somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস”...

১৮ ই নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





আমরা শক্তি আমরা বল...
আমরা ছাত্র দল...



স্থান-কাল-দেশ ভেদে কালে কালে ছাত্ররাই সর্বাগ্রে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে... নিজে দেশেই তারা হয়েছে তাই নির্যাতিত-নিপীড়িত, তথা-কথিত শাসক শ্রেণীর দ্বারা প্রতিনিয়ত। তাদের এই প্রতিবাদী সত্ত্বার প্রতি সম্মান জানাতেই বিশ্ব-ব্যাপী ১৭ নভেম্বর দিনটিতে প্রচলিত হয় “আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস”-এর।




আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস মূলতঃ বিশ্বব্যাপী ছাত্রদের কর্মতৎপরতার প্রতিরূপক হিসেবে স্বীকৃত একটি দিন; যা যুগ যুগ ধরে চলমান দুর্নীতি-দুঃশাসন-অপশাসন আর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতিবাদী কন্ঠস্বরের সুতীব্র হুঙ্কারের স্বীকৃতি।




শুরুর কথাঃ
ছাত্র বিপ্লবের ইতিহাসে রক্তাক্ত ১৭ নভেস্বর নিয়ে মোট তিনটি ঘটনা আমরা দেখতে পাই...



১ম ঘটনা...
২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে, ১৯৩৯ সালের শেষের দিকে নাজি-জার্মানরা আগ্রাসন চালায় তৎকালীন চেকোশ্লাভাকিয়ায় (বর্তমানঃ চেক প্রজাতন্ত্রে), দখল করে নেয় পুরো দেশটি। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় ছাত্ররা, বিশেষতঃ চার্লস বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্ররা স্বাধীন চেকোশ্লাভাকিয়া প্রজাতন্ত্রের দাবীতে এক বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করে, যাকে তখন “বোহেমিয়া ও মোরাভিয়ার প্রতিবাদ” (the protectorate of Bohemia and Moravia) ; যা তারা ছড়িয়ে দিতে থাকে দেশ-ব্যাপী বিস্তৃত সমস্ত উচ্চ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এর ধারাবাহিকতায়, এই শিক্ষায়তনের এক নেতৃস্থানীয় শিক্ষার্থী, জন অপলেটাল (Jan Opletal) ১৫ই নভেম্বর প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Prague) শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে প্রাগ থেকে মোরাভিয়ায় নিজের বাড়ীতে ফেরার পথে জার্মান সেনাদের হাতে নিহত হন, সাথে আরো নিহত হন ভিকলভ সিডলাচেক (Václav Sedláček);






তাঁদের মৃত্যু যেন আগুনে ঘি ঢালে, বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সমগ্র ছাত্র-সমাজ, শুরু হয় নাজি-বিরোধী আন্দোলন। কিন্তু হত্যঅর-নেশায় উম্মত্ত নাজিরা কঠোর হস্তে দমন-পীড়ন শুরু করে, চেকোশ্লাভাকিয়ার সমস্ত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয় তারা, ১২’শ-এর-ও বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে “সংশোধন কেন্দ্র” (concentration camps)-এ পাঠানো হয়, বিনা বিচারে ৯ জন ছাত্র / শিক্ষক (Josef Matoušek, Jaroslav Klíma, Jan Weinert, Josef Adamec, Jan Černý, Marek Frauwirt, Bedřich Koukala, Václav Šafránek, František Skorkovský)-কে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়, ছাত্রের প্রতিবাদ-কে করে দেয়া হয় স্তব্ধ।



২য় ঘটনা...
গ্রীসে ক্ষমতাশীল সামরিক জান্তার দমন-পীড়নের প্রতিবাদে আর গণতন্ত্র পুনঃবর্হালের দাবীতে ১৯৭৩ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে দেশ-জুড়ে শুরু হয় ছাত্র বিক্ষোভ; যার প্রধান উদ্যোক্তা ছিলো রাজধানী এথেন্সে অবস্থিত পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট (the Athens Polytechnic)-এর শিক্ষার্থীরা, আর তারা চালু করে জান্তা-বিরোধী এক রেডিও প্রচারণা যার যন্ত্রপাতি তারা তাদের ব্যবহারিক পরীক্ষাগার হতে সংগ্রহ করে আনে। এই সম্প্রচার চলাকালীন সময় ১৭ নভেম্বর তারিখে এ.এম.এক্স ৩০ ট্যাংক প্রধান গেট ও দেয়াল ভেঙে ঢুকে পড়ে ইনিস্টিটিউটের আঙ্গিনায়;



