somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"তাস খেলার ইতিহাস এবং তৎসংশ্লিষ্ট কিছু মজার ম্যাজিক"

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইনডোর গেম গুলোর মধ্যে বিশ্ব জোড়া জনপ্রিয় একটি খেলা হলো তাস। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মানুষই অন্ততপক্ষে তাস খেলা না জানলেও প্রায় সবাই তাস দেখেছেন বা এর নাম শুনেছেন। ভার্সিটিতে পড়েছেন অথচ খেলাচ্ছলে জীবনে কখনো তাস হতে নেননি এমন মানুষ বিরল। তাস মোট চার ভাগে বিভক্ত। সেগুলো হলোঃ ইস্কাপন, হরতন, রইতন এবং চিড়তন। আমরা সবাই হয়তো কম/বেশি এই নাম গুলোর সাথে পারিচিত। কিন্তু আমরা কি এই নাম গুলোর ইতিহাস কেউ জানি? তাসের এই 'ইস্কাপন, হরতন, রইতন, চিড়তন' এর প্রতীক গুলো কোথা থেকে আসলো কিংবা এর অর্থই বা কি ? অথবা এই প্রতীক গুলোর পিছনের ইতিহাসই বা কি? আমরা সবাই জানি যে ৫২ টা তাসের ৫৩ টা খেলা রয়েছে। তবে সেই ৫৩ টা খেলার সব গুলোর নাম জানা না থাকলেও, আমাদের সবার কাছেই মোটামুটি পরিচিত তাসের কিছু বিখ্যাত খেলার নাম এখানে উল্লেখ করে দেওয়া হলোঃ-


☞ ইন্টারন্যাশনাল ব্রীজ; ☞ থ্রি কার্ড; ☞ লেম্বু; ☞ টুয়েন্টি নাইন; ☞ আই বি; ☞ ব্রে/হার্টস; ☞ নাইন কার্ড; ☞ হাজারী; ☞ ফ্যাশন; ☞ পোকার; ☞ দশের ডাক; ☞ ফাইভ কার্ড; ☞ কল ব্রীজ; ☞ কাইট খেলা; ☞ জোড়া মিলানো; ☞ স্পাইডার; ☞ স্পেড টার্ম; ☞ কন্ট্রাক্ট ব্রীজ; ☞ ৯ তাস ইত্যাদি।


কিংবদন্তি আছে ইংল্যান্ডের লীডস শহরের একজন অধিবাসিনী ছিলেন 'মিসেস হচকিস'। এগারো বছর ধরে তিনি পঙ্গু হয়ে শয্যাশায়ী অবস্থায় ছিলেন। কথাবার্তা বলতে না পারলেও জ্ঞান ছিল। এগারো বছর বিছানায় শুয়ে শুয়ে তিনি একার্তে তাস খেলতেন। ১৭৯৫ সালে হঠাৎ তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগের মুহূর্তেও তাঁর হাতে ছিল রুহিতনের সাত। হাত থেকে সেই রুহিতনের সাত যখন কিছুতেই আলাদা করা গেল না তখন সেই অবস্থাতেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।


তাস খেলা একটি ভয়ংকর নেশা। অথচ শুরুতে অর্থাৎ তাসের জন্মলগ্নে কিন্তু এটি মোটেই আমজনতার খেলা ছিল না। মার্কিন ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট একবার বলেছিলেন, ‘আমি যখন ব্রীজ খেলি, তখন পাশ দিয়ে যদি একজন নগ্ন নারী হেটে যায়, আমি ফিরেও তাকাব না।’ শুধু ওয়ারেন বাফেটই না, আরেক শীর্ষ ধনী বিল গেটসসহ আমেরিকার আরও অনেক শীর্ষপর্যায়ের ব্যাক্তিই আসক্ত ইন্টারন্যাশনাল ব্রীজ নামে তাসের একটি জনপ্রিয় খেলার উপর। ১৯২৯ সালে এই ব্রীজ খেলাকে কেন্দ্রই করে ঘটে গিয়েছিল একটি ভয়াবহ খুনোখুনির ঘটনা। পছন্দসইভাবে না খেলার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের স্বামীকেই খুন করে বসেছিলেন মার্টল বেনেট নাম্নী একজন মহিলা। বিখ্যাত অভিনেতা ওমর শরিফ তাস খেলার উপরে এতটাই আসক্ত ছিলেন যে তিনি শিকাগো ট্রিবিউনে ব্রীজ নিয়ে নিয়মিত কলাম লিখতেন এবং পরবর্তীতে ওমর শরিফ ব্রীজ সার্কাস শ্লোগান নিয়ে একবার বিশ্বভ্রমণও করেন।


নিউ ইয়র্কের শীর্ষ বিনিয়োগ ব্যাংক বিয়ার স্টার্নের সাবেক প্রধান জিমি সেইন একজন জাতীয় ব্রীজ চ্যাম্পিয়ন। নিক নিকেলের সঙ্গে জুটি বেধে তিনি একবার আয়োজন করেছিলেন 'কর্পোরেট আমেরিকা বনাম কংগ্রেস’ ব্রীজ ম্যাচ। নিক নিকেল আমেরিকার ব্রিজ লিগ অঙ্গনের একজন কিংবদন্তী। কর্পোরেট আমেরিকার পক্ষে সেইন ও নিকেল দলে ভিড়িয়েছিলেন সাবেক সিবিএস নির্বাহী লরেন্স টিচ ও বিয়ার স্টার্নের তৎকালীন সভাপতি অ্যালান গ্রীনবার্গকে। তারা মুখোমুখি হয়েছিলেন কংগ্রেসের টেক্সাস সেন, কেন বেইলি হাচসন,কেন্টাকি, জিম বানিংসহ আরও অনেকের। বরাবরের মতো ব্রীজেও জয় হয়েছিল কর্পোরেট আমেরিকার।


