somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

X VIEW : দৈনিক প্রথম আলোর অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তার কারন

১৫ ই জুলাই, ২০১০ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দৈনিক প্রথম আলো।
১৯৯৮তে পথচলা শুরু এই জাতীয় দৈনিকটির।
ট্রান্সকম গ্রুপের ওনার লতিফুর রহমানের মিডিয়া উইং।
এই পত্রিকাটি লতিফুর রহমানকে যেমন দিয়েছে পায়ের নীচে শক্ত মাটি তেমনি
ভোরের কাগজ থেকে প্রথম আলোতে এসে মতিউর রহমান হয়েছেন বাংলাদেশের "মিডিয়া প্রোফেট"

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক জীবনে অনেক বড় এক প্রভাব পুরুষ হয়ে দাড়িয়েছেন সিলেটের ছেলে , ভার্সিটি লাইফের লেফটিস্ট রাজনৈতিক কর্মী প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।

পত্রিকাটির জনপ্রিয়তা অস্বাভাবিক।
কিন্তু কেন ?
এটা কি কখনো চিন্তা করে দেখা হয়েছে ?


মোটাদাগে বলা হয়ে থাকে : রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা ।
সরকার - বিরোধীদল সবার কুকর্মের বিপক্ষে সরাসরি লিখে থাকে।
তাদের স্লোগান " যা কিছু ভালো , তার সাথে প্রথম আলো " দারুণ জনপ্রিয়।
বাংলাদেশের পত্রিকাজগতের কাছে প্রথমআলো পাইওনিয়ার , হায়েস্ট স্ট্যান্ডার্ড।
এটিই কারন।


আসলেই কি তাই ?
সমালোচনার মুখে পড়ার মত কাজ কি প্রথম আলো করেনি ?
একবার নয় , অনেকবার করেছে ।
এরপরও পত্রিকার সার্কুলেশন এত বেশী কেন ?
এখানেই " জনপ্রিয়তা " শব্দটিকে রিপ্লেস করছি " পাঠকসংখ্যা " দিয়ে।

এই পত্রিকাকে নতুন জেনারেশন যথেষ্ট সন্দেহ করে ।
এই পত্রিকার নানা খবরাখবরের "ভুয়ামী" প্রায়ই সাইবার মিডিয়াতে আলোচনার ঝড় তোলে (ব্লগ , ফেসবুক) , মানুষের মুখে মুখে আলোচিত হয়।
এরপরও " দৈনিক প্রথম আলো " টপস দ্য সার্কুলেশন লিস্ট।

এর অনেক বড় একটি কারন রয়েছে বলেই আমি মনে করি যেটি তিলে তিলে , দিনে দিনে অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং দূরদর্শী মতিউর রহমান গড়ে তুলেছেন।

সেদিকটিতে এর আগে সম্ভবত কেউ দৃষ্টিপাত করেন নি।
সেজন্যই শিরোনাম : X VIEW

মূল বক্তব্যে চলে যাই :

ঘটনা - ১: শ্যাওড়াপাড়া বাসস্টপেজ থেকে টিকেট কেটে উঠলাম বাসায় ফেরার জন্য। বাসে উঠে সিট পেলাম বাম দিকে। ডানদিকের কলামে একটা বোরকা পড়া মেয়ে বসে আছে। দেখলেই বোঝযায় কলেজের ছাত্রী। হাতে রোল করা একটা পত্রিকা মুঠিবদ্ধ হয়ে আছে।
নাম "প্রথম আলো"

ঘটনা-২: গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। গ্রামের প্রাইমারী স্কুলটাতে ঘুরতে গেলাম। ক্লাস ফোর এ যে শিক্ষিকা ক্লাস নিচ্ছিলো বয়সে আমার ছোট। হয়তো এইচ.এস.সি পাস করেই চাকরীটা পেয়েছে।
ওর বাবা আমার আব্বুকে সবসময় কাকা সম্মোধন করে। সেকারনে মেয়েটাকে চিনতাম। এই মেয়েটিও বোরকা পরে। ক্লাস শেষ করে যখন বের আসলো আমাকে দেখে সালাম দিয়ে বললো : কেমন আছেন ভাইয়া।
হাসি মুখে উত্তর দিলেও আমার চোখটা গিয়েছিলো অন্যদিকে।
ওর ডানকাঁধে ঝোলানো ব্যাগে (রেক্সিনের ব্যাগ) রোল করা একটা পত্রিকা খাঁড়া হয়ে আছে।
নাম "প্রথম আলো"

