somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশে ফিরেছেন ভালো, জনবিক্ষোভের কারণ হবেন না

১৭ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ২০ ফেব্রুয়ারি চীন ফেরত ৪৫ ইউক্রেনীয় ও ২৭ বিদেশিকে নিয়ে একটি বিমান চীন থেকে ইউক্রেনে পৌঁছায়। পরে তাদের ছয়টি বাসে করে রাজধানী কিয়েভের দক্ষিণে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পথে বিক্ষুব্ধ নাগরিকরা চীন ফেরতদের ওপর হামলা করে। তাদের বহন করা গাড়ি ভাংচুর করে। তারা রাস্তা অবরুদ্ধ করে বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। কয়েকজন আহত হয়। পরে বাধ্য হয়ে চীন ফেরত ব্যক্তিদের সাথে কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার ঘোষণা দেন ইউক্রেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জোরিয়ানা স্কলেটস্কা।


দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ অনেক মানবিক। অথচ এরাও উহান থেকে নিজেদের নাগরিকদের স্বাগত জানায় নি। জিনসং ও আসান এলাকায় চীন ফেরতদের রাখা হবে- এখবরে গত ২৯ জানুয়ারি কয়েকশ লোক বিক্ষোভ করেন। তারা রাস্তার উপরে ট্রাক্টর রেখে পুরো এলাকা অবরুদ্ধ করে।


৩ ফেব্রুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকদের চীন থেকে ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়। এর খবরে আগের দিনই শতশত লোক নতুনা এয়ারপোর্টে গিয়ে বিক্ষোভ করে।

জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরের কাছে আটক করা হয় বৃটিশ প্রমোদ জাহাজ ডায়মন্ড প্রিন্সেস। জাপানের মতো এমন একটি মানবিক দেশের লোকজনও শিপ থেকে লোকজন যাতে নামতে না পারে সেজন্য প্রতিবাদ করে। ফলে ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও চিকিৎসার জন্যও নামার সুযোগ পায়নি কোনও যাত্রী। যাত্রীরা রুমের সামনে দাড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেও মন গলেনি জাপানের। এতে বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়। জাহাজেই তাদের কোয়ারিন্টিন করা হয়।

আরেকটি বৃটিশ জাহাজ ক্যারিবীয় সাগরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। কোন ক্যারিবিয়ান দেশই জাহাজটিকে ভিড়তে দেয়নি। পরে কিউবা রাজনৈতিক কারণে জাহাজটিকে ভিড়তে দেয়।

আরেকটি প্রমোদতরী দ্য ওয়েস্টারডাম ক্রুজ সমূদ্রে ঘুরে তেল শেষ করে ফেলে। পাঁচটি দেশে আশ্রয় চেয়ে বিফল হয়। অথচ এর নাগরিকরা ছিল আমেরিকার। পরে কম্বোডিয়ার সরকার রাজনৈতিক কারণে জাহাজটিকে ভিড়তে দেয়।

এটাই বিশ্ব পরিস্থিতি। ইটালির কয়েকজন ইথোপিয়ার ঘুরতে গিয়েছিলেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও তারা সেখানে থেকে গেছেন। বলেছেন, প্রয়োজনে জেল খাটবেন তবুও এখন দেশে ফিরবেন না।

২.০
আমাদের দেশের মানুষ অনেক মানবিক। রোহিঙ্গাদের মতো শিক্ষা-দীক্ষাহীন অপরাধপ্রবণ একটি জাতির লোকজনকেও তারা আশ্রয় দেয়ার জন্য জনমত গড়ে তুলেছিলো। সেখানে নিজেদের মানুষ তো ভিন্ন কথা। সাদরেই তাদেরকে গ্রহণ করছে। তবে বিদেশ ফেরত লোকজনের কাছে দেশবাসির একটাই চাওয়া। সবাই যেন সঠিকভাবে কোয়ারেন্টিন করে। অথচ কেউ কোয়ারিন্টিনে থাকতে রাজি নয়।

ইতোমধ্যে বিদেশ ফেরতদের পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছে। বিদেশে থাকেন দেশে অর্থ পাঠান সবই ঠিক আছে। এ কারণে নিজের পরিবারকে দেশবাসিকে বিপদে ফেলবেন- এটা কেমন কথা। প্রবাসিদের কর্মকান্ডে দেশের মানুষ এখন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। আল্লাহ না করুন, ধরুন কোন প্রবাসির কারণে কোন এলাকার লোকজন সংক্রমিত হলে সেখানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকা আছে। প্রবাসিদের এটা মাথায় রাখা উচিত। নিজের জীবন দিয়ে হলেও দেশকে ভালো রাখা উচিত। বিশ্বের বর্তমান অবস্থা দেখেও কেন তারা পরিস্থিতি বুঝেন না।

আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছিনা। উহান থেকে যারা ফিরেছিলেন তারা শিক্ষিত। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে অনেক গবেষক ছিলেন। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছিলেন। তারা হাজী ক্যাম্পে থেকেছেন। এমন বিক্ষোভ করেন নি। অথচ ইটালি প্রবাসিরা একই ফ্যাসিলিটিতে দৃষ্টিকটু বিক্ষোভ করেছেন। দেশকে গালিও দিয়েছেন। একটা ভিডিওতে দেখলাম, একজন বলছেন, ২২ ঘন্টার বিমান যাত্রায় না কী বাচ্চারা খেতে পারেন নি। ডাহা মিথ্যা কথা। প্রতিটি বিমানে যথেস্ট খাবার দেয়া হয়। এমন মানিসকতার মানুষগুলো সঠিকভাবে হোম কোয়ারেন্টিন করবে বলে বিশ্বাস হয়না। এদেরকে কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখা দরকার। এলাকার চৌকিদার এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া এরা কোয়ারিন্টিন করবেনা।

কোরিয়ায় একজন মহিলা আইন না মেনে অসুস্থতা নিয়ে চার্চের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সুপারস্প্রেডার হিসাবে পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি ৩১ নম্বর রোগী হিসেবে বিখ্যাত হয়েছেন। করোনা ছড়িয়ে দিয়ে পুরা কোরিয়ার দুর্ভোগের কারণ হয়েছেন। আশা করি প্রবাসি বাংলাদেশিরা কেউ এমন হওয়ার চেষ্টা করবেন না। জনবিক্ষোভের কারণ হবেন না৷


দক্ষিণ কোরিয়া
১৭ মার্চ ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৪
১৩টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×