somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেখ মুজিবুর রহমান, জয় বাংলা আজকের দিনে এই শব্দগুলো কি সর্বজনীন? (অসমাপ্ত আত্মজীবনী)

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিরোনাম পড়েই কারও চোখ কপালে উঠতে পারে। আমাকে কিছু নির্দিষ্ট শব্দে বেধে ফেলতে পারেন। "স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি", "জামাত-শিবির" আরও কিছু দিয়েও আখ্যা দিয়ে ফেলতে পারেন। আমি '৭০-'৮০ এর দশকের প্রজন্ম না। আমি একদম গত শতাব্দির শেষ প্রজন্মের সন্তান। বাংলাদেশের ইতিহাস বই পড়ে জেনেছি। শুরুটা জেনেছি ২০০১-২০০৬ সালের এক রাজনৈতিক আদর্শের বই পড়ে। যে আদর্শের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। যিনি একা একটা ফোরস পরিচালনা করেছিলেন ১৯৭১ এ। কৈশোর, যৌবন এ এসে পরিচিত হয়েছি আরেকটা আদর্শের সাথে যে আদর্শের নেতা হতে পারতেন একজন অবিসংবাদিত নেতা(উনি নিঃসন্দেহে একজন অবিসংবাদিত নেতা কিন্তু এভাবে বলার কারন আমি একটু পর ব্যাখ্যা করছি)। যার একক নেতৃত্বে একটি দেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু কি এমন হয় যে যার নেতৃত্বে দেশটি স্বাধীন হয়, সেই দেশেরই লোকজন তাকে মেরে ফেলে? আমার কাছে একটা অমীমাংসিত প্রশ্ন।
আমি রাজনীতি খুব কম চিন্তা করি। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাস ভিত্তিক বই পড়তে খুবই ভাল লাগে। কারন এদেশের ইতিহাস ৫ বছর পরপর বদলায়। যদিও ২০০৯ সাল থেকে আর বদলাচ্ছে না। "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" যখন এই সরকারের আমলে বের হল আমি তখন মাত্র কলেজে উঠেছি। বইটা পড়ার আমার একটুও ইচ্ছে হয় নাই। কারন ক্ষমতায় থাকলে নিজের বাবার কাহিনী বসে বসে যে কেউ লিখতে পারে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে উঠে বইটা পড়া শুরু করলাম। ভুমিকা পড়েই আমার কাছে মনে হল বইটা গ্রহণযোগ্য। কারন বইটা ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত লেখা। বই এর পাণ্ডুলিপি ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত পাওয়া গেছে। যদি বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সাল পর্যন্ত লিখতেন বা ১৯৭১ পর্যন্ত পাণ্ডুলিপি পাওয়া যেত এবং প্রকাশ করা হত তাহলেও আমি নিঃসন্দেহ থাকতাম। কিন্তু ১৯৭২-১৯৭৫ পর্যন্ত হলে আমার বইটার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ থাকত। আমার কাছে ১৯৭১ এর পর থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস বিতর্কিত মনে হয়। ছোট একটা উদাহরণ দেই হুমায়ূন আহমেদ এর দেয়াল উপন্যাস যারা পড়েছেন ওইখানে একটা লাইন ছিল এমন "বঙ্গবন্ধু এর হত্যার খবর শুনে কোথাও কোথাও আনন্দ উদযাপন ও করা হয়েছে" আমার প্রশ্ন কি এমন হল যে যেই লোকটার এক ডাকে একটা দেশের সব মানুষ জান-প্রান দিয়ে লড়ে স্বাধীনতা আনল আর অই লোকটাকে হত্যা করার পর কোথাও কোন প্রতিবাদ হল না। সবাই "ঝিম মেরে বসে ছিল। এখন ঝিম মারার সময়"।
"অসমাপ্ত আত্মজীবনী" তে স্পস্তভাবে শেখ মুজিবুর রহমান ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন সেই সময়কার বড় বড় রাজনীতিবিদদের। কিভাবে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারদী এর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। যেহেতু উনি রাজনীতি শুরু করেছিলেন দেশভাগের ঠিক পূর্বলগ্নে তাই মুসলমান হিসাবে তার রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হয় পাকিস্তান স্বাধীন করার মধ্য দিয়ে। বইয়ে স্পষ্টভাবে বলা আছে কিভাবে কলকাতা আর বাংলা আলাদা করা হল। আসাম আর বাংলা মিলে একটা প্রদেশ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তার বদলে বাংলা এর সাথে যুক্ত হল আসামের একটি জেলা সিলেট। পাকিস্তান গড়ার পক্ষে জনমত তৈরি করার জন্য কলেজের পড়াশুনা বাদ দিয়ে এক জেলা থেকে আরেক জেলা ঘুরে বেড়িয়েছেন। মানুষকে বুজিয়েছেন