একবার রাজা জেমস প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন এবং রয়েল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট জ্যোতির্বেত্তা হ্যালিকে রাজপ্রাসাদে নিমন্ত্রণ করেন। ডিনারের পর তাস খেলা শুরু হয়। তাসগুলি ছিল অ্যাষ্ট্রনমিক্যাল কার্ড। তাসের গায়ে বিভিন্ন নক্ষত্রপুঞ্জের ছবি আঁকা ছিল। খেলার স্মৃতি হিসাবে রুহিতনের তিরি প্রাসাদে রাখা হয়েছিল। পরে এটি অ্যাষ্ট্রনমার হাসেলকে দেখানো হয়। হাসেল তাসের কিছু জানতেন না। ছবিতে আঁকা তারাগুলি তাঁর মনঃপূত না হওয়ায় তিনি বললেন, ‘Why didn’t the artist make five points to the stars? there is no use upsetting the convention!’


তাস খেলার আবিষ্কার হয়েছে আজ থেকে প্রায় ছয়শত বছরেরও বেশি সময় আগে পঞ্চদশ শতকে। বিশ্বে প্রথম তাস খেলার প্রচলন ঘটে চীনে। খ্রিস্টীয় নবম শতকের দিকে টাং রাজার রাজত্বকালে অন্তঃপুরবাসী রানীরা তাস খেলে সময় কাটাতেন। তখন খেলার তাস হিসেবে পয়সা ও প্লেট ব্যবহার করা হতো। এ খেলা দ্রুত ভারতবর্ষেও তখন ছড়িয়ে পড়ে এবং খেলার তাস হিসেবে তখন রিং, তলোয়ার, কাপ ইত্যাদি ব্যবহার করে। তবে ৫২ তাসের খেলা প্রচলন করে প্রাচীন মিশর। তারা এই তাস চারজন মিলে খেলত। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চারজন মিলে যেভাবে তাস খেলা হয়, সেটা মিশর উদ্ভাবন করেছিল খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে। ঊনবিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত এই খেলা রাজপরিবার এবং সৈন্য-সামন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে জার্মানির রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাসের নামেও আসে পরিবর্তন। ক্ষমতানুযায়ী তাসের নাম দেওয়া হয় রাজা-রানী, জোকার ইত্যাদি। বর্তমানে এই খেলা এত বেশি জনপ্রিয় যে, তা মোবাইল ও কম্পিউটারের ভেতরেও ঢুকে গেছে।


চীন থেকে যারা গাধার পিঠে করে অথবা হাতিতে করে মালামাল বিভিন্ন দেশে নিয়ে যেত অথবা বাণিজ্যিক কারণে যারা চীনে আসত তাদের মাধ্যমে তাস খেলা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। মামলুক শাসকরা এ খেলার নাম দিয়েছিল ন্যাব, নাইবি অথবা নাইপ। মামলুকরা বিশেষ করে মিশরে বায়ান্ন তাস দিয়েই এ খেলার প্রচলন রেখেছিল; কিন্তু তাদের তাসের প্রতীকগুলো ছিল ভিন্ন ধরনের। তারা ১-১০ নং কার্ডকে কোর্ট কার্ড হিসেবে ধরে কিং কুইন এবং ভিজির চিহ্নিত একটি কার্ডও রাখত। ভিজির রুশ শব্দ, এর অর্থ হল উজির। মামলুক সম্রাটের কোনো এক উজিরের নাম ছিল নাইয়িব। তিনি এ খেলার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন বলে মিশরে ন্যাব, নাইবি অথবা নাইপ নামে এই খেলার প্রসার ঘটেছিল।


পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইউরোপের দেশগুলোতে তাস খেলা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে ইউরোপীয় শাসকরা একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কারণ ওই সময় এ খেলাটি বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ব্যাপকভাবে জুয়া হিসেবে ব্যবহার হতে থাকে; কিন্তু ইউরোপীয় রাজন্যবর্গের নিষেধাজ্ঞা মোটেই কার্যকর হয়নি। জোহানবার্গের প্রিন্টিং মেশিন আবিষ্কারের ফলে বিপুল পরিমাণের তাস ছাপা হয়ে ইউরোপীয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গিয়েছিল। তাই শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় শাসকবর্গ এটাকে গ্রহণ করে নেয় সঙ্গে সঙ্গে গামবুলিংও অলিখিতভাবে স্বীকৃত হয়ে যায়। তাসের প্রতীকগুলো হল দৃশ্যমান কিছু ছবি। এতে ইশকাপন, হরতন, রুহিতন এবং চিড়িতন থাকে। এর মধ্যে প্রত্যেকটিরই রাজা, রানি এবং গোলাম আছে এবং এর সঙ্গে নির্দিষ্ট নম্বর মারা প্রত্যেকটি রঙ এবং প্রতীকের কিছু তাস রয়েছে। অবশ্য একই প্রতীক নিয়ে বা তাসগুলোর মান ও নাম একই রকমভাবে; কিন্তু বিশ্বের সব দেশে প্রচলন হয়নি। ইতালিতে রাজা ঘোড়া ও ঘোড়সওয়ার ডোনা বা রানি এবং অন্য তাসগুলোতে সৈনিক হিসেবে কল্পনা করে তাস খেলা প্রসারের প্রথম দিকে খেলা আরম্ভ হয়, পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় ঘোড়সওয়ারের সঙ্গে শিকারি। যে রাজহাঁস বা হরিণ শিকার করে এবং রাজহাঁস বা হরিণের ছবি সংবলিত তাসও বায়ান্ন তাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়; কিন্তু তাসের সংখ্যা বায়ান্নই থেকে যায়।


