনো অশালীন ভাবে চলা ফেরা করে না। আসলে কিছুই করার নেই রীনার, কারন সে মেয়ে তার লেখা পড়া করার, চাকরী করার কোন দরকার নেই। সে একটা পুতুল মাত্র বাবা মা অথবা স্বামীর অথবা সমাজের। সে শুধু মাত্র একটা বস্তু ,তাকে যে ভাবে রাখবে সেভাবেই থাকতে হবে। মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে রীনার এই পরাধীন পৃথিবীতে তার বাচতে ইচ্ছে করে না।এই পৃথিবীটা তাদের নয় এই পৃথিবীটা পুরুষদের।

আমার কিছু কথা: কিছুদিন আগে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমি বিজ্ঞান আর সাহিত্য নিয়ে কথা বলছিলাম কিন্তু আর সবার তেমন আকর্ষন ছিল না বিষয় গুলোর উপর ।এক বন্ধু হঠাৎ নারী জাতির প্রসঙ্গ পারলো আর সব ব্ন্ধুরাও যেন আড্ডার আসল টপিক খুজে পেল। শুরু হল মেয়েদের নিয়ে নানা রসালো কথা বার্তা। আমি শুধু বসে বসে শুনছিলাম। হঠাৎ একটা কথা আমার কানে এসে লাগল। এক আহাম্মক বলে বসল এই পৃথিবীতে নাকি যত রকম খারাপ কাজ হয় সব নাকি নারীদের জন্য। আমি বললাম কি ভাবে নারীদের জন্য? আহাম্মকটার উত্তর হল এখনকার মেয়েরা বুরখা পরে না আজে বাজে পোষাক পরে একা একা চলাফেরা করে বাইরে পড়াশোনা করতে এসে একা থাকে আর যা ইচ্ছা তাই করে। এইসব কারনে ছেলেরাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শুনে মেজাজটাই গেল খারাপ হয়ে। বললাম আচ্ছা, মেয়েরা না হয় আজে বাজে পোশাক পরে তা তুই তাকাস কেন তাদের দিকে? বলল আমরা ছেলে মানুষ তাকাতেই পারি, ওরা পর্দা করবে না কেনো? মনে মনে বললাম শালা হিপোক্রেট। মুখে বললাম, ভাল, পর্দা কি শুধু ওদের জন্যই? তোদের চোখের কি পর্দা করার দরকার নেই? একটা মেয়ে শালিন পোষাক পরে চলাফেরা করলে সমস্যা কোথায়? বুরখা পরাটা যদি হয় শালিনতা রক্ষা করার জন্য সে ক্ষেত্রে সেলোয়ার কামিজেও আমার দৃষ্টিতে শানিলতা রক্ষা করা যায়। আর শানিলতা শুধু মেয়েদের জন্য নয় আমাদেরও শানিলতা রক্ষা করা উচিৎ। তবে সবার আগে আমাদের নিজেদের চোখ গুলোকে শালিন করা উচিৎ নয় কি? শোন, মেয়েদের কে ভোগ্য বস্তু না ভেবে মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখ তাহলেই আর কোন সমস্যা হবে না। এর পর শুরু করলো আমকে খোচানো। আরে তোর মত তো সবাই এত জ্ঞানি না। একজন বলল আমার মা যদি একজন নারী না হত তাহলে আমি নারী জাতিকে ঘৃনা করতাম। মেয়েদের নিয়ে আরো কিছু আজে বাজে কথা বলছিল তারা। যেগুলো আর এখানে লিখলাম না। মনটাই খারাপ হয়ে গেল, আমি আর কথা বাড়ালাম না। কিছু ক্ষন চুপ করে ওদের কথা শুনে উঠে আসলাম সেখান থেকে। এর পর আর ওদের সাথে আড্ডা দেওয়ার রুচি খুব একটা নেই। হায়রে মানব সন্তান! যে নারী তোমার মা, তোমার বোন তাদের সম্পর্কে তোমার খারাপ মন্তব্য করতেও একটু বিবেকে বাধে না! যে মানুষ খারাপ সেতো নারী নয়, সে একজন খারাপ মানুষ। একজন পুরুষ খারপ হলে কি গোটা পুরুষ জাতিকে খারাপ বলা হয়? বলা কি হয় না মানুষটা খারাপ? আমি স্বপ্ন দেখি এমন একটা পৃথিবীর যেখানে নারী আর পুরুষে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। যে পৃথিবী হবে নারী আর পুরুষের সমান অধিকারের। যে পৃথিবীতে নারী তার নিজের সব সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সমান সুযোগ পাবে। নারী আর পুরুষ কাধে কাঁধ মিলিয়ে গড়বে সুন্দর স্বর্গীয় পৃথিবী।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১:১৮
১১টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×