somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহসী সন্তান
{♥ যদি কখনো নিজেকে একা ভাবো, তাহলে ঐ দূর আকাশের অসীম সীমান্তের দিকে তাকিয়ে থাকো! কখনো নিরাশ হয়ে যেও না! হয়তো বা একটা বাজপাখিও তোমার দিকে উড়ে আসতে পারে! ♥}

ছোট গল্পঃ মোবাইল বিড়ম্বনা...

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অফিসে কাজ নেই। দুপুরে ভরপেট খাওয়া দাওয়া করে আপাতত বিছানায় শুয়ে বউয়ের মোবাইলে সানু'দার "বলো কি যে হলো, কেন এমন হলো..." গানটা শুনছি। আমার মোবাইলে গান-টান নেই। ওসব শোনার সময়ও নেই। সারাদিন অফিস গুতিয়ে যা হোক একটু সময় পাই, তো সেটা হয় ফেসবুক/ইউটিউবে কাটে। আর নয়তো সংসারের বাজার সদাই করে।

পাশে বউ। ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা জানি না। একবার আড় চোখে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। কপালের উপর ডান হাত তুলে শুয়ে আছে। সামনের জানালা দিয়ে আবছা আলো আসছে। বোধহয় সেটাই আটকানোর চেষ্টা করছে। ঘুমায়নি বলেই মনে হলো। তবে সাড়াশব্দ নেই। আমার মন মানসিকতা আপাতত বউয়ের দিকে নেই। একমনে গান শুনছি। সচারচর এরকমটা কখনোই হয় না। মোবাইল আবিষ্কারের পর থেকে আজ অবধি একটা গান পুরো শুনেছি এরকম কোন রেকর্ড আমার সিংগিং জীবনে নেই। তবে আজ শুনতে ইচ্ছা করছে। কেন, বুঝতেছি না।

গানের তালে তালে গুণগুণ করে গাওয়ার চেষ্টা করছি, 'হু হু হু হু হু হু, হু হু হু হু হু হু...!' গানের লিরিক ভালো মুখস্ত নেই। তাতে কি! কে জানি বলছিল, বাঙালি গান না জানলেও হু হু করে অর্ধেক গান শেষ করে দিতে পারে। তবে এই হু হু বেশিক্ষণ চললো না। কিছুক্ষন পর পর বউয়ের মোবাইলের ম্যাসেজ টোন বেজে উঠছে। এক.দুই..তিন... এভাবে আট থেকে দশবার মোবাইলটা পুটপুট করে উঠলো। ম্যাসেজ আসা মানে, কিছুক্ষন গান বন্ধ থেকে আবার চালু হওয়া। প্রথম প্রথম বিষয়টাকে সহজভাবে নিলেও বেশিক্ষণ আর মেজাজ ধরে রাখা গেল না। এই দুপুর বেলা কার এত রস জমছে যে তা আমার বউয়ের মোবাইলেই ঢেলে দেওয়া লাগছে?

বিষয়টা অস্বাভাবিক। নতুন বিয়ে। যদিও প্রেমের সম্পর্ক। তাতে কি? এই জাস্ট ফ্রেন্ডের যুগে মনে সন্দেহ ঢুকতে সময় লাগে না। হাতের কাছেই টেবিল! মোবাইলটা সেখানেই রাখা। ইচ্ছা করলে হাত বাড়িয়ে সেটা নিয়ে চেক করে দেখতে পারি, ম্যাসেজ গুলো কোত্থেকে আসছে। কিন্তু সেটা না করে, দাঁত মুখ খিঁচিয়ে তাকালাম গিন্নীর দিকে!

বউও বোধকরি এই অস্বাভাবিক ম্যাসেজের ধাক্কা সামলাইতে না পেরে কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে গেছে। আড় চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। বোঝার চেষ্টা করছে, ঘটনাটা স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক। তবে আমার দাঁত-মুখ খেঁচানো চেহারা দেখেই বোধহয় বুঝে গেছে, ঘটনা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে। কিন্তু মুখ দেখে মনে হলো সে ঘাবড়ায়নি। শিক্ষিত মেয়ে। এত অল্পতেই ঘাবড়ে গেলে তাদের চলে না। সুতরাং যতটা সম্ভব নিজেকে সামলে নিয়ে বেশ নরম গলায় বলল- 'ওভাবে তাকিয়ে না থেকে মোবাইলটা নিয়ে চেক করলেই তো হয়।'

স্বর নরম হলেও নিঃসন্দেহে এটা প্রত্যক্ষ খোঁচা। তবে আপাতত সেটা হজম করে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। অন্যদিন হলে হয়তো এরকম কথা আসতো না। খোঁচা ছাড়াও সেদিন সাথে থাকতো বজ্র কণ্ঠের বিদ্যুৎ চমকানী। তবে আজ ম্যাসেজের মাত্রাটা বেশী বলেই কিনা এমন জাদুকণ্ঠের দ্যুতি ছড়ানো হচ্ছে! অর্থাৎ সে বুঝাইতে চাইতেছে, আদৌতে তার এমন কেউ নাই যে এই ঠাঠা রোদ্রের মধ্যে নিজে না ঘুমাইয়া বিশ্রামরত একজোড়া নবদম্পতিরে ম্যাসেজ দিয়া জ্বালাইবে।

আমি রক্তিম আভা মুখটা বউয়ের দিক থেকে ঘুরাইয়া টেবিলের দিকে নিলাম। টেবিলের ওপাশেই শোকেস। শোকেসের সাথে একটা আয়না ফিট করা। বাসায় ড্রেসিং টেবিল নেই। গরিব ছা-পোষা মানুষ। এত সৌখিন এখনও পর্যন্ত হয়ে উঠতে পারি নাই। কিংবা স্বাদ আছে সাধ্য নেই অবস্থা।