ফ্রান্সে ১৪৮০ সালে যখন তাস খেলার প্রচলন ঘটে, তখন তাদের তাসগুলো ছিল ইশকাপন, হরতন, রুহিতন এবং চিড়িতন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তরবারিধারী রাজা এবং একচক্ষু রানি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন এই খেলা প্রথম প্রবেশ করে তখন এই খেলার মধ্যে তারা নতুন একটি নিয়ম সংযোজন করে, যাকে তারা বলত ট্রয়নকি। বর্তমানে এই শব্দটি থেকে ট্রাম শব্দটি এসেছে।


তাসের চারটি প্রতীক পঞ্চদশ শতকের সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর পরিচয় বহন করে । আবার তাসের ছবিগুলোতে উপস্থাপিত হয়েছে ঐতিহাসিক নানা ব্যক্তিত্বের। প্রথম দিকে তাসের প্যাকেটে ৭৮ টি তাস থাকত। কিন্তু এতগুলো তাস নিয়ে খেলা জটিল ও কষ্টকর হয়ে ওঠায় তাসের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়। তবে হ্রাসকৃত সংখ্যার মধ্যে যে তাসটি এখনো সগৌরবে টিকে আছে সেটি হলো জোকার। খেলুড়েদের কাছে এই তাসটি সুপার ট্রাম্প কার্ড হিসেবে পরিচিত।


প্রধান চারটি তাস কিসের প্রতীক বহন করে চলেছে এবার সেটা জানা যাকঃ-


ইস্কাপন বা স্প্রেডস-এর টেক্কা।


হার্টস বা হরতন-এর টেক্কা।


ডায়মন্ডস বা রইতন-এর টেক্কা।


ক্লাবস বা চিড়িতন-এর টেক্কা।


=> ডায়মন্ডস হলো ধনী শ্রেণীর প্রতীক। তখনকার সময়ে এরা ছিলো শাসক শ্রেণী। ডায়মন্ডস দিয়ে তাদের ধনদৌলত-ঐশ্বর্য কে বোঝানো হতো।

=> স্পেডসের হলো সৈন্যের প্রতীক । স্পেড শব্দটি এসেছে স্প্যানিশ স্পাডা থেকে। যার অর্থ তরবারি।

=> হার্টস পাদ্রিদের প্রতীক। আগে প্রতীকটির আকার ছিল পান পাতার মতো। পরে অবশ্য সেটা পরিবর্তন হয়ে হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের আকার পায়।

=> ক্লাবস বলতে বোঝানো হতো গরিব মানুষদের। ইংরেজি ক্লাবের বাংলা হলো মুগুর। গরিব শ্রেণীর মানুষের মুগুরই সম্বল এরকম একটা অর্থ বহন করে এই তাসটি।


তাসের গায়ের ছবিগুলোরও রয়েছে ঐতিহাসিক ব্যাখ্যাঃ-


ইস্কাপন বা স্প্রেডসঃ- কিং অব স্প্রেডস হলো রাজা ডেভিড, গোলিয়াথের হত্যাকারী। বাইবেল অনুযায়ী এই রাজা ইসরাইল শাসন করেছিলেন। বাইবেলে আরো বলা হয়েছে যে, তিনি ছিলেন যিশু খ্রিষ্টের পূর্বপুরুষ। এই বিখ্যাত রাজার বৈশিষ্ট হলো তিনি আবেগের বশবর্তী হয়ে কোন কাজ করেন না। এবং তিনি সব সময় বিচার-বুদ্ধি দিয়ে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করেন। এই তাসের রানী হলেন গ্রিক যুদ্ধ দেবী প্যালাস, যিনি দুই হাতে ধরে আছেন তরবারি ও ফুল।


হার্টস বা হরতনঃ- কিং অব হার্টস এর ছবি আঁকা হয়েছে বিখ্যাত রাজা শার্লেমেন বা চার্লস এর অনুকরণে যিনি ৮০০ খ্রিস্টাব্দে জয় করেন অর্ধেক ইউরোপ। তাসে দেখা যায়, এই রাজা তার তলোয়ারটি নিজের মাথায় ঠেকিয়ে নিজেকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছেন। তাই অনেকে এই রাজাকে আত্মঘাতী রাজাও বলে থাকেন। আরও একটি চমৎকার বিষয় লক্ষনীয় যে, 'তাসের রাজাদের মধ্যে একমাত্র হার্টসের রাজারই কোন গোঁফ নেই'। এটা সম্পর্কে সামু ব্লগের সিনিয়র ব্লগার শায়মা আপুকে জেন রসি ভাইয়ের করা 'নজরবন্দি বাজিকর' নামক একটা পোস্টে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে 'আপু বলেন তো কোন রাজার গোঁফ নেই?' আমার প্রশ্নের উত্তরে ঢঙ্গী (উনি নিজেই বলেন) আপু শায়মা খুব সুন্দর একটি কবিতা রচনা করে তার উত্তর দেনঃ-
সেই রাজা যেই রাজা যার নেই গোঁপ
হৃদয়ের রাজা সে যে তাই গোফ লোপ!

