somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ম প্রচারের কাজ ধার্মিক মানুষদের, রাষ্ট্রের নয়, রাষ্ট্র সকল ধর্মের মানুষের অভিভাবক।

২৬ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধর্ম নিয়ে যারা বেশী বাড়াবাড়ি করে, তারাই ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজেদের স্বার্থে ধর্মকে বেশী ব্যবহার করেছে। ধর্ম একটি স্পর্শকাতর বিষয় এবং বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মভীরু। ধর্মের ব্যাপারে একজন ধর্মীয় নেতার বক্তব্যকেই তারা বেশী বিশ্বাস করে। আর সেই সুযোগটিই নেয় ধর্মভিত্তিক দল গুলো। ধর্মনিরপেক্ষতা যে ধর্মহীনতা নয় এ ব্যাপারটি তারা বুঝতে চায় না। ধর্মনিরপেক্ষতাকে সাধারন ধর্মপ্রান মানুষদের কাছে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে ধর্মভিত্তিক দলগুলো নিজেদের ইসলাম রক্ষক দল হিসাবে প্রচার করার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়টি নিয়ে প্রচুর জলঘোলা করা হয়েছে, এখনও করছে যার ফায়দা লুটেছে ডানপন্থী, ধর্মীয় চরমপন্থী এবং জামায়াতে ইসলামীর মতো ধর্মভিত্তিক দল। আমার বিবেচনায়, ইংরেজি সেক্যুলারিজম-এর এটি অসাংস্কৃতিক অনুবাদ। পশ্চিমে সেক্যুলারিজম -এর উদ্ভব মধ্যযুগের পর, যখন রাষ্ট্রপরিচালনায় রাষ্ট্রের ওপর গীর্জার যেকোনো খবরদারি নাকচ করে দেয়া হয়েছে। সেক্যুলারিজমের মানে হচ্ছে এই যে, ধর্ম থাকবে ধর্মের জায়গায়, মানুষের ধর্মাচারণ, গীর্জায়, আর রাষ্ট্র চলবে তার প্রাত্যহিকতা ও বাস্তবের বিবেচনায়। রাষ্ট্র পরিচালনায় ধর্ম প্রাধান্য পাবে না। সেক্যুলারিজম অর্থ ধর্মের সমাপ্তি নয়; এর অর্থ রাষ্ট্র ও ধর্মের দূরত্ব। আমাদের দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে ডান-চরমপন্থী দলগুলো যে ব্যাখ্যা দিয়েছে সেখানে বলা হচ্ছে, এর অর্থ ইসলাম ধর্মের অবসান। বিএনপি নেত্রী সব নির্বাচনের আগে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে। যেহেতু আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করে। বেগম জিয়ার এটি প্রিয় একটি বক্তব্য যদিও বাস্তব ব্যাপার হল, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর তরক্কি হয়, মসজিদ, মাদ্রাসায় অনুদান বাড়ে। ধর্মনিরপেক্ষতার বিকৃত ব্যাখ্যার কারণে এখন এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে কিছু মহলে যে, বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে গেলে ইসলাম ধর্ম যাবে, মসজিদে উলুধ্বনি উঠবে। অথচ, আমাদের অভিজ্ঞতা এই, এদেশে বিএনপিসহ ইসলামী দলগুলো ইসলামকে ব্যবহার করেছে ক্ষমতা আর অর্থের জন্য-আর কোনো কারণে নয়। ইসলামের নামে যে জঙ্গিবাদ এখন বিশ্বের অন্যান্য জায়গার মতো বাংলাদেশেও হুমকি সৃষ্টি করছে, সেটি কতখানি ইসলামী সে প্রশ্ন কেউ করেন না। ইসলামের নামে মানুষকে বোমা মেরে, আগুনে পুড়িয়ে গাছে ঝুলিয়ে মারা কী ইসলামী? ইসলাম ধর্মের কোথায় বলা আছে, মেয়েদের শিক্ষা বন্ধ করতে হবে, অন্যায়কারীর পক্ষে ফতোয়া দিতে হবে? বাহাত্তরের সংবিধানে যে ধর্মনিরপেক্ষতা কথাটি আছে, তার চেতনাকে যদি গ্রহণ করা যায়, তাহলে ইসলামের নামে এসব অপরাধ বন্ধ করা যাবে; ধর্ম থাকবে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে এবং রাষ্ট্রকে ধর্ম প্রচারকের জায়গায় আর থাকতে হবে না। ধর্ম প্রচারের কাজ ধার্মিক মানুষদের, রাষ্ট্রের নয়, রাষ্ট্র সকল ধর্মের মানুষের অভিভাবক, তাকে একটা নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে মানুষের মঙ্গলের জন্য ভয়ানক সব জাগতিক কাজ করতে হবে- বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে, রপ্তানি বাড়াতে হবে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা দিতে হবে।

বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এর চেতনাটা ধরে রাখা গেলে সবগুলো প্রশ্নেরই মোটামুটি নিষ্পত্তি হয়, শুধু কিভাবে যাব?, এই প্রশ্নটি ছাড়া। কিভাবে যাব? একটি ভাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনায় এবং সরকারের সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি গঠনের উদ্যোগে। কিন্তু কমিটিতে বিএনপির সদস্য নেয়ার ক্ষেত্রে সরকার সদিস্থার প্রকাশ ঘটায়নি। যেখানে ওয়ার্কার্স পার্টির একজন প্রতিনিধি কমিটিতে সেখানে বিএনপির মাত্র একজন কেন? অন্তত তিনজন নয় কেন? তাছাড়া মাত্র তিন দিনের মধ্যে নাম পাঠানোর এমন বাধ্যবাধকতা কেন? আমরা জানি, বিএনপি কোনোদিন চাইবে না, বাহাত্তরের সংবিধানে, অন্তত তার চেতনায় ফিরে যেতে। বাহাত্তরের পর যত কাটা-ছেঁড়া হয়েছে সংবিধানের, তার বেশির ভাগ বেনিফিশিয়ারি বিএনপি এবং তার সহযোগী জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত অবশ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, সংবিধানে বিশ্বাসের তো প্রশ্নই ওঠে না। সেজন্য এই সংবিধান সংশোধন কমিটিতে জামায়াতের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্ন ওঠেনি, এরকম বলা হয়েছে। যা হোক সরকারের উচিত ছিল, বিএনপিকে অন্তত আন্তরিকতার সঙ্গে অনেকটা ছাড় দিয়ে হলেও, কমিটিতে ডাকা। তখন বিএনপি না এলে জনগণের কাছে তার অবস্থান পরিষ্কার হত। এখন সরকারের তাড়াহুড়া এবং মাত্র একজন বিএনপি সাংসদকে কমিটিতে জায়গা দেয়ার প্রশ্নে দলটির অভিযোগ ফেলে দেয়ার মতো নয়।

তবে, সুখের কথা, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপির অংশগ্রহণের সুযোগ এখনও আছে। যদি থাকে, তবে শুরু থেকে আবার শুরু করা হোক। দলটির তিনজন সাংসদকে নেয়ার প্রস্তাব করা হোক। তখনও হয়তো বিএনপি কমিটিতে না থাকার ছুতো বের করবে, কিন্তু মানুষ জানবে, তারা বাহাত্তরের চেতনায় ফিরে যেতে চায় না নানা কারণে। এতে দলটির প্রতি তরুণদের আস্থা আরো কমবে। আর, যদি কোনো কারণে দলটি কমিটিতে যোগ দেয়, তাহলে গণতন্ত্রের জন্য তা হবে শুভ, তারা কোনো ব্যাপারে নোট অফ ডিসেন্ট দিয়ে বেরিয়ে গেলেও।

কৃজ্ঞতায়: মনজুরুল ইসলাম স্যার
২৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×