
বছর ঘুরে সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছে এসেছে তাঁদের বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা । হিন্দুপাড়াগুলোতে নাড়ু, সন্দেশ আর মিঠাইয়ের গন্ধে মৌ-মৌ করছে । শাঁখ বাজছে, ঢাক বাজছে সেইসাথে ধূপের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে ।
পূজোর এই সময়টাতে স্বভাবতই মানুষের ভিড়ভাট্টা বেড়ে যায় । সেকারণে উৎসবটা প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর হওয়ার পাশাপাশি শঙ্কাও রয়ে যায় । দরকার হয় প্রশাসনিক সহযোগিতার । আর সেকারণেই মন্দিরের পাশে চেয়ার পেতে বসে আছেন হাবিলদার আব্দুল জব্বার । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করে এসে পান চিবুতে চিবুতে পেশাগত ডিউটি পালন করছেন ।
উল্টোপাশে আচার আর বুট বিক্রি করছেন ইমন মিয়া । বাড়ি সোনাতলা । দুই ছেলে, এক মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়েই সংসার । সকাল থেকে শুরু করে রাত সাতটা-আটটা পর্যন্ত বিক্রি করে বাড়িতে চলে যান । যেহেতু পূজোর মৌসুম, সেহেতু সারারাতই লোকজন থাকে তাই রাত বারোটা-একটা পর্যন্ত বিক্রি করছেন এখন ।
থাকার জায়গা হিসেবে বগুড়ার আরেক খেলনা বিক্রেতার বাড়িতে এই ক’দিন থাকবেন । পূজো শেষে হাতে কিছু ধরিয়ে দিয়ে যাবেন ।

আগে রাত আটটা পর্যন্ত অটোরিক্সা চালালেও এখন রাত দুটো-তিনটে পর্যন্ত রিক্সা চালাচ্ছেন শোয়াইব ইসলাম । এক মণ্ডপ থেকে আরেক মণ্ডপে খেপ মারছেন । শিশু, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবাইকেই তুলছেন তাঁর উড়োজাহাজে । উড়োজাহাজ বলাতে একটু খটকা লাগলো, কারণ জানতে চাইলে বললেন, “মামা, এখন আপনের জোরে চলান লাগে বোচ্চেন, দুডে ট্যাকা ইনকাম করবের ই তো বাড়াছি । যত তাড়াতাড়ি খেপ মারবের পারবো তত ইনকাম আর আতোত হিন্দু লোকজন ছাড়া সিংক্যা লোক বা গাড়িঘোড়াও থাকেনা । এখন আপনের ডাকে ডাকে রিক্সাত লোক তোলা লাগেনা । আল্লাহ দিলে ভালো কামাই হচ্চে মামা এখন ।”
শোয়াইবের চোখেমুখে উৎফুল্লের হাসি । দেড় মাস আগে একটা মেয়ে হয়েছে তাঁর স্ত্রীর । তাই তাঁর আনন্দের যেমন সীমা নেই তেমনি কাজ করতেও ক্লান্তি নেই । তবুও একবার বললো, “যখন মামা ঘরোত যায়ে বিটির মুখডা দেখি তখন কি ব্যন হামোও কোমা বাচ্চা ছোলের লাকান হয়ে যাই । হামার আর কুনু দুক্কু থাকেনা যকোন ছোলের মোক দেকি ।”
পত্রিকায় ভালো ফিচারিংয়ের জন্য মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ফটোসাংবাদিক সোয়েল রানা । কোন লোকশনে বা কোন সাবজেক্টকে কেন্দ্র করে ছবি তুললে ছবিটা দেশব্যাপী সমাদৃত হবে, মানুষের মনে ঠাঁই পাবে । তাই স্থান বদল করতে হচ্ছে বারবার । হঠাৎ কোনো সাবজেক্ট পেয়ে গেলে ক্লিক করার পর দেখা গেলো পাশ থেকে কেউ ফ্রেমে ঢুকে পড়েছে । দীর্ঘ প্রচেষ্টা চলছে একটা ছবির জন্য । যেই ছবিতে আলাদা কিছু থাকবে ।

এভাবেই যুগ যুগ ধরে সম্প্রদায় আর সম্প্রীতির মাধ্যমেই আজকের এই মানবসমাজ । পৃথিবীতে এত এত মানুষ । ঈদের মৌসুমে হিন্দু সহকর্মীদের উপর একটু চাপ পড়ে বা বাড়তি কাজ বা ডিউটি করতে হয় তেমনি পূজোর মৌসুমেও মুসলিম সহকর্মীদের বাড়তি ডিউটি করতে হয় । উৎসব কেটে গেলে সহকর্মীর সেই কাজগুলো সম্পন্ন করে একই অফিস বা প্রতিষ্ঠানে পুরো বছর কাজ চলে ।
পেশাগত ডিউটি পালনে হাবিলদার জব্বার যেমন তাঁর দায়িত্বকে ঠিকভাবে পালন করছে ঠিক তেমনি সবাই তাঁর নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠ এবং সহানুভূতিশীল । আর তাইতো কবি বলে গিয়েছেন,
“সকলের তরে সকলে মোরা
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে ।”
সাব্বির আহমেদ সাকিল
২০ আশ্বিন ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, শরৎকাল | বুধবার | ০৫ অক্টোবর ২০২২ ইং | বগুড়া
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ২:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




