somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হীরক রাজার দেশের নক্ষত্রের রাত গুলোর ঘুম নেই (কিছু ভাবনায় ডুবে থাকা)

১১ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কয়েকদিন যাবত মন খুবই বিক্ষিপ্ত। খুব বাজে সময় গেলে আমি বেশ কয়েকটা কাজ করি তার মধ্যে একটা হচ্ছে ছবি, নাটক দেখা এবং বই পড়া। বেশ কয়েকটা বই জমা পড়েছিল। তার মধ্যে সুকান্ত সমগ্র ছিল, ইয়াছিন আমাকে নক্ষত্রের রাত দেখার জন্য বলল আর অনেক আগে নাম্নীর জন্য হীরক রাজার দেশে সংগ্রহ করে রেখেছিলাম। ভাবলাম এইগুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকা যাক।

হীরক রাজার দেশে
গুপি গাইন আর বাঘা গাইনের কাজটা আমি আগে জানতাম শুধু গান গাওয়া আমি সত্যজিৎ রায়ের এই ছবি দেখার আগে ভেবেছিলাম হয়ত শুধু সংগীত উপজীব্য কোন চলচ্চিত্র। পাশ্চাত্যে যেমন প্রচুর এই ঘরানার চলচ্চিত্র নির্মিত হয় যেমন হালের লা লা ল্যান্ড অথবা হুইপ্লাস্ট। আমি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালিত এই ছবিটা দেখার পর বুঝলাম উনার দক্ষতা অকল্পনীয়। বাংলা ভাষায় এই ধরনের চলচ্চিত্র বানানোর অর্থলগ্নি আসে কোথা থেকে। প্রতিটি বাক্যে ছন্দ আছে, প্রতিটি বাক্যে শ্লেষ আছে। ক্ষমতায় অন্ধ হয়ে যাওয়া মানুষদের উনি যেইভাবে তীক্ষ্ণ বাক্য, অপমানে, বিদ্ধ করেছেন যা বর্তমান এই যুগেও এখনও প্রাসংগিক। আমি এই চলচ্চিত্রের অর্থলগ্নির উৎস খুজতে যেয়ে খুবই অবাক হয়ে দেখলাম পশ্চিম্বঙ্গের রাজ্য সরকারের অনুদানে এই চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সত্যজিৎ রায় সরকারের অনুদান নিয়েই সরকারকেই অপমান করেছেন। খাজনা প্রজাদের দিতেই হবে, ফসল ফলুক আর আজন্মা যাক। রাজা যখন তার চারপাশে কিছু ছাপোষা মন্ত্রীবর্গ দিয়ে রাজ্য চালায় তখন রাজ্যের মন্দ খারাপগুলো আর কখনই রাজার কানে আসে না।

আমাদের দেশের ক্ষমতায় যেই থাকুক বহির্বিশ্বে দেশকে খুব ভালোভাবে দেখানর একটা মরীচিকাময় প্রচেষ্টা করা হয়। দেশ তর তর উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। জনগনের উচিত এই উন্নয়নের প্রসব বেদনা সহ্য করা। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা কখনই বুঝবে না যে এই প্রসব বেদনা শুধু জনগনকেই সহ্য করতে হচ্ছে। দেশের যা কিছু জরা, নোংরা সব জনগন যেখানে থাকে সেইখানে থাকবে আর রাজার জন্য থাকবে সবচেয়ে সুন্দর জায়গা সেইখানে কোন পংকিলতা থাকবে না।

