somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালিত্ব বনাম বাংলাদেশীত্ব

১৪ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাজারো ক্যাচালের দেশ বাংলাদেশ ।
এর ভেতরে আরেকটা ক্যাচাল বাঙালিত্ব বনাম বাংলাদেশীত্ব ।
নানারকম স্ট্রেইট যুক্তি , অ্যাঙ্গেল যুক্তি , বাংলাদেশী না হইলে সার্বভৌমত্ব থাকেনা , বাঙালী না হইলে সংস্কৃতি থাকেনা , জাতিত্ববোধ না জাতীয়তাবোধ - এতো সব হাউকাউ এ আমার স্নায়বিক বৈকল্য হয় মাঝেমাঝে ।
সেই বিরক্তি থেকেই লিখলাম এই বিষয় নিয়ে ।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নেতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু আর টিভি এর " রোড টু ডেমোক্রেসী " এক অনুষ্ঠানে এ ব্যাপারে বলেছিলেন:
আমাদের জাতীয়তা বাঙালী , নাগরিকত্ব বাংলাদেশী।
আওয়ামী লীগ শেখ মুজিব কে বাঙালী জাতির পিতা বলতে চায়।
অ-আওয়ামী রাজনৈতিক অংশ সেটা গ্রহণ করেনা।
অন্যদিকে উপজাতিরা অ-বাঙালি এটা আরেকটা বাস্তব।

অনেকেই বলেন : জিয়া বাঙালি শব্দটা বাতিল করতে চেয়েছেন বাংলাদেশী শব্দটা দিয়ে ।
বাঙালীত্ব নিয়ে কথা বলতে গেলে পশ্চিমবঙ্গ অবধারিত একটা বিষয় সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে।

বিষয় গুলো আমার কিছু প্রশ্নের বিপক্ষে প্রাসংগিক তাই বলে রাখলাম শুরুতেই।

শুরুতেই দেখা যাক ভারতের সংবিধান নাগরিকত্ব এবং জাতীয়তা কে কিভাবে দেখে :
উইকিপিডিয়ায় ভারতীয় নাগরিকত্ব এবং জাতীয়তা

বর্ণনার বাহুল্যে গেলাম না ।
যেটা খুজে পেলাম ভারতের সংবিধান নাগরিকত্ব এবং জাতীয়তা এর ভেতরে কোন পার্থক্য রাখে নাই।
যেটাই নাগরিকত্ব সেটাই জাতীয়তা
ভারতের হায়দরাবাদ অঙ্গরাজ্যের একজন নাগরিকের পাসপোর্ট এও সেটাই দেখা যায়।






এখানে বলে রাখা ভালো পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একজন বাংলাভাষী অথবা বাঙালী নাগরিকের পাসপোর্টও একই যেহেতু তারা ভারতীয় নাগরিক।

এবার দেখা যাক বিশ্বের সবচেয়ে বেশী অভিবাসীর দেশ আমেরিকার সংবিধান কি বলে নাগরিকত্ব এবং জাতীয়তা নিয়ে :

উইকিপিডিয়ায় আমেরিকান নাগরিকত্ব

The society of the United States in spite of being multi-ethnic and multi-cultural still has a sense of national identity and history; those who live in or are from the United States refer to an "American people", and patriotism is prominent in public life.

Nationalism is the correct and recognized term for the associated ideology and political movements, within the present United States, and during its history.

বাংলা অনুবাদ করলে যেটা দাড়ায় :
বহু জাতিসত্ত্বা এবং বহু সংস্কৃতির মিশ্রণ হওয়া সত্ত্বেও আমেরিকার সমাজ এখনও জাতীয় পরিচয় এবং ইতিহাসের একটি চেতনা বহন করে; যারা আমেরিকায় বাস করেন অথবা আমেরিকা উদ্ভুত , "আমেরিকান জনসাধারন " হিসেবেই পরিচিত এবং দেশপ্রেম সাধারন মানুষের জীবনে গভীর ভাবে প্রোথিত।

একটি ব্যাপার আমার দৃষ্টি বিশেষভাবে কেড়ে নিয়েছে । সেটা হলো আমেরিকান পাসপোর্টে জাতীয়তার জায়গাটাতে প্রিন্ট করা আছে
" Nationality / Nationalite / Nacionalidad
UNITED STATES OF AMERICA "



জাতীয়তার জন্য আমেরিকা তাদের রাষ্ট্রীয় ভুখন্ডের নাম কেই
গ্রহণ করেছে যদিও আমেরিকার জনসংখ্যার বিশাল অংশ আমেরিকার বাইরে থেকে অভিবাসী হিসাবে আগত।

জাতীয়তাবাদ এর ব্যাপারে জার্মান আর পোল্যান্ড এর পার্থক্য টা দেখুন
:









তারা নিজেদের জাতীয়তা এর জন্য রাষ্ট্রীয় ভুখন্ডের নাম কেই
গ্রহণ করেছে ।
অথচ কে না জানে ভাষা - সংস্কৃতি , আচার - রুচিতে , নৃতাত্ত্বিক ভাবে পোলিশ আর জার্মান রা একই জাতি।

তাহলে আমাদের দেশে কেন বাংলাদেশী জাতীয়তা বাদের বাস্তবতা অনেকেই মেনে নিতে চায়না ?
শুধুই কি রাজনৈতিক বিভাজনের খাতিরে বিরোধীতা ?