পোস্টটার লিংকঃ- নজরবন্দি বাজিকর
তার তাসের রানী হলেন বাইবেল উল্ল্যেখিত নায়িকা জুডিথ। যিনি রাজার তরবারির এক আঘাতে এক আসিরিয়ান সেনাপতিকে হত্যা করেছিলেন।


ডায়মন্ডস বা রইতনঃ- কিং অব ডায়মন্ডস হলেন রোমের বিখ্যাত শাসক, রাজনীতিবিদ এবং সাহিত্যিক রাজা জুলিয়াস সিজার। রোম সম্রাজ্যের উত্থানে এই প্রভাবশালী শাসকের গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে। তিনি খুবই দক্ষতার সাথে রোমের রাজনীতি দীর্ঘ সময় ধরে নিয়ন্ত্রন করে গেছেন। আরও একটি মজার বিষয় হলো, তাসের রাজাদের মধ্যে সব রাজারই মুখ স্পষ্ট দেখা গেলেও একমাত্র রইতনের রাজারই মুখ অর্ধেক দেখা যায়। কুইন অব ডায়মন্ডস হলেন তার স্ত্রী র্যাচেল।


ক্লাবস বা চিড়িতনঃ- কিং অব ক্লাবস হলেন দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, যিনি ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বে পৃথিবীর প্রায় পুরোটা দখল করে নিয়েছিলেন। গ্রিসের মেসিডোনিয়ার এই সম্রাটের নাম শোনেন নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আগের চিড়িতন তাসে পৃথিবীর মানচিত্রের গোলক থাকত, কিন্তু পরে তার আলখেল্লায় গোলকটি আঁকা হয়। কুইন অব ক্লাবস হলেন একমাত্র ইংরেজ মহিলা। যিনি আর কেউ নন ব্রিটিশ রানী প্রথম এলিজাবেথ। তার গোলাম হলেন রাউন্ড টেবিলের বিখ্যাত নাইট, স্যার ল্যান্স লট।


সব চেয়ে সেরা তাস হচ্ছে ইস্কাপনের টেক্কা। একে ‘হেড অব দি প্যাক’ বলা হয়। ইংল্যাণ্ডে যখন প্রথম তাস খেলার প্রবর্তন হল তখন তাসের উপর দুর্দান্ত ট্যাক্স বসানো হয়েছিল। তাস প্রস্তুতকারক প্রত্যেক ফার্মকে এক কুড়ি ইস্কাপন টেক্কার তাস এক সঙ্গে ছাপা হয় এমন একটি প্লেট তৈরি করে সরকারকে দিতে হত। এই প্লেটের সাহায্যে ইস্কাপন টেক্কার সব তাসই সরকারি ছাপাখানা অর্থাৎ সমারসেট হাউসে ছাপা হত। কোম্পানির নিজস্ব নাম ও মার্কা এই তাসের উপর লেখা থাকত। প্রত্যেক কুড়িটি টেক্কার সিটের জন্য তাস ব্যবসায়ীকে দিতে হত এক পাউণ্ড এবং প্রতি একশো জোড়া তাসের জন্য ট্যাক্স লাগত পাঁচ পাউণ্ড। সে যুগে এক প্যাক তাসের দাম ছিল অনেক বেশি। কম করে হলেও এক প্যাক তাসের দাম এক গিনি। ফলে তাস খেলাটা অত্যন্ত ধনী ব্যাক্তিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরে ব্রিটেনে ট্যাক্স কমে তিন পেন্সে এসে দাঁড়িয়েছিল। ইস্কাপনের টেক্কাকে স্প্যাডিলও বলা হত। আলেকজাণ্ডার ডুমা তাঁর লেখায় বলেছেন যে, 'শিশু নেপোলিয়নের ভাগ্য গণনার সময় কর্সিকার ডাইনি বুড়ি কড়াইতে যে ঐন্দ্রজালিক পাঁচন জ্বাল দিয়েছিল তার অন্যতম উপাদান ছিল স্প্যাডিল।'


Ace হচ্ছে টেক্কা। এই শব্দটি এসেছে ল্যাটিন AS কথা থেকে যার অর্থ একক। হরতনের টেক্কার আরেকটি নাম হচ্ছে Latimar’s Card। বিশপ ল্যাটিমার গির্জার বেদীতে বসে তাসের প্যাক হাতে দিয়ে ধর্ম বিষয়ক উপদেশ বা Sermon প্রচার করতেন। ল্যাটিমার বলতেন, 'Let us play at Triumph'। Triumph থেকে Trump কথাটা এসেছে। আবার এই হরতনের টেক্কা হচ্ছে ঐশ্বরিক এককত্বের প্রতীক। কারণ, বিশপের বক্তৃতার মর্মার্থ ছিল, 'ঈশ্বরের কাছে সবটা সমর্পণ করতে পারলেই মানুষের আত্মার মুক্তি ঘটে।'

তথ্য সূত্রঃ- অনলাইনে ছড়ানো ছিটানো বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা!


তাসের ম্যাজিকঃ- প্রচলিত খেলা গুলো ছাড়াও তাস নিয়ে কিছু মজার মজার ম্যাজিকও আছে। যে ম্যাজিক গুলো দেখিয়ে আপনি দর্শককে সম্পূর্ন বোকা বানাতে পারবেন। তাহলে চলুন এবার সেই সমস্থ মজার ম্যাজিক গুলো সম্পর্কে একটু আলোচনা করা যাকঃ-


প্রথম খেলাঃ- এ খেলায় শুধুমাত্র একজন সহযোগীর প্রয়োজন হবে। প্রথমে আপনার সহযোগীকে বলে দিন, তাসের মধ্যে 'Jack-11, Queen-12, King-13 এবং টেক্কা-1'। বাকি তাস গুলোর মান তো তাতে লেখাই আছে। এবার বন্ধুকে মনে মনে বায়ান্নটা তাসের যে কোন একটা ভাবতে বলুন। মনে মনে বন্ধুটি যে তাসটি ভাবছে তার পরবর্তি তাসের মান, মনে করা তাসটির সাথে যোগ করতে বলুন। ফলাফলটিকে দিয়ে গুন করতে বলুন । এবার বন্ধুকে তাসের গ্রুপের মান বলুনঃ 'ক্লাবস/চিড়িতন- 6, ডায়মন্ড/রইতন- 7, হার্টস/হরতন- 8, স্পেডস/ইস্কাপন- 9' (ন্যাশনাল ব্রিজ খেলার ক্ষেত্রেও তাসের মান ঐ একই থাকে)। সে যে গ্রুপের তাস ধরেছে তার মান গুনফলের সাথে যোগ করতে বলুন। ফলাফলটা জানতে চান। আপনি মনে মনে ঐ ফলাফল থেকে 5 বাদ দিন । এবার বন্ধুর মনে মনে ধরা ভাগ তাসটি কি ছিল সেটা বলে দিন। একবার আপনি নিজেই চেষ্টা করে দেখুন না...?


