কেবল ডিগ্রি অর্জন করলেই শানিত মানুষ হওয়া যায় না। একজন শানিত মানুষ হতে হলে জীবনদর্শন, গভীর উপলব্ধি, উন্মুক্ত হৃদয়, এবং প্রাকৃতিক জ্ঞান থাকা অবশ্যক। এসবের অনুপস্থিতিতে যত ডিগ্রিই অর্জন করা হোক, অন্যসব প্রাণীর সাথে মানুষের দৈহিক পার্থক্য ছাড়া আর কোন পার্থক্য থাকে না। এক্ষেত্রে জেনে রাখা দরকার, আমাদের দৃশ্যমান শরীর একটি প্রানীদেহ মাত্র, মানুষ হচ্ছে সেই উপাদান যা চিন্তা করায়, মানুষ হচ্ছে মনস্তত্ত্ব।
সম্পদের হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটতে পারে, কিন্তু বড়লোক কখনোই ছোটলোক হয় না, আবার ছোটলোক কখনো বড়লোক হতে পারে না।
প্রাকৃতিকভাবেই পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতের লোক রয়েছে, কেউ গভীর জ্ঞানের অধিকারী, কেউ বেশ বুদ্ধিমান, কেউ বোকা, কেউ শক্তিশালী, কেউ কৃপণ, কেউ বদমেজাজি বা উগ্র। এক্ষেত্রে সনাতন ধর্মে যে জাত বিভাজন করা হয়েছে সেটা একেবারে অযৌক্তিক মনে হয় না, এবং এই জাত অনুযায়ী কর্ম বুঝিয়ে দিলে সামাজিক কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। যেমন জ্ঞানীরা সমাজ পরিচালনার পরামর্শ দেবে। বুদ্ধিমান এবং শক্তিশালীরা নেতৃত্ব দেবে। কৃপন, উগ্র, এবং বদমেজাজিরা অন্যসব মানুষের সেবা করবে।
কিন্তু এসব শূদ্রেরা যখন ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয়দের স্থান দখল করে, অর্থাৎ বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, বিচারক এবং আমলার মতো পদ দখল করে তখন সমাজে মারাত্মক ভাবে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। মনে রাখা দরকার সমাজে সকল পেশারই উপযোগিতা রয়েছে। বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীদের যেমন প্রয়োজন; মুচি, মেথর, ঝাড়ুদারেরও তেমন প্রয়োজন। যে যেই কাজের জন্য যোগ্য তার দ্বারা সেই কাজ করাতে হবে। তবে প্রত্যেকের মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। যার জন্ম হয়েছে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হওয়ার জন্য, তাকে ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ দিয়ে এবং উক্ত ডিগ্রির সনদ দেখে বিচারকের আসনে বসালে সমস্যা তো হবেই। জেলা প্রশাসক বানালে 'স্যার' ডাক শোনার জন্য হুংকার তো দেবেই। বগুড়ায় জজ এবং রংপুরের জেলা প্রশাসক একেকটি মডেল মাত্র, দেশের বিভিন্ন সেক্টরে এমন নিচু জাতের অনেকেই বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০২৩ ভোর ৫:১৪