যেই ইটালি প্রবাসির কারণে তার পিতার মৃত্যু হয়েছে, যেই ইটালি প্রবাসির কারণে তার পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছে, আইনের দৃষ্টিতে তাদের অপরাধি মনে করছি। তারা হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।
আসুন তাদের অপরাধগুলো দেখি:
এক. তারা সঙ্গোনিরোধে থাকার যে সরকারি আদেশ অমান্য করেছেন। এর মাধ্যমে দণ্ড বিধির ১৮৮ ধারা লঙ্ঘন করেছেন। এ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারী কর্মচারি কর্তৃক যথাযথরূপে জারীকৃত আদেশ অমান্য করলে ৬ মাসের কারাদন্ড হবে। মোবাইল কোর্ট এই আইন বাস্তবায়ন করতে পারে।
দুই. তারা এমন কাজ করেছেন যার মাধ্যমে জীবন বিপন্নকারী রোগ বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মাধ্যমে তারা দণ্ড বিধির ২৬৯ ধারা লঙ্ঘণ করেছেন। এ আইনের মাধ্যমে তাদের দুই বছর পর্যন্ত সাজা দেয়ার বিধান রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট নিজের বিবেচনা অনুযায়ী জরিমানা করতে পারবেন। জরিমানার কোন লিমিটি নেই। মোবাইল কোর্ট এই ধারা প্রয়োগ করতে পারে।
তিন. বেআইনী ও অবহেলাজনিত এমন কাজ করেছেন যার মাধ্যমে জীবন বিপন্নকারী রোগের বিস্তার হতে পারে বলে জানার ও বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। এর মাধ্যমে তারা দণ্ডবিধির ২৭০ ধারা লঙ্ঘন করেছেন। এই আইনের এ ধারাটাও তারা লঙ্ঘন করেছেন বলে মনে করছি। এর মাধ্যমে তাদের ৬ মাস সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া যাবে। অফুরন্ত জরিমানা করা যাবে। জরিমানা কারাদণ্ড একসাথে করা যাবে। মোবাইল কোর্ট এই ধারা প্রয়োগ করতে পারে।
চার.
সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনো নির্দেশ পালন না করে অপরাধ করেছেন। এর মাধ্যমে তারা সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ২৫ (২) ধারায় অপরাধ করেছেন। এ অপরাধের কারণে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ৩ মাসের কারাদণ্ড দেয়ার বিধান আছে। আইনটি মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর তফসিলভুক্ত আইন নয় বলে মোবাইল কোর্ট এই ধারা প্রয়োগ করতে পারেনা। এজন্য থানায় নিয়মিত মামলা করতে হবে। তাদের নামে নিয়মিত মামলাও একটা চলতে থাকুক।
শেষকথা:
এই ইটালি প্রবাসি মুষ্টিমেয় কয়েকজনের গোয়াতুর্মি, অবাধ্যতা আর অবহেলার কারণে আজ পুরো বাংলাদেশ বিপদের সম্মুখীন। বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ হুমকীর মুখে। মানুষের খাদ্য বস্ত্র বিপন্ন। কর্মসংস্থান বিপন্ন। যারা দিন আনে দিন খায় তাদের কী হবে আল্লাহ মালুম। দেশে আমার বাবা মা দুজনেই বয়স্ক। তাদের জন্য আমার দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে। কয়েকজন বয়স্ক লোকের সাথে কথা হলো। তারা নিজেরাও আতংকিত। বয়স্ক জনগোষ্ঠির জীবন তারা বিপন্ন করেছেন।
আপনারা জানেন, একটা কথা বাতাসে উড়ছে, উত্তর কোরিয়ায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত একজনকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। দুইদিন আগে কেনিয়ায় করোনা আক্রান্ত একজনকে লোকজন পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আমাদের দেশে এসব করার সুযোগ নেই। তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। কারণ এখনো অগণিত প্রবাসি সারাদেশে ছড়িয়ে আছেন। তারা যে সঙ্গনিরোধ করছেন না তা মিডিয়ার কল্যাণে সবাই জানেন। আগামি একমাস বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এসময় তাদেরকে ঘরে রাখতে শক্ত হাতে অপরাধিদের সাজা দেয়ার বিকল্প নেই।
দক্ষিণ কোরিয়া
২০ মার্চ ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৪৩