পুরো ছবির সবচেয়ে দুইটা ভয়ংকর বার্তা ছিল আমার কাছে পাঠশালা বন্ধ করে দেয়া আর মগজ ধোলাই করা। রাষ্ট্র যখন খুব সুক্ষ ভাবে বইপত্রের মাধ্যমে মগজ ধোলায়ের চেষ্টা করে তখন তার ফল হয় বেশ সুদুরপ্রসারি। যুগে যুগে ঠিক এই কাজটাই করার চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন আলেকজান্দ্রিয়া দখল করার পর ইচ্ছে করেই সেখানকার পাঠাগারে পাওয়া সব বই ধ্বংস করা হয়েছে ফলে আমরা হারিয়েছি হাইপেশিয়ার মত নারী বিজ্ঞানীদের গবেষনা। এতে ক্ষমতা দখলের পর বিজিত অঞ্চলের মানুষের উপর কতৃত্ব চালান যায়। ওই অঞ্চলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বড় হয় বিজয়ীর ধ্যান ধারনা নিয়ে। ভুলে যায় নিজের উত্তরসূরীর কথা। এই পৃথিবীতে যত যুদ্ধ হয়েছে সেখানে জয়ীরা খুব সুকৌশলে এই কাজ করেছে। আরবে মুর্তিপুজকদের যে ইতিহাস ছিল তা খুব সচেতনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে কুরানের মাধ্যমে। খুব অসাধারনভাবে মগজ ধোলাই করা হয়েছে মুর্তি পুজকরা যা করে তাতে পাপ আছে। ড্যান ব্রাউন তার দ্যা ভিঞ্চি কোড উপন্যাসে প্যাগানদের এই বর্ননা বেশ সুন্দরভাবে দিয়েছেন। আফ্রিকার আবিসিনিয়া, আজারবাইজান এইসবের কৃষ্টি সংস্কৃতি অন্তত দুইবার ধ্বংস হয়েছে। একবার ইউরোপ উপনিবেশের কারনে আরেকবার ইসলামের কারনে। বাংলা অঞ্চলেও ঠিক একই কাজ করা হয়েছে। রাজা অশোক, গুপ্ত বংশীয় যত রাজা ছিলেন তাদেত বেশিরভাগ ছিলেন বৌদ্ধ। বাংলা সাহিত্যের যে আদি নিদর্শন চর্যাপদ তাতে বৌদ্ধ ধর্মাচারের কথার ইংগিত আছে। বৌদ্ধ পদ রচয়িতা যারা চর্যাপদের শ্লোক লিখেছেন তারা বারবার এই বৌদ্ধ ধর্মাচারের কথা বলেছেন। পরবর্তীতে হিন্দু শাসনামলে এই জনপদ হয় হিন্দু জনপদ। আরবরা পরে এই অঞ্চলের অধিকর্তা হওয়ার পর মুসলিম জনগোষ্ঠী তৈরি হয়। যদিও এই মুসলমানদের বড় একটা অংশ তৈরি হয় মুসলিম শাষকদের সুশাসনের কারনে। হিন্দু রাজারা অন্যায়ভাবে যখন তখন খাজনা আদায় করতেন এই থেকে বাচতে বিশাল একটি জনগোষ্ঠী ধর্মান্তরিত হন। এই ক্ষমতা পালাবদলের ফলে বদল হতে থাকে কৃষ্টি, সংস্কৃতি। ফলে পাঠদান মাধ্যম হয় টোল থেকে মাদ্রাসা, মাদ্রাসা চার্চ কলেজ। ব্রিটিশরা উপনিবেশ স্থাপন করার পর সুকৌশলে দেশীয় শিক্ষা মাধ্যম বিলুপ্ত করে। এই অঞ্চলের মননে ব্রিটিশরা শ্রেষ্ঠ এই বীজ পুতে দেয়। একমাত্র রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একটু ব্যতিক্রম যিনি শান্তিনিকেতন তৈরি করেছেন দেশীয় শিক্ষার আদলে পাশ্চাত্য শিক্ষা। বর্তমানে বাংলাদেশে যেইভাবে দেশ শাসন করা হয় সেইখানে ঠিক একই কাজটি করা হয়। নেত্রী বদল হয় কিন্তু প্রক্রিয়া বদলায় না। পাকিস্তানিরা যেমন খুব সুক্ষ্মভাবে বাংলাদেশের লেখকদের বুঝাতে পেরেছিল আমাদের ভাষায় হিন্দুয়ানীর প্রভাব আছে, ফলে অপবিত্র ভাষা। এই কারনে সেই সময়কার লেখকদের লেখায় একটা ফারসি উর্দু শব্দের কিছুটা আধিক্য বেশ লক্ষ্যনীয়। ঠিক একইভাবে গত বিশ বছরে বাংলাদেশে জিয়া আর শেখ মুজিব কে এক লম্বা ঘোড়দৌরের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। যা অপ্রত্যাশিত ছিল। খুব ভাল একটা উদাহরন হচ্ছে মান্না অভিনীত সৈনিক ছবিটি। চলচ্চিত্রটি নির্মান করা হয়েছে বিএনপি শাসনামলে খুব স্বাভাবিকভাবেই ছবিটি চলচ্চিত্র পর্যালোচনা অর্থাৎ সেন্সর থেকে অনুমোদন পেতে হলে শুধু জিয়ার কথাই থাকতে হবে। এখন প্রায় ১৫ বছর পর এসে যখন একজন অতি উৎসাহিত হয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় পরিচালককে তখন পুরো ব্যাপারটা এক্টু চোখে পড়ার মত। অথচ দুইটা ব্যাপারই কাম্য ছিল না। সর্বত্র ক্ষমতাসীন দলের এই যে নিয়ন্ত্রণ এইটা হচ্ছে হীরক রাজার দেশের চলচ্চিত্রের মুল উপজীব্য বার্তা।