ঘটনা-৩: আমাদের পরিবারে আমি , আব্বু , আম্মু এই ৩ জন স্ট্রিক্টলি বিএনপি সাপোর্টার , আমার বড়বোন প্রো বিএনপি , গোড়া নয়।
প্রথম আলো ১/১১ এর পর বিএনপির বিরুদ্ধে যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছিলো তাতে আমি খেপে গিয়েছিলাম ।
বাসায় ডিক্লারেশন দিয়েছিলাম : নো মোর প্রথম আলো।
প্রো আর স্ট্রিক্ট বিএনপি বোন আর মা পাল্টা হুমকী দিলো : তোর টিউশনির টাকা দিয়ে তুই অন্য পত্রিকা কিনিস , তবে প্রথম আলো পাল্টানো যাবেনা। ঘাড় ত্যাড়ামো করলে ভালো হবেনা বলে দিলাম।

হুমকীতে পিছু হটলাম।


ঘটনা-৪: মফস্বলে গেলাম । আমার মামাতো বোন , বয়সে আমার বছর ১২ ছোট। সারাক্ষন সাজগোজ , ফিটফাট , টিপটপ থাকা। বোনটা আমার দেখতেও সুন্দর। হাল ফ্যাশনের জামাকাপড় নিয়ে উনার পোস্ট ডক্টোরাল পর্যায়ের রিসার্চ আছে যদিও স্কুলের পরীক্ষায় পাস করতে উনার এভারেস্ট সামিটের কষ্ট করতে হয়!
তা উনার সেইসব রিসার্চের ম্যাটেরিয়ালটা কি ?
"প্রথম আলোর নকশা"

ঘটনা- ৫ : বুয়েটে আমি মেয়েদের কাছ থেকে মোটামুটি ২ গজ দুরত্বেই থাকতাম সবসময়। হয়তো কনসারভেটিভ অ্যাটমোসফিয়ারে বড় হয়েছিলাম বলেই। তে তার মানে এটা নয় যে তাদের সাথে কথাবার্তা একেবারেই বলতাম না থ্রু ওয়েল আন্ডারস্ট্যান্ডিং।
যাইহোক আমাদের ব্যাচের কেমিকেলের একটা মেয়েকে চিনতাম।
গো বেচারা টাইপ , বুয়েটে যাদেরকে বলে আঁতেল। সাংঘাতিক পড়াশোনা প্রিয়। রাজনীতি যাদের কাছে গ্রীক- হিব্রু ।
ওই মেয়ে ক্যাফেটেরিয়ায় বসে ফুচকা খাচ্ছিলো যেকোন এক বিকালে।
সামনে একটা পত্রিকা পড়ে আছে টেবিলে।
নাম "প্রথম আলো"

এভাবে সমাজের যেকোন শ্রেনীভেদের দিকেই আপনি তাকান না কেন- দেখবেন সব মত আর শ্রেনী পার্থক্য ভুলে বাংলাদেশের সব মেয়ে , মহিলা , বৃদ্ধার কাছে প্রথম আলো এক বিশ্বস্ত বন্ধুর নাম।
এই বন্ধুর নামে যত বদনামই থাকুক - তবুও বন্ধু।

কেন ?
কারন একটাই।
যে ক্ষেত্রে যেমন ধুরন্ধরপনাই করুক না কেন হাজারো বিপদ আর প্রতিকুলতার দেশে এই পত্রিকাটি বাংলাদেশের মেয়েদের বন্ধু।


পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্ট , বুদ্ধিজীবিতা , গরু পেলে - সেলাই করে সাবলম্বী হওয়া , মফস্বলের সামান্য একটি কবিতা কিংবা সংগীত প্রতিযোগীতায় জুনিয়র স্কুলের মেয়ের সাফল্য , গাছ লাগানো - বই পড়া আন্দোলনে মেয়েদের মানববন্ধন , ডাক্তারী- প্রকৌশল যেকোন পেশায় খুঁটিনাটি সাফল্য , ফুটবল - ক্রিকেটে মেয়েদের সামান্য পারংগমতা - সবকিছুই দৈনিক প্রথম আলোর "প্রথম পাতার খবর"

মনে পড়ে কি ফারিয়া লারার কথা ?
কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের মেয়ে।
পাইলট হতে চেয়েছিলো।
ট্রায়াল ফ্লাইটে প্লেন ক্র্যাশ হয়ে মারা গিয়েছিলো।
সেখান থেকেই প্রথম আলো "অপার নারীমিত্রতা " শুরু।