প্রকৃয়াঃ- ধরুন আপনার বন্ধু মনে মনে ভাবছে হার্টস এর 5 । পরবর্তি কার্ড নাম্বার যোগ করলে হয় 5+6 = 115 দিয়ে গুন করবে 11*5 = 55। কার্ড গ্রুপ মান যোগ হবে (হার্টস- 8) 55+8 = 63 । এবার '63' ফলাফলটি শোনা মাত্র আপনি তা থেকে 5 বাদ দিয়ে দিন 63-5 = 58। এই 58 এর প্রথম সংখাটি হলো আপনার বন্ধুর মনে মনে ধরা কার্ড টি, এবং দ্বিতীয় সংখাটি হলো কার্ডের গ্রুপ। অর্থাৎ আপনার বন্ধুটি হার্টস/হরতনের 5 সংখ্যার কার্ডটি ধরেছিল।


দ্বিতীয় খেলাঃ- কোন দর্শককে অনুরোধ করুন এক প্যাকেট তাস হতে ১০ এর বেশি যতগুলো ইচ্ছা তাস নিতে। তারপর আপনাকে না জানিয়ে তাস গুলো গুনতে বলুন । যে সংখ্যক তাস হল তার একক ও দশক মনে মনে যোগ করতে বলুন । যোগফলের সমান সংখ্যক তাস, দর্শকের নেয়া তাস হতে বাদ দিতে বলুন। এবার আপনি দর্শকের অবশিষ্ট তাস হাতে নিয়েই বলে দিতে পারবেন তাতে কতগুলো তাস আছে!

এখানে একটা উদহারণ দেওয়া যাক। ধরা যাক আপনাকে না দেখিয়ে দর্শক ২১ টি তাস তুলে নিল। এবার সংখ্যাটির একক ও দর্শক যোগ করলে (২ + ১) = ৩ হয়। আপনার কথামত দর্শকটি ৩ টি তাস তার নেয়া ২১ টি তাস হতে বাদ দিল। তাহলে তাঁর হাতে থাকল (২১ - ৩) = ১৮ টি তাস। এখন আপনি অবশিষ্ট তাসের গোছা হাতে নিয়ে অনায়াসেই বলে দিতে পারবেন যে, তাতে মাত্র ১৮ টি তাস আছে। আর বলার সাথে সাথে দেখবেন দর্শক হতবাক। এখন হয়তো ভাবছেন, এটা কিভাবে সম্ভব (!) কি তাই তো? আরে ভাই টেনশন নিয়েন না, ম্যাহু না! ;) শুধু মাত্র তাসের গোছার ওজন দেখে তাসের সংখ্যা নির্ভূল ভাবে বলে দেওয়াকে ম্যাজিক নয়তো আর কি বলবে, বলেন তো?


প্রকৃয়াঃ- এই ম্যাজিকটির কৌশল খুব সোজা। ম্যাজিক দেখানোর আগে আপনাকে শুধু দেখে নিতে হবে ৯টি তাস কতখানি মোটা, ১৮টি তাস কতখানি মোটা, এবং এভাবে পর্যায়ক্রমে ২৭, ৩৬, ও ৪৫ টি তাস কেমন মোটা। এটুকুই আপনাকে একটু কষ্ট করে অভ্যাস করে নিতে হবে, তাহলেই এই ম্যাজিক দেখানোটা আপনার কাছে কেবল ডাল-ভাত বলে মনে হবে। না পারলেও যে খুব বেশি অসুবিধা হবে তা কিন্তু নয়। তবে কথায় আছে না, সাবধানের মাইর নেই। সুতরাং এটা জেনে রাখা ভাল। কারণ ইচ্ছামত যত তাসই দর্শক গ্রহণ করুক, তার একক ও দশক সংখ্যার যোগফলের সংখ্যক তাস রেখে দিলে আর বাদ বাকি তাসে "৯, ১৮, ২৭, ৩৬, ৪৫" (৯ এর ঘরের নামতা)- এর যে কোন একটির সংখ্যক তাস অবশ্যই থাকবে।

আসুন আরো দু’একটি উদাহরণ দেয়া যাকঃ- ধরুন মোট তাস ১১টি। এখন ১১ সংখ্যার একক (১) এবং দশক (১), এই দুইটি সংখ্যা একত্রে যোগ করলে পাই (১+১)=২, এবার এই দুইয়ের সাথে মোট তাস ১১ বাদ দিলে থাকে আপনার কাংখিত উত্তর- । উদারণঃ- ১১ - ২ (১ + ১) = ৯;

আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে আরো কিছু উদারহণ দেওয়া হলোঃ- ১৪ - ৫ (১ + ৪) = ৯; ২০ - ২ (২ + ০) = ১৮; ৩১ - ৪ (৩ + ১) = ২৭; ৪২ - ৬ (৪ + ২) = ৩৬ এবং ৫২ - ৭ (৫ + ২) = ৪৫।


