somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়া আর ভালোবাসায় ভরা আমার নানী এখন দূর আকাশের নক্ষত্র হয়ে গিয়েছেন

২৮ শে জুন, ২০২৪ রাত ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোট্ট একটা পাতিলে নানী কোরবানির পশুর গোশত রাঁধতেন । গোশত সেদ্ধ হতে হতে নরম হয়ে যেত । যেদিন নানাবাড়ি যেতাম, নানী পাতিল থেকে গোশত বেড়ে দিতো । নানীর সেই রান্না করা গোশতের স্বাদ আমি কখনোই ভুলবোনা ।

মানুষটা চলে যাওয়া এক মাস হতে চললো । নানী কোরবানির গোশত খেতে পারলেন না, আমাদেরও খাওয়াতে পারলেন না । ঈদে যখন নানী আমাদের দাওয়াত দিতেন তখন মা আমাকে বলতেন মাদলা থেকে একটা দই নিয়ে এসো ।

আমরা কেউ তেমন মিষ্টি পছন্দ করতাম না । সবাই দই পছন্দ করতাম । নানী জোর করে আমার প্লেটে বেশী পরিমাণ দই দিতো । কারণ আমি দই পছন্দ করি বলে । গরুর গোশতের সাথে থাকতো খেসারির ডাল আর চিকন করে আলু কেটে দিয়ে চচ্চড়ি ।

ঈদের দিন দাদার কবর জিয়ারত করে নানীকে আমাদের বাড়িতে আসতে বলতাম । নানী ভালোমতো হাঁটতে পারতেন না বলে ঈদের দিনও আসতে পারতেন না । অসুস্থতার এই সময়গুলো তিনি কি যে ভীষণ একাকীত্বে ভুগেছেন ।

কিছুদিন না গেলে বললেন, তুই আর আসিসনে কোমা শাকিলালী । মা নানীবাড়িতে গেলেও আমার কথা জিজ্ঞেস করতেন, উঁই কোমা আর আসেনা । কেন যে তিনি আমাকে এক নজর দেখার জন্য এত আক্ষেপ করতেন ।

মানুষটার ঘরে গেলেই কি যে শান্তি পেতাম । আমার কাছে নানা-নানীর ওই ঘরটা জান্নাতের মতো । ওই ঘরটাতে কি যে এক অদ্ভুত গন্ধ লেগে থাকতো । মনে হতো যেন আমার শৈশবের কালো টিপের গন্ধ, পাউডারের গন্ধ ।

একেবারে একা করে দিয়ে বড্ড অসময়ে আল্লাহ তাঁকে আমাদের কাছে থেকে কেড়ে নিলেন । কত স্বপ্ন ছিল চাকরি পেয়ে আয়-রোজকার করে মানুষটার খায়েশ মেটাবো । যা খেতে চায় তাই খাওয়াবো । ভেবেছিলাম সামনের ঈদ থেকে তাঁকে একটা করে শাড়ি কিনে দেবো ।

বুকের মধ্যে বড্ড হাহাকার করে ওঠে মানুষটার জন্য । আমাকে কি পরিমাণ যে ভালোবাসতো । আহারে । মানুষটা নেই এ কথা ভাবতে গেলেই অশ্রুসিক্ত হয়ে যাই । কেন যে মানুষটাকে এত ভালোবাসতাম আমি । অথচ সেই ভালোবাসার প্রতিদান তেমন কিছুই দিতে পারলাম না আমি ।

হয়তো জান্নাতে আবার দেখা হবে । জান্নাতে নানা-নানীর ওই মাটির ঘরই থাকবে । আমি ওই ঘরে ঘুমিয়ে থাকবো কোটি কোটি বছর ধরে ।

সাব্বির আহমেদ সাকিল
১৪ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বর্ষাকাল | শুক্রবার | ২৮ জুন ২০২৪ ইং | ফেনী সদর
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০২৪ রাত ৩:৩০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×