আমার সিনিয়র বুয়েট ফেলো সাবেকুন নাহার সনির মৃত্যু প্রথম আলো কতদিন ধরে গুরুত্বের সাথে ফলোআপ করেছিলো মনে কি পড়ে ?
এখনো সেই মৃত্যু প্রথম আলোর কাছে গুরুত্বপূর্ন।
মূলত বুয়েটের সেইসময়কার প্রশাসন আহসানউল্লা হলের সামনে সনি স্মৃতিফলকটি করতে বাধ্য হয়েছিলো দৈনিক প্রথম আলোর স্ট্রং কাভারেজের কারনে।

শুধু কি সেখানেই শেষ ?
বাংলাদেশের অগনিত গৃহিনীর কাছে প্রথম আলো তুমুল জনপ্রিয়।
কেন ?
আচার-পিঠা- আর নানা রকম রান্নার রেসিপি দেয় বলে ?
নকশায় নানা রকম পোশাক আশাকের বাহারী বর্ননা থাকে বলে ?
না।
ভুল করছেন।

রন্ধনশিল্পের পেছনে এ দেশের অগনিত নারীর দৈনন্দিন পরিশ্রমকে প্রথম আলো সম্মানিত করেছে "আচার প্রতিযোগীতা " , " পিঠা প্রতিযোগিতা" , আরো নানারকম প্রতিযোগীতার ভেতর দিয়ে।
তাদেরকে মেসেজ দিচ্ছে "আপনাদের কাজ অনেক বড় সম্মানপূর্ন একটি শিল্প"।

গ্রামের অগনিত বাল্যবিবাহ , কাঠমোল্লাদের কুপমন্ডুক ফতোয়ার খপ্পরে পড়া অগনিত মেয়ের রেসকিউ হিরো প্রথম আলো।

শহরের আটপৌরে রান্নাঘরের পিতা পরিত্যক্ত গৃহকর্মী শিশুমেয়েটিকে পশুর মত করে ধর্ষন থেকে শুরু করে জয়ীতা রেজার মত অভিজাত পরিবারের নির্যাতিতা নারীর চেপে রাখা যন্ত্রনা - প্রথম আলোর পাতায় উঠে আসে সবার দুঃখ গাথা।
অতিসম্প্রতি সন্তান সহ আত্নহত্যা কারী রীনার লিখে যাওয়া ডায়েরীর আত্নকথা উঠে আসছে প্রথম আলোতে।

নেদারল্যান্ডের কোন মিনিস্ট্রীতে বাংলাদেশী বাবা মায়ের মেয়ে দক্ষতা দেখাচ্ছে কিংবা তাহমিমা আনামের "আ গোল্ডেন এজ" প্রথম আলোর এক্সট্রা নিউজ।

জোবেরা রহমান লিনু , আয়েশা খানম , ফরিদা আখতার , ফাহমিদা খাতুন, রওনক জাহানদের জন্য প্রথম আলোর "ভেরী হাই ভ্যালুড" সম্পাদকীয় আর খোলাপাতার কলাম বরাদ্দ থাকে উদারভাবে।

সুনীতা উইলিয়ামস কিংবা আনুশেহ আনসারীরা প্রথম আলোর বক্স নিউজ।

বাসের হেল্পারদের গায়ে হাত দেয়া থেকে শুরু করে প্রতিদিনকার চলাফেরায় মেয়েদের পাবলিক টয়লেটের প্রয়োজনীয়তা- সব নাড়ী নক্ষত্র সমস্যাই প্রথম আলো ওয়াচডগের মত করে ফলোআপ করে।
ঢাকায় বিআরটিসির মহিলা সার্ভিসের পেছনেও প্রথম আলোর ভালো অবদান আছে।

যৌতুক , ধর্ষন , এসিড সন্ত্রাস , ইভটিজিং এর কথাতো বলাই বাহুল্য।

আর এভাবেই গ্রাম-মফস্বল-মহানগর- বিশ্ব : জীবনের ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ প্রতিটি পদক্ষেপে বাংলাদেশের আপামর নারীরা প্রথম আলোকে পেয়ে থাকে নিজের ছায়ার মত।

একারনেই তো রাজনীতি-ধর্ম- শ্রেনী সব বাধা পেরিয়ে প্রথম আলো বাংলাদেশের ড্রয়িংরূম নয় , অন্দরমহল গুলোতে প্রিয়পাত্র।

৮ কোটি ভোটারের ৫২ % এর সাথে যারা জীবনের মিতালী পাতিয়েছে তাদের কে পেছনে ফেলবে কে ?













সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১০ রাত ২:০৫
৪৮টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×