তবে শোকেসটা অর্ডার দিয়েই তৈরী করা! আর আয়নাটা লাগানো বউয়ের অনুরোধেই। রাতে ঘুমানোর পূর্বে বউ যখন ঐ আয়নার সামনে ছোট্ট টুল'টাতে বসে তেল দিয়ে চুলে বিণুনী করে। তখন মনেহয় স্বাক্ষাত আসমানের কোন দুষ্টু পরী বোধহয় পথ ভুল করে আমার ছোট্ট রুমটার মধ্যে ঢুকে পড়েছে।

এই মুহূর্তে আমার দৃষ্টি এখন ঐ আয়নাটার দিকে। পুরো আয়না জুড়ে মুখাবয়ব ভেসে উঠেছে। তবে আয়নার মধ্যে যেটা দেখলাম, বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই সেটা দেখার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। ভারী আশ্চর্য হলাম! নিজের এমন কুৎসিত চেহারা ইতোপূর্বে দেখেছি বলে মনে পড়লো না। বেশ কিছুক্ষন ধরে চেষ্টা করলাম নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার। কিন্তু ব্যর্থ হলাম। নিজের ফ্রেশ মনের মধ্যে এমন হিংস্র কেউ বাস করতে পারে, এটা ভেবেই বেশ অবাক হতে হলো!

তবে এই মুহূর্তে আবাক হয়ে বসে থাকার সময় নেই। আয়না থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে সেটাকে নিক্ষেপ করলাম সোজা মোবাইলের উপর। বেটা যত নষ্টের গোড়া ঐ নচ্ছার মোবাইলটা। আজ ওর একদিন কি আমার যতদিন লাগে। খামচা মেরে মোবাইলটা নিয়ে একে একে ম্যাসেজ গুলো চেক করতে লাগলাম।

নাহঃ আশানুরূপ কিছু পেলাম না! বুঝলাম বউ আমার ভালোবাসার মান রেখেছে। তবে সেই সাথে সাথে মেজাজ খিঁচড়ে গেলো সিম কোম্পানী গুলোর উপর। আচ্ছা, তাদের ঘরে কি মা-বোন-বউ কেউ নেই? দুপুর বেলা কোথায় মানুষ একটু বিশ্রাম করবে, তা না একের পর এক ম্যাসেজ দিয়ে মেজাজ খারাপ করছে?

কিছুক্ষণ এর উপর তার উপর ঝাল ঝাড়ার পর আপাতত মেজাজ ঠান্ডা। মুচকি হেসে পাশ ফিরে বউকে কিছু ভালোবাসার কথা বলতে যাব কিন্তু কি আশ্চর্য (!) তাকে পাশে দেখতে পেলাম না! এইমাত্র দেখলাম, হঠাৎ গেল কই! দু'একবার নাম ধরে ডেকেও যখন সাড়া শব্দ পেলাম না। তখন খুঁজতে চলে গেলাম তার মন খারাপের দেশে।

অর্থাৎ বাসার ঠিক বেলকনিটাতে। আমি জানি, ওর যখন খুব মন খারাপ হয়; তখন সে চলে যায় তার মন খারাপের দেশে। সেখানে দাঁড়িয়ে সে একমনে গুণগুণ করে গান গায়, আর বেলকনির রড ধরে টানাটানি করে! যদিও জানি না, এই টানাটানির মধ্যে কি এমন জাদুকরী শক্তি আছে যেটা কিছুক্ষনের মধ্যেই তার মন ভালো করে দেয়। আমি নিঃশব্দে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তারপর যতটা সম্ভব স্বরটা নরম করে বললাম- 'রাগ করেছো?'

সে কোন কথা বলল না! তার পরিবর্তে মাথাটা আমার কাঁধের উপরে রেখে আরও নরম সুরে বলল- 'বিশ্বাস করো; আমি তোমাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি!'

অনুভব করলাম, একটা তরল ধারা কাঁধের উপর দিয়ে গড়িয়ে সোজা মাটিতে গিয়ে পড়ছে। মুখটা ফিরিয়ে নিলাম। এমন আবেগ সরাসরি বেশিক্ষণ সহ্য করা যায় না। চোখ দু'টো ভিজে উঠছে। চশমাটা খুলে সেটা আবার ভালোভাবে চোখে পরে নিলাম। ঠিক এই মুহুর্তে চোখ থেকে যে দু'ফোঁটা তপ্ত অশ্রু বেয়ে পড়েছে, সেটা কোনভাবেই ওকে দেখতে দেওয়া যাবে না! পুরুষের কান্না নাকি নারীদেরকে দেখাতে নেই! তাতে পুরুষত্বের অবজ্ঞা করা হয়! আমি কি পারি, নিজে একজন পুরুষ হয়ে পৃথিবীর অন্যসব পুরুষের পুরুষত্বকে অবজ্ঞা করতে?

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- এই গল্পের বিষয়বস্তু সহ যাবতিয় চরিত্র কাল্পনিক। যদি কারো ব্যক্তিগত জীবনের সাথে মিলে যায়, তাহলে সেটা নিতান্তই কাকতালীয় ব্যাপার। সেজন্য লেখক কোন অংশেই দ্বায়ী থাকবে না। তাছাড়া টাইপিংয়ের ভুলের কারনে হয়তো অনেক জায়গায় বানানে ভুল থাকতে পারে। সেটাকে বিবেচ্য বিষয় হিসাবে না ধরে, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৯
১৫টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×