যদিও হতাহতের বিষয়টি আজো নিশ্চিত হওয়া যায়নি তবে মারাত্মক আহত হয়েছিলো বেশ কয়েকজন। সামরিক জান্তার এই আগ্রাসন আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে; বিক্ষোভে উত্তল হয়ে ওঠে সারা দেশ, স্থানে স্থানে ছাত্রদের সাথে শুরু হয় জান্তা সমর্থক ও সেনাদের সংঘর্ষ। এর ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয় জান্তাকে।



৩য় ঘটনা...
১৯৮৯ সাল ছিলো চেকোশ্লাভাকিয়ার সেই ১ম ঘটনার ৫০তম বার্ষিকী; তাই এদিন ছাত্ররা তৎকালীন অবরুদ্ধ-প্রায় দেশের কম্যুনিস্ট স্বৈরাচারী শাসকদের দুঃশাসনে নিষ্পেষিত জনগনের পাশে দাঁড়াতে ডাক দেন বৃহত্তর ঐক্যের এবং দাবী করে গণতন্ত্রের; যা পরবর্তীতে “ভেলভেট বিপ্লব” (the Velvet Revolution)-এর সূচনা করে।




রায়ট পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, ধর-পাকড়ের বিরুদ্ধে ছাত্রদের এই বিক্ষোভে ক্রমে দেশের অধিকাংশ মানুষই যুক্ত হয়; ফলে এক-সময়ের প্রবল পরাক্রান্ত কম্যুনিষ্ট শাসনের অবসান ঘটে দেশটিতে আর খুলে যায় গণতন্ত্রের দুয়ার।



দিবসটির স্বীকৃতিঃ
১৯৪১ সালে লন্ডনে “আন্তর্জাতিক ছাত্র সংস্থা” (the International Students' Council)-এর এক সম্মেলনে উদ্বাস্তু শিক্ষার্থীদের আহ্বানে সর্ব-প্রথম এই দিনটিকে “আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস” () হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলো-ও একে স্বীকৃতি দিলে ২০০০ সাল থেকে জাতিসংঘ-এ দিবসটিকে বিশেষ দিবসের তালিকাভূক্ত করে।
বর্তমানে এই দিবসটি চেক প্রজাতন্ত্র, শ্লোভাকিয়া এবং গ্রীসে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
তবে বর্তমান কালে এটি মূলতঃ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ভিন-দেশি শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি ও কর্মতৎপরতার বৈশ্বয়িক পর্যায়ে তুলে ধরার এক-প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়; যা মূলতঃ এর প্রতিষ্ঠাকালীন ভাবাদর্শ হতে কিছুটা ভিন্ন-ধর্মী।





শেষ কথাঃ
বিশ্বের সর্বত্রই দেখা যায় যে, যে-কোনো বিপ্লবাত্মক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা-ই প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে এগিয়ে আসে জাতীয় মুক্তির দূত হয়ে; দেশের ক্রান্তিকালে যুব-সমাজই তুলে নেয় জাতীয় ইতিহাসের জোয়াল নিজেদের কাধেঁ। দেশের ক্রান্তিকালের এগিয়ে আসার অগ্রনায়ক এসব সেনানীরা জাতীয় প্রয়োজনে বিলিয়ে দেয় তাদের নিজেদের জীবনকে; কিন্তু তাদের এই আত্মত্যাগের মহিমাকে হাতিয়ার করে বিভিন্ন দেশে দেশে স্বার্থান্বেষী মহল লুটে নেয় এই অর্জনের সুফলটুকুকে। বিনিময়ে আমরা কি তাদের নূন্যতম চাহিদাগুলো পূরণের কথাকে একবারও রাস্ট্রীয়-যন্ত্রের দ্বারা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে দেখেছি?



>>>...


লেখার সূত্রঃ

Click This Link
Click This Link
http://days.tigweb.org/97
http://www.stud.uni-hannover.de/gruppen/ius/


>>>...

প্রভাষক-এর ব্লগ থেকে...
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×