somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারানো পথিক

১৭ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বাসাটা ছোট একতলা টিনসেড বিল্ডিং।রাস্তার পাশেই।বাসায় এক ভাই ভাবী আর মা আছেন।মা আমার অসুস্থ থাকেন,বিছানাবন্দী।মায়ের সব কাজ কর্ম আমাদেরকেই করে দিতে হয়।সারাক্ষণ উনি মেজাজ খারাপ করে থাকেন।পান থেকে চুন খসলেই মেজাজ খারাপ।অসুস্থ আর বৃদ্ধ বয়সের মানুষগুলা কেন জানি এমনি হয়।শরীরের সাথে মনের যোগসূত্র খুব বেশি।পচন শরীরে বাসা বাঁধে বলেই হয়তো মনেও তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
আমাদের বাসাটা রাস্তার পাশে তাই রাস্তার সাথে চলাফেরা একটু বেশিই হয়।হঠাৎ করে একদিন দেখি একটা আপু এই পথ ধরে একা একা আপন মনে হেঁটে যাচ্ছেন।আমি জানালায় মুখ এগিয়ে দিয়ে আপুটাকে দেখলাম।তারপর অনেকক্ষণ অপেক্ষায় থাকলাম কখন উনি আবার ফিরে আসবেন এই পথ ধরে।অপেক্ষার অবসান হলো।আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকলাম।উনাকে দেখে ঈষৎ হাসলাম।আপু নিজেই আমাকে হেসে জিজ্ঞাসা করলেন,"কেমন আছো?"
কি আশ্চর্য!!আমি অবাক হলাম।মনে হলো আমি উনার কতো পরিচিত!
আমিও স্বাভাবিক ভাবেই পরিচিত ভংগিতে বললাম,"ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?"।
এভাবেই অনেকক্ষণ কথা হলো।এর মধ্যে আপু আমাদের ঘরের দরজার সামনে চলে আসল।মাকে দেখল বিছানায় শোয়া।আমি মায়ের অসুস্থতার কথা বললাম।
আমি আপুকে কত করে বললাম ঘরের ভিতরে এসে বসতে।উনি আসেননি।শুধু বললেন আরেকদিন আসব।তারপর সে পথেই বেঁকে গেল যে পথে এসেছিল।
সত্যি কথা বলতে আমার মনটাই স্ফীত হয়ে গেল আপুর সাথে কথা বলে।না না আমি কথা বলি নি।উনি আমার সাথে স্বেচ্ছায় আন্তরিকভাবে কথা বলেছেন।আমরা গরিব অশিক্ষিত বলে সাধারনত আমাদের সাথে ভদ্র সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ কথা বলতে চায় না।বললেও ধমকের স্বরে বলে।তারা সবাইকেই নিজের বাসার চাকর বাকর মনে করে।আমরা কিছু বলতে পারি না।কিই বা বলব!আমরা গরিব,গুর্বা,মূর্খ।অন্যের ধমক হুকুম শোনার জন্যই হয়ত জন্মেছি।
আমার সারাটাদিন খুব ভালো কাটল।নিজের ভিতরের হীনতা নীচতা কিছুটা হলেও দূরীভূত হলো।নিজের প্রতি যেই হীনতা গুলো আমাকে কুড়ে কুড়ে খায় প্রতিমুহূর্তে।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম না না আর নিজেকে হীন ভাবব না।আমি আমার জায়গা থেকে হীন নয়।
তারপর থেকে আমি অপেক্ষায় থাকলাম আপুটা কখন আসবেন এই পথে আর আমার সাথে এভাবে কথা বলবেন।

আরেকদিন এভাবে দেখা হয়ে গেল।আমি উচ্ছসিত হয়ে বললাম,"আপনাকে দেখেই চিনে ফেলেছি"।
কিভাবে চিনলে?
এভাবে একা একা হেঁটে আসছেন তাই।
আপু হাসল।
কেমন আছো?
এই ত ভালো।
বাসায় সবাই ভালো?
হুম ভালো।আপনাদের বাসার সবাই ভালো?
হুম ভালো।
আপু আপনার বাড়ী না কোথায়?
কুমিল্লা।
ও।
আচ্ছা তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?
ক্লাস নাইনে।
কোন ক্লাসে?!
নাইনে।

এইবার আমার মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল।আপু দুইবার জিজ্ঞাসা করেছে আমি কোন ক্লাসে পড়ি।তার কারণ আমাকে দেখে মনে হয়না নাইনে পড়ি।একটু বড় হয়ে আমি স্কুলে ভর্তি হয়েছি।তার উপর আবার ড্রপ ছিল।সবকিছু মিলে নাইনে পড়ার তুলনায় আমি যথেষ্টই পাকনা আর বড়।তাই একটু বেশিই অবাক হয়েছেন।তবে কিছু জিজ্ঞাসা করেননি।এইদিক থেকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচলাম।
পহেলা বৈশাখ নিয়ে কি যেন বলতেছিলাম।এমন সময় আপু বলে উঠল তোমাদের বাসায় আসব বৈশাখে।আমি অস্পষ্ট কি যেন শুনলাম।আচমকা মনে হলো আপু কি সত্যিই আসবে নাকি আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছে।
আমি বললাম ঠিক আছে আপু আইসেন।আপনারে নিয়া আর আমার আপুকে নিয়া এদিকে ঘুরব।
আপুটা সত্যিই আসবে কি আসবে না কোন নিশ্চয়তা দিল না।বলল নিশ্চিত না।
আমি যদি পারতাম উনার মনের ভিতরে ঢুকে সত্যিটা বের করে আনতাম।কি রহস্যময় মানুষ!
আমরা মুখের কথা শুধু শুনি।অনিশ্চিত থাকি মুখের কথায়।মনের কথাগুলো পড়তে পারলে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারতাম।বাইরে থেকে কারো মনের ভিতর বলে যাওয়া কথা শুনিও না, বুঝিও না ,আন্দাজ করতে পারি শুধু।কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি না।ঔই কথাগুলো ব্যক্তির নিজের।সবই রহস্য।শুধুই রহস্য।