নক্ষত্রের রাত

হুমায়ুন আহমেদ যে সত্যিকারের একজন জাদুকর তার প্রমান হচ্ছে এই নাটক। আমি যদি ভুলভাল না বকে থাকি তাহলে হুমায়ুন আহমেদের কবি উপন্যাসের নাট্যরূপ হচ্ছে এই নাটকটি। এই নাটকে শমি কায়সার, আসাদুজ্জামান নুর, আবুল হায়াত, আফসানা মিমি, আজিজুল হাকিম, জাহিদ হাসান কে দিয়ে এমন কিছু সংলাপ বলানো হয়েছে যা সার্বজনীন। বিশেষ করে আসাদুজ্জামান নুরের হাসান চরিত্রের অভিনয় অসম্ভব ভালো ছিল। আমি কয়েকটা সংলাপ বলতে চাই-

দেশের কত মানুষ ই তো রাস্তায় থাকে তাই বলে আমি কি সবাই কে বাসায় এনে ঘুমাতে দিব- ছেলে রঞ্জু যখন বাবাকে এই কথা বলে তখন বাবা রেগে যেয়ে উত্তর দেন আরে গাধার বাচ্চা দেশের সব মানুষ আর হাসান কি এক হল? অসম্ভব ভালো লাগছে এই উক্তিটা। আমি অনেকদিন যাবত এই প্রশ্নের উত্তর খুজতেছিলাম। এত সাহায্য করে কি লাভ? আমি তো দেশের সব মানুষের উপকার করতে পারব না। এইটা খুবই বাজে একটা যুক্তি। আমার হাতের কাছে যেই মানুষ আছে, আমি যাকে চিনি তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। আমি সবার পারব না কিন্ত একজনের তো সমস্যার সমাধান হবে, সেই একজন উপকৃত হয়ে তখম আরো একজনের সাহায্যের চেষ্টা করবে। সমাজে এইভাবে কষ্টার্ত মানুষের সংখ্যা কমতে থাকবে। কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

পরীরা এইভাবেই হারিয়ে যায়? এই বাক্যের মধ্যে কত যে খেদ আছে সেইটা বুঝানো সম্ভব না। এইটা দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের ফল কিনা আমার জানা নেই। কিন্ত এই যে এত এত দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, এর প্রভাব কি সমাজে দেখা যায়। হয়ত স্রষ্টাই চায় এরা এইরকম বঞ্চিত থাকুক। কিন্তু চেনাশুনা কেউ যদি কখনো আপনার সাহায্য চায় সেইটা যেকোনো ক্ষেত্রেই হোক তার কথাটা শুনার চেষ্টা করবেন, সম্ভব হলে সাহায্য করবেন, সম্ভব না হলে চেনা জানা কেউ সাহায্য করতে পারবে তার কাছে পাঠিয়ে দিবেন কিন্তু হারিয়ে যেতে দিবেন না কারন তার জীবনে কখন কোন কারনে বসন্ত আসবে কেউ জানে না, আর একবার বসন্তের ফুল ফুটলে সেই ফুলের সৌন্দর্য সবাই উপভোগ করতে পারবে।

আজ মনে হয় বসন্ত আমার জীবনে এসেছিল
উত্তর মহাসাগরের কুলে
আমার স্বপ্নের ফুলে
তারা কথা কয়েছিল
অস্পষ্ট পুরনো ভাষায় - অবৈধ (ঘুম নেই) সুকান্ত ভট্টাচার্য
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×