somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবা ব্যতিত আদৌও কি সন্তান জন্মদান সম্ভব?

০২ রা অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৫:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"মা হওয়ার জন্য বাবা জরুরী নয়, আরো নির্দিষ্ট করে বললে সন্তান জন্মদানের জন্য পুরুষের প্রয়োজন নেই।" যারা এই কথা বলে বা এমনটা ভাবে তাদের সে ভাবনা কতটা যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক সেটাই একটু খতিয়ে দেখা যাক।

পুরুষ এবং নারী উভয়েই একদম প্রাথমিক অবস্থায় শুক্রাণু রূপে পুরুষের মধ্যে বা পুরুষের বীর্যে উৎপত্তি লাভ করে। অর্থাৎ মানুষের প্রাথমিক অবস্থার নাম শুক্রাণু। পুরুষের প্রতি মিলিলিটার বীর্যে গড়ে দেড় কোটির মতো শুক্রাণু থাকে, এবং প্রতিবার বীর্যপাতে গড়ে ৩.৪ থেকে ৪.৯৯ মিলিলিটার বীর্য নির্গত হয়। তারমানে একজন পুরুষ প্রতিবার বীর্যপাতে ৫.১ থেকে ৭.৪৮৫ কোটি শুক্রাণু নির্গত করে। অর্থাৎ প্রতিবার বীর্যপাতে পুরুষের দেহ হতে যে পরিমান শুক্রাণু নির্গত হয় তার সব যদি টিকে যেত তবে একবার বীর্যেপাতে ৫ থেকে ৭ কোটির বেশি মানুষ জন্মগ্রহণ করতো, যা পৃথিবীর অনেক দেশের মোট জনসংখ্যারও অনেক বেশি।

কিন্তু কথা হচ্ছে এই শুক্রাণু মানুষ হওয়ার পরবর্তী ধাপে ততক্ষণ পর্যন্ত যেতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন ডিম্বাণুতে নিষিক্ত হয়। আবার এই ডিম্বাণুর অবস্থান নারী দেহে, সুতরাং শুক্রাণুকে পরবর্তী ধাপে ডেভেলপমেন্টর জন্য নারী দেহে প্রবেশ করতে হবে। ডিম্বাণুতে নিষিক্ত হওযার পর শুক্রাণু রুপান্তরিত হয়ে ভ্রুণ হয়। পুরুষ কোটি কোটি শুক্রাণু ছাড়লেও নারী দেহ কোটি কোটি ডিম্বাণু ছাড়ে না, সে সাধারণত একই সময়ে মাত্র একটি ডিম্বাণুই ছাড়ে। ফলে পুরুষ দেহ থেকে কোটি কোটি শুক্রাণু নারী দেহে প্রবেশ করলেও নারীদেহ যেহেতু একটি ডিম্বাণু দেয়, তাই কেবল মাত্র একটি শুক্রাণুই ডিম্বাণুতে নিষিক্ত হতে পারে। আপনি আমি আমাদের পিতার দেহ হতে নির্গত কোটি কোটি শুক্রাণুর মধ্য একমাত্র শুক্রাণু যে মায়ের দেহে থেকে বের হওয়া ডিম্বাণুতে নিষিক্ত হতে পেরেছি।

জমজ বাচ্চা ক্ষেত্রে যেটা হয় সেটা হচ্ছে, কখনো কখনো একই সময়ে নারী দেহ হতে একাধিক ডিম্বাণু চলে আসে, আর পুরুষ দেহ যেহেতু কোটি কোটি শুক্রাণু নির্গত করে, তাই একাধিক ডিম্বাণু এলেও কোন না কোন শুক্রাণু তার মধ্যে নিষিক্ত হয়ে যায়। আমি একবার একই সাথে এক নারীর চার সন্তান প্রসবের খবর পেয়েছি। অর্থাৎ তার ক্ষেত্রে একই সময়ে চারটি ডিম্বাণু চলে এসেছিল। তবে এসব ব্যতিক্রম, ব্যতিক্রম কখনো সাধারণ নয়।

এবার আসা যাক কৃত্রিমভাবে বাচ্চা জন্মদানের বিষয়ে। সহজভাবে বললে, স্বামী স্ত্রী পরস্পর আনন্দানুভূতির মাধ্যমে যে কাজটি করে, সেই একই কাজ ল্যাবে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে অর্থ খরচ করে করা হয়। অর্থাৎ পুরুষের কাছ থেকে শুক্রাণু এবং নারীর কাছ থেকে ডিম্বাণু নিয়ে ল্যাবে যান্ত্রিকভাবে ডিম্বাণুর মধ্যে শুক্রাণু নিষিক্ত করা হয়, তারপর ঐ অবস্থায় তা আবার নারী দেহে, অর্থাৎ নারীর জরায়ুতে স্থাপন করা হয়।
পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোতে অনেক নারী নিজেদের ক্যরিয়ারকে প্রধান্য দিয়ে নিজ সন্তান নিজের গর্ভে ধারন না করিয়ে গর্ভ ভাড়া নেয়ার মাধ্যমে অন্যের গর্ভে ধারন করায়। এক্ষেত্রে উক্ত নারীরা স্বামীর নিকট হতে শুক্রাণু নিয়ে এবং নিজের ডিম্বাণু প্রদান করে ল্যাবে উক্ত ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু নিষিক্ত করিয়ে অন্য কোন নারীর জরায়ুতে স্থাপন করে দেয়। নিজ গর্ভে ধারন করলেও ডিম্বাণু অন্য নারীর হওয়ায় উক্ত নারী ঐ সন্তানের মা হয় না। গর্ভ ভাড়া দেওয়া এমন নারীদের সাগরেট মা বলা হয়।

যেভাবেই বাচ্চা উৎপাদন করা হোক, পুরুষ এবং নারী উভয়কেই লাগবে। যেকোনো সোর্স থেকে দুই:এক:চার অনুপাতে হাইড্রোজেন, সালফার এবং অক্সিজেন পরমাণু মিশিয়ে যেমন সালফিউরিক এসিড তৈরি করা যায়, একই ভাবে পুরুষ ছাড়া যদি অন্যকোনো সোর্স হতে উপাদান নিয়ে কৃত্রিমভাবে শুক্রাণু তৈরি করে তা নারী ডিম্বাণুতে বসিয়ে সন্তান জন্ম দেয়া যেত তবেই বলা যেত মা হওয়ার জন্য বাবা অর্থাৎ পুরুষ জরুরী নয়।

যদিও বিজ্ঞানীরা ল্যাবে ইঁদুরের শুক্রাণু তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, তবে উপাদান ইঁদুরের দেহ থেকেই নেয়া হয়েছে, বাহিরে থেকে নয়। অর্থাৎ যেই ইঁদুরের দেহ থেকে উপাদান নেয়া হয়েছে সেই ইঁদুরই হবে উৎপাদিত শুক্রাণু এবং ইঁদুরের বাবা।
একই ভাবে নারীদেহ ছাড়া ডিম্বাণুও কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা যায় না।

সুতরাং যে বা যারা বলে, মা হওয়ার জন্য বাবার প্রয়োজন নেই, কিংবা কেউ যদি এও বলে, বাবা হওয়ার জন্য মায়ের প্রয়োজন নেই, তবে সেটা তাদের অজ্ঞতা।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৫:২০
২৮টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×