জীবন নিয়ে এখন আর কোন অভিমান অভিযোগ করিনা, জীবন এমনই এক ঠুনকো জিনিস যা কাঁচের গ্লাসের মতন নানানরকম থালাবাটি ধোঁয়ার ফাঁকে ভিমবারের তৈলাক্ত জেল দিয়া ধুতে গিয়ে অসাবধানে, সাবধানে, অনিচ্ছায়, প্রচুর আফসোসের সাথে, দীর্ঘশ্বাসে, অবিশ্বাস্যভাবে পরে খান খান হয়ে ভেংগে ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংস হবার পর মনে হতে থাকে এটা কি হলো! কেন হলো! এটা হবার কথা ছিল না, ইশ আর এক মূহুর্ত আগে যদি বুঝতাম।
জীবন এইরকমই; যেন ভাংগা রাস্তা, যেনো চাকচিক্য মোড়ানো শহর, বিদ্যুত চলে যাওয়া গুমোট অন্ধকার রাত, কখনো ঝকঝকে রোদ, নানান রঙের লাইটিং করে সাজানো বিয়ে বাড়ি, উড়ন্ত মেঘ, রাস্তায় রাস্তায় অপেক্ষমান মানুষের ভীড়। একটা দুঃখ দুর্দশার পেইন্টিং ছাড়া আর কি।
চারদিন আগে এক ড্রাইভার সকালে উনার ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে অফিসের ডিউটি করতে করতে বুঝতে পারেন তার শরীরটা ভালো না, এখন এই কথা কি করে তার স্যারদের বলবেন। উনারা তার অসুস্থ ফিল হবার কথা শুনলেই বলবেন; তোমাকে তো দরকার এমনভাবেই যে যদি কেয়ামত হয়, যদি আকাশ ভেংগে ভেংগে পড়তে শুরু করে, যদি সূর্য মাথার উপর নেমে আসে, যদি পৃথিবী হাশরের ময়দান হয়ে যায়, তবু তোমাকে গাড়ি চালাতেই হবে। অতএব অসুস্থ লাগার পর ও সে কাউকে কিছু না বলে গাড়ি চালিয়ে অফিস টাইম পুরা করার পর------------
স্যার আমার খুব খারাপ লাগতেছে, এখুনি হাসপাতালে যাওয়া দরকার, সারাদিনের বলতে না পারা কথা গুলা বলার পর; উনাকে উনার স্যার বোঝায়; হাতের কাছে যে হাসপাতাল আছে সেইটা খরচের জায়গা, তুমি বরং গরীবদের হাসপাতাল খুঁজে বের করো, অথবা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুম দাও, লেবু পানিও খেতে পারো, স্যারদের কথার তো ভুল নাই, স্যার হচ্ছেন দেবতা, তারা যা বলেন নির্ভুল বলেন এই চিন্তা থেকে উনি আরো তিরিশ মিনিট পর দুঃসাহস দেখিয়ে আবার ফোন করেন।
এইবার তার স্যারকে বলেন তার পরামর্শে চলেছেন কিন্তু ভালো কিছু মনে হইতেছে না কাজেই সে গরীবদের হাসপাতালের খোঁজে গাড়ি স্টার্ট করতে করতে জীবন নামক খাঁচার ভেতর থেকে তার আত্মা বাহির হয়ে যায়।
আমি ভাবছি আমাকে একটু বাঁচতে দেন খেতে দেন আমাকে একটু ছুটি দেন, প্লিজ স্যার, সরি স্যার, ইয়েস স্যার, নো স্যার এই সকল কিছুর উর্ধ্বে চলে যাওয়াটা হয়তো উনার জন্য ভালো হলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:০২