তৃতীয় খেলাঃ- প্রথমে আপনি এক প্যাকেট তাস হতে ১৩টি ইষ্কাপনের তাস বের করে নিন। অন্য যে কোন তাস নিলেও হবে। তবে শর্ত হলো তা এক কার্ডের হতে হবে। এবার তাস গুলো কে একটু সাজিয়ে নিন। মুখে বললেন ও-এন-ই অথ্যাৎ O-N-E এবং প্রতিটি বর্ণের সঙ্গে একটি করে তাস উপর থেকে নিচে রাখলেন। এবার বললেন One (ওয়ান) এবং উপরের তাসটি টেবিলে রেখে দেখালেন সেটি “ইষ্কাপনের টেক্কা”। ইস্কাপনের টেক্কাটি টেবিলেই থাকল। আবার আপনি উপর থেকে একটি তাস নিচে রেখে বললেন 'টি (T)' এর একটি তাস উপর থেকে নিচে রেখে বললেন 'ডব্লিউ (W)' এবং আর একটি তাস উপর থেকে তলায় রেখে বললেন 'ও (O)'। এবার উপরের তাসটি টেবিলে সোজা করে রাখরেন এবং বললেন 'টু (Two)'। দেখা গেল তাসটি 'ইষ্কাপনের দুই'

এভাবে আপনি "THREE, FOUR, FIVE, SIX, SEVEN, EIGHT, NINE, TEN, KING, JACK, QUEEN" প্রতিটি বানান করে করে বের করলেন অর্থাৎ T-H-R-E-E প্রতিটি বর্ণ উচ্চারণের সাথে সাথে একটি করে তাস উপর থেকে নিচে রাখলেন। Three বানান শেষ হয়ে গেলে উপরের তাসটি তলায় না রেখে টেবিলের উপর সোজা করে রাখলেন এবং দেখা গেল সেটা ইষ্কাপনের তিন। এভাবে যে তাস গুলো টেবিরে রাখা হচ্ছে সেগুলো টেবিলেই থাকবে। অবশিষ্ট তাসের উপর থেকে আবার একটি করে তাস নিচে রাখবেন এবং একটি করে বর্ণ উচ্চারণ করবেন। বানান সম্পূর্ণ হলে আপনি উপরের তাসটি টেবিলে সোজা করে দেখেন সেটি ঐ তাস যার ফোটার সংখ্যা এতক্ষণ ইংরেজিতে বানান করা হচ্ছিল। এভাবে আপনি ইষ্কাপনের ১৩টি তাস-ই বের করে দেখাতে পারবেন। কি, ম্যাজিকটি মজার; তাই না?


প্রকৃয়াঃ- এখন ঢোকা যাক ম্যাজিকটির রহস্যের ভিতর। ম্যাজিকটি একটু কঠিন মনে হলেও, একবার বুঝতে পারলে কিন্তু খুব বেশি ঝামেলার নয়। যত রহস্য সব ঐ তাস সাজানোর মধ্যে। প্রথমে এক প্যাকেট তাস হতে ১৩টি ইস্কাপনের (বা অন্য যে কোন) তাস বের করে নিন। তবে এক্ষত্রে তাস গুলো সব একই লেভেলের হতে হবে। যেমন, ইস্কাপন নিলে ১৩টা কার্ডই ইস্কাপন নিতে হবে, হরতন নিলে ১৩টা কার্ডই হরতনের নিতে হবে; এভাবে চিড়িতন এবং রইতনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এবার ১৩টি একই রঙ্গের তাস এক বিশেষ বিন্যাসে সাজাতে হবে। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত বিন্যাসটি হল '3, 8, 7, A, Q, 6, 4, 2, J, K, 10, 9, 5' অর্থাৎ ১৩টি তাস উপুড় করে ধরলে উপরে থাকবে '3 এবং নিচে থাকবে 5' এই হলো কাজের কাজ। তারপর সব সোজা। প্রথমে ONE বানান করে পড়েন এবং প্রতিট বর্ণ উচ্চারণের সময় একটি করে তাস উপর থেকে তলায় রাখেন। তিনটি বর্ণ উচ্চারণের জন্য তিনটি তাস তলায় রেখে উপরের তাসটি টেবিলে রেখে সবাইকে দেখালেন যে সেটি ONE। এভাবে ONE থেকে JACK পর্যন্ত বের করে দেখান। শেষে একটি তাস হাতে থাকবে। বলা বাহুল্য সেটি হবে বিবি/কুইন। আশা করি ব্যাপারটি আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।


আপনারা বুঝতে পারছেন হঠাৎ করে কোথাও এই ম্যাজিকটি দেখাতে হলে সবচেয়ে দরকার বেশি হল ১৩টি তাসের ঐ সিলিয়ালটি মনে রাখা। ঐ সিরিয়ালটি অবশ্যই মুখস্ত রাখতে হবে। কিন্তু আমি আপনাদের মুখস্ত রাখার ব্যাপারে গোপনে (গোপন আর থাকল কৈ? :P ) একটু সাহায্য করতে পারি। নিচের সূত্রটি মনে রাখলেই ঐ সিরিয়ালটি খুব সহজেই বের করতে পারবেন। সূত্রটি হলঃ-

"387 এক রাজা (A) ছিল। তার একটি বিবি (Q) ছিল। ৬৪ বছর বয়সে তাদের 2 টি সন্তান হয়। একজনের নাম গোলাম (J) আর একজনের নাম সাহেব (K)। এবং 10, 9, 5 সালে তিনি মারা যান।"