আমি অনিশ্চয়তার পথ চেয়ে থাকলাম দীর্ঘ এক সপ্তাহ।আমি বৈশাখের দিন সকাল থেকেই অপেক্ষায় আছি।দশটার দিকেই সেজেগুজে সবকিছু গুছিয়ে বসে আছি।আর সারাক্ষণ অনিশ্চয়তার দুলুনি খাচ্ছি।আমি বিশ্বাসও করতে পারছি না আপু কেন আসবে আমাদের মত গরিব ঘরে।একটা সময় সমস্ত অপেক্ষার জলাঞ্জলী দিলাম।দুর্গা পূজার দশমী দিনের দূর্গা মায়ের মূর্তির মত করে সমস্ত আশা আকাংখাকে বিসর্জন দিলাম।
এত জলাঞ্জলী এত বিসর্জন তারপরও কেন জানি মনের এক কোণে অপেক্ষা নামক ব্যাপারটা থেকেই যাচ্ছে।কোনভাবেই সরাতে পারছি না।

দুটো বাজে পঁয়তাল্লিশ মিনিটে হঠাৎ দরজায় কড়া পড়ল।আমি দৌড়ে গেলাম।দেখি আমার মামাত বোন এসেছে।বিরাট একটা ধাক্কা খেলাম।কি করে বুঝাই!

তিনটার দিকে আবার দরজায় কড়া পড়ল।এবার আমি আর দরজা খুলব না।বার বার কষ্ট পেতে পারব না।ভাবীকে পাঠালাম দরজা খুলতে।ভাবী এসে বলল কে যেন এসেছে তোমার খুজে।আমি কি যে শুনলাম! বেশি আকাংখিত কথা মাথার উপর দিয়ে যায়।ব্রেনে ঢুকে না।
আমি ধীরস্থীরে গেলাম।দেখলাম আপু খাটে বসে আছে।কিছুটা রাগ হলো আমার।অভিমান হতে পারে রাগ নয়।
উনি সহজস্বাভাবিক ভংগিতে বললেন ,"কেমন আছো?আমার আসলে ক্যাম্পাসেই(কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়) দেরী হয়ে গিয়েছে।তুমি নিশ্চয় অপেক্ষায় ছিলে?"
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।
হঠাৎ আমি বললাম আপনার নামটা জানা হলো না।
বলল,উর্মি।
আরে তোমার সাথে এত সখ্যতা হলো।অথচ নাম জানা হলো না।তোমার নামটাও ত বলোনি।
আমার নাম মায়া।মায়াময়ী।
কি সুন্দর নাম তোমার! জানো আমার নামটা আমার পছন্দ না।মা কে প্রায়ই বলি এটা কি নাম রেখেছো।একদম মন থেকেই নামটা আমার পছন্দ হয়না।তারপরও এটাকেই আঁকড়ে পড়ে আছি।

আপুকে একটুও বুঝতে দিলাম না এতশত অপেক্ষায় ছিলাম উনার জন্য।আমি আপুকে এত আপন ভাবি উনি কি আমাকে এতটা আপন ভাবে?আমি যাকে আপন ভাবব যার পথ চেয়ে থাকব সে আমাকে আপন ভাববে না।এটাই হয়তো স্বাভাবিক।আর তাছাড়া আমার মত গরিব মানুষকে কেনই বা আপন ভাববে?বড়জোড় করুণা করতে পারে।মানুষ হিসেবে মানবতা দেখাতে পারে।তার বেশিকিছু আশা করা আমার ঠিক হবে না।আমি আবারও নিজের কাছে হীন হয়ে গেলাম।উফ আর পারি না।

আমার সামনেই আপু বসা।আর আমি মাথার ভিতর এত চিন্তা করে যাচ্ছি যা আপুর কোনভাবেই জানার কথা নয়।

এভাবেই কিছুক্ষণ গল্প করে আপু চলে গেলেন।
এই যাওয়া যে শেষ যাওয়া হবে কে জানত!
এরপর থেকে প্রতিসময় লক্ষ রাখতাম যদি আপুটা আপন মনে একা একা এই পথে হাঁটতে আসে!
আর দেখিনি উনাকে।হয়তো আসে কোন অসময়ে যা আমার চোখে পড়ে না।কিছু কিছু মানুষ এভাবেই হঠাৎ এসে কোমল মনে স্পর্শ করে হারিয়ে যায়।তারা হারিয়ে যায় কোন অজানা স্রোতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:১৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×