খুব সুখী একটা পরিবার ছিলো আমাদের। সেখানে বিশ্বাস আর ভালোবাসার কোন কমতি ছিলো না। কিন্তু সিনেমা বা নাটকে বলে না, “এতো সুখ কপালে সইলো না”। আমাদের হয়েছিলো সেই অবস্থা।
সময়টা ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে, ৯-১০ তারিখ হবে হয়তো। এক চাচাতো বোনের বিয়ে কয়েকদিন পর। কত রকম আনন্দ করবো তার প্ল্যান করছিলাম। মাস খানেক পর এইচ.এস.সি. পরীক্ষা। ছিলো বুক ভরা স্বপ্ন। এর মধ্যে শুনলাম আমার আম্মু’র নাকি ক্যান্সার ধরা পড়েছে। আমি কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আব্বু, আম্মু ও আমার ছোট বোন সারাহ্ কলকাতা গেলো আম্মুর চিকিৎসার জন্য। আর এদিকে আমি আমার পরীক্ষা দিচ্ছি। নিজেই নিজেকে স্বান্তনা ও সাহস দিতাম, আম্মু সুস্থ হয়ে যাবে। যদিও জানতাম সেটা সম্ভব নয়!
আমার পরীক্ষা শেষে পরেরবার আমিও আব্বু, আম্মু আর সারাহ্’র সাথে কলকাতা গেলাম। ৩য় বার কলকাতা যাওয়ার পর এবং ২য় বার কেমো নেবার পরদিন আম্মু ওখানেই ইন্তেকাল করলো। আমাদের চোখের সামনে, হাতের উপর। আমরা কিছুই করতে পারলাম না। হাসপাতালে নেবার আগেই সব শেষ। দিনটা ছিলো ২৪ আগষ্ট।
আজ ৭ বছর হলো আম্মু আমাদের মাঝে নেই। আমরা আমাদের বিধস্ত জীবনটাকে আবার সাজিয়ে তুলতে চেষ্টা করছি। কিন্তু সেখানে আম্মুকে খুব বেশি মিস করি। সারাহ্ এবার এস.এস.সি. –তে গোল্ডেন ৫ পেয়েছে আল্লাহর রহমতে। এরকম সাফল্যগুলোতে কিংবা যেকোন ব্যর্থতায় আম্মুকে খুব মনে পড়ে।
আম্মুকে কোনদিন গলা জড়িয়ে ধরে বলা হয়নি আম্মু তোমাকে খুব ভালোবাসি। না জানিয়ে হঠাৎ বাসায় ফিরে আম্মুকে চমকে দেয়া হয়নি। নিজের টাকায় আম্মুকে একটা শাড়ি কিনে দেয়া হয়নি। কখনও আম্মুকে একটা চিঠি লেখা হয়নি।
কতোদিন আম্মু’র রান্না করা খাবার খাওয়া হয়না। আম্মু’র মতো আদর করে কেউ খাইয়ে দেয়না। আম্মু’র সাথে রাজ্জাক কিংবা উত্তমের ছবি দেখা হয়না। ঘর এলোমেলো করে রাখি বলে আম্মু’র বকা শুনতে হয়না।
আম্মু আমাদের ছেড়ে স্বার্থপরের চলে গেলেও আব্বু, সারাহ্ আর আমি এখনও প্রতিনিয়ত আম্মু’র জন্য কাঁদি। কাঁদতেই হয়।
জানি আম্মু ওপারে ভালোই আছে। তবুও মহান আল্লাহ তাআলা’র নিকট আকূল প্রার্থনা তিনি যেন আম্মুকে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দেন।
সবাই আমার আম্মুর জন্য দোয়া করবেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




