somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পীর বাবার উপহার !!!!

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তোতা মিঞার মনে বেজায় আনন্দ, খুশির সীমা নাই । খুব শীঘ্রই সে যে অত্র এলাকার মধ্যে একজন বড় ধনী ব্যাক্তি হতে যাচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নেই তার। আল্লাহ এতো দিনে তোতা মিঞার দিকে মুখ তুইলা চাইছে । বাবা তুমি দয়ার সাগর। তোমার দয়ার সীমা পরিসীমা নাই, তা নাইলে কি এত মানুষ থাকতে আমারে জিনিসটা দিতা ? তোতা মিঞার দুই চোখ ছল ছল হয়ে ওঠে বাবার কথা ভাবতেই। তোতা মিঞার ভাগ্যটাই ভালো, যাক তোতা মিঞার দুঃখের দিন শেষ হইতে চলছে। চকিতে শুয়ে তোতা মিঞা খরের চালার দিকে তাকিয়ে এসব কথাই ভাবছে। আর বেশি দিন এই খরের চালা আর না, একটা বড় দালান দিবে তোতা মিঞা, কিছু ধানী জমি কিনবে আর গঞ্জে একটা বড় দোকান দিবে। মাইনষের জমি আর বর্গা নিয়া চাষ করতে হইবো না তার। তোতা মিঞার মেলা টাকা পয়সা হইব, গ্রামের লোক তারে তখন নিশ্চই অনেক মান্য গন্য করবো। ভাবতেই ভালো লাগছে তোতা মিঞার। আহা !

কিন্তু এত আনন্দেও তোতা মিঞার চোখে ঘুম নাই বিছানায় শুয়ে উস খুস করছে তোতা মিঞা । জিনিসটা কি আরেক বার বাইর কইরা দেখবে সে? না থাক রাইতের বেলা দেখার দরকার নাই সকালে আবার দেখবনি। পীর বাবার কথা মত জিনিসটা সে কাউরেই দেখায় নাই তার বউরেও না। গামছা দিয়া পেচাইয়া ট্রাংকে তালা দিয়া রাখছে সে। চাবি নিজের কাছেই রাখছে কওয়া যায়না বউ যদি দেইখা ফালায় জিনিসটা । পীর বাবা নিষেধ করে দিছেন কাউরে দেখাইতে। মাইয়া মাইনষের কৌতুহল আবার খুব বেশি, সে ঠিক করছে ট্রাঙ্কের চাবি এখন থিকা সব সময় নিজের কাছেই রাখবো।

গঞ্জে থিকা ফেরার পর থেকেই স্বামীর মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা খেয়াল করছে ফরিদা। কি হইলো তার স্বামীর ? ভালো মানুষ গঞ্জে গেল পাট বেচতে, অন্যদিন টাকা পয়সা তার হাতেই দেয় কিন্তু আইজ কি হইলো মানুষটার ? নিজে ট্রাঙ্কের চাবি নিয়া কি যেন রাখলো, চাবিও তার কাছে ফিরত দিল না। জিগাইলেও কিছু কইতাছে না। সে তো কিছুই বুঝতে পারতাছে না। তার স্বামী এমন কি রাখছে ট্রাঙ্কে, যে তারেও দেহানো যাবো না ? ভাইবা কোন কূল কিনারা পায় না ফরিদা। আবার কি জিগাবো সে ? আইচ্ছা আবার জিগাইয়া দেহি তাইলে ।

নাজমুলের বাপ । ও নাজমুলের বাপ, ঘুমাইছেন ?
উ, কি কও ?
আপনার কি হইছে ? কেমন জানি করতাছেন । চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ফরিদা ।
আমার আবার কি হইবো ? বিরক্ত হয় তোতা মিঞা । মাইয়া মাইনষের খালি প্রশ্ন। কোন সুমার নাই ।
না, কেমুন জানি করতাছেন । আমার তো চিন্তা হইতাছে ।
চিন্তার কিছু নাই ঘুমাও ।
না মানে , আস দিন তো বেচা বাট্টা কইরা টেকা পয়সা আমার হাতেই দেন আইজকা তো দিলেন না। গামছা দিয়া পেচাইয়া কি যেন রাখলেন ট্রাঙ্কে , আবার চাবিও তো দিলেন না ফিরত ?

ধুরুজা , তুমি বড় ত্যাক্ত কর । এত কতা জিগাবা না তো । আর ট্রাঙ্কের চাবি এহন থিকা আমার কাছেই থাকবো সাবধান ট্রাঙ্কে হাত দিবা না কইলাম । আর কিছু জাগাইবাও না ।

দীর্ঘস্বাশ ফেলে ফরিদা ! কি হইলো লোকটার ? তার স্বামী কোন কতা তো কোন দিন না কইয়া থাকে না ? আইজ এমন কি বিষয় যেইডা তারেও কইতে চায় না তার স্বামী ?
আচ্ছা এমুন করেন ক্যান ? একটু কইলে কি হয় ? আপনে তো কোন দিন কোন কতা আমারে না কইয়া থাকেন না । অভিমান ঝরে পড়ে ফরিদার কন্ঠে।

এতো মহা ঝামেলা হইলো ! কোন কতা না জনলে মনে অয় এরার মনে শান্তি পায় না। আবার কইলেও যদি ঝামেলা হয় ? মাইয়া মাইনষের পেটে কতা থাকে না আবার কারে না কারে কইবো । চোর ডাকাইতের ভয় আছেনা ?

কি হইলো ? কিছু কন না ক্যা ? কি এত খালি ভাবেন ?