শুরুর প্রশ্ন গুলোই এবার করছি :
শেখ মুজিব কে যদি জাতির পিতার মর্যাদা দিতে হয় তাহলে সেখানে কি বাংলাদেশী জাতীয়তা কে তুলে আনতে হবেনা ?
কারন শেখ মুজিব এর Political / National Paternity কি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীর উপর প্রযোজ্য ?
উত্তর নিষ্প্রয়োজন , কোন ভাবেই না ।
কারন সকল ভারতীয়র জাতির পিতা গান্ধী,
পশ্চিমবঙ্গের বাঙালী ভারতীয় দেরও তাই।
এবং পশ্চিমবঙ্গের স্বাধীনতা এবং অভ্যুদয়ের সাথে শেখ মুজিব এর কোন সম্পর্ক নাই ।

পশ্চিমবঙ্গের স্বাধীনতা এবং অভ্যুদয় মানে স্বাধীন ভারতের অভ্যুদয়।

আরেকটা প্রশ্ন : জিয়া কি বাঙালি শব্দটা বাতিল করতে চেয়েছেন বাংলাদেশী শব্দটা দিয়ে ?

আমি যেটা জানি জিয়ার আইডিওলজী ছিলো বাঙালী , পাহাড়ী এবং আমাদের জাতীয় জীবনের স্রোতধারায় মিশে যাওয়া ভিন্ন জাতিসত্ত্বার মানুষ সবাই মিলে আমাদের Collective & Superior Identity (সামগ্রিক এবং উচ্চতর পরিচয় ) হবে আমাদের রাষ্ট্রীয় ভুখন্ডের নাম এবং স্বাতন্ত্রে।

প্রাসংগিকভাবে বলতে হয় : এম এন লারমা যখন জাতীয় সংসদে বাঙালী জাতীয়তাবাদের বিরোধীতা করেছিলেন তখন শেখ মুজিবুর রহমান তাদেরকে বাঙালী হওয়ার জন্য বলেছিলেনঃ "তোরা বাঙালী হয়ে যা"।
স্বাভাবিকভাবে পাহাড়ীরা সেটা মেনে নিতে পারেনি।
তারাই প্রথম দাবী করে বাংলাদেশী শব্দটা।
খোদ ১৯৭২ সালের পাসপোর্টেই বাংলাদেশী শব্দটা উল্লেখ ছিলো- এটা এমনই এক বাস্তবতা।
আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ দলের প্রতিষ্ঠাতা নেতা জিয়া শব্দটি সাংবিধানিক ভাবে চালু করেছেন বলে সেটা মেনে নেয়া যাবেনা- এই মানসিকতা গন্ডারতুল্য গোয়ার্তুমী ছাড়া কিছুই না।
জিয়া বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ কে সাংবিধানিক ভাবে চালু করেছেন , দেশের প্রতি তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন, জাতি তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।
তারমানে এটা নয় যে শব্দটা তার স্বীয় মেধাউৎপন্ন।
এটা জ্বলজ্বলে বাস্তবতা।
আজ হোক কাল হোক , জিয়া না করলে হাসিনা - খালেদা কাউকে না কাউকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ স্বীকার করতেই হবে।

এ প্রসংগে বলতে হয় :
ভারতের কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী জাতিসত্ত্বায় ইতালীয়ান , কিন্তু আজ তিনি ভারতের জাতীয় জীবনের স্রোতধারায় মিশে গেছেন।

কোন জাতীয়তা বোধে এবং বাদে তিনি আজ ভারতের রাজনীতির মধ্যমনি ? - বিদেশীনি ভারতবধূ হওয়া সত্ত্বে।
উত্তর : ভারতীয় জাতীয়তাবাদ এবং বোধ , ইতালীয়ান জাতিসত্ত্বাবোধ নয়।

আজ যদি সোনিয়া গান্ধীর মতো সজীব ওয়াজেদ জয়ের স্ত্রী ক্রিস্টিনা আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে আসেন সেটা কোন জাতীয়তা বোধে এবং বাদে সম্ভব ?

আলোচনা , সমালোচনা সবকিছুই স্বাগতম ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১০ ভোর ৪:৪০
৫০টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×