পাকিস্তান হলে কি কি সুবিধা পাবে জনগণ। কিন্তু আদৌ সুবিধা পায় নাই। জিন্নাহ সাহেব এসেই প্রথম আঘাত হানলেন বাংলা ভাষার উপর। বঙ্গবন্ধু এই বইতে লিখেছেন যে জিন্নাহ সাহেব অত্যন্ত বিচক্ষণ ব্যক্তি। উনাকে বাধ্য করা হয়েছে এটা বলতে কোন কিছু না জানিয়েই। "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" তে স্পষ্টভাবে একটা জায়গায় বলা আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে এসে জিন্নাহ যখন বললেন "উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা" ছাত্ররা সাথে প্রতিবাদ করার পর উনি ৫ মিনিট চুপ করে থেকে বক্তৃতা আবার শুরু করেন। পূর্ব বাংলার জনগনের কোন মতামত পশ্চিমের শাসকদের কানে দেওয়া হত না।
পূর্ববাংলার একমাত্র জনপ্রিয় নেতা ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারদী। মাওলানা হামিদ খান ভাসানি তখনও তত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব না। একটা দেশে গনতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে একটা শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারদী, মাওলানা হামিদ খান ভাসানি এদের নেতৃত্বে গড়ে উঠল আওয়ামী মুসলিম লীগ। একটা দল গঠন করার জন্য, সাংগঠনিকভাবে দলটাকে শক্তিশালী করার জন্য কতোটা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা যায় এইটা শেখ মুজিব আর তৎকালীন আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা দেখিয়েছেন। পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে ব্যর্থ ছিল কারন জনগণের নির্বাচিত কোন সরকার ছিল না। ক্ষমতায় ছিল খাজারা। একটা ব্যাপার বইটা পড়ে অনেকটা পরিষ্কার হল পাকিস্তান কেন আমেরিকাপন্থী। মোহাম্মদ আলী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন যিনি জীবনেও রাজনীতি করেন নাই, জীবনের বড় একটা অংশ কাটিয়েছেন আমেরিকা এই ধরণের লোক যখন একটা দেখেন শাসনভারে থাকে তখন সে না বুঝতে পারে জনগণের মতামত, না পারে দেশের নিজস্ব রাষ্ট্রনীতি চালাতে। এইসবের ফল হল ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরও আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় বসতে না পারা আর নির্বাচিত দলকে অবৈধ ঘোষণা করা।
শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার কি পরিমান যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন এই দেশের জন্য! বেগম ফজিলতন্নেসা উনাকে দেশের জন্য উৎসর্গ করেই দিয়েছেন। বড় মেয়ে হাসিনা, বড় ছেলে কালাম বাবাকে খুব কমই কাছে পেয়েছেন। তো আমরা হয়ত জানি না উনার আত্মত্যাগ কিন্তু উনার পরিবার তো জানেন। কালাম যখন বলেন "আপা আমি কি তোর আব্বাকে আব্বা বলতে পারি", স্ত্রী যখন বলে "আমার কেউ নেই। ছোটবেলায় আব্বা-আম্মা মারা গেছেন, তুমিও চলে গেলে আমি কোথায় থাকব" তখন বুঝতে হয় ২৫-২৮ বছরের এক যুবক কতোটা ত্যাগ করেন! কিন্তু আমরা কি পেরেছি উনাকে সর্বজনীন করতে? কেন রাস্তায় ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে "জয় বাংলা" স্লোগান দিলে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে "লুঙ্গি সামলা"। "জয় বাংলা" তো আওয়ামীলীগের স্লোগান না এইটা সারা বাংলার স্লোগান। এই স্লোগানেই মায়ের বুক খালি হয়েছে, বোন ভাই হারিয়েছে। কেন আজও তর্ক হয় স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে। কেন "বঙ্গবন্ধু" "জয় বাংলা" এইগুলি সব বাংলাদেশীর না। এরা শুধুই আওয়ামীলীগের। কেন ১৯৭১ নিয়ে কথা বলার অধিকার শুধু আওয়ামীলীগের? অন্য কেউ আওয়ামীলীগের বিরোধিতা করলেই রাজাকার?
আমি রাজনীতি ভাল বুঝি না। শুধু বুঝি আরও দুই এক প্রজন্ম পর এই ১৯৭১ নিয়ে আবেগ খুব কম কাজ করবে। এর জন্য দায়ী আমার আর আমাদের আগের কয়েক প্রজন্ম এরা ১৯৭১ নিয়ে ব্যবসা করেছে!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৫:৩৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×