নাহ না কইয়া মনে হয় উপায় নাই আইচ্ছা কইতাসি । তয় সাবধান এই কথা দ্বিতীয় কাউরে কবা না আমার কসম লাগে ।
হোন তাইলে, আজকা গঞ্জে থিকা পাট বেইচা আহনের সময় পথে এক পীর বাবার সাথে দেখা । কি আর কমু বাবার মুখে দেরহাত লম্বা নুরানী দাড়ি গায়ে থিকা ভুর ভুর কইরা গোলাপ ফুলের বাসনা বাইরইতাসে বাবার চেহারা দেইখাই দিলে শান্তি আইয়া পড়ে । আমারে ডাক দিয়া কইল বাবা তোতা মিঞা কেমুন আছ ? আমি ত বিরাট অবাক ! বাবা আমার নাম জানলো কেমনে? কোন দিন দেখাও হয় নাই। বাবা আমারে কইল তোতা মিঞা অবাক হইও না আমি তেনার মাধ্যমে তোমার ব্যাপারে সব জানি। তুমি খুব ভালো লোক । গরীব মানুষ কিন্তু মনডা অনেক বড় । বাবা, তোমারে আমি একটা উপহার দেওয়ার জন্য অনেক দুর থিকা আইছি। হের পর বাবায় তার ঝোলা থিকা একটা মাটির ঢেলা বাইর কইরা আমার হাতে দিয়া কইলো এইটা রখো বাজান খুব যত্ন কইরা রাখবা কাউরে দেখাইবানা । আমি বাবার মুখের দিকে চাইলাম বাবায় কইলো বাজান এইটা কিন্তু কোন সাধারন মাটি না গায়েবী মাটি । এইটা রাখো এইটা একদিন সোনা হইয়া যাবো । তোমার আর কোনো অভাব থাকবো না আল্লার রহমতে তুমি একদিন আমীর হইবা বাজান। আমি যে কি করমু তখন বুঝবার পারতাছিলাম না । এর পর বাবায় কইলো তোতা মিঞা এখন আমারে বিদায় দেও বাপ আমার যাওয়ার সময় হইছে, আর বাজান তুমি পাট বেইচা যে সাতশো টাকা পাইছো সেইটা আমার মাজারের জন্য দান কইরা দেও তোমার ভালো হইবো । যান ফরিদা আমার চোখে তখন পানি চইলা আসছিল বাবা আমার কাছে মাত্র সাতশো টেকা চাইছে আমি কি এতই ছোড মনের মানুষ তুমিই কও ? বাবার অনেক দয়া বুঝছো ফরিদা । আমগোর আর কোনো অভাব থাকবো না । তোমার যত ইচ্ছা যা ইচ্ছা তুমি কিনবা যত খুশি গয়না বানাইবা আমি তোমারে না করমু না । তোতা মিঞার মুখ খুশিতে ঝলমল করতে থাকে ।
আর হোন নাজমুলের মাও তুমি কালকা থিকা নাজমুলরে ইস্কুলে পাঠাইবা আমি মুর্খ হইসি কিন্তু আমার পোলারে আমি মুর্খ বানামু না টেকা পয়সার কোন অভাব হইবো না দেইখো ।
ফরিদাও খুব খুশি হয়েছে। আল্লা তাইলে তাগোর দুঃখ দেখছে । গা ভর্তী সোনার গয়নার কথা ভাবতেই ভালো লাগছে তার । আহা তার কাপড়টা ছিড়া গেছে কিন্তু অভাবের কারনে একটা ভালো কাপড় কিনতে পারে নাই। এবার আল্লার রহমতে তাদের নিশ্চই সব হইবো ?
আচ্ছা নাজমুলের বাপ সোনা কবে হইবো ?
তাতো পীর বাবা বইলা দেয় নাই । যে কোন দিন হইতে পারে । হইলেই হইল কি কও ?
খুশিতে উদ্ভাসিত স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে ফরিদারও খুশি লাগলেও একটু দুশ্চিন্তাও হয় । তার স্বামী সহজ সরল মানুষ যদি কেউ তাকে ঠকায়? নাহ, এইসব কি ভাবছে সে ? আল্লার রহমতে এমনডা হইবো না। সামনে তাদের সুখের দিন আসতাছে ।
এর পর তোতা মিঞার দিন গুলো কাটতে থাকে মাটির ঢেলা সোনায় রুপান্তরের প্রতিক্ষায় । তোতা মিঞা প্রতিদিন তার ট্রাঙ্ক খুলে মাটির ঢেলাটি দেখে সোনা হলো কিনা। প্রতিদিনই হতাশ হয় সে কিন্তু বিশ্বাস হারায় না। তার দৃঢ় বিশ্বাস একদিন না একদিন মাটির ঢেলা সোনা হবেই। পীর বাবার কথা মিথ্যা হতে পারে না ।

অনেক দিন- বছর কেটে গেছে তোতা মিঞা এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছেন কিন্তু এখনো প্রতিদিন নিয়মিত সে একবার ট্রাঙ্ক খুলে মাটির ঢেলাটাকে দেখে নেয় । এখনো সে বিশ্বাস হারায় নি । তোতা মিঞার ছেলে বিএ পাস করে চাকরী খুজছে বাপের এমন আচরন দেখে তার খুব খারাপ লাগে কিন্তু কিছু বলে না । থাকুক না সে তার বিশ্বাসটা নিয়ে।
একদিন মাটির ঢেলাকে সোনায় রুপান্তরিত না দেখেই তোতা মিঞা তার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। বাবার মৃত্যুর পর নাজমুল তার বাবার ট্রাঙ্কের তালা খুলে ফেলে । গামছা মোড়ানো মাটির ঢেলাটা এখনো সেখানে রয়েছে খুব সযতনে। নাজমুল মাটির ঢেলাটাকে বের করে তার বাবার কবরের দিকে রওনা দেয় মাটির ঢেলাটাকে তার বাবার কবরে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে।

---------------------
১২টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×