somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়ে দেখার গল্প.........!

২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়ি, একটু অস্থির আর চঞ্চল প্রকৃতির হওয়া সত্ত্বেও যেহেতু সভ্য স্বভাবের, কোন নারীলিপ্সুতা নেই বা ছিলনা (বান্ধবীদের মতে) তাই স্বাভাবিক ভাবেই আমার ছেলে বন্ধুর চেয়ে মেয়ে বন্ধুই এই কিঞ্চিৎ পরিমাণ বেশী হয়ে যেতো! সেও সেই প্রাইমারী থেকেই!

এখানে আমার অবশ্য কোন কিছুই করার থাকতো না এমনি-এমনিই হয়ে যেত, ঐযে বললাম নারীলিপ্সু চোখ বা দৃষ্টিভঙ্গী বা আর যা-যা থাকে আর কি? সেই সব ছিলনা, এখনো নেই (যদিও বউয়ের ভিন্ন মত আজকাল! সেও এই ফেসবুক আর ফালতু লেখালেখির কল্যাণে!)। কিচ্ছু করার নেই।

তো যেহেতু বেশ কিছু মেয়ে (বড় ভাইয়ের মায়ের মতে) বা বান্ধবীদের সাথে চেনা-জানা এবং এই একটু আধটু ওঠা-বসা আছে সেহেতু আমার এক বড় ভাইয়ের বাসায় ডাক পড়লো কিঞ্চিৎ ও অযাচিত পরামর্শর জন্য! কি সেই পরামর্শ? আমার সেই বড় ভাই আমাদের চেয়ে মাত্র এক বছরের চেয়ে বড় হওয়াতে যতটা না বড় ভাই তার চেয়ে বেশী বন্ধুর মত ছিলেন।

তো সেই বড় ভাইয়ের বিয়ে দেবার জন্য তার বাবা-মা বেশ উঠে পরে লেগেছেন! সেই সময়ই, তাদের যুক্তি এখনই মেয়ে দেখে ঠিকঠাক করে না রাখলে কোত্থেকে কে এসে জুটবে যে তাতে করে বাব-মায়ের বা পরে বাড়ি-ঘর ছেড়ে বনবাসী হতে হয়! তাই এখনই বেশ কচি!-লক্ষ্মী-শান্ত শিষ্ট-লাজুক-মিষ্টি আর তুলতুলে নরম স্বভাবের একটি মেয়ে চাই! যেন তারা নিজেদের মত করে গড়ে-পিঠি নিতে পারেন!

তবে হ্যাঁ তাদের আর একটা ইতিবাচক চাওয়া ছিল এই যে মেয়ে তেমন সুন্দরী না হলেও চলবে! বাহ বেশ তো উপরের এতো-এতো গুন সম্পন্ন মেয়ে চাই, কিন্তু সুন্দরী না হলেও চলবে! দারুণ উপভোগ্য এক চাওয়া!

তো সে যাই হোক, বড় ভাইয়ের জন্য যে এখন থেকেই মেয়ে দেখা চলছে সে আমি বা আমরা জানতাম। কিন্তু বড় ভাইয়ে মনে কাউকে ধরে তো তার বাবা-মায়ের মনে ধরেনা আবার বাবা-মায়ের মনে ধরে তো বড় ভাইয়ের মনে ধরেনা! কি জ্বালাতন! আবার এদিক হয় তো ওদিক হয়না আর ওদিক হয় তো এদিক হয়না! এই হল অবস্থা। মোট কথা সবকিছু ঠিকঠাক মিলছিলোনা। তাই আমাকে একদিন ডেকে বেশ করে একটি মেয়ে ধরে দেখাতে বলল!

আমি এক কথায় আর সরাসরি না করে দিলাম! আমি এই রিস্ক নিতে পারবোনা আর আমার এতো-এতো সাধের ও সময়-অসময়ের সব রকম উপকারী বান্ধবীদের মাঝে কাউকে হারাতেও পারবোনা! আর ইমেজ? তার কি হবে? যদি পরে কোন এদিক-ওদিক হয়? সেই সব শঙ্কা থেকে আমি একেবারেই পারবোনা বলে জানিয়ে দিতে ভাইয়ের বাবা-মায়ের আমার উপর থেকে স্নেহ ও আশীর্বাদ কিছুটা কমে গেল! সেও এক জ্বালা!

কিন্তু সেই বড় ভাই আমাকে ছাড়বেনা কিছুতেই সে এবার গো ধরে বসলো যে তার বিয়েতে মেয়ে দেখার ব্যাপারে ও নির্বাচনের ব্যাপারে আমার পরামর্শ তার চাই-ই চাই! কেন? আমি নাকি এই ব্যাপারে ডিগ্রী ছাড়াই বিশেষজ্ঞ! অ্যা বলে কি? এবার তার বাবা-মাও আমাকে তার ছেলের এই মেয়ে দেখার ও নির্বাচনের দায়িত্তে জোর করে শামিল হতে বাধ্য করলেন। আমি নিম রাজী হয়েই চলে এলাম সেদিনের মত।

কয়েকদিন পরে আবার দাওয়াত বা ডাক পড়লো, আমি গেলাম, এবার বড় ভাইয়ের বাবা-মা, ভাই ও এক আত্মীয় মিলে বেশ কিছু কথা বার্তার পরে আমাকে বললেন যে এই ব্যাপারে আমার কোন পরামর্শ আছে কিনা? আমি বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম “আচ্ছা ভাই আপনার পছন্দটা তো আমি মোটামুটি জানি, তাই না? তেমন সুন্দরী না হলেও চলবে কিন্তু একটু সুইটনেস যেন থাকে!” ভাই খুশিতে হেসে দিয়ে সম্মতি জানালেন।

কিন্তু সমস্যা হল বাবা-মা। তারা বললেন যে কটা মেয়ে তারা দেখেছেন সবাই এতো বেশী সেজেগুজে আর পার্লার থেকে আসে যে আসল চেহারাটা কারো বোঝা যায়না! তাই এমন কোন পরামর্শ দেও যেন আসল চেহারা খানা দেখা ও বোঝা যায়!

