আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য আমাদের রিজার্ভ আছে মাত্র ৩৯.৭৭ বিলিয়ন ডলার । যেটা দিয়ে আমরা চার মাসের আমদানি খরচ মেটাতে পারবো । রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপীদের জন্য বড় একটি ছাড় দিয়েছে মাত্র ৪.৫% অর্থ জমা দিলেই সে মুক্তি পেয়ে যাবে । পূর্বে যেটার পরিমাণ ছিলো ১০-৩০% । কিন্তু কথা হচ্ছে ঋণখেলাপীদের অধিকাংশ যদি ঋণ পরিশোধ না করে তবে কি ঘটবে!
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল(আইএমএফ) ঋণ দেয়ার ব্যাপারে কয়েকটি শর্তারোপ করেছে, (১) ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে (২) সঞ্চয়পত্রের সুদের হারে লাগাম দিতে হবে (৩) খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ এবং (৪) করের কাঠামোর হার সংস্কার করতে হবে । এই শর্তগুলো পূরণ না করলে হয়তো আইএমএফ ঋণ দিবেনা ।
এই ঋণ নিলে জনসাধারণের উপর চাপ আরও তীব্র হবে । জিনিসপত্রের দাম আরও লাগামহীন হয়ে যাবে । জ্বালানি সংকট আরও বাড়বে । কারণ ভারতের আদানি গ্রুপ এবং বাংলাদেশের সামিট গ্রুপে বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলেও প্রতি মাসেই ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে-হবে সরকারকে । আরেকটি ঘটনা ঘটবে বলে আমার ধারণা, জমিজমার দাম কমে যাবে, যদিও এটা আমার নিজস্ব সম্ভাবনা । ওদিকে ২০২৪ সাল থেকে শুরু হবে ঋণ শোধের কার্যক্রম ।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এই খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণ বেড়ে হয়েছে ৯১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৮৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের হারও বেড়েছে সমানতালে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত ছয় বছরে দেশ থেকে ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা (৪৯৬৫ কোটি ডলার) বিদেশে পাচার হয়েছে। এ হিসাবে গড়ে প্রতিবছর পাচার হচ্ছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুটি প্রক্রিয়ায় এই অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রপ্তানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং)। অর্থ পাচারের এই তথ্য অনেক আগে থেকে জানা গেলেও পাচার বন্ধ করার কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে কি না, জানা নেই। এ কথা বলছি এই কারণে যে এই অর্থ পাচারের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে। (তথ্যসূত্র: আজকের পত্রিকা)
সেক্ষেত্রে এই প্রভাবগুলো পড়বে সরকারি আমলা, দলীয় এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাদের অর্থের দিকে । যাঁরা বিগত বছরগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করেছে এবং ভুঁড়ি ভুঁড়ি অর্থ বাগিয়ে নিয়েছে তাঁদের উপর; এছাড়াও যেসব নতুন ধনবান সৃষ্টি হয়েছে, পুরোনো ধনবানরা আরও ধনবান হয়েছে তাঁদের উপরেও এই চাপ আসবে । ২০১৯ সালের ক্যাসিনো সম্রাটের ঘটনা কারোরই অজানা নয় । তাঁর কাছে এক হাজার কোটি টাকার অর্থ, সম্পদ ছিলো । ভাবা যায়!
কয়েক বছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বেড়েছে তিন গুণ । রাজনীতিবিদদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে কয়েকশো থেকে কয়েক হাজার গুণ ।
বিগত বছরগুলোতে ক্ষমতাসীন দল হালছাড়াভাবে দলের নেতা-কর্মীদের খেতে দিয়েছে । অপরাধের বিভিন্ন চিত্র সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও সেগুলোকে সাংগঠনিকভাবে প্রতিহত করা হয়েছে । দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও পেয়েছেন ছাড় । বিচার বা শাস্তি হিসেবে শুধু দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এই যা ।
একটা রাষ্ট্রের সরকারের মাথা থাকে চারদিকে । শুধু ভবন এবং শীর্ষস্থানীয় নেতাদের খবর রাখেনা, সব ধরনের খবর-ই ফাইল করে রাখে । সুতরাং সুযোগ দিয়ে খেতে দিবে আর হিসাব রাখবেনা সেই রাজনীতি বোধহয় এদেশে খুব কম সংখ্যক রাজনৈতিক দল-ই করে । এই তথ্য সংগ্রহ এবং ম্যানেজমেন্ট ক্ষমতায় যে যত দক্ষ, সে ক্ষমতায় টিকে থাকতে তত পোক্ত ।
সাব্বির আহমেদ সাকিল
০৪ শ্রাবণ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, শরৎকাল | মঙ্গলবার | ১৯ জুলাই ২০২২ ইং | পূর্বধলা, নেত্রকোনা আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য আমাদের রিজার্ভ আছে মাত্র ৩৯.৭৭ বিলিয়ন ডলার । যেটা দিয়ে আমরা চার মাসের আমদানি খরচ মেটাতে পারবো । রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপীদের জন্য বড় একটি ছাড় দিয়েছে মাত্র ৪.৫% অর্থ জমা দিলেই সে মুক্তি পেয়ে যাবে । পূর্বে যেটার পরিমাণ ছিলো ১০-৩০% । কিন্তু কথা হচ্ছে ঋণখেলাপীদের অধিকাংশ যদি ঋণ পরিশোধ না করে তবে কি ঘটবে!
