এই নিয়োগের অন্তত ২ সপ্তাহ আগে কথা হচ্ছিলো হাই কোর্টের একজন আইনজীবীর সাথে। পরে আমি অন্য আইনজীবীদের সাথে কথা বলে জেনেছি যে তিনি সঠিক বলেছেন। কথাগুলো জানা খুবই জরুরী। বাংলাদেশে আওয়ামী মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুষ্ঠু বিচার করা একপ্রকার অসম্ভব। দেশে হাজার হাজার উকিল আছে কিন্তু ১০ জন ট্রায়াল লইয়ার নাই - যারা এভিডেন্সের ভিত্তিতে একটা প্রপার মামলা সাজাতে পারেন এবং আদালতে লাইভ জেরা করতে পারেন। তার চেয়েও বড় সমস্যা হোলো হাইকোর্টের বিচারপতিরা। অধিকাংশ বিচারপতি তাপসের নিয়োগ দেয়া। সত্য মিথ্যা বলতে পারবো না - অনেক প্র্যাকটিসিং লইয়ারদের মধ্যে এই ধারণা আছে যে পুরা হাইকোর্টটাই হোলো তাপসপট্টি। আপনাদের হয়তো খেয়াল আছে দেশ যখন জ্বলছিলো - ১৮ কিংবা ১৯ শে জুলাই তাপস একটা মচ্ছব অর্গানাইজ করেছিলো সোনারগাঁ বা শেরাটনে। ঐ মচ্ছবে হাই কোর্টের জাজরাও ছিলো। বাংলাদেশে প্রায় সব হাইকোর্ট জাজকে সরিয়ে যদি একটা হাইকোর্টের জাজ বাছাই করার সিস্টেম ইন্সটল না করা যায় - এই বিপ্লবের স্পিরিট ইভেনচুয়ালি মারা খাবে।
যাকগে, ট্রায়াল লইয়ার বনাম অনেক আইন জানে - এই দুইটার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। সেন্সেবল যেকোনো আইনজীবীকে জিজ্ঞেশ করে দেখতে পারেন - তাদের আসল ভয় এইসব হাজার হাজার মামলা পরিচালনা করার মতো যথেষ্ট সংখ্যক অভিজ্ঞ আইনজীবী দেশে নাই। জাস্টিস সিনহার বইটা পড়ে দেখতে পারেন। একজন জাজ যে হাজার হাজার পৃষ্ঠা রায় লিখেছে ইংরেজিতে - সে ইংরেজিতে সিম্পল একটা সেন্টেন্স লিখতে পারে না। সে একটা রচনার ফ্লো কীভাবে হয় - কীভাবে পরম্পরা হয় - এইসব সামান্য জিনিসই বোঝে না। এই অবস্থা যদি হয় প্রধান বিচারপতির - উকিলদের কী অবস্থা - আমি কল্পনা করতে পারি। যেই দেশে ১০ জন কম্পিটেন্ট ট্রায়াল লইয়ার নাই বলে প্রফেশনালরা অনুমান করেন - সেখানে তাজুল ইসলাম জামাত করেন না বিএনপি করেন - এর চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হোলো উনি কি ভালো ট্রায়াল লইয়ার কি না?
আমি ডেভিড বার্গম্যানের সাথে সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করি। জাস্ট বিকজ তাজুল ইসলাম জামায়াত করেন তাই পরিত্যাজ্য - এই কথা শুনলে গত আমলের ১টা এপয়েনমেন্টও সঠিক ছিলো না। আমি অবশ্য ওনার কাছ থেকে এই ধরনের সমালোচনা শুনি নাই। তাজুল ইসলাম কেমন ট্রায়াল লইয়ার এটা বলার মতো যোগ্যতা আমার নাই। কিন্তু আমি প্র্যাকটিসিং আইনজীবীদের কাছ থেকে শুনেছি - যেই লিমিটেড অপশান আপনার কাছে আছে - তার মধ্যে ৭০ এর নীচে যাদের বয়স - এই ছোট্ট গ্রূপে তাজুল ইসলাম আছেন। বাংলাদেশে প্রায় সব আইনজীবীই পার্টিজ্যান, পুরা দেশটাই বিভক্ত। এই যে যেকোনো এপয়েনমেন্ট হলেই তার বাপদাদা চোদ্দগুষ্টি বিএনপি না আওয়ামী লীগ করতো - এই অভ্যাস থেকে আমাদের বের হতে হবে। ডেভিড বার্গম্যানের স্বশুর একজন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী। সঙ্গত কারণেই কামাল হোসেন সাহেবের যোগ্যতা দেখা হয় এই দেশে। কোন পার্টি করতেন সেটা দেখা হয় না।
আমি আসলেই বিশ্বাস করি কোথাও না কোথাও এই দেশে ১টি সৎ, সভ্য ও কম্পিটেন্ট আওয়ামী আছে। এখনো আমি ৭ আঙ্গুলওলা মানুষ দেখি নাই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এমন মানুষ আছে। আমার ক্ষমতা থাকলে আমি ১টি সৎ, সভ্য ও কম্পিটেন্ট আওয়ামীকে অবশ্যই নিয়োগ দিতাম। এই একই স্ট্যান্ডার্ড সবার ক্ষেত্রেই আরোপ করা উচিত। সরকারের দেখা উচিত চীফ প্রসিকিউটরের কাজটা তিনি কেমন করবেন? তিনি চোর কি না - অনেস্ট কি না - এইসব। বিএনপি-আওয়ামী লীগ-জামাত কাজিয়ায় গেলে আপনি এই দেশে একটাও নিয়োগ দিতে পারবেন না।
লেখাঃ ফাহাম আব্দুস সালাম