ঠিক আছে, এবার ভাইয়ের বাবা-মাকে সামনে রেখে বললাম যে আগামীকাল যে মেয়ে দেখতে যাবেন তাকে বা তার পরিবারের কাউকে ফোন করে বলেন যে মেয়ে যেন একদম সাদাসিধে ভাবে আসে কোন রকম মেকআপ বা প্রসাধনী ছাড়া! তবে হ্যাঁ একটা ছোট্ট টিপ আর একটু হালকা লিপস্টিক লাগাতে পারে চাইলে! এর বেশী কিছু কিছুতেই না।

এতে করে মেয়ে যদি এতোটুকুও সুন্দর ও আত্মবিশ্বাসি ও ব্যাক্তিত্তসম্পন্ন হয় তো একে সে বা তার পরিবার কিছুই মনে করবেনা এবং হাসি মুখেই আসবে। আর যদি সেই বিশ্বাস তাদের না থাকে বা সত্যিকারের সুইটনেস এর যদি ঘাটতি থাকে তবে আর আসবেনা। তো সেভাবেই তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হল, অনেক কষ্ট ও চিন্তা ভাবনা করে। এবং তারা এটা জেনে কোন কিছু না জানিয়ে পরদিন আর মেয়েকে নিয়ে নির্ধারিত জায়গায় আর এলেন না! পরে ফোন করাতে দুই-চার কথা শুনিয়ে দিলেন। স্বাভাবিক!

সুতরাং এবার বড় ভাইয়ের বাবা-মা আমার উপর আর একটু ক্ষেপে গেলেন আর বললেন এতদিন তো তবুও মেয়েকে দেখা যেত কথা বলা যেত, এবার এই ছ্যামড়ার পাল্লায় পরে আর মেয়ে দেখাও লাগবেনা এই চোখে, বিয়ে? সেতো অনেক পরের কথা। কিন্তু ভাই আমার নাছোড় বান্দা, আমি তিনি ডাকলেও আর ওদিকে যাই না।

আবার প্রায় এক-দেড় মাস পরে আনটি মানে ভাইয়ের মা ফোন দিলেন নিজ থেকেই, এবং যেতে বললেন। গেলাম আমতা-আমতা করতে-করতে। এবার আবারো সেই একই পরামর্শ চাইলো তবে এবার ভিন্ন পরামর্শ দিতে হবে, আগের দেয়া পরামর্শ ওনারা আর প্রয়োগ করে হেনস্ত হতে চান না বা কাউকে বিব্রতও করতে চান না। এবার নতুন কিছু বলতে হবে, যাতে করে মেয়ে পক্ষও মন খারাপ বা বিব্রত না হয় আর ছেলে পক্ষও যেন মেয়ের আসল চেহারা-রূপ বা গাঁয়ের রঙ দেখতে বা বুঝতে পারে!

এবার পরামর্শ দিলাম... যেটা আমি নিজে দেখি বা মানি সেটা। তো কি সেটা?

শোনেন মেয়ে যেমনে খুশি তেমনে আসুক, যত খুশি তত সাজুক, পারলে পারসোনা আর সয়ং কানিজ আলমাসরে দিয়া রঙিন হইয়া আসে আসুক, কোন সমস্যা নাই! আপনি শুধু খুব-খুব আর খুব খেয়াল কইরা দুইডা জিনিস দেখবেন, ভালো করে, পারলে চক্ষে চশমা লাগাইয়া লন বেশী পাওয়ারের!

নাহ ভুল বোঝার তেমন কোন কারণ নাই... আপনার মেয়ের চোখ-নাক-কান-গলা-চোখের পাপড়ি-দাঁত-হাসি-চাহুনি-রঙ-ঢং-কথা বা বাচন ভঙ্গী কিচ্ছু না কিছুনা!

আপনি যেটা দুইটা জিনিস দেখবেন সেটা হল......

খালি মেয়ের হাতের কবজি থেকে আঙুল বা নখ পর্যন্ত! আর পায়ের পাতা দুইটা! খুব ভালো করে!

সবাই অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করিল কেন-কেন। হাত ও পায়ের পাতা দেখে কি হবে?

এইবার আমি কহিলাম... আমি অনেক-অনেক খেয়াল করে আর বিশ্লেষণ করে দেখেছি ও প্রমান করেছি যে, যে মেয়ের হাত ও পা এই দুটি জিনিস সুন্দর বা আকর্ষণীয় সেই মেয়ে খুব সুন্দরী না হলেই অসুন্দর কখনোই না!

আর কোন মেয়ে যেথায় যত মেকাপ আর রঙ-ই লাগাক না কেন সাধারণত কেউই ওই হাতের কব্জির নিচে আর পায়ের পাতায় এসব লাগায় না বা মেকাপ করায় না!

করায় কি?

নায়িকা বা মডেলদেড় কথা আলাদা, আমি একেবারেই সাধারন মেয়েদের কথা বলছি।

আমি এভাবেই মেয়েদের সৌন্দর্য নির্ধারণ করি আর মেয়েদের পা-ই বেশী দেখি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৪৮
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×