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল(আইএমএফ) ঋণ দেয়ার ব্যাপারে কয়েকটি শর্তারোপ করেছে, (১) ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে (২) সঞ্চয়পত্রের সুদের হারে লাগাম দিতে হবে (৩) খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ এবং (৪) করের কাঠামোর হার সংস্কার করতে হবে । এই শর্তগুলো পূরণ না করলে হয়তো আইএমএফ ঋণ দিবেনা ।
এই ঋণ নিলে জনসাধারণের উপর চাপ আরও তীব্র হবে । জিনিসপত্রের দাম আরও লাগামহীন হয়ে যাবে । জ্বালানি সংকট আরও বাড়বে । কারণ ভারতের আদানি গ্রুপ এবং বাংলাদেশের সামিট গ্রুপে বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলেও প্রতি মাসেই ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে-হবে সরকারকে । আরেকটি ঘটনা ঘটবে বলে আমার ধারণা, জমিজমার দাম কমে যাবে, যদিও এটা আমার নিজস্ব সম্ভাবনা । ওদিকে ২০২৪ সাল থেকে শুরু হবে ঋণ শোধের কার্যক্রম ।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এই খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণ বেড়ে হয়েছে ৯১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৮৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের হারও বেড়েছে সমানতালে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত ছয় বছরে দেশ থেকে ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা (৪৯৬৫ কোটি ডলার) বিদেশে পাচার হয়েছে। এ হিসাবে গড়ে প্রতিবছর পাচার হচ্ছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। জিএফআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুটি প্রক্রিয়ায় এই অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রপ্তানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং)। অর্থ পাচারের এই তথ্য অনেক আগে থেকে জানা গেলেও পাচার বন্ধ করার কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে কি না, জানা নেই। এ কথা বলছি এই কারণে যে এই অর্থ পাচারের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে বলে। (তথ্যসূত্র: আজকের পত্রিকা)
সেক্ষেত্রে এই প্রভাবগুলো পড়বে সরকারি আমলা, দলীয় এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাদের অর্থের দিকে । যাঁরা বিগত বছরগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করেছে এবং ভুঁড়ি ভুঁড়ি অর্থ বাগিয়ে নিয়েছে তাঁদের উপর; এছাড়াও যেসব নতুন ধনবান সৃষ্টি হয়েছে, পুরোনো ধনবানরা আরও ধনবান হয়েছে তাঁদের উপরেও এই চাপ আসবে । ২০১৯ সালের ক্যাসিনো সম্রাটের ঘটনা কারোরই অজানা নয় । তাঁর কাছে এক হাজার কোটি টাকার অর্থ, সম্পদ ছিলো । ভাবা যায়!
কয়েক বছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বেড়েছে তিন গুণ । রাজনীতিবিদদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে কয়েকশো থেকে কয়েক হাজার গুণ ।
বিগত বছরগুলোতে ক্ষমতাসীন দল হালছাড়াভাবে দলের নেতা-কর্মীদের খেতে দিয়েছে । অপরাধের বিভিন্ন চিত্র সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও সেগুলোকে সাংগঠনিকভাবে প্রতিহত করা হয়েছে । দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও পেয়েছেন ছাড় । বিচার বা শাস্তি হিসেবে শুধু দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এই যা ।
একটা রাষ্ট্রের সরকারের মাথা থাকে চারদিকে । শুধু ভবন এবং শীর্ষস্থানীয় নেতাদের খবর রাখেনা, সব ধরনের খবর-ই ফাইল করে রাখে । সুতরাং সুযোগ দিয়ে খেতে দিবে আর হিসাব রাখবেনা সেই রাজনীতি বোধহয় এদেশে খুব কম সংখ্যক রাজনৈতিক দল-ই করে । এই তথ্য সংগ্রহ এবং ম্যানেজমেন্ট ক্ষমতায় যে যত দক্ষ, সে ক্ষমতায় টিকে থাকতে তত পোক্ত ।
সাব্বির আহমেদ সাকিল
০৪ শ্রাবণ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, শরৎকাল | মঙ্গলবার | ১৯ জুলাই ২০২২ ইং | পূর্বধলা, নেত্রকোনা
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:৪৮