খেয়াল করে দেখেন সূত্রটি একটি গল্পের অংশের মত। তাই এটি মুখস্ত বা মনে রাখা অধিকতর সহজ। এই সূত্রটি মনে মনে পড়বেন এবং সূত্রের সংখ্যাগুলোর সাথে মিল করে করে তাস সাজাবেন। যেমন 387 সালে এক রাজা এটি পড়ে প্রথমে ৩; ৮; ৭ ফোটার ইষ্কাপনের তাস টেবিলে রাখলেন। রাজার জন্য ইস্কাপণের টেক্কা (A) রেখে (তাস খেলার টেক্কাই রাজা বা ক্ষমতাশালী) এভাবে তাস সাজাবেন। এখানে লক্ষনীয় যে “গল্প-সূত্র” টি মনে রাখতে পারলেই আর কখন সিরিয়ালে ভুল হবে না।

এই খেলাটি অন্য আর এক ভাবেও খেলা যায়। সেক্ষেত্রে সূত্রটি একটু ভিন্ন ধরনের, তবে খুব মজার। সূত্রটি হলোঃ- "একদা রানী চতুর্থ তলায় একা বসিয়া অট্টোহাসি হাসিতে হাসিতে গোলাম দ্বয় সাথে নিয়া পঞ্চ দশ সহ রাজার সহিত তিন ছয় নয় খেলিতেছিল।"

তাহলে এখন ঐ সূত্র অনুসারে তাস গুলো সাজাতে হবে ঠিক এভাবেইঃ- "একদা রানী (Q) চতুর্থ (4) তলায় একা (A-টেক্কা) বসিয়া অট্টো(8) হাসি হাসিতে হাসিতে গোলাম (J) দ্বয় (2) সাথে (7) নিয়া পঞ্চ (5) দশ (10) সহ রাজার (K) সহিত তিন (3) ছয় (6) নয় (9) খেলিতেছিল।"

এখন এভাবে সাঁজালে কার্ডের সিরিয়াল গুলো হবে ঠিক এভাবেঃ- "Q, 4, A, 8, J, 2, 7, 5, 10, K, 3, 6 এবং 9।"

এবার আপনি One-Thirteen ( এক থেকে তের) পর্যন্ত ইংরেজিতে বানান করে যান এবং শেষ কার্ডটি উচ্চারন করে সেটা সামনে আনুন। কি, মজা পাইছুইন? ;)


চতুর্থ খেলাঃ- প্রথমে যাকে/যাদেরকে আপনি খেলাটা দেখাবেন তাদের সবাইকে এই মাজিক আর নিয়ম গুলো ভালো করে বোঝিয়ে নিন. এক পাকেট এর ৫২ টি তাস নিবেন। এর K, Q, J প্রত্যেকটির মান হলো ১০। A এর মান হলো ১ এবং ২ থেকে ১০ পর্যন্ত সংখা যার মান যা আছে তাই। এবার তাকে মান বোঝানোর পর তাস গুলো তার হাতে দিয়ে বলুন, তার ইচ্ছে মত ওলট-পালট করে দিতে। তারপর তাস গুলো আপনার হাতে দিলে আপনি সেখান থেকে ২৬ টি তাস (দেখে দেখে উপর থেকে নিচ, অর্থাৎ যে কার্ডটা প্রথমে তুলবেন সেটা নিচে রেখে তার পরে যেটা তুলবেন সেটা ঐ পূর্বের কার্ডটার উপরে রাখবেন) এভাবে আলাদা করে এক জায়গায় রেখে দিন। বাকি ২৬ টি তাস তাকে আবার ওলট-পালট করে দিতে বলুন এবং তার বিশ্বাস অর্জনের জন্যে, আবার আপনি সবার উপরের তাস টা দেখে টেবিল এর উপর রাখুন। দেখেন ওটার মান কত।

মনে করুন রাখা তাসটির মান হলো ৮। তাহলে আপনাকে এর পরবর্তী তাস দুটো রাখতে হবে। কারণ শর্ত হলো প্রত্যেক লাইন এ ১০ পূরণ করতে হবে (যেমন ৮ সংখ্যার তাস পড়লে তার উপরে আরো ২টি তাস রেখে দশ পূর্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে দশ সংখ্যার তাস খুঁজে বের করাটা জরুরি নয়। বরং ৮ সংখ্যা তো বের হয়েছে, এখন আর দুটো কার্ড সেখানে রাখলেই দশ হয়ে যাবে)। প্রথমে একটা তাস রাখার পর বাকি আর তাস গুলোর সব মান ১ করে। মনে করুন প্রথমে যেটা রাখলেম ওটা A . মানে হলো এর মান ১। তাহলে আপনাকে পরবর্তী ৯ টি তাস রাখতে হবে। সেই ৯ টি তাসের মধ্যে Q, ৩, J , ১, ৭ যাই পরুক না কেন সবার মান ১ করে। প্রথম লাইন এ ১০ পর্যন্ত হয়ে গেলে একই ভাবে আরর একটি তাস নিয়ে দ্বিতীয় লাইন এ রাখুন। এভাবে ওই লাইন টাকেও ১০ পূর্ণ করুন। তারপর তৃতীয় লাইন।


আমাদের ৩ টি লাইন এই ১০ করে মান হয়েছে। উপরের ছবিটি খেয়াল করুন। প্রথমে ৮ পড়েছিল। তাই তারপর আরো ২ টি তাস রেখেছি। মানে ৮, ৯, ১০। তারপর পড়েছিল ৬। তাই আরো ৪ টি তাস রেখেছি। মানে ৬, ৭, ৮, ৯, ১০। এভাবে তৃতীয় লাইন এ প্রথম এই ১০ পরে গেছে। তাই আর রাখতে পারব না। কারণ আগেই বলেছি, শর্ত হলো প্রত্যেক লাইন এ ১০ পূরণ করতে হবে। এবার যে তাস গুলো আপনার হাতে বেশি থাকলো সেগুলো আগের যে ২৬ টি তাস আলাদা করে রেখেছিলেন তার উপর রাখুন। এবার তাকে বলুন ৩ লাইন এর সবার উপরের তাসের মান গুলো যোগ করতে।


সে ও আপনি যোগ করে দেখলেন যে, তিন লাইলেন প্রত্যেটার প্রথম তাসটার যোগফল ২৪ হলো (৮ + ৬ + ১০) = ২৪। এখন আপনি তাকে বলবেন, 'প্রথমে আমি ২৬ টি তাস রেখেছিলাম। কোন তাসটা কোথায় ছিল তা তুমি ওলট-পালট করে দিয়েছিলে। তাই আমার নিশ্চই অতগুলো তাস মনে রাখা সম্ভব না, কোনটার আগে পরে কোনটা আছে (আসলেই কিন্তু মনে রাখা সম্ভব না)। তাছাড়া তুমি নিশ্চই দেখেছো, তার উপরেও এবার কতগুলো তাস রেখেছি। সেখানে কতগুলো ছিল আমি তাও গুনে রাখিনি। আর আমাদের যোগ ফল হলো 24। এখন আমি বাকি যে তাস গুলো আছে তার থেকে বলে দিতে পারি 24 নাম্বার তাস টা কোন কার্ডের কত নাম্বার তাস! এই দেখ বলছি, উক্ত তাসের মধ্য থেকে ২৪ নাম্বার কার্ডটা হলো- হার্টস এর ৯।'

আপনি (তাস ) উল্টো থাকা অবস্থায়-ই গোনা শুরু করলেন। 24 নাম্বার তাস টা সত্যি-ই হার্টস এর ৯। এবার তাকে আপনি বলুন উপরের ৩ টি তাসের যোগফল যে 24 হবে সেটা তো আর আমি আগে থেকেই জানতাম না। যোগফল ২২ হলে আমি তোমাকে ২২ নাম্বার তাসটাই বলতে পারতাম। ২৮ হলেও বলতে পারতাম। এমনকি সবার উপরে যদি ১০, ১০, ১০ পড়ে ৩০ হলে সেটাও বলতে পারতাম। এবার ১, ১, ১, মোট ৩ হলে ৩ নাম্বার তাসটা কি তাই বলতাম। সে নিশ্চই অবাক হবে! এভাবে বেশ কয়েকবার করে দেখান। তাহলে সে আরো অবাক হবে! কারণ উপরের তিনটা তাসের যোগফল যা হচ্ছে আপনি সেই নাম্বারের তাসটাই বলে দিচ্ছেন! হাউ চুইট..... ;)


প্রকৃয়াঃ- সে যতই তাস উলট-পালট করে দিক আপনি যখন ২৬ টি তাস আলাদা করে রাখবেন তখন ২০ নাম্বার তাস টি কি আপনি সেটা দেখে রাখবেন। মনে করুন ২০ নাম্বার তাস টি হলো হার্টস এর ৯। তাস গোনার সময় একটু সাবধানে গুনবেন। ২০ নাম্বার তাস এ এসে কিন্ত থামবেন না। তাহলে কিন্তু সে বুঝে যেতে পারে। একই ভাবে গুনে যান। Just ২০ নাম্বার তাসটা মনে রাখুন। তারপর তাস গুলো উল্টো করে রাখুন।

এবার প্রতি লাইন এ ১০ পূরণ করার পর বাকি তাস গুলো ঐ রাখ ২৬ টা তাসের ওপরে রাখবেন. এবার সবার উপরের ৩ টা তাস যোগ করে যোগফল ১০, ১৬, ২৩, ২৭, ৩০ যাই হোক না কেন আপনার সেই দেখে রাখা হার্টস এর ৯, ঐ তাস টি-ই বের হবে। তাহলে সে নিশ্চই অবাক হবে। কারণ উপরের ৩ টি তাসের যোগফল কত হবে সেটা তো আর আপনি আগে থেকেই জানেন না। অথচ প্রতি বারেই ঠিক ঠিক তাস বলে দিচ্ছেন! এই খেলাটা আরও এক ভাবে করা যায় তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে ২০ নাম্বারের যায়গায় ০৮ নং কার্ডটাকে মনে রাখতে হবে। আর বাকি নিয়ম গুলো সবই অপরিবর্তিত থাকবে।

পরিশেষে আসুন মজার একটি গুন অংক শিখিঃ- এমন দুইটি সংখ্যা যাদের সাথে আপনার বয়স দিয়ে গুন করলে, একটি মজার গুণফল বের হয়। নীচে সংখ্যা দুইটি এবং যে ভাবে করতে হবে তার একটি ফরমেট দেয়া হল।
সংখ্যা দুইটি হলঃ- [ ২৫৯ এবং ৩৯ ]
যে ভাবে করতে হবেঃ- [ ২৫৯×আপনার বয়স×৩৯ = মজার গুণফল ]।

বিঃ দ্রঃ খেলা গুলো কোথায় পেয়েছি তার কোন তথ্যসূত্র উল্লেখ করলাম না। কারন আপনি নিজেই চেষ্টা করে দেখেন খেলা গুলোর মধ্যে কোন রকম ভুল আছে কি না? টাইপিংয়ের ভুলের কারনে হয়তো অনেক জায়গায় বানানে ভুল থাকতে পারে। সেটাকে বিবেচ্য বিষয় হিসাবে না ধরে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো।

বিশেষ কৃতজ্ঞতায়ঃ- সামু ব্লগেরই সিনিয়র ব্লগার রিকি, জেন রসি এবং শায়মা আপু। কারন উনাদের উৎসাহতেই আমার আজকের এই পোস্ট করা! সুতরাং আমার পক্ষথেকে উনাদেরকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫২
৫২টি মন